
Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 2nd Semester History SEC Nep Suggestions 2025
Studies in Electronic Communication System
Kalyani University B.A 2nd Semester History SEC Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit–1:
কম্পিউটারের মৌলিক বিষয় এবং এর কর্মক্ষমতা, কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ, কম্পিউটার প্রজন্মের ইতিহাস, ডিরেক্টরিজ বা পরিচালকবর্গ, ইনপুট ইউনিট, আউটপুট ইউনিট, কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার।
প্রযুক্তি ও যন্ত্র: ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ইতিহাস।
Unit–2:
ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনের প্রযুক্তি ও যন্ত্র, ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ইতিহাস, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ডিভাইস এবং তাদের ব্যবহার, এনালগ এবং ডিজিটাল যোগাযোগ।
Unit–3:
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের পরিচিতি - ডেটা যোগাযোগ, উপাদান, নেটওয়ার্কের বিভাগ (LAN, MAN, WAN), নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, ইন্টারনেটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থা, প্রোটোকল ও মান।
Unit–4:
পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ও অ্যানিমেশন তৈরি, গুগল ড্রাইভের বিভিন্ন উপাদান এবং তাদের ব্যবহার, গুগল মিটের মাধ্যমে উপস্থাপনা, ইতিহাস অধ্যয়নে ইউটিউবের ব্যবহার, ই-লাইব্রেরির ব্যবহার, ইন্টারনেট সংরক্ষণাগার - N-LIST, তরুণ শিক্ষার্থীদের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব।
Unit – 1: কম্পিউটারের ধারণা, শ্রেণী, ইতিহাস, উপাদান ও যোগাযোগ।
*****1) প্রশ্ন.Software কী? কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার সফটওয়্যারের বর্ণনা কর। অথবা, সফটওয়্যার কাকে বলে? সফটওয়্যারের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার বা কাজ সম্পর্কে লেখ। (৫/১০)
ভূমিকা:
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, যোগাযোগ, গবেষণা—প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। কিন্তু একটি কম্পিউটার কেবল যন্ত্রাংশ (Hardware) দ্বারা গঠিত হলেও, সেটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলে সফটওয়্যার (Software)। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার অংশ যেন মানুষের শরীর, আর সফটওয়্যার হলো তার মস্তিষ্কের নির্দেশাবলী। সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকে। তাই সফটওয়্যারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
সফটওয়্যারের সংজ্ঞা:
সফটওয়্যার হলো একগুচ্ছ প্রোগ্রাম, নির্দেশ বা ডেটার সমষ্টি, যা কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করে।
সহজ ভাষায়, সফটওয়্যার হলো এমন এক অদৃশ্য উপাদান, যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে চালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে।
📌 উদাহরণ:
MS Word, Windows Operating System, Google Chrome, Adobe Photoshop ইত্যাদি।
সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা:
সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার কেবল একগুচ্ছ সার্কিট ও মেশিনের সমষ্টি, যা কোনো কাজ করতে সক্ষম নয়। সফটওয়্যারই নির্ধারণ করে কোন হার্ডওয়্যার কিভাবে কাজ করবে, কীভাবে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ হবে এবং ব্যবহারকারীর ইনপুট অনুযায়ী আউটপুট তৈরি হবে।
1. হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ – প্রতিটি হার্ডওয়্যার ডিভাইস সঠিকভাবে কাজ করতে সফটওয়্যারের নির্দেশ অনুসরণ করে।
2. ডেটা প্রক্রিয়াকরণ – কাঁচা ডেটাকে (Raw Data) অর্থবহ তথ্য (Information) এ রূপান্তর করে।
3. ব্যবহারকারী সংযোগ – User Interface এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারে।
4. নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন – যেমন: হিসাব করা, ডকুমেন্ট তৈরি, ছবি সম্পাদনা, গেম খেলা ইত্যাদি।
সফটওয়্যারের প্রধান শ্রেণিবিভাগ:
সফটওয়্যারকে সাধারণত দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়—
1. সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software)
2. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার (Application Software)
এছাড়াও সহায়ক হিসাবে ইউটিলিটি সফটওয়্যার (Utility Software) ও প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার (Programming Software) উল্লেখযোগ্য।
১. সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software):
সংজ্ঞা: সিস্টেম সফটওয়্যার হলো সেই ধরনের সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং হার্ডওয়্যার পরিচালনা করে। এটি কম্পিউটার চালু করা, মেমোরি নিয়ন্ত্রণ, ডিভাইস পরিচালনা এবং সিস্টেম রিসোর্স ব্যবস্থাপনার কাজ করে।
📌 প্রধান কাজ:
• কম্পিউটার চালু হওয়ার সময় সিস্টেম লোড করা
• হার্ডওয়্যার ডিভাইস (প্রিন্টার, কীবোর্ড, মনিটর ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করা
• মেমোরি ও প্রসেস ম্যানেজমেন্ট
• সিস্টেম সিকিউরিটি নিশ্চিত করা
উদাহরণ:
Windows OS, macOS, Linux, Android OS।
সিস্টেম সফটওয়্যারের উপশ্রেণি:
1. অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) – যেমন Windows 10, Linux, Android।
2. ডিভাইস ড্রাইভার (Device Drivers) – প্রিন্টার ড্রাইভার, গ্রাফিক্স কার্ড ড্রাইভার।
3. ফার্মওয়্যার (Firmware) – হার্ডওয়্যারের ভেতরে এমবেড করা সফটওয়্যার।
২. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার (Application Software):
সংজ্ঞা: অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হলো সেই ধরনের সফটওয়্যার যা ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য তৈরি করা হয়। এটি সিস্টেম সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
📌 প্রধান কাজ:
• ডকুমেন্ট তৈরি
• হিসাব-নিকাশ করা
• ছবি বা ভিডিও সম্পাদনা
• ইন্টারনেট ব্রাউজিং
• গেম খেলা
উদাহরণ:
MS Word, Excel, PowerPoint, Google Chrome, VLC Media Player, Photoshop।
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের ধরন:
1. সাধারণ উদ্দেশ্য সফটওয়্যার (General Purpose) – MS Office, Photoshop।
2. বিশেষ উদ্দেশ্য সফটওয়্যার (Special Purpose) – ব্যাংকিং সফটওয়্যার, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
3. ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (Web Applications) – Gmail, Facebook, YouTube।
৩. ইউটিলিটি সফটওয়্যার (Utility Software):
সংজ্ঞা: ইউটিলিটি সফটওয়্যার হলো সিস্টেম পারফরম্যান্স বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সিস্টেম ত্রুটি দূর করার জন্য তৈরি প্রোগ্রাম।
📌 প্রধান কাজ:
• ভাইরাস সনাক্ত ও অপসারণ
• ডেটা ব্যাকআপ
• ফাইল কম্প্রেশন
• ডিস্ক ক্লিনআপ ও ডিফ্র্যাগমেন্টেশন
উদাহরণ:
Antivirus (Avast, Kaspersky), WinRAR, CCleaner।
৪. প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার (Programming Software):
সংজ্ঞা: প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার হলো এমন টুল যা প্রোগ্রামাররা নতুন সফটওয়্যার তৈরি, পরীক্ষা ও ডিবাগ করার জন্য ব্যবহার করে।
📌 প্রধান কাজ:
• প্রোগ্রাম কোড লেখা
• কোড অনুবাদ (Compilation)
• ডিবাগিং ও টেস্টিং
উদাহরণ:
Turbo C++, Python IDLE, Eclipse, Visual Studio।
সফটওয়্যারের কাজ বা ব্যবহার:
সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার একেবারেই কাজ করতে সক্ষম নয়। নিচে সফটওয়্যারের প্রধান কাজগুলো তুলে ধরা হলো—
1. ডেটা ইনপুট ও আউটপুট নিয়ন্ত্রণ
2. গণনা ও বিশ্লেষণ
3. তথ্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার
4. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা
5. স্বয়ংক্রিয়করণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কার্যকর করা
সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য:
1. অদৃশ্য – হার্ডওয়্যারের মতো স্পর্শযোগ্য নয়।
2. সহজে আপডেটযোগ্য – নতুন সংস্করণে আপগ্রেড করা যায়।
3. হার্ডওয়্যারের ওপর নির্ভরশীল – সঠিক হার্ডওয়্যার ছাড়া কাজ করে না।
4. নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসম্পন্ন – প্রতিটি সফটওয়্যার একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি।
সফটওয়্যারের গুরুত্ব:
• শিক্ষা ও গবেষণায় সহায়ক
• ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় অপরিহার্য
• চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সহায়ক
• যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুততা আনা
• বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত
উপসংহার:
সারসংক্ষেপে বলা যায়, সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের প্রাণস্বরূপ। এটি ছাড়া কম্পিউটার কেবল একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র হিসেবে থেকে যাবে, যার কোনো কার্যক্ষমতা নেই। সঠিক সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা জটিল থেকে জটিল কাজও কয়েক সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে পারি। বর্তমান যুগে সফটওয়্যার উন্নয়ন ও ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ, দ্রুত ও কার্যকর করে তুলেছে। তাই প্রযুক্তি-নির্ভর সমাজে সফটওয়্যারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
Unit – 2: ইলেকট্রনিক যোগাযোগের প্রযুক্তি, ডিভাইস ও ধরণ।
*****2) প্রশ্ন. ‘কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা’ বলতে কী বোঝ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লিখ। (১০) [২০২৩]
ভূমিকা: মানুষ সামাজিক প্রাণী। সমাজে বাস করতে হলে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও তথ্যের আদান–প্রদান অপরিহার্য। এই পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের প্রক্রিয়াই হলো যোগাযোগ। যোগাযোগ শুধু কথার মাধ্যমে নয়, বরং অঙ্গভঙ্গি, লিখিত ভাষা, ছবি, শব্দ ও প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে। শিক্ষা, ব্যবসা, প্রশাসন কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একটি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষক–শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কর্মকর্তা–কর্মচারী, ব্যবসায় ক্ষেত্রে ক্রেতা–বিক্রেতা—প্রত্যেক সম্পর্কেই যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র তথ্য পাঠানোই যথেষ্ট নয়; সেই তথ্য যেন সঠিকভাবে, সময়মতো, প্রাসঙ্গিক ও সহজবোধ্যভাবে প্রাপকের কাছে পৌঁছায়—এটাই একটি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য।
কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার সংজ্ঞা: কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে প্রেরক তার বার্তা এমনভাবে প্রেরণ করেন যে প্রাপক সেই বার্তাকে সঠিকভাবে গ্রহণ ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া প্রদান করে। এটি এমন একটি যোগাযোগ প্রক্রিয়া যেখানে— বার্তা স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন থাকে, প্রাপকের কাছে সময়মতো পৌঁছে যায়, বার্তা প্রাপকের বোধগম্য হয় এবং প্রাপক সেই বার্তার উপর উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে। অর্থাৎ, কার্যকর যোগাযোগ হলো এমন একটি আদান–প্রদান ব্যবস্থা যা তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি বোঝাপড়া এবং প্রতিক্রিয়ার নিশ্চয়তা দেয়।
কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য: তথ্যের সঠিক বিনিময় নিশ্চিত করা – যাতে প্রেরক ও প্রাপক উভয়ই একই অর্থে বার্তাকে গ্রহণ করেন। সম্পর্ক দৃঢ় করা – সামাজিক, পেশাগত বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সমস্যা সমাধান করা – ভুল বোঝাবুঝি দূর করে সমাধানের পথ বের করা। লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা – পরিকল্পনা ও কর্মসম্পাদনে সহায়ক হওয়া। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ – প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিক সময়ে পাওয়া গেলে সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হয়।
কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১. বার্তার স্পষ্টতা (Clarity of Message): বার্তাটি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হওয়া উচিত। অস্পষ্ট বা বিভ্রান্তিকর বার্তা যোগাযোগকে দুর্বল করে। যেমন, শিক্ষক যদি ক্লাসে এমন ভাষা ব্যবহার করেন যা শিক্ষার্থীরা বোঝে না, তবে তা কার্যকর হবে না।
২. সংক্ষিপ্ততা (Conciseness): অতিরিক্ত শব্দ বা অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিয়ে মূল বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত। সংক্ষিপ্ত বার্তা প্রাপকের মনোযোগ ধরে রাখে এবং সময় সাশ্রয় করে।
৩. প্রাসঙ্গিকতা (Relevance): বার্তাটি প্রাপকের প্রয়োজন ও পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত হওয়া দরকার। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য যোগাযোগকে জটিল করে তোলে।
৪. সঠিক সময়ে প্রেরণ (Timeliness): বার্তা যদি দেরিতে পৌঁছায়, তবে তা অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে যায়। তাই সময়মতো তথ্য প্রদান করা জরুরি।
৫. বোধগম্য ভাষা (Understandable Language): প্রাপকের শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত স্তরের সাথে মিল রেখে ভাষা ব্যবহার করতে হবে। জটিল বা অচেনা শব্দ ব্যবহার করলে বার্তা বোঝা কঠিন হয়।
৬. প্রতিক্রিয়া পাওয়ার সুযোগ (Feedback Mechanism): কার্যকর যোগাযোগে প্রাপকের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া অপরিহার্য। প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বোঝা যায় প্রাপক বার্তাটি সঠিকভাবে বুঝেছে কি না।
৭. বিশ্বাসযোগ্যতা (Credibility): প্রেরকের প্রতি প্রাপকের আস্থা থাকা জরুরি। অবিশ্বস্ত প্রেরকের বার্তা কার্যকর হয় না।
৮. উপযুক্ত মাধ্যমের ব্যবহার (Use of Proper Channel): যোগাযোগের মাধ্যম বেছে নেওয়ার সময় বিষয়বস্তু, প্রাপক এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। যেমন— জরুরি বার্তার জন্য ফোন বা ই-মেইল, আনুষ্ঠানিক নথির জন্য চিঠি বা নোটিশ ইত্যাদি।
৯. আবেগীয় ভারসাম্য (Emotional Balance): অত্যধিক রাগ, উত্তেজনা বা হতাশা যোগাযোগের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। শান্ত ও যুক্তিনির্ভর মনোভাব কার্যকর যোগাযোগে সহায়ক।
১০. একমুখী নয়, দ্বিমুখী প্রবাহ (Two-Way Process): কার্যকর যোগাযোগ সর্বদা দুই–মুখী হয়। প্রেরক বার্তা পাঠান এবং প্রাপক প্রতিক্রিয়া জানান। এই পারস্পরিক বিনিময়ই যোগাযোগকে পূর্ণতা দেয়।
কার্যকর যোগাযোগের উদাহরণ: শিক্ষাক্ষেত্রে – শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের স্তরের সাথে মিল রেখে সহজ ভাষায় পাঠদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেন, তবে এটি কার্যকর যোগাযোগ। ব্যবসায় ক্ষেত্রে – একজন বিক্রেতা যদি ক্রেতার চাহিদা বুঝে তার উপযোগী পণ্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে তথ্য দেন, তবে তা কার্যকর যোগাযোগ। প্রশাসনে – অফিস নোটিশ স্পষ্ট ও সময়মতো প্রকাশ করলে কর্মচারীরা যথাযথভাবে তা অনুসরণ করতে পারে।
কার্যকর যোগাযোগে বাধাসমূহ: ভাষাগত সমস্যা (Language Barrier), শব্দদূষণ বা পরিবেশগত বিঘ্ন (Noise), ভুল বোঝাবুঝি (Misinterpretation), প্রযুক্তিগত ত্রুটি (Technical Fault), আবেগীয় প্রভাব (Emotional Disturbance)। এই বাধাগুলি দূর করার জন্য প্রয়োজন— ভাষার সরলতা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, মনোযোগ সহকারে শোনা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বার্তা প্রদান।
কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব: শিক্ষাক্ষেত্রে – শেখার গতি বৃদ্ধি ও ফলাফলের উন্নতি। ব্যবসায় ক্ষেত্রে – উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও গ্রাহক সন্তুষ্টি। সামাজিক ক্ষেত্রে – ভুল বোঝাবুঝি কমানো এবং সম্পর্ক দৃঢ় করা। প্রশাসনে – নীতি ও সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন।
উপসংহার: মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও উন্নয়নের জন্য কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা অপরিহার্য। এটি শুধু তথ্য বিনিময় নয়, বরং বোঝাপড়া, আস্থা এবং সহযোগিতা গড়ে তোলার একটি প্রক্রিয়া। একটি বার্তা তখনই কার্যকর হয় যখন তা প্রাপকের কাছে সময়মতো, স্পষ্টভাবে এবং বোধগম্যভাবে পৌঁছায় এবং প্রাপক সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানায়। শিক্ষা থেকে শুরু করে ব্যবসা, প্রশাসন থেকে ব্যক্তিগত জীবন—সব ক্ষেত্রেই একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা সাফল্যের চাবিকাঠি।
Unit – 3: নেটওয়ার্ক ধারণা, ধরন, নিরাপত্তা ও ইন্টারনেট।
*****3) প্রশ্ন. কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ১০ (২০২৩)
ভূমিকা: মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম বিস্ময় হলো কম্পিউটার। কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ইনপুট হিসেবে প্রাপ্ত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে আউটপুট আকারে উপস্থাপন করে। বর্তমান সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, বিজ্ঞান গবেষণা, বিনোদন, যোগাযোগ—সবক্ষেত্রেই কম্পিউটারের অপরিসীম প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে ২১শ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে কম্পিউটার শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এর সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও বিদ্যমান, যা সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন।
কম্পিউটারের সংজ্ঞা: কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা নির্দিষ্ট নির্দেশ বা প্রোগ্রাম অনুসারে তথ্য প্রক্রিয়াজাত (Processing), সংরক্ষণ (Storage) এবং প্রদর্শন (Display) করতে সক্ষম। ‘কম্পিউটার’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ Compute থেকে, যার অর্থ ‘গণনা করা’। কিন্তু আধুনিক কম্পিউটার কেবল গণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি তথ্য ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ, ডেটা অ্যানালাইসিস, ডিজাইন এবং বিনোদন সহ বহুবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধা: কম্পিউটারের সুবিধাগুলি নানা দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। নিচে সেগুলি ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো—
১. দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ: কম্পিউটার মানুষের তুলনায় হাজার গুণ দ্রুত কাজ করতে পারে। অল্প সময়ে বিশাল পরিমাণ তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, গণনা বা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। উদাহরণ: ব্যাংকে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের হিসাব মিলানো, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জটিল গণনা করা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ণয় ইত্যাদি।
২. নির্ভুলতা: সঠিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হলে কম্পিউটার প্রায় শতভাগ নির্ভুলভাবে কাজ সম্পন্ন করে। মানুষের হাতে হিসাব করার সময় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু কম্পিউটারে সঠিক ইনপুট দিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
৩. বিপুল তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা: কম্পিউটার খুব অল্প জায়গায় বিপুল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনের সময় মুহূর্তের মধ্যেই তথ্য খুঁজে বের করা যায়। উদাহরণ: লাইব্রেরির হাজারো বইয়ের তথ্য ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ, হাসপাতালের রোগীর রেকর্ড রাখা ইত্যাদি।
৪. বহুমুখী ব্যবহার: কম্পিউটার শুধু হিসাব বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ নয়, শিক্ষা, বিনোদন, যোগাযোগ, নকশা তৈরি, ভিডিও সম্পাদনা, গেমস খেলা—সবক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়।
৫. যোগাযোগ সহজতর করা: ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে কম্পিউটার সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। উদাহরণ: ই-মেইল, ভিডিও কনফারেন্স, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি।
৬. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি: কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিয়েছে। সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডেটা অ্যানালিস্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার, আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশার চাহিদা বেড়েছে।
৭. স্বয়ংক্রিয়তা ও সময় সাশ্রয়: অনেক কাজ কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করে, ফলে সময় ও শ্রম উভয়ই সাশ্রয় হয়।
৮. শিক্ষা ও গবেষণায় সহায়তা: ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, অনলাইন কোর্স, গবেষণার ডাটাবেস—এসবই কম্পিউটার দ্বারা সম্ভব হয়েছে।
৯. জটিল সমস্যার সমাধান: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জটিল সমস্যার সমাধানে কম্পিউটার অপরিহার্য। যেমন—মহাকাশ গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক গবেষণা ইত্যাদি।
১০. বিনোদনের মাধ্যম: সঙ্গীত শোনা, সিনেমা দেখা, ভিডিও গেম খেলা, সামাজিক যোগাযোগে অংশগ্রহণ—সবই কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজ হয়েছে।
কম্পিউটার ব্যবহারের অসুবিধা: যদিও কম্পিউটারের অনেক সুবিধা রয়েছে, তবুও এর কিছু অসুবিধা ও নেতিবাচক প্রভাবও আছে। এগুলি জানা থাকলে ব্যবহার আরও সচেতনভাবে করা যায়।
১. কর্মসংস্থানের সংকট: অতিরিক্ত স্বয়ংক্রিয়তা অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কর্মসংস্থান কমিয়ে দেয়। যেমন—কারখানায় মেশিন দ্বারা কাজ করায় শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস।
২. স্বাস্থ্য সমস্যা: দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘাড় ও পিঠের ব্যথা, স্থূলতা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. সাইবার অপরাধ: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ফলে হ্যাকিং, পরিচয় চুরি, অনলাইন প্রতারণা, ভাইরাস আক্রমণ ইত্যাদি সাইবার অপরাধ বাড়ছে।
৪. সামাজিক সম্পর্ক হ্রাস: কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার বাস্তব জীবনের সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগকে কমিয়ে দেয়।
৫. আসক্তি: গেম, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য বিনোদনমূলক কাজে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করলে আসক্তি তৈরি হয়, যা পড়াশোনা বা কাজের ক্ষতি করে।
৬. তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি: ডিজিটাল তথ্য সবসময় সাইবার আক্রমণ বা ডেটা লিকের ঝুঁকিতে থাকে। এর ফলে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি হতে পারে।
৭. বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তি নির্ভরতা: কম্পিউটার চালাতে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট প্রয়োজন। এগুলির অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
৮. পরিবেশ দূষণ: পুরনো বা অকেজো কম্পিউটার যন্ত্রাংশ (E-waste) সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না হলে পরিবেশ দূষণ হয়।
সুবিধা ও অসুবিধার তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
বিষয় — সুবিধা — অসুবিধা
অর্থনীতি — নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি — স্বয়ংক্রিয়তার ফলে চাকরি হ্রাস
স্বাস্থ্য — কাজের গতি বৃদ্ধি, আরামদায়ক পরিবেশ — দীর্ঘ সময় ব্যবহারে স্বাস্থ্য সমস্যা
তথ্য — দ্রুত ও নির্ভুল প্রক্রিয়াকরণ — ডেটা চুরি ও অপব্যবহার
সমাজ — যোগাযোগের বিস্তার — সামাজিক সম্পর্কের দূরত্ব
পরিবেশ — কাগজের ব্যবহার হ্রাস — ই-ওয়েস্ট দূষণ
কম্পিউটার ব্যবহারে সতর্কতা ও সমাধান:
১. সীমিত সময় ব্যবহার: দীর্ঘ সময় একটানা না বসে, মাঝে বিরতি নিয়ে কাজ করা।
২. অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার: সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
৩. ব্যাকআপ রাখা: জরুরি তথ্যের কপি রাখা।
৪. ই-ওয়েস্ট রিসাইক্লিং: পুরনো যন্ত্রাংশ পুনঃব্যবহার বা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ।
৫. সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা: বসার ভঙ্গি ও চোখের দূরত্ব ঠিক রাখা।
উপসংহার: কম্পিউটার আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি আমাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ, দ্রুত ও কার্যকর করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, ব্যবসা—সবক্ষেত্রেই কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। তবে এর অসুবিধাগুলিও উপেক্ষা করা যায় না। সঠিক নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতা ও নিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে কম্পিউটারের সুবিধাগুলি সর্বাধিক এবং অসুবিধাগুলি ন্যূনতম করা সম্ভব। সুতরাং, কম্পিউটার মানব সভ্যতার উন্নয়নে আশীর্বাদ হলেও এর ব্যবহার যেন মানবকল্যাণে হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখা জরুরি।
Unit – 4: প্রেজেন্টেশন, অনলাইন রিসোর্স ও সোশ্যাল মিডিয়া।
*****4) প্রশ্ন. ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক মাধ্যমের (সোশ্যাল মিডিয়া) ব্যবহার কি তাদের পাঠের প্রতি অমনোযোগী করে তুলছে? ১০ (২০২৩)
সামাজিক মাধ্যমের সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য: সামাজিক মাধ্যম বলতে এমন এক ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বোঝায় যেখানে ব্যবহারকারীরা তথ্য, ছবি, ভিডিও, ভাবনা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে এবং অন্যদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—
১. যোগাযোগ স্থাপন – ব্যক্তিগত বা পেশাগত সম্পর্ক বজায় রাখা।
২. তথ্য বিনিময় – খবর, জ্ঞান, গবেষণা ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট শেয়ার করা।
৩. বিনোদন – সঙ্গীত, সিনেমা, গেমস, রিলস ইত্যাদি।
৪. মতামত প্রকাশ – ব্যক্তিগত অভিমত ও সামাজিক মতামত প্রদান।
ছাত্রছাত্রীদের জীবনে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার: বর্তমান প্রজন্মের প্রায় প্রতিটি ছাত্রছাত্রীই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে। গবেষণা বলছে, ভারতের শহুরে অঞ্চলের ৮৫% এবং গ্রামীণ অঞ্চলের প্রায় ৬০% ছাত্রছাত্রী স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকে। এর মধ্যে প্রধান ব্যবহারক্ষেত্রগুলো হলো—
• শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা (ইউটিউব, গুগল ক্লাসরুম)
• বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ
• প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি
• বিনোদনমূলক কনটেন্ট দেখা
• খবর ও চলমান ঘটনা জানা
সামাজিক মাধ্যমের ইতিবাচক প্রভাব: সামাজিক মাধ্যম সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি একটি বড় সহায়ক হতে পারে। যেমন—
১. শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি: অনলাইন ক্লাস, ই-বুক, ভিডিও লেকচার, এবং টিউটোরিয়াল সহজেই পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ—ইউটিউবে বিনামূল্যে বিভিন্ন বিষয়ের কোচিং ও পরীক্ষার প্রস্তুতির ভিডিও পাওয়া যায়, যা অনেকের জন্য টিউশন ফি বাঁচায়।
২. যোগাযোগের গতি বৃদ্ধি: ছাত্রছাত্রীরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে সহপাঠীদের সঙ্গে নোট, প্রশ্নপত্র ও শিক্ষাসামগ্রী শেয়ার করতে পারে।
৩. দক্ষতা উন্নয়ন: সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ভাষা শেখা, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন ইত্যাদির সুযোগ রয়েছে।
যা ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে সহায়ক হতে পারে।
৪. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি, ব্লগ লেখা বা ভিডিও বানানো ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও অনুপ্রেরণা: সামাজিক মাধ্যমে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, মোটিভেশনাল ভিডিও, এবং সফল ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
যা তরুণদের অনুপ্রাণিত করে।
সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব: যদিও সামাজিক মাধ্যমের অনেক সুবিধা রয়েছে, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত বা অতিরিক্ত ব্যবহার ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
১. পাঠে অমনোযোগ: গবেষণা বলছে, যারা প্রতিদিন ৪ ঘণ্টার বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়।
এবং পরীক্ষার ফল খারাপ হয়।
২. সময় অপচয়: রিলস, শর্ট ভিডিও ও গেমস দেখতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হয়ে যায়।
যা পড়াশোনার সময় কমিয়ে দেয়।
৩. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: লাইক, কমেন্ট, এবং ফলোয়ারের প্রতিযোগিতা তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশা তৈরি করে।
৪. ঘুমের ব্যাঘাত: রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না।
যা পড়াশোনার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৫. ভুল তথ্যের প্রসার: সামাজিক মাধ্যমে অনেক সময় ভুয়া খবর বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায়।
যা ছাত্রছাত্রীদের ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।
৬. আসক্তি: সামাজিক মাধ্যমের নোটিফিকেশন ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট তরুণদের আসক্ত করে তোলে।
ফলে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যায়।
গবেষণার ফলাফল: ২০১৯ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়—
• ৭০% ছাত্রছাত্রী স্বীকার করেছে যে তারা পড়াশোনার সময়ও সোশ্যাল মিডিয়া চেক করে।
• ৪৫% বলেছে যে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়েছে।
• ৩০% জানিয়েছে, তারা রাত জেগে অনলাইন কনটেন্ট দেখে বলে সকালে ক্লাসে মনোযোগ থাকে না।
পাঠে অমনোযোগের কারণ:
১. বিনোদনের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ: পড়ার চেয়ে ভিডিও বা চ্যাটে সময় কাটানো বেশি উপভোগ্য মনে হয়।
২. পরিকল্পনার অভাব: পড়াশোনা ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মধ্যে সময় বন্টন না করা।
৩. প্রলোভনমূলক কনটেন্ট: অ্যালগরিদম এমনভাবে কাজ করে যাতে ব্যবহারকারী বারবার প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসে।
সমাধান ও করণীয়:
১. সময় নির্ধারণ: প্রতিদিন সামাজিক মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় (যেমন ১ ঘণ্টা) ব্যয় করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
২. শিক্ষামূলক কনটেন্টে মনোযোগ: বিনোদনের বদলে শিক্ষামূলক ভিডিও, টিউটোরিয়াল, এবং গবেষণামূলক পোস্ট অনুসরণ করা।
৩. পড়াশোনার পরিকল্পনা: পড়াশোনার সময় মোবাইল দূরে রাখা এবং শুধুমাত্র প্রয়োজন হলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা।
৪. নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা: অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করলে মনোযোগে ব্যাঘাত কম হয়।
৫. পিতা-মাতার ভূমিকা: অভিভাবকদের উচিত সন্তানের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করা।
এবং প্রয়োজন হলে সময় সীমা নির্ধারণ করা।
৬. প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ: অ্যাপ লক বা স্ক্রিন টাইম কন্ট্রোল অ্যাপ ব্যবহার করে অতিরিক্ত ব্যবহার কমানো।
উপসংহার: সামাজিক মাধ্যম একদিকে যেমন তথ্য ও শিক্ষার এক বিশাল ভাণ্ডার, অন্যদিকে এটি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পড়াশোনার বড় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়াকে শিক্ষার সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা, বিনোদনের অতিরিক্ত উৎস হিসেবে নয়। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ ব্যবহারই পারে সামাজিক মাধ্যমের ইতিবাচক দিককে কাজে লাগিয়ে নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে। তাই বলা যায়—সামাজিক মাধ্যম নিজে অমঙ্গলজনক নয়, বরং এর ব্যবহার পদ্ধতিই নির্ধারণ করে এটি শিক্ষার সহায়ক হবে নাকি প্রতিবন্ধক।