Kalyani University B.A 2nd Semester History major suggestions

Kalyani University Suggestion

Kalyani University B.A 2nd Semester History Major Suggestion 2025

Social Formation and Cultural Pattern of the Ancient and Early Medieval World

Kalyani University B.A 2nd Semester History Major ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

(সিলেবাস – ২০২৫)

🔸 Unit-1:
ভারতের পটভূমিকায় প্রাক-ঐতিহাসিক থেকে প্রায়-ঐতিহাসিক সংস্কৃতি — কৃষি ও পশুপালনের সূচনা।
আফ্রিকার ইতিহাসের অনুসন্ধান, অ্যাজটেক সভ্যতা এবং ইনকা সংস্কৃতি।

🔸 Unit-2:
মিশর, মেসোপটেমিয়া, চীন ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা।
ক্রীতের ব্রোঞ্জ সভ্যতা।
রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান।

🔸 Unit-3:
প্রাচীন গ্রীসের পোলিস ও দাসপ্রথা-ভিত্তিক সমাজ।
প্রাচীন রোমের উত্থান এবং রোমান সাম্রাজ্যের পতন।
কৃষি অর্থনীতি ও বাণিজ্য, চার্চ ও ধর্মীয় প্রশ্ন।

🔸 Unit-4:
মধ্য ইসলামিক ভূখণ্ডের সমাজ ব্যবস্থা।
ইসলামের বিস্তার, খিলাফত রাষ্ট্র, উমাইয়া বংশ, শরিয়া আইন এবং সুফি সংস্কৃতি।

UNIT-1 ভারতের পটভূমিতে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ থেকে প্রায়-ঐতিহাসিক যুগের সংস্কৃতি

*****1) প্রশ্ন. ইনকাদের ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।৫

ভূমিকা:

দুনিয়ার ইতিহাসে বহু সভ্যতা তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও চেতনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন এক সমৃদ্ধিশালী সভ্যতা হলো ইনকা সভ্যতা, যা বর্তমান পেরু, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনার কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত ছিল। ইনকাদের সমাজজীবন, রাজনীতি, স্থাপত্য এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল চমকপ্রদ। এই লেখায় আমরা ইনকাদের ধর্মীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করবো এবং বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবো কিভাবে ধর্ম ইনকা সমাজের কেন্দ্রীয় স্তম্ভে পরিণত হয়েছিল।

ইনকা ধর্মের মৌলিক বৈশিষ্ট্য:

ইনকা ধর্ম ছিল বহুদেববাদী (polytheistic)। তারা বিশ্বাস করত বিভিন্ন প্রকৃতিক শক্তি এবং দেবতাকে। ইনকাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল অত্যন্ত সংগঠিত এবং শাসনব্যবস্থার সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ইনকা সমাজে ধর্ম ছিল রাজশক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের প্রধান দেবতা ছিলেন ইন্তি – সূর্যদেব। ইনকারা বিশ্বাস করত যে সম্রাট বা ‘সাপা ইনকা’ সূর্যদেব ইন্তির বংশধর। তাই সম্রাট শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নয়, তিনিও ছিলেন একজন ধর্মীয় পুরুষ – একধরনের ঈশ্বরতুল্য ব্যক্তি। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো ছিল মূলত এই ইন্তিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত।

প্রধান দেবতা ও ধর্মীয় বিশ্বাস:

১. ইন্তি (Inti): সূর্যের দেবতা, ইনকা ধর্মের সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে পূজ্য দেবতা। সূর্যই ফসল ফলায়, উষ্ণতা দেয়, প্রাণ রক্ষা করে – ইনকাদের দৃষ্টিতে সূর্য ছিল সর্বশক্তিমান।
২. পাচামামা (Pachamama): ভূমি বা মাটির দেবী। ইনকারা Pachamama-কে খুব সম্মান করত। ফসলের ঋতুতে Pachamama-কে নিবেদিত উৎসব পালন করা হতো।
৩. বিরাকোচা (Viracocha): সৃষ্টিকর্তা ও সর্বশক্তিমান দেবতা হিসেবে বিরাকোচাকে পূজা করা হতো। ইনকারা বিশ্বাস করত, এই দেবতা প্রথম পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।
৪. কুইলা (Quilla): চাঁদের দেবী, ইন্তির স্ত্রী হিসেবে কল্পিত। রাত্রিকালীন আচার-অনুষ্ঠানে কুইলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

পুরোহিত ও ধর্মীয় নেতৃত্ব: ইনকা ধর্মে পুরোহিত শ্রেণির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। রাজপরিবারের সদস্যরাই সাধারণত উচ্চপদস্থ পুরোহিত হতেন। তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন এবং রাজনীতিরও অংশ ছিলেন। বিভিন্ন মন্দিরে নিযুক্ত পুরোহিতরা সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে কাজ করতেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরোহিত ছিলেন “Villac Umu”, যিনি ছিলেন রাজ্যের প্রধান পুরোহিত এবং সম্রাটের পরে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।

মন্দির ও ধর্মীয় স্থান: ইনকাদের ধর্মীয় স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে Coricancha (সূর্য মন্দির), যা পেরুর কুসকো শহরে অবস্থিত। এই মন্দির ছিল ইন্তি দেবতার প্রধান উপাসনাস্থল। এতে সোনা দিয়ে অলংকৃত দেয়াল ও মূর্তি ছিল, যা সূর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। এছাড়াও ইনকারা তাদের দেবতাদের পূজার জন্য পর্বত, নদী, গুহা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক স্থানকে পবিত্র হিসেবে সম্মান করত। Machu Picchu-তেও সূর্য পূজার জন্য একটি আলাদা স্থান ছিল, যেখান থেকে নির্দিষ্ট দিনে সূর্যের উদয় দেখা যেত।

উৎসব ও আচার: ইনকা ধর্মজীবনে বিভিন্ন উৎসব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব ছিল Inti Raymi, সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে উদযাপিত বার্ষিক উৎসব, যা জুন মাসে অনুষ্ঠিত হতো। এই উৎসবে গান, নৃত্য, পশুবলি এবং রাজকীয় আচার হতো। এছাড়াও, ফসল তোলা, বৃষ্টি চাওয়া, মন্দির উদ্বোধন কিংবা যুদ্ধজয়ের পর বিশেষ আচার অনুষ্ঠান পালন করা হতো।

বলিদান ও আত্মোৎসর্গ: ইনকা সমাজে পশুবলি ছিল সাধারণ আচার। তারা লামা, আলপাকা এবং সাময়িকভাবে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত প্রাণীদের দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন মহামারি, খরা বা যুদ্ধজয় উপলক্ষে মানব বলিও দেওয়া হতো। এই বলির পেছনে ধারণা ছিল, জীবনের সর্বোচ্চ মূল্য দান করলে দেবতা সন্তুষ্ট হবেন এবং সমাজকে রক্ষা করবেন।

ধর্ম ও প্রশাসনের সম্পর্ক: ইনকারা তাদের ধর্মীয় মতবাদকে প্রশাসনের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে একতা বজায় রাখা হতো। যেহেতু সম্রাটকে ঈশ্বরের বংশধর হিসেবে দেখা হতো, তাই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মানেই ধর্মের বিরোধিতা – এই ধারণার ফলে ইনকা সাম্রাজ্য দীর্ঘকাল স্থায়ী ছিল। সম্রাট তার প্রতিনিধি পাঠাতেন দূরবর্তী প্রদেশে এবং সেই প্রতিনিধিরা রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মীয় দিকও তদারক করতেন।

মৃত্যু ও পরলোক বিশ্বাস: ইনকারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরে আত্মা দুই ধরনের পথে যেত: ভালো কাজ করলে আত্মা সূর্য দেবতার পাশে সুখে বাস করত, আর পাপ করলে সে যেত অন্ধকার জগতে। তারা বিশ্বাস করত আত্মা অমর, এবং পূর্বপুরুষেরা তাদের আত্মীয়দের রক্ষা করে। এই বিশ্বাস থেকেই মৃতদের সংরক্ষণ করত ইনকারা। অনেক সময় রাজপরিবারের মৃতদেহকে মমি করে রাখা হতো এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে তা বের করে আনা হতো।

ধর্মান্তর ও স্পেনীয়দের আগমন: ১৬শ শতকে স্পেনীয়রা যখন ইনকা সাম্রাজ্য আক্রমণ করে, তখন ধর্মীয় আঘাত ছিল সবচেয়ে গুরুতর। ক্যাথলিক মিশনারিরা ইনকাদের প্রথাগত ধর্মকে ‘বেঈমানী’ ও ‘মূর্তিপূজা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ধ্বংস করতে থাকে। হাজার হাজার মন্দির ধ্বংস করা হয়, পুরোহিতদের হত্যা করা হয়। এমনকি Coricancha মন্দিরের জায়গায় সান্তো দোমিঙ্গো গির্জা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আজও পেরুর গ্রামাঞ্চলে কিছু প্রাচীন ধর্মীয় রীতি টিকে আছে – সূর্যপূজা, Pachamama-কে নিবেদিত উৎসব ইত্যাদি।

উপসংহার: ইনকাদের ধর্মীয় জীবন শুধু একটি বিশ্বাসপদ্ধতি নয়, বরং তাদের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির গভীর ভিত্তি ছিল। তাদের ধর্মীয় আচার ছিল প্রাকৃতিক উপাদান, মানবজীবন এবং সমাজ সংগঠনের এক অপূর্ব মিলন। যদিও ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ তাদের ধর্মীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে দেয়, তবুও ইনকা ধর্মের ছাপ আজও আন্দিজ পর্বতমালার গ্রামাঞ্চলে টিকে আছে। এই ধর্মীয় ঐতিহ্য আমাদের শেখায় – প্রকৃতি, শ্রদ্ধা ও সামাজিক সংহতি কিভাবে একটি সাম্রাজ্যের ভিত্তি হতে পারে।

UNIT-2 মিশর, মেসোপটেমিয়া, চীন এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা

*****2) প্রশ্ন. মিনোয়ান সভ্যতার অর্থনৈতিক অবস্থার উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। (৫ নম্বর, ২০২১)

ভূমিকা:

মিনোয়ান সভ্যতা (Minoan Civilization) মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ইউরোপের প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ থেকে ১১০০ অব্দ পর্যন্ত এর বিস্তার ছিল। এ সভ্যতার কেন্দ্র ছিল বর্তমান গ্রীসের ক্রিট (Crete) দ্বীপে। ব্রোঞ্জ যুগে গড়ে ওঠা মিনোয়ান সভ্যতা তার কৃত্তিম নকশা, রাজপ্রাসাদ, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সর্বোপরি একটি উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

অর্থনৈতিক অবস্থার পরিচয়:

মিনোয়ান সভ্যতার অর্থনীতি ছিল বহুমুখী ও সমৃদ্ধ। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও সামুদ্রিক যোগাযোগ ছিল এই সভ্যতার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি। সমুদ্রবেষ্টিত ক্রিট দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান মিনোয়ানদের অর্থনীতিকে সমুদ্র নির্ভর করে তোলে এবং তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দক্ষ করে তোলে।

১. কৃষিনির্ভর অর্থনীতি: মিনোয়ান অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ ছিল কৃষি। দ্বীপটির উর্বর ভূমি এবং অনুকূল জলবায়ু কৃষিকাজে বিশেষ সহায়ক ছিল। তারা গম, যব, আঙুর, জলপাই এবং নানা ধরনের ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদন করত। জলপাই ফল ও তার তেল উৎপাদন ছিল মিনোয়ানদের প্রধান পণ্য, যা স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হতো এবং রপ্তানির জন্যও ব্যবহৃত হতো। গৃহপালিত পশুপালন, বিশেষ করে ছাগল ও ভেড়া পালনও ছিল অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এদের থেকে দুধ, মাংস, চামড়া ও পশম পাওয়া যেত, যা স্থানীয় ব্যবহারের পাশাপাশি বাণিজ্যেও ব্যবহৃত হতো।

২. শিল্প ও হস্তশিল্প: মিনোয়ান সভ্যতার আর্থিক সমৃদ্ধির আরেকটি দিক ছিল তাদের উন্নত শিল্পচর্চা। বিশেষত সিরামিক শিল্প, ধাতব শিল্প, কাপড় বুনন এবং মৃৎশিল্পে মিনোয়ানরা দক্ষতা অর্জন করেছিল। তাঁরা অলঙ্কার তৈরি করত সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ দিয়ে। পাথর কাটা, চিত্রাঙ্কন এবং রাজপ্রাসাদগুলির দেয়ালে দেওয়ালচিত্র (fresco painting) তৈরি ছিল তাদের কৌশলগত শিল্পের নমুনা। এই শিল্পকর্ম শুধুমাত্র রূপসজ্জার জন্য ছিল না, বরং তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিরও পরিচায়ক।

৩. সামুদ্রিক বাণিজ্য: মিনোয়ান সভ্যতার অর্থনৈতিক উন্নতির মূল চাবিকাঠি ছিল তাদের সমুদ্রপথে বাণিজ্য। তাদের জন্য সমুদ্র ছিল বাণিজ্য পথ এবং আর্থিক সমৃদ্ধির উৎস। ক্রিট দ্বীপের অবস্থান এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের সংযোগস্থলে থাকায়, তারা সহজেই এইসব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তারা মিশর, সাইপ্রাস, সিরিয়া, ফিনিশিয়া ও মাইকেনিয়ান গ্রীসের সঙ্গে বাণিজ্য করত। প্রধান রপ্তানিপণ্য ছিল জলপাই তেল, মৃৎপাত্র, কাপড়, ধাতব বস্তু ও গয়নাগাটি। আর আমদানিকৃত পণ্যগুলির মধ্যে ছিল তামা, সোনা, মূল্যবান পাথর, মশলা ও বিলাসপণ্যের সামগ্রী।

৪. নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক কাঠামো: মিনোয়ান সভ্যতা অত্যন্ত সুসংগঠিত নগর জীবনের প্রতীক। ‘কনসোস’ (Knossos), ‘ফাইসটোস’ (Phaistos), ‘মালিয়া’ (Malia) এবং ‘জাক্রোস’ (Zakros) ছিল তাদের প্রধান নগর কেন্দ্র। এই নগরগুলিতে গড়ে ওঠা রাজপ্রাসাদগুলি শুধু প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল না, বরং তা ছিল অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের প্রাণকেন্দ্র। রাজপ্রাসাদগুলোতে বিরাট গুদামঘর, দালানকোঠা এবং উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। খাদ্যশস্য, অলঙ্কার, কাপড়, তেল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী এখানে সংরক্ষণ এবং বণ্টন করা হতো। রাজা বা প্রশাসনিক প্রধানরা ছিলেন এই অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক।

৫. মুদ্রাব্যবস্থা ও আদান-প্রদান পদ্ধতি: মিনোয়ান সভ্যতায় পূর্ণাঙ্গ ধাতব মুদ্রার অস্তিত্ব না থাকলেও, পণ্য বিনিময় প্রথা (barter system) ছিল ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যদিও কিছু গবেষক মনে করেন মিনোয়ানরা ধাতব কয়েন বা টোকেনজাতীয় বস্তু ব্যবহার করত পণ্যের পরিমাপের জন্য। এই আদান-প্রদান প্রক্রিয়া ছিল সংগঠিত এবং রাজপ্রাসাদনির্ভর।

৬. পরিবহন ও নৌ প্রযুক্তি: অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি বড় কারণ ছিল তাদের উন্নত নৌ নির্মাণ প্রযুক্তি। তারা বাণিজ্য জাহাজ তৈরি করেছিল, যা বহুদূর পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারত। তারা বন্দর নির্মাণ এবং জাহাজ নোঙর করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছিল, যা সামুদ্রিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সহায়ক হয়।

৭. শ্রমিকশ্রেণি ও পেশাগত বিভাজন: মিনোয়ান অর্থনীতিতে পেশাগত বিভাজন ছিল স্পষ্ট। কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, মৃৎশিল্পী, ধাতব কর্মী, নাবিক, বণিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারী—এদের মধ্যে পরিষ্কার পেশাগত ভেদ ছিল। এই বিভাজনের মাধ্যমে এক সুসংবদ্ধ অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে।

৮. নারীর ভূমিকা :মিনোয়ান সমাজে নারীর মর্যাদা ছিল তুলনামূলকভাবে উন্নত এবং তারা অর্থনৈতিক কাজেও অংশগ্রহণ করত। নারীরা বিশেষ করে তাঁত শিল্প ও মৃৎশিল্পে নিয়োজিত থাকতেন। অনেক শিল্পচিত্রে নারীদের অংশগ্রহণকে চিত্রিত করা হয়েছে, যা এ ধারণাকে সমর্থন করে।

৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনীতির পতন: খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০ সালের দিকে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ (থেরা/স্যান্টোরিনি) ও পরবর্তী সুনামির ফলে মিনোয়ান সভ্যতার বহু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে কৃষি ও বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্যোগ তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলে এবং মাইকেনীয়দের হাতে তাদের কর্তৃত্ব চলে যায়।

উপসংহার: মিনোয়ান সভ্যতার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল যুগান্তকারী ও উদ্ভাবনী। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য এবং সামুদ্রিক দক্ষতা ছিল এ সভ্যতার মূল স্তম্ভ। তাদের অর্থনীতি কেবলমাত্র স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা একটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত হয়েছিল। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বহিরাগত আক্রমণের কারণে এই সভ্যতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবুও এদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কাঠামো ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

Unit - 3: প্রাচীন গ্রীসের পলিস ও দাসপ্রথা-ভিত্তিক সমাজ এবং প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য

*****3) প্রশ্ন. এথেনীয় সমাজে নারীদের অবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর। (৫ নম্বর)

এথেনীয় সমাজের নারীদের অবস্থা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রাচীন এথেনীয় সমাজ ছিল পুরুষতান্ত্রিক, যেখানে নারীদের ভূমিকা ও অধিকার অনেক সীমিত ছিল। এথেনীয় সমাজে নারীরা প্রধানত গৃহস্থালি ও পারিবারিক জীবনে সীমাবদ্ধ থাকতেন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম এবং সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অধিকার ছিল না বললেই চলে। নিচে এথেনীয় সমাজে নারীদের অবস্থার বিভিন্ন দিক সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করা হলো—

১. সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান: এথেনীয় সমাজে নারীদের প্রধান ভূমিকা ছিল গৃহিণী বা গৃহস্থালির কাজকর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারা সংসারের দায়িত্ব পালন করতেন, সন্তান জন্ম দিতেন এবং সংসারের যাবতীয় কাজে নিয়োজিত থাকতেন। নারীদের বাড়ির বাইরে স্বাধীন চলাফেরা করার সুযোগ ছিল সীমিত। সাধারণত নারীরা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতেন। এ কারণে নারীদের সমাজের বাইরে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত নগণ্য। এছাড়াও, নারীরা পরিবারে পতি ও সন্তানদের সেবায় নিবেদিত ছিলেন। তাদের শিক্ষা ছিল সীমিত, কারণ শিক্ষার অধিকাংশ সুযোগ পুরুষদের জন্যই বরাদ্দ ছিল। নারীরা সাধারণত গৃহকর্ম, রান্না-বান্না, বাচ্চাদের লালন-পালন এবং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে পুরুষদের সহযোগিতা করাই তাদের প্রধান কাজ।

২. রাজনৈতিক ও আইনি অধিকার: এথেনীয় সমাজে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার ছিল সম্পূর্ণ শূন্য। ভোটাধিকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না। তারা নাগরিক গণতন্ত্রের কোনো অংশীদার ছিলেন না। সংসদে বক্তৃতা দেওয়া বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। নারীরা নাগরিকত্বও পাননি, তাই তারা কোনো সরকারি দায়িত্বও পালন করতে পারেননি। আইনগতভাবে, নারীরা ‘অধিকারহীন’ ছিলেন। তারা নিজেরা মামলা করতে পারেননি, নিজের সম্পত্তি বা অর্থের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতেন না। তাদের পতি বা অভিভাবক (পিতৃদ্বারা নিয়ন্ত্রিত) তাদের সম্পত্তি ও অর্থ পরিচালনা করতেন। নারীরা যখন বিবাহিত হত, তখন তাদের আইনি অধিকার সম্পূর্ণ পতি বা অভিভাবকের হাতে চলে যেত। একজন বিবাহিত নারী ছিলেন আইনের দৃষ্টিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক।

৩. শিক্ষার সুযোগ: প্রাচীন এথেনীয় সমাজে শিক্ষার সুযোগ ছিল পুরুষদের জন্যই। নারীদের সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হত না। যদিও কিছু উচ্চবিত্ত পরিবারে নারীরা ঘরোয়া শিক্ষায় দক্ষ হতে পারতেন, তবুও তারা স্কুলে পড়াশোনা করতেন না বা সুশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত ছিল। শিক্ষার অভাবের কারণে নারীরা মূলত গৃহস্থালির কাজকর্ম এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতেই প্রাথমিক ভূমিকা পালন করতেন। তারা লেখাপড়া বা গণিত শিক্ষায় অংশ নিতেন না, যার ফলে তারা পণ্ডিত বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমাজে স্বীকৃতি পেতেন না।

৪. বিবাহ ও পারিবারিক সম্পর্ক: এথেনীয় সমাজে নারীদের বিবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় ছিল। নারীদের মূল কর্তব্য ছিল সন্তানের জন্ম দিয়ে পরিবারের বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীদের স্বাধীনতা ছিল খুবই সীমিত। তাদের পিতামাতা বা অভিভাবকই বিবাহ ঠিক করতেন। বিবাহের পর নারীরা স্বামীর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসতেন এবং সাধারণত নিজস্ব সম্পত্তি ও অধিকার ছিল না। পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য নারীদের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ ছিল পতি বা স্বামী এবং পরিবারের অভিভাবকদের হাতে। বিবাহিত নারীদের জন্য পরিবারে চুপচাপ থেকে নিজেদের কর্তব্য পালনের প্রবণতা বেশি ছিল।

৫. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা: যদিও এথেনীয় নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিল সীমিত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাদের কিছু ভূমিকা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে তারা মন্দিরে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন, বিশেষ করে দেবী আর্তেমিস ও দেবী অাথেনার উৎসবে। নারীরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেমন পূজা, মন্ত্রোচ্চারণ ও উৎসবের আয়োজন করতেন, যা সমাজে তাদের একটা স্বীকৃতির স্থান তৈরি করেছিল। তবে এসব কর্মকাণ্ডও ছিল সামাজিক নিয়ম ও সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

৬. নারীর শ্রেণিবিভেদ ও অবস্থা: এথেনীয় সমাজে নারীদের অবস্থান ছিল তাদের শ্রেণির ওপরও নির্ভরশীল। উচ্চবিত্ত ও ধনী পরিবারে জন্ম নেওয়া নারীরা তুলনামূলক সুরক্ষিত ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতেন। তাদের গৃহস্থালি কাজকর্মে সাহায্য করার জন্য দাস-কর্মচারী থাকত এবং তাদের শিক্ষা-শিক্ষণেও কিছুটা সুযোগ পেতেন। অন্যদিকে, নিম্নবিত্ত বা দাস সম্প্রদায়ের নারীদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। তারা অধিকাংশ সময় কাজের চাপে পরিবারের বাইরে থেকেও কাজ করতেন। দাস নারীদের কোনো সামাজিক মর্যাদা বা স্বাধীনতা ছিল না, তাদের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ শোষিত।

৭. নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক বিধিনিষেধ ও কড়াকড়ি: এথেনীয় সমাজে নারীদের স্বাধীনতা সীমিত করার জন্য নানা সামাজিক নিয়ম-কানুন বিদ্যমান ছিল। নারীদের আচরণে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল, যেন তারা ‘সমাজের সম্মান’ রক্ষা করতে পারে। সামাজিক নিয়মে নারীদের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তাদের মুখোশ ব্যবহার করতেও বাধ্য করা হতো যাতে তারা পরিচিত না হয়। কোনো নারী যদি সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘন করতো, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। এ কারণে নারীরা অনেক সময় সমাজের বাইরে থেকে বিচ্ছিন্ন ও লজ্জিত বোধ করতেন।

৮. নারীদের কাজ ও পেশা: এথেনীয় নারীদের অধিকাংশ কাজ ছিল গৃহস্থালি। তবে নিম্নবিত্ত নারীরা কখনও কখনও বাজারে ঝুলিতে পণ্য বিক্রি করতেন, বা কৃষিজমিতে কাজ করতেন। তারা প্রায়শই কাপড় বোনা, হাতের কাজ বা অন্যান্য গৃহকর্ম করতেন। পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান ছিল সীমিত। তারা কোনো সরকারি চাকরিতে অংশ নিতেন না, ব্যবসা-বাণিজ্যে তাদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। এথেনীয় সমাজে নারীদের পেশাগত স্বাধীনতা ছিল না।

৯. নারীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ভবিষ্যৎ প্রভাব: যদিও এথেনীয় নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত সীমিত ও অবহেলিত, তাদের ভূমিকা পরবর্তীকালে গ্রীক ও বিশ্বসভ্যতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের মাধ্যমে গৃহস্থালি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়েছিল। নারীদের সামাজিক অবস্থার উন্নতি অনেক পরে গ্রীসীয় সমাজে ঘটে, যেখানে তারা কিছু পরিমাণ শিক্ষা ও স্বাধীনতা পায়। তবে এথেনীয় সমাজে নারীদের এই সীমাবদ্ধতা প্রাচীন সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রতিফলন।

উপসংহার: সংক্ষেপে বলা যায়, এথেনীয় সমাজে নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত সীমিত ও অবহেলিত। তারা মূলত গৃহিণী ও সন্তানের মা হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করতেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনি অধিকারে তাদের অংশগ্রহণ ছিল অনুপস্থিত। শিক্ষায়, কর্মসংস্থানে ও স্বাধীন চলাফেরায় নারীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতো। তবে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে নারীদের কিছু ভূমিকা ছিল, যা তাদের সমাজে কিছু সম্মান এনে দিয়েছিল। সামগ্রিকভাবে, এথেনীয় সমাজে নারীদের অবস্থা পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম-কানুনের কবলে ছিল এবং স্বাধীনতা ছিল অল্প। এ বিষয়টি প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাধারা এবং সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়।

Unit -4: কেন্দ্রীয় ইসলামিক ভূখণ্ডের সমাজ

*****4) প্রশ্ন. নবী মহম্মদ (সা.) ইসলামে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন?

ভূমিকা:

ইতিহাসে এমন অনেক যুগ কেটেছে যখন নারীকে সমাজে অবহেলা ও লাঞ্ছনার চোখে দেখা হতো। ইসলামপূর্ব আরব সমাজেও নারীরা ছিল অত্যন্ত নিগৃহীত, অবহেলিত ও অগ্রহণযোগ্য এক সম্প্রদায়। কন্যাশিশুদের জীবিত কবর দেওয়া হতো, নারীরা ছিল পুরুষের ভোগ্য বস্তু। এমন এক অমানবিক পরিস্থিতিতে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নারী জাতির মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি নারীদের শুধু অধিকারই প্রদান করেননি, বরং তাদের সমাজ, পরিবার এবং ধর্মীয় জীবনে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। নিচে নবী মুহাম্মদ (সা.) নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো।

১. কন্যাসন্তানের অধিকার প্রতিষ্ঠা:

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের পূর্বে আরব সমাজে কন্যাসন্তান জন্ম হলে তা লজ্জার বিষয় মনে করা হতো। এমনকি অনেকেই কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। কুরআনে এই বর্বর প্রথার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়:
“যখন জীবন্ত কবর দেওয়া কন্যা শিশুকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?” (সূরা তাকভীর, আয়াত ৮-৯)
নবী মুহাম্মদ (সা.) এর বিরুদ্ধাচরণ করে নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং কন্যাসন্তান পালন ও তাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন: "যে ব্যক্তি কন্যাসন্তানদের লালন-পালন করবে এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।" (সহীহ মুসলিম)

২. নারী-শিক্ষার গুরুত্ব:

মহানবী (সা.) নারীদের শিক্ষার উপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন: “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান (নারী ও পুরুষ) এর উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ) তিনি নারী সাহাবীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করেছিলেন এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলেছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন একাধারে ধর্মতত্ত্ববিদ, হাদীস বর্ণনাকারী এবং নারীদের মধ্যে একজন মহান শিক্ষিকা।

৩. বিবাহ ও নারীর সম্মতি:

ইসলাম নারীদের বিবাহের ক্ষেত্রে সম্মতির অধিকার দিয়েছে, যা নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতিষ্ঠিত করেন। পূর্বে নারীদের মতামত ছাড়াই তাদের বিবাহ সম্পন্ন করা হতো। নবী করিম (সা.) বলেন:
"যে নারীর বিবাহ তার অনুমতি ছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে, সেই বিবাহ বাতিল।" (সহীহ বুখারী)
তিনি নারীকে তার পছন্দ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন।

৪. উত্তরাধিকারের অধিকার:

ইসলামের আগমনের পূর্বে নারী উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছিল। নবী মুহাম্মদ (সা.) কুরআনের মাধ্যমে নারীকে উত্তরাধিকারের অধিকার দেন: “পুরুষের যেমন উত্তরাধিকারে অংশ আছে, নারীরও তেমন অংশ আছে।” (সূরা নিসা, আয়াত ৭) এই আয়াতের মাধ্যমে নারী, বিশেষ করে কন্যা, স্ত্রী, মা ও বোনেরা উত্তরাধিকারে নির্দিষ্ট অংশ পায়, যা আগে ছিল না।

৫. নারীর কর্ম ও সম্পত্তির অধিকার:

নবী মুহাম্মদ (সা.) নারীদের কর্মসংস্থান ও সম্পত্তির মালিকানা স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইসলাম মতে, নারী তার উপার্জনের অধিকারী এবং সে যে সম্পত্তি উপার্জন করে বা পায়, তা তার একান্ত নিজস্ব। কেউ তাতে অধিকার করতে পারে না। হজরত খাদিজা (রা.) নিজে একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মহানবী (সা.) এর সঙ্গে তার বিয়ের পরও ব্যবসায় নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রেখেছিলেন।

৬. নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা:

মহানবী মুহাম্মদ (সা.) নারীদের সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য বারবার আহ্বান করেছেন। তিনি বলেন:
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি)
তিনি নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহারকে ঈমানদারিত্বের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং নারীদের অপমান বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দেন।

৭. মাতৃত্বের মর্যাদা:

মহানবী (সা.) মাতৃত্বকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছেন। তিনি বলেন: “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে।” (নাসায়ী) তিনি আরও বলেন:
“এক ব্যক্তি মহানবীর (সা.) নিকট এসে বলল— আমার সদ্ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন: ‘তোমার মা’। ব্যক্তি আবার জিজ্ঞাসা করল, তারপর কে? তিনি বললেন: ‘তোমার মা’। ব্যক্তি আবার বলল, তারপর কে? তিনি বললেন: ‘তোমার মা’। আবার সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন: ‘তোমার বাবা’। ”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম

৮. নারীদের ইসলামি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ:

মহানবী মুহাম্মদ (সা.) নারীদের শুধু গৃহস্থালি কাজেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নারীরা “বাইআত” অর্থাৎ আনুগত্যের শপথ করেছিলেন, যা ছিল এক প্রকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার।

৯. নারীদের ধর্মীয় অধিকার:

নবী করিম (সা.) নারীদের ইবাদত, মসজিদে যাওয়ার অধিকার ও ধর্মীয় শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেন। হাদীসে এসেছে:
"তোমরা তোমাদের নারীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিও না।” (সহীহ মুসলিম)
তবে তিনি পর্দা ও শালীনতার সীমা বজায় রাখার দিকেও গুরুত্ব দেন।

১০. নারী নির্যাতন রোধে পদক্ষেপ:

নবী মুহাম্মদ (সা.) নারীদের উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করেন এবং স্বামীদের তাদের স্ত্রীর প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি হজের বিদায় ভাষণে বলেন:
“হে মানুষ! নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর নাম নিয়ে গ্রহণ করেছ।”
এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নারীকে সুরক্ষার চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছেন।

উপসংহার:

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এমন এক যুগে নারীদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, যখন নারীরা ছিল অবহেলিত, নির্যাতিত ও অধিকারবঞ্চিত। তিনি কন্যাসন্তান, স্ত্রী, মা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণকারী হিসেবে নারীদের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করেন। আজকের আধুনিক বিশ্বেও নারী অধিকারের প্রসঙ্গে যখন প্রশ্ন উঠে, তখন মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা ও পদক্ষেপগুলো এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে যায়।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

Kalyani University B.A 2nd Semester History Major ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)