
Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 4th Semester Political Science Minor Suggestion 2025
Indian Foreign Policy in a Globalizing World
Kalyani University B.A 4th Semester Political Science Minor ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 150 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 29 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit–1:
English: India’s Foreign Policy: From a Postcolonial State to an Aspiring Global Power
বাংলা: ভারতের পররাষ্ট্রনীতি — একটি উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বৈশ্বিক শক্তিতে রূপান্তর।
Unit–2:
English: India’s Relations with the USA and USSR/Russia
বাংলা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএসএসআর/রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক।
Unit–3:
English: India’s Engagements with China
বাংলা: চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা ও পারস্পরিক সম্পর্ক।
Unit–4:
English: India in South Asia: Debating Regional Strategies
বাংলা: দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত — আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে বিতর্ক।
Unit–5:
English: India’s Negotiating Style and Strategies: Trade, Environment, Energy, and Security Regimes
বাংলা: ভারতের আলোচনা কৌশল ও পদ্ধতি — বাণিজ্য, পরিবেশ, শক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
Unit–1: ভারতের পররাষ্ট্রনীতি
*****1) প্রশ্ন. ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বা বিদেশনীতির মূল লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো।৫/১০
ভূমিকা:
প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট পররাষ্ট্রনীতি বা বিদেশনীতি থাকে যা তাকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার স্বার্থ রক্ষা করতে সহায়তা করে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার কারণে তার পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমাত্রিক। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু দেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপন করেন। ভারত সব সময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নের পথ অনুসরণ করে। বর্তমানে বিশ্বের পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের বিদেশনীতি সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক হয়ে উঠেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ধারণা: পররাষ্ট্রনীতি বলতে বোঝায় অন্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একটি দেশের নেওয়া কৌশলগত পদক্ষেপসমূহ। এটি দেশের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্যসমূহ:
ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন লক্ষ্য আছে যা সময়ের প্রেক্ষিতে রূপান্তরিত হলেও কিছু মৌলিক উদ্দেশ্য বরাবরই একই থেকেছে। নিচে ভারতের বিদেশনীতির প্রধান লক্ষ্যগুলি আলোচনা করা হলো—
১.জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ: ভারতের বিদেশনীতির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। চীন, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ও সন্ত্রাসবাদের মতো ইস্যুগুলিতে ভারত সবসময় কূটনৈতিক এবং প্রয়োজনে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে।
২.আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা: ভারত সবসময় জাতিসংঘের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ভারত সর্বাধিক সংখ্যক সৈন্য পাঠানো দেশগুলির অন্যতম। যুদ্ধ, সহিংসতা বা আগ্রাসী নীতি নয় বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথেই ভারত বিশ্বাস করে।
৩.অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিকাশশীল দেশ হিসেবে ভারতের জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বৈদেশিক বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি বিনিয়োগ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য এলাকা ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত তার অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। ভারতের ‘Act East Policy’, ‘Look West Policy’, এবং আফ্রিকার সঙ্গে সহযোগিতা এই উদ্দেশ্যেই পরিচালিত।
৪.প্রতিবেশীপ্রথম নীতি (Neighbourhood First Policy): ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সংস্কৃতি, বাণিজ্য, জলসম্পদ, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করতে ভারত সবসময় সচেষ্ট। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সন্ত্রাসবাদ ও কাশ্মীর সমস্যার কারণে জটিলতর।
৫.আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূমিকা বৃদ্ধি: ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্য হল আঞ্চলিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিদার ভারত এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং মহাকাশ গবেষণায় সহায়তা করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করছে।
৬.নিরপেক্ষতা ও অহিংসার নীতি: নেহেরুর গৃহীত ‘নন অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট’ বা জোট নিরপেক্ষ নীতি ভারতের প্রাচীন মূল্যবোধ অহিংসা ও শান্তির প্রতিফলন। শীতল যুদ্ধের সময় ভারত কোনো শক্তিধর ব্লকের সদস্য না হয়ে স্বাধীন নীতি অনুসরণ করেছে এবং বর্তমানেও সেই চেতনা ধরে রেখেছে।
৭.পরমাণু অস্ত্র ও নিরাপত্তা নীতি: ভারত একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও "No First Use Policy" মেনে চলে, অর্থাৎ ভারত কখনো প্রথমে পারমাণবিক হামলা চালাবে না, তবে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে জবাব দিতে পারে। এই দায়িত্বশীল পরমাণু নীতি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।
৮.সাংস্কৃতিক কূটনীতি ও সফট পাওয়ার ব্যবহার: ভারত তার প্রাচীন সংস্কৃতি, যোগ, আয়ুর্বেদ, বলিউড, ভারতীয় খাদ্য ও ভাষার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে। এ ধরণের সফট পাওয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
৯.বৈদেশিক ভারতীয়দের (NRIs) সুরক্ষা ও সহায়তা: বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও ভারতের বিদেশনীতির অন্যতম লক্ষ্য। জরুরি অবস্থায় যেমন যুদ্ধ, মহামারি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ভারত সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করে (যেমন 'Operation Ganga', 'Vande Bharat Mission')।
১০.জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের অঙ্গীকার: আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে ভারত সবসময় উন্নয়নশীল দেশগুলির কণ্ঠস্বর হিসেবে জলবায়ু ন্যায়বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক সৌরজোট (International Solar Alliance) গঠনের মাধ্যমে ভারত টেকসই উন্নয়নে তার দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে।
উপসংহার:
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হলো একটি ভারসাম্যপূর্ণ, বহুমাত্রিক ও গতিশীল কৌশল যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে তুলছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহ—সব মিলিয়ে ভারতের বিদেশনীতি ক্রমাগত বিকশিত ও আধুনিক হয়ে উঠছে।
Unit–2: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএসএসআর/রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক।
*****2) প্রশ্ন.ভারতের ঘোষিত "পূর্বে তাকাও" নীতির উপর একটি সংক্ষিপ্ত রচনা লেখো। (৫ নম্বর)
ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতিতে "পূর্বে তাকাও" (Look East Policy) একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল যা ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করতে সহায়তা করেছে। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়ন করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা।
"পূর্বে তাকাও" নীতির পটভূমি: ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের পরপরই ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার অবস্থান পুনঃনির্ধারণের চেষ্টা করছিল। সেই সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি ধীরে ধীরে পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দিকে প্রসারিত হতে শুরু করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং বিশ্বের বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার কারণে, ভারতের জন্য একটি নতুন কৌশল গড়ে তোলার সময় ছিল।
"পূর্বে তাকাও" নীতি প্রথমে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৯১ সালে তার বক্তৃতায় তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু এই নীতি চূড়ান্তভাবে ১৯৯২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিমহা রাও ঘোষণা করেন। এটি একটি কৌশল ছিল যা ভারতের পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করেছিল।
"পূর্বে তাকাও" নীতির পটভূমি: ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের পরপরই ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার অবস্থান পুনঃনির্ধারণের চেষ্টা করছিল। সেই সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি ধীরে ধীরে পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দিকে প্রসারিত হতে শুরু করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং বিশ্বের বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার কারণে, ভারতের জন্য একটি নতুন কৌশল গড়ে তোলার সময় ছিল।
"পূর্বে তাকাও" নীতি প্রথমে ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৯১ সালে তার বক্তৃতায় তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু এই নীতি চূড়ান্তভাবে ১৯৯২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিমহা রাও ঘোষণা করেন। এটি একটি কৌশল ছিল যা ভারতের পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করেছিল।
"পূর্বে তাকাও" নীতির মূল উদ্দেশ্য:
ভারতের "পূর্বে তাকাও" নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভারতের পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। এটি ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বাজারের বাইরে নতুন সুযোগের সন্ধান পেতে সাহায্য করেছিল।
১. অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন: ভারতের পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি গঠন করা ছিল এই নীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে আরও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিল।
২. রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন: ভারত এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলির সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছিল।
৩. সাংস্কৃতিক সম্পর্ক: ভারত তার ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব আরও বাড়াতে চেয়েছিল।
৩. সাংস্কৃতিক সম্পর্ক: ভারত তার ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব আরও বাড়াতে চেয়েছিল।
"পূর্বে তাকাও" নীতির প্রধান সাফল্য:
এই নীতির মাধ্যমে ভারতের পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। নীচে এর কিছু প্রধান সাফল্য তুলে ধরা হল:
১. অর্থনৈতিক সম্পর্কের বৃদ্ধির সুযোগ: "পূর্বে তাকাও" নীতির ফলে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। এই অঞ্চলের দেশগুলির সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভারত বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগ পায়।
২. সাংস্কৃতিক বিনিময়: ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব এই অঞ্চলে দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ভারতীয় চলচ্চিত্র, সংগীত, এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক আঙ্গিকগুলি এই অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
৩. প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল: এই নীতি ভারতকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক নতুন কৌশল গ্রহণের সুযোগ প্রদান করেছে, যা ভারতীয় কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
৪. অঞ্চলীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধি: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে এবং ভারত এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
"পূর্বে তাকাও" নীতির চ্যালেঞ্জ:
যদিও এই নীতির অনেক সাফল্য ছিল, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জও ছিল। এই নীতির বাস্তবায়নে ভারতের জন্য কিছু বাধা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন:
১. চীন এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সম্পর্ক: চীন ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ওঠে দাঁড়িয়েছিল, এবং চীনের বৃদ্ধি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
২. ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা: ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এই নীতির কার্যকর বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।
৩. অঞ্চলীয় গঠন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মাঝে বিভাজন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের পূর্ব নীতির সফল বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি:
বর্তমানে, ভারতের "পূর্বে তাকাও" নীতি অনেকটাই বিকশিত হয়েছে। এটি এখন "অ্যাক্ট ইস্ট" (Act East) নীতির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভারত তার পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে আরও গভীর কৌশলগত, বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই নতুন কৌশল ভারতকে চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে সাহায্য করছে।
উপসংহার:
"পূর্বে তাকাও" নীতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল যা ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে। এই নীতি ভারতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্তরে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও, ভারত আজ এই নীতিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
Unit–3: চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা ও পারস্পরিক সম্পর্ক।
*****3) প্রশ্ন. সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইন্দো-চীন সম্পর্ক পর্যালোচনা করো। (১০)
ভূমিকা:
বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতি দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং এই পরিবর্তনের মধ্যেই ভারত ও চীনের সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দুই এশীয় মহাশক্তির মধ্যকার সম্পর্ক বিভিন্ন পর্যায়ে বহুবার পরিবর্তিত হয়েছে—মৈত্রী থেকে সংঘর্ষ, প্রতিযোগিতা থেকে সহযোগিতা। ঠান্ডা যুদ্ধের যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান বহু-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রেক্ষিতে এই সম্পর্ক এখন এক জটিল রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।
ইতিহাসের পটভূমি:
ভারত ও চীনের সম্পর্ক প্রাচীন সভ্যতা থেকেই চলে আসছে। কিন্তু আধুনিক কালে, বিশেষত স্বাধীনতার পর ভারত-চীন সম্পর্ক প্রথমদিকে ছিল সহযোগিতামূলক। “হিন্দি চিনি ভাই ভাই” স্লোগানে দুই দেশের বন্ধুত্বের আশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ সেই সম্পর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। চীন কর্তৃক আকসাই চিন দখল এবং অরুণাচল প্রদেশকে তাদের এলাকা দাবি করা ভারতীয় ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের সম্পর্ক অবিশ্বাস ও সন্দেহের ছায়ায় ঘেরা থাকে।
ঠান্ডা যুদ্ধ যুগে ভারত-চীন সম্পর্ক:
ঠান্ডা যুদ্ধ যুগে বিশ্ব মূলত দুইটি মেরুতে বিভক্ত ছিল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে দুটি শক্তি ব্লক। ভারত তার গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার পাশাপাশি নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিল। অপরদিকে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত উভয়ের সঙ্গে কৌশলগত দন্দ্বে লিপ্ত ছিল। ফলে ভারত ও চীনের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়।
১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর ভারতের নিরাপত্তা নীতি পরিবর্তিত হয় এবং চীনের ওপর একরকম অনাস্থা তৈরি হয়। ১৯৭৫ সালে সিকিমকে ভারতের রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে চির ধরায়। তবুও উভয় দেশ একে অপরকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইন্দো-চীন সম্পর্ক:
২১শ শতকে এসে ভারত ও চীন দুই দেশেরই অর্থনৈতিক উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। উভয় দেশই বিশ্ব রাজনীতির প্রধান শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। তবে এই সময়ে সম্পর্ক জটিলতর হয়েছে একাধিক কারণে—
- ১. সীমান্ত বিরোধ ও গালওয়ান সংঘর্ষ (২০২০): লাদাখ সীমান্তে ২০২০ সালে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রাণহানি ঘটে। এই ঘটনা ১৯৭৫ সালের পর প্রথমবারের মতো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়। এতে দুই দেশের মধ্যে আবারো উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে।
- ২. বাণিজ্যিক সম্পর্ক: যদিও সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে, তথাপি বাণিজ্যিকভাবে ভারত-চীন সম্পর্ক এখনও গুরুত্বপূর্ণ। চীন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতি এবং চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধকরণ, সীমান্তবর্তী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রভৃতি পদক্ষেপে চীনের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
- ৩. কৌশলগত প্রতিযোগিতা: ইন্দো-প্যাসিফিক ও কোয়াড: চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (BRI) মাধ্যমে গোটা এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছে। অপরদিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কৌশলগত জোট ‘QUAD’-এর অংশ হয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব রুখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এতে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে।
- ৪. ভূ-রাজনৈতিক পালাবদল ও রাশিয়া-চীন ঘনিষ্ঠতা: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-চীন ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ভারত একদিকে রাশিয়ার ঐতিহ্যগত বন্ধু হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এই দ্বৈত অবস্থান চীন-ভারত সম্পর্কে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
বহু-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভারত-চীন সম্পর্ক:
বর্তমানে বিশ্বের শক্তির কেন্দ্র একক না হয়ে বহুমাত্রিক বা বহু-মেরুকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের সম্পর্ক নতুনভাবে মূল্যায়নের দাবি রাখে।
- ১. অর্থনৈতিক সহ-অবস্থান ও প্রতিযোগিতা: চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, এবং ভারত দ্রুত উন্নয়নশীল বৃহৎ বাজার। এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা রয়েছে, যেমন—ইলেকট্রনিক্স, ফার্মাসিউটিক্যাল, কাঁচামাল ইত্যাদি।
- ২. আঞ্চলিক সংগঠন ও যৌথ প্ল্যাটফর্ম: উভয় দেশ BRICS, SCO (Shanghai Cooperation Organization) ও G20-এর সদস্য। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে তারা মাঝে মাঝে সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু আঞ্চলিক নেতৃত্বের প্রশ্নে দ্বন্দ্ব থেকেই যায়—বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্য চীন মেনে নিতে চায় না।
- ৩. পাকিস্তান সংক্রান্ত অবস্থান: চীনের পাকিস্তান-চীন অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) ও কাশ্মীর ইস্যুতে চীনের অবস্থান ভারতের উদ্বেগ সৃষ্টি করে। চীনের অব্যাহত পাকিস্তান-সমর্থন সম্পর্কের অন্যতম অন্তরায়।
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি:
ভারত ও চীনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গঠনের জন্য উভয় পক্ষকে কূটনৈতিক ও কৌশলগত স্তরে সচেতন হতে হবে। সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান, বিশ্বাস গড়ে তোলা, এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করলে এই সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে।
সম্ভাব্য করণীয়:
• সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি হালনাগাদ করা
• পরস্পরের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়ানো
• পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে নিয়মিত সংলাপ ও সামরিক স্তরে যোগাযোগ বজায় রাখা
• আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করা
উপসংহার:
ভারত-চীন সম্পর্ক এক জটিল কিন্তু সম্ভাবনাময় অধ্যায়। অতীতের সংঘর্ষ ও বর্তমানের প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও, এই দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতাই আগামী দিনের এশীয় রাজনীতিকে একটি নতুন দিশা দিতে পারে। বহু-মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীন যদি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করে, তবে তা শুধু দুই দেশের নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্যই লাভজনক হবে।
Unit–4: দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত — আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে বিতর্ক।
*****3) প্রশ্ন. ভারতের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে আসিয়ান (ASEAN)-এর ভূমিকা আলোচনা কর। (৫/১০ নম্বর)
ভূমিকা: ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এক বহুমাত্রিক নীতির প্রতিফলন, যা আত্মনির্ভরতা, আঞ্চলিক শান্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন ASEAN (Association of Southeast Asian Nations)-এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। ভারতের “Act East” নীতি এবং আঞ্চলিক সংহতির লক্ষ্যেই এই সম্পর্ক এখন কৌশলগত গুরুত্ব অর্জন করেছে।
আসিয়ান (ASEAN) কী?
ASEAN একটি আঞ্চলিক সংস্থা যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি দেশ নিয়ে গঠিত। এর সদস্য দেশগুলি হল — ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার ও কম্বোডিয়া। এই সংস্থাটি ১৯৬৭ সালে গঠিত হয়। প্রধানত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে এটি কাজ করে।
ভারতের আসিয়ান নীতির বিবর্তন: ভারত ও আসিয়ানের সম্পর্ক ১৯৯২ সালে “Sectoral Dialogue Partner” হিসেবে শুরু হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে ভারতকে “Full Dialogue Partner” এবং ২০০২ সালে “Summit Level Partner” হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালে ভারত ও আসিয়ান সম্পর্ক “Strategic Partnership”-এ উন্নীত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের “Look East Policy” থেকে “Act East Policy”-র দিকে এগোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ভারতের বিদেশনীতিতে আসিয়ানের ভূমিকা:
১. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা: ভারত ও আসিয়ান দেশগুলি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় একযোগে কাজ করছে। ভারতের জন্য আসিয়ান দেশগুলি কৌশলগত অংশীদার, যারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের প্রভাব বিস্তারে সহায়ক। ভারত ASEAN Regional Forum (ARF)-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনায় সক্রিয়।
২. অর্থনৈতিক সম্পর্ক: ভারত ও আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) ২০১০ সালে কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথ প্রসারিত হয়েছে। ২০২2 সালের তথ্য অনুযায়ী, ভারত-আসিয়ান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এছাড়া, ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবকাঠামোগত উন্নয়নেও বিনিয়োগ করছে।
৩. সংযোগ (Connectivity): ভারত আসিয়ানের সঙ্গে সড়ক, রেল ও জলপথে সংযোগ স্থাপনে বিশেষ জোর দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, “India-Myanmar-Thailand Trilateral Highway”, “Kaladan Multi-Modal Transit Transport Project” ইত্যাদি প্রকল্পগুলি ভারতকে আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করছে।
৪. সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা: সমুদ্র নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে ভারত আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে যৌথ মহড়া ও তথ্য বিনিময় করছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী নীতির প্রেক্ষিতে ভারত ও আসিয়ান একসঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপ ও সমঝোতা গড়ে তুলছে।
৫. সাংস্কৃতিক ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ক: ভারত ও আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই বৌদ্ধ ও হিন্দু সংস্কৃতির মাধ্যমে গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। আধুনিক সময়ে এই সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে ভারত সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষাবৃত্তি এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করছে।
দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত ভারতের বিদেশনীতি:
ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়া একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চল। SAARC (South Asian Association for Regional Cooperation)-এর মাধ্যমে ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করে। ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতির (Neighbourhood First Policy) মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রধান পররাষ্ট্রনৈতিক দিকগুলো:
• বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক: সীমান্ত সমস্যা, নদীজল বণ্টন, বাণিজ্য, রেল ও সড়ক সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
• নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে: জলবিদ্যুৎ, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
• শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে: সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও চীনা প্রভাব রোধে কৌশলগত সম্পর্ক।
• আফগানিস্তান: পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে ভারত একটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে।
ভারত-আসিয়ান সম্পর্কের গুরুত্ব:
১. চীনা প্রভাবের মোকাবিলা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর প্রভাব ভারসাম্য করতে ভারত আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।
২. ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল: যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার পাশাপাশি আসিয়ান দেশগুলির সমর্থন ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে শক্তিশালী করে।
৩. অর্থনৈতিক সুযোগ: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভারতের জন্য একটি বিশাল বাজার এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্র। এই অঞ্চলে ভারতীয় প্রযুক্তি, শিক্ষা ও কৃষি পণ্যের চাহিদা রয়েছে।
৪. ভূ-রাজনৈতিক স্থিতি: আসিয়ান একটি নিরপেক্ষ শক্তি হিসেবে ভারত ও চীনের মধ্যে সুষম সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ:
• ভারত ও আসিয়ানের মধ্যে FTA নিয়ে কিছু বাণিজ্যিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
• চীনের আগ্রাসী বিনিয়োগ ও প্রকল্প আসিয়ান দেশগুলিকে বিভক্ত করতে পারে।
• ভারতের অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতি সংযোগ প্রকল্পগুলিতে বিলম্ব ঘটায়।
উপসংহার:
ভারত ও আসিয়ানের সম্পর্ক ২১ শতকের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারত তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করছে। “Act East Policy”-এর মাধ্যমে ভারত আসিয়ানকে শুধু কৌশলগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও মানবিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরো গভীরতর হলে, তা সমগ্র এশিয়া অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
সাজেশন পিডিএফ Copy টি কেমন দেখতে হবে দেখে নাও



