
Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 2nd Semester Bengali Major Suggestion 2025
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগ) ও বাংলা ভাষাতত্ত্ব (দ্বিতীয় ভাগ)
Kalyani University B.A 2nd Semester Bengali Major ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 31 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
পর্ব – ১: গদ্য ও প্রবন্ধ
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ (উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার), রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্যারীচাঁদ মিত্র, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রমথ চৌধুরী।
সাময়িক পত্র: সাধারণ আলোচনা — দিগদর্শন, সমাচার দর্পণ, সংবাদ প্রভাকর, বঙ্গদর্শন, সবুজপত্র, কল্লোল।
পর্ব – ২: কাব্য ও কবিতা
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ।
নাটক: মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজন ভট্টাচার্য, উৎপল দত্ত।
পর্ব – ৩: উপন্যাস
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী, সমরেশ বসু, আশাপূর্ণা দেবী।
ছোটগল্প: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী।
পর্ব – ৪: বাংলা ভাষাতত্ত্ব (দ্বিতীয় ভাগ)
১. বাংলা উপভাষা: রাঢ়ি, বাঙালি, বরেন্দ্র, ঝাড়খণ্ডি, কামরূপী
২. ধ্বনি পরিবর্তন: কারণ ও ধারা
৩. শব্দার্থ পরিবর্তন: কারণ ও ধারা
৪. বাংলা শব্দভাণ্ডার
৫. রূপতত্ত্ব: লিঙ্গ, বচন, পুরুষ
৬. মান্য চলিত বাংলা
পর্ব – ১: গদ্য ও প্রবন্ধ:
*****1) প্রশ্ন. বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান আলোচনা কর। ৫/১০
ভূমিকা:
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ছিল না, বরং বাংলা গদ্যের বিকাশে এটি একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের প্রশাসনিক কাজকর্মে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান অপরিসীম। এই কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভিত্তি রচিত হয়, যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার পটভূমি: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮০০ সালে, লর্ড ওয়েলেসলির আমলে। ব্রিটিশ শাসকরা তাদের প্রশাসনিক কাজে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে তারা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। এই কলেজের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ফারসি সহ বিভিন্ন ভাষার শিক্ষা দেওয়া হতো এখানে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে এই কলেজের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান:
১. বাংলা গদ্যের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি রচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ছিল না। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি রচিত হয়। কলেজের অধীনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার জন্য একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়, যা বাংলা গদ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অন্যতম প্রধান অবদান হলো বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখ পণ্ডিতরা বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।
৩. বাংলা গদ্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়ন: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়ন ঘটে। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের ভাষাকে সহজ, সরল, ও প্রাঞ্জল করার চেষ্টা করেন। তারা বাংলা গদ্যে সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করেন এবং সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় গদ্য রচনা করেন। এই প্রচেষ্টা বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. বাংলা গদ্যের বিভিন্ন শাখার সূচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের বিভিন্ন শাখার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, গল্প, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি বিভিন্ন শাখার সূচনা করেন। এই বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের পরিধি বিস্তৃত হয় এবং বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়।
৫. বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের উত্থান: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের উত্থান ঘটে। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের প্রথম লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ পণ্ডিতরা বাংলা গদ্যের প্রথম লেখক হিসেবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান লাভ করেন। তাদের রচনাবলি বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভিত্তি রচনা করে।
৬. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্য সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সমাজের কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। রাজা রামমোহন রায়ের লেখনী এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং সমাজ সংস্কারের পথ প্রশস্ত করেন।
৭. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ ঘটে। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম, ও অন্যান্য ধর্মের দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ করেন। তারা বাংলা গদ্যে ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রদান করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে ইতিহাস ও ভূগোল চর্চা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে ইতিহাস ও ভূগোল চর্চার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে ভারতের ইতিহাস, ভূগোল, ও সংস্কৃতি সম্পর্কে লেখালেখি করেন। তারা বাংলা গদ্যে ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের পরিধি বিস্তৃত করে।
৯. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে বিজ্ঞান চর্চার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তারা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রচেষ্টা বাংলা গদ্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সাহিত্য সমালোচনার সূচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে সাহিত্য সমালোচনার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তারা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার:
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। এই কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি রচিত হয়, বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়, বাংলা গদ্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়ন ঘটে, বাংলা গদ্যের বিভিন্ন শাখার সূচনা হয়, বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের উত্থান ঘটে, বাংলা গদ্য সাহিত্য সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বাংলা গদ্য সাহিত্যে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ ঘটে, বাংলা গদ্য সাহিত্যে ইতিহাস, ভূগোল, ও বিজ্ঞান চর্চার সূচনা হয়, এবং বাংলা গদ্য সাহিত্যে সাহিত্য সমালোচনার সূচনা হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের এই অবদানের জন্য বাংলা গদ্য সাহিত্য আজ সমৃদ্ধ ও বিকশিত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান চিরস্মরণীয়।
পর্ব – ২: কাব্য ও কবিতা
*****2) প্রশ্ন. বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান আলোচনা কর। ৫/১০
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে জীবনানন্দ দাশ এক অনন্য নাম। তিনি কেবল একজন কবি নন, বাংলা কাব্যের এক যুগস্রষ্টা। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, নাগরিক জীবন, মানবিক অনুভূতি এবং অস্তিত্বের জটিল প্রশ্নগুলি এমন এক অনন্য শৈলীতে প্রকাশ পেয়েছে, যা বাংলা কবিতাকে নতুন মাত্রা দান করেছে। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় যে গভীরতা ও নান্দনিকতা রয়েছে, তা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং তাঁকে "রূপসী বাংলার কবি" হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে। তাঁর অবদান বাংলা কাব্যে অপরিসীম, যা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. কাব্যশৈলীর অভিনবত্ব: জীবনানন্দ দাশের কবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর অভিনব কাব্যশৈলী। তিনি প্রচলিত ছন্দ ও অলংকারের বাইরে গিয়ে এক নতুন ধরনের কবিতার সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কবিতায় চিত্রকল্পের ব্যবহার অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নান্দনিক। তিনি প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলেন, যা পাঠকের মনে এক গভীর ছাপ রাখে। যেমন, তাঁর কবিতায় বৃষ্টি, নদী, গাছপালা, পাখি ইত্যাদি প্রকৃতির উপাদানগুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে। তাঁর কবিতার ভাষা সরল, কিন্তু তা গভীর অর্থবহ। তিনি শব্দের মাধ্যমে এক ধরনের মায়াজাল সৃষ্টি করেন, যা পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে।
২. প্রকৃতির কবি: জীবনানন্দ দাশকে "প্রকৃতির কবি" বলা হয়। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির এক অনন্য রূপ ফুটে উঠেছে। তিনি প্রকৃতিকে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য হিসেবে নয়, বরং এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি মানবিক অনুভূতির সঙ্গে মিশে যায়। যেমন, তাঁর বিখ্যাত কবিতা "বনলতা সেন"-এ প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানবিক ভালোবাসা একাকার হয়ে গেছে। তিনি প্রকৃতির মাধ্যমে মানব জীবনের গভীর দর্শন প্রকাশ করেছেন।
৩. নাগরিক জীবন ও একাকিত্ব: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় নাগরিক জীবনের এক গভীর চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতা, একাকিত্ব এবং মানবিক বিচ্ছিন্নতাকে তাঁর কবিতায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর কবিতায় শহরের কোলাহল, মানুষের নিঃসঙ্গতা এবং আধুনিক জীবনের জটিলতা ফুটে উঠেছে। তিনি নাগরিক জীবনের অন্ধকার দিকগুলিকে কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, যা পাঠককে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে।
৪. অস্তিত্বের জটিল প্রশ্ন: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় অস্তিত্বের জটিল প্রশ্নগুলি বারবার ফিরে এসেছে। তিনি মানব জীবনের অর্থ, মৃত্যু, সময় এবং অস্তিত্বের রহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন। তাঁর কবিতায় মৃত্যুচিন্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না, বরং তা তাঁর কবিতায় এক গভীর দার্শনিক রূপ লাভ করেছে। তাঁর কবিতায় সময়ের প্রবাহ এবং মানব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব বারবার ফুটে উঠেছে।
৫. মানবিক ভালোবাসা ও মমত্ববোধ: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় মানবিক ভালোবাসা এবং মমত্ববোধের এক গভীর প্রকাশ ঘটেছে। তিনি মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কবিতায় নারীপ্রেম, মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং মানবিক সম্পর্কের নানান দিক ফুটে উঠেছে। তাঁর কবিতায় ভালোবাসা কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং তা সার্বজনীন রূপ লাভ করেছে।
৬. ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়: জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলার ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। তিনি বাংলার গ্রামীণ জীবন, লোকসংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তাঁর কবিতায় স্থান দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক জীবনবোধ এবং দর্শনকেও তাঁর কবিতায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর কবিতায় বাংলার শ্যামল প্রকৃতি এবং আধুনিক নাগরিক জীবনের দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে।
৭. প্রভাব ও উত্তরাধিকার: জীবনানন্দ দাশের কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার সূচনা করেছে। তাঁর কবিতার প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের কবি ও সাহিত্যিকদের উপর গভীরভাবে পড়েছে। তিনি বাংলা কবিতাকে আধুনিকতার নতুন মাত্রা দান করেছেন। তাঁর কবিতার গভীরতা, নান্দনিকতা এবং দার্শনিকতা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
৮. বিতর্ক ও স্বীকৃতি: জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। তাঁর কবিতার ভাষা এবং শৈলী অনেকের কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কবিতার গভীরতা এবং সৌন্দর্য পাঠকদের হৃদয় জয় করেছে। আজ তিনি বাংলা সাহিত্যের এক অমর কবি হিসেবে স্বীকৃত।
উপসংহার: জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যের এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, নাগরিক জীবন, মানবিক অনুভূতি এবং অস্তিত্বের জটিল প্রশ্নগুলি এক অপূর্ব সমন্বয়ে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাংলা কবিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং এক নতুন ধারার সূচনা করেছেন। তাঁর কবিতার গভীরতা, নান্দনিকতা এবং দার্শনিকতা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। জীবনানন্দ দাশের অবদান বাংলা কাব্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পর্ব – ৩: উপন্যাস:
*****3) প্রশ্ন. বাংলা উপন্যাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা কর। ১০/৫
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮) বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা, যিনি বাংলা উপন্যাস ও ছোটগল্পের জগতে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। শরৎচন্দ্রের লেখনীতে মানবিক আবেগ, সামাজিক সমস্যা, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, এবং সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের জীবনচিত্র অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর উপন্যাসগুলি শুধু সাহিত্যিক মানেই উৎকৃষ্ট নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনযাত্রা, সংগ্রাম, এবং মানবিক মূল্যবোধকে গভীরভাবে উপস্থাপন করে। বাংলা উপন্যাসে শরৎচন্দ্রের অবদান নিম্নলিখিত দিকগুলি থেকে আলোচনা করা যেতে পারে:
১. মানবিক আবেগ ও চরিত্র চিত্রণ: শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর চরিত্রগুলির গভীর মানবিক আবেগ ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। তিনি তাঁর চরিত্রগুলিকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে তারা পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলি শুধু কাল্পনিক নয়, বরং বাস্তব জীবনের মানুষের প্রতিচ্ছবি। যেমন, "দেবদাস" উপন্যাসের দেবদাস, পার্বতী, এবং চন্দ্রমুখী চরিত্রগুলি বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। দেবদাসের অসম প্রেম, পার্বতীর আত্মত্যাগ, এবং চন্দ্রমুখীর একনিষ্ঠ ভালোবাসা পাঠকদের হৃদয় স্পর্শ করে।
২. সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের জীবনচিত্র: শরৎচন্দ্র তাঁর উপন্যাসে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের জীবনচিত্র অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি সমাজের প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে লিখেছেন, যাদের কথা সাধারণত সাহিত্যে স্থান পায় না। "পল্লীসমাজ" উপন্যাসে তিনি গ্রামীণ সমাজের মানুষের জীবন, সংগ্রাম, এবং তাদের সহজ-সরল মানসিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখনীতে গ্রামীণ জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, এবং সামাজিক সমস্যাগুলি অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
৩. নারী চরিত্রের গভীর বিশ্লেষণ: শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি নারী চরিত্রগুলিকে অত্যন্ত গভীরতা ও মর্যাদার সাথে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর নারী চরিত্রগুলি শক্তিশালী, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, এবং স্বাধীনচেতা। যেমন, "শ্রীকান্ত" উপন্যাসের রাজলক্ষ্মী, "চরিত্রহীন" উপন্যাসের সাবিত্রী, এবং "দেবদাস" উপন্যাসের পার্বতী ও চন্দ্রমুখী চরিত্রগুলি বাংলা সাহিত্যে নারী চরিত্রের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শরৎচন্দ্র নারীদের কেবল ভোগ্যবস্তু হিসেবে নয়, বরং তাদের নিজস্ব ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, এবং সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
৪. সামাজিক সমস্যা ও সমালোচনা: শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে সামাজিক সমস্যা ও কুসংস্কারের তীব্র সমালোচনা লক্ষ্য করা যায়। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন কুপ্রথা, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, এবং জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। "চরিত্রহীন" উপন্যাসে তিনি নারীদের সমাজে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করার প্রথাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। তাঁর উপন্যাসগুলি শুধু সাহিত্যিক রচনা নয়, বরং সমাজের অসঙ্গতিগুলির বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ।
৫. ভাষা ও শৈলীর সৌন্দর্য: শরৎচন্দ্রের ভাষা ও শৈলী বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর ভাষা সহজ-সরল, কিন্তু গভীর আবেগ ও অর্থবহ। তিনি কথ্য ভাষাকে সাহিত্যের মর্যাদা দিয়েছেন, যা তাঁর উপন্যাসগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তাঁর লেখনীতে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, মানবিক আবেগ, এবং সামাজিক পরিস্থিতির বর্ণনা অত্যন্ত জীবন্ত ও স্পষ্ট।
৬. প্রেম ও বিরহের চিরন্তন উপস্থাপনা: শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে প্রেম ও বিরহের চিরন্তন উপস্থাপনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর উপন্যাসগুলিতে প্রেম শুধু একটি আবেগ নয়, বরং জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। "দেবদাস" উপন্যাসে দেবদাস ও পার্বতীর প্রেম এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব ও বিরহ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। শরৎচন্দ্রের প্রেমের গল্পগুলি শুধু রোমান্টিক নয়, বরং তা জীবনের গভীর বাস্তবতা ও যন্ত্রণাকে ফুটিয়ে তোলে।
৭. বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব রেখেছে। তাঁর লেখনী শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, বরং সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে এক উজ্জ্বল স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর উপন্যাসগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং সিনেমা ও নাটকের মাধ্যমে আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। "দেবদাস" উপন্যাসটি একাধিকবার সিনেমায় রূপায়িত হয়েছে, যা তাঁর সাহিত্যের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে।
৮. মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন: শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলি মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, সহানুভূতি, এবং ন্যায়বিচারের মতো মানবিক গুণাবলীকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর চরিত্রগুলি পাঠকদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে।
৯. বাস্তবতা ও কল্পনার সমন্বয়: শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে বাস্তবতা ও কল্পনার এক অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। তিনি বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলিকে কল্পনার রঙে সাজিয়েছেন, যা পাঠকদেরকে এক অনন্য জগতে নিয়ে যায়। তাঁর উপন্যাসগুলি শুধু বাস্তবতার প্রতিফলন নয়, বরং তা কল্পনার মাধ্যমে জীবনের গভীর সত্যকে উপস্থাপন করে।
১০. শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, বরং সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। তাঁর লেখনী সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, সংগ্রাম, এবং মানবিক আবেগকে ফুটিয়ে তুলেছে, যা তাঁর সাহিত্যকে সর্বজনীন করে তুলেছে। তাঁর উপন্যাসগুলি আজও পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে আছে এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপসংহার:
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাসের জগতে এক অনন্য প্রতিভা, যিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে মানবিক আবেগ, সামাজিক সমস্যা, এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ককে গভীরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর উপন্যাসগুলি শুধু সাহিত্যিক মানেই উৎকৃষ্ট নয়, বরং তা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনচিত্র, সংগ্রাম, এবং মানবিক মূল্যবোধকে গভীরভাবে উপস্থাপন করে। শরৎচন্দ্রের অবদান বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাঁর সাহিত্যকর্ম পাঠকদের হৃদয়ে চিরকাল স্থান পাবে।
পর্ব – ৪: বাংলা ভাষাতত্ত্ব (দ্বিতীয় ভাগ)
*****4) প্রশ্ন. রাঢ়ী উপভাষার তিনটি ধ্বনিতাত্ত্বিক ও তিনটি রূপান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য লেখ। ৫
রাঢ়ী উপভাষা বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপভাষা যা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশ এবং কিছু অংশে বাংলাদেশের বগুড়া, ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচলিত। এই উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য বাংলা ভাষার অন্যান্য উপভাষার থেকে কিছুটা আলাদা। নিচে রাঢ়ী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
১. বর্ণের প্রতিস্থাপন: রাঢ়ী উপভাষায় কিছু ক্ষেত্রে বর্ণের পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, বাংলা ভাষায় যে শব্দে ‘চ’ ধ্বনি আছে, রাঢ়ী উপভাষায় তা 'শ' বা 'ছ' ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, 'চাঁদ' শব্দটি রাঢ়ী উপভাষায় 'শাঁদ' হয়ে যায়। এই ধরনের ধ্বনি পরিবর্তন রাঢ়ী উপভাষার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
২. কণ্ঠধ্বনি ও বর্ণের ব্যবহারের পরিবর্তন: রাঢ়ী উপভাষায় কণ্ঠধ্বনির ব্যবহারে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, 'ক' এবং 'খ' ধ্বনির ব্যবহার কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, যেখানে বাংলায় এটি স্পষ্টভাবে কণ্ঠধ্বনির পরিবর্তে রাঢ়ীতে তা আরও নরম বা মৃদু হয়ে যায়।
৩. স্বরবর্ণের পরিবর্তন: রাঢ়ী উপভাষায় স্বরবর্ণের ব্যবহারে কিছু প্রভেদ দেখা যায়। সাধারণত 'অ' বা 'আ' শব্দের ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে 'এ' বা 'ও' ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন, 'বাড়ি' শব্দটি রাঢ়ী উপভাষায় 'বাড়ে' হয়ে যায়। এটি একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য যা রাঢ়ী উপভাষাকে বাংলা ভাষার অন্যান্য উপভাষার থেকে আলাদা করে।
রূপান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য:
১. ক্রিয়া-পদ পরিবর্তন: রাঢ়ী উপভাষায় ক্রিয়া-পদের ব্যবহারেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, বাংলায় 'যাই' বা 'যাবে' রাঢ়ী উপভাষায় 'যানে' বা 'যাবে' হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ক্রিয়া-পদের পরিবর্তিত রূপ দেখা যায় যা রাঢ়ী উপভাষার রূপান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য।
২. বিশেষ্য পদে পরিবর্তন: রাঢ়ী উপভাষায় বিশেষ্য পদে কিছু পরিবর্তন আসে। বাংলায় যেসব বিশেষ্য পদে সাধারণত 'র' বা 'রো' ব্যবহার হয়, সেখানে রাঢ়ী উপভাষায় তা 'ড়' বা 'ড়ে' ব্যবহার করা হয়। যেমন, বাংলায় 'ঘর' শব্দটি রাঢ়ী উপভাষায় 'ঘড়' হয়ে যায়।
৩. বিধান পরিবর্তন: রাঢ়ী উপভাষায় কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ বাংলা ভাষার বিধানের পরিবর্তন দেখা যায়। বাংলায় সাধারণত 'এ' বা 'ও' ব্যবহার হয়, রাঢ়ী উপভাষায় তা 'অ' বা 'ই' ধ্বনিতে রূপান্তরিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলায় 'কী' (কেন) শব্দটি রাঢ়ী উপভাষায় 'কিরে' হয়ে যায়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো রাঢ়ী উপভাষাকে বাংলা ভাষার অন্যান্য উপভাষা থেকে আলাদা করে তোলে। এই উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি ভাষার বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধির চিহ্ন।
সাজেশন পিডিএফ Copy টি কেমন হবে দেখে নাও ।


