Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 5th Semester Political Major 7 Nep Suggestions 2026
Papers-7
Government and Politics in India
Kalyani University B.A 5th Semester Political Science Major 7 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. তুমি 150 টাকা পেমেন্ট কর। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবে। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক কর।
তুমি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পার। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
Government and Politics in India
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit 1: Approaches to the study of Indian Politics and Nature of the State in India: Liberal, Marxist and Gandhian.
ভারতীয় রাজনীতি এবং ভারতের রাষ্ট্রের প্রকৃতি অধ্যয়নের দৃষ্টিভঙ্গি: উদারবাদী, মার্কসবাদী ও গান্ধীবাদী।
Unit 2: Indian Constitution: Basic Features, Debates on Fundamental Rights and Directive Principles of State Policy.
ভারতের সংবিধান: মৌলিক বৈশিষ্ট্য, মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক মূলনীতি সংক্রান্ত বিতর্ক।
Unit 3: Union Executive: President and Vice-President – Election, power and position. Prime Minister – Power and position; Council of Ministers; Relationship of President and Prime Minister.
ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি – নির্বাচন, ক্ষমতা ও পদমর্যাদা।
প্রধানমন্ত্রী – ক্ষমতা ও পদমর্যাদা; মন্ত্রিপরিষদ; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক।
Unit 4: Union Legislature: Rajya Sabha and Lok Sabha – Composition and functions; Speaker. Judiciary: Supreme Court and High Courts – Composition and functions.
ভারতের আইনসভা: রাজ্যসভা ও লোকসভা – গঠন ও কার্যাবলি; স্পিকার।
বিচার বিভাগ: সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট – গঠন ও কার্যাবলি।
Unit 5: Religion and Politics: Debates on secularism and communalism.
ধর্ম ও রাজনীতি: ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ক বিতর্ক।
Unit 6: Power Structure in India: Role of Caste, Class and Patriarchy.
ভারতের ক্ষমতা কাঠামো: জাতি, শ্রেণি ও পিতৃতান্ত্রিক ভূমিকা।
Unit 7: Social Movements: Workers, Peasants, Environmental and Women’s Movement.
সামাজিক আন্দোলন: শ্রমিক, কৃষক, পরিবেশবাদী ও নারী আন্দোলন।
সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।
Unit – 1: ভারতীয় রাজনীতি এবং ভারতের রাষ্ট্রের প্রকৃতি অধ্যয়নের দৃষ্টিভঙ্গি: উদারবাদী, মার্কসবাদী ও গান্ধীবাদী।
*****1) প্রশ্ন. ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। (৫)
ভূমিকা:
ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষণে বিভিন্ন দার্শনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক তত্ত্ব প্রভাব বিস্তার করেছে। এর মধ্যে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের প্রবর্তিত এই দর্শন মূলত শ্রেণি সংগ্রাম, উৎপাদন সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রের চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ভারতের রাজনীতিকে বোঝার ক্ষেত্রে মার্কসবাদ একটি মৌলিক কাঠামো প্রদান করে, যেখানে সমাজকে দেখা হয় শোষক ও শোষিত শ্রেণির সংঘর্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা, নীতি ও সামাজিক পরিবর্তন বিশ্লেষণে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মূল ভিত্তি: মার্কসবাদের আলোচনার আগে সংক্ষেপে এর কয়েকটি মৌলিক ধারণা উল্লেখ করা প্রয়োজন—
1. অর্থনৈতিক কাঠামোই সমাজের ভিত্তি – সমাজের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো অর্থনৈতিক উৎপাদন সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল।
2. শ্রেণি সংগ্রাম – ইতিহাস হলো শোষক ও শোষিত শ্রেণির মধ্যে ক্রমাগত সংগ্রামের ইতিহাস।
3. রাষ্ট্রের চরিত্র – রাষ্ট্র মূলত শাসক শ্রেণির আধিপত্য বজায় রাখার যন্ত্র।
4. বস্তুবাদী ইতিহাস-দর্শন – সামাজিক পরিবর্তন ঘটে অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে।
এই তত্ত্বগুলো ভারতের প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ করলে রাজনীতির ভিন্নতর একটি চিত্র ফুটে ওঠে।
ভারতের রাজনীতিতে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ:
১. ঔপনিবেশিক শোষণ ব্যাখ্যা: মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, ভারতের উপনিবেশিক শাসন কেবল রাজনৈতিক আধিপত্য নয়, বরং ছিল এক অর্থনৈতিক শোষণ। ইংরেজ শাসকরা ভারতকে কাঁচামালের যোগানদার এবং প্রস্তুত পণ্যের বাজারে পরিণত করেছিল। Dadabhai Naoroji-র "Drain of Wealth" তত্ত্বও মার্কসবাদী চিন্তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছে যে উপনিবেশবাদ মূলত অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের উপর দাঁড়িয়ে।
২. শ্রেণি বৈষম্য ও সামাজিক বিভাজন: ভারতের সমাজে জাতিভেদ, জমিদারি প্রথা, গ্রামীণ দারিদ্র্য এবং শিল্প শ্রমিকদের শোষণ—সবই মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয় কিভাবে একটি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণি (জমিদার, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি) শ্রমজীবী মানুষের শোষণ করে রাজনৈতিক ক্ষমতার দখল বজায় রেখেছে।
৩. স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি: স্বাধীনতার পর ভারত যদিও গণতান্ত্রিক কাঠামো গ্রহণ করেছে, কিন্তু মার্কসবাদী বিশ্লেষণে একে ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ, এখানে রাষ্ট্র নীতি প্রায়শই পুঁজিপতি ও ধনী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। শিল্পনীতি, বাণিজ্যনীতি বা ভূমি সংস্কার—সবক্ষেত্রেই শাসক শ্রেণির প্রভাব লক্ষণীয়।
৪. কৃষি ও ভূমি সংস্কার: মার্কসবাদী চিন্তাধারায় কৃষির কাঠামো বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে ভূমি সংস্কার প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হয়নি। ভূমিহীন কৃষক, ভাগচাষি ও গ্রামীণ দরিদ্র শ্রেণি আজও শোষণের শিকার। ফলে গ্রামীণ বিদ্রোহ, নকশাল আন্দোলন প্রভৃতি মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির স্বাভাবিক প্রতিফলন।
৫. নকশাল আন্দোলন: ভারতের রাজনীতিতে মার্কসবাদের সরাসরি প্রভাব পড়ে নকশাল আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি অঞ্চলে জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিদ্রোহ মার্কসবাদী তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত ছিল। এটি দেখায় কিভাবে শোষিত কৃষক শ্রেণি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তি খুঁজে পেতে চেয়েছিল।
৬. পুঁজিবাদ ও উদারীকরণ নীতি: ১৯৯১ সালের পর থেকে ভারতে উদারীকরণ, বেসরকারীকরণ ও বিশ্বায়ন নীতি চালু হয়। মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে একে ধরা হয় আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের প্রভাব বিস্তার, যেখানে ধনী আরও ধনী হয় আর দরিদ্র আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ে। শ্রমিকদের চাকরির অনিশ্চয়তা, কৃষকের ঋণগ্রস্ততা ও বহুজাতিক কোম্পানির দাপট এই বিশ্লেষণকে আরও সুস্পষ্ট করে তোলে।
মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির শক্তি:
1. শ্রেণি বিশ্লেষণ – সমাজে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও শোষণ বোঝাতে এটি কার্যকর কাঠামো দেয়।
2. অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি – রাজনীতির অর্থনৈতিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।
3. জনআন্দোলনের প্রেরণা – নকশাল আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ কিংবা শ্রমিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছে।
4. রাষ্ট্রের সমালোচনা – রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ নয় বরং শাসক শ্রেণির হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সীমাবদ্ধতা:
1. ভারতের বহুমাত্রিক সমাজ – এখানে শুধু শ্রেণি নয়, জাত, ধর্ম, ভাষা ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মার্কসবাদ যথেষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
2. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য – ভারতের গণতন্ত্র বহু জটিলতা সত্ত্বেও টিকে আছে; মার্কসবাদ একে অবমূল্যায়ন করেছে।
3. অহিংস আন্দোলন উপেক্ষা – গান্ধীবাদী অহিংস আন্দোলন ভারতের রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলেছে, যা মার্কসবাদী বিশ্লেষণে প্রায় অদৃশ্য।
4. বিশ্বায়নের নতুন বাস্তবতা – প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষেবা খাতের বিস্তারকে মার্কসবাদ সরলভাবে পুঁজিবাদী শোষণ বললেও বাস্তবে এর ভিন্ন ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
ভারতের রাজনীতিতে মার্কসবাদের অবদান:
• রাজনৈতিক দল গঠনে (যেমন CPI, CPI(M), অন্যান্য বামপন্থী দল) মার্কসবাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
• শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের প্রেরণা মার্কসবাদ দিয়েছে।
• বৈষম্য, দারিদ্র্য ও উন্নয়নের প্রশ্নে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছে।
• ভারতের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণায় শ্রেণি বিশ্লেষণকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উপসংহার: ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এক অনন্য ব্যাখ্যামূলক কাঠামো প্রদান করেছে। যদিও এর সীমাবদ্ধতা আছে—জাত, ধর্ম, আঞ্চলিকতা ইত্যাদিকে এটি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি—তবুও ভারতের ঔপনিবেশিক শোষণ, স্বাধীনোত্তর রাজনৈতিক অর্থনীতি, নকশাল আন্দোলন কিংবা বিশ্বায়নের প্রভাব বুঝতে মার্কসবাদ অপরিহার্য। সবশেষে বলা যায়, ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষণে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের বাস্তব শোষণ ও বৈষম্যকে প্রকাশ করে এবং সমাধানের পথ খুঁজতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক তত্ত্ব নয়, বরং ভারতীয় সমাজ-রাজনীতিকে সমালোচনামূলকভাবে দেখার এক মূল্যবান হাতিয়ার।
Unit – 2: ভারতের সংবিধান: মৌলিক বৈশিষ্ট্য, মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক মূলনীতি সংক্রান্ত বিতর্ক।
*****2) প্রশ্ন. রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতিসমূহ নির্মাণে নির্দেশাত্মক বা নির্দেশমূলক নীতির গুরুত্ব বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা: নির্দেশাত্মক নীতিগুলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। (৫ নম্বর) (২০২৩)
ভূমিকা: রাষ্ট্র পরিচালনা হলো একটি জটিল ও সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন কার্যক্রম ও নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় নীতিমালা বা নীতিসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম। রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতির ভূমিকা এমন যে, সেগুলো নির্দেশক হিসাবে কাজ করে এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে দিশা প্রদান করে। বিশেষত, নির্দেশাত্মক বা নির্দেশমূলক নীতিগুলো রাষ্ট্র পরিচালনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এগুলো সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে।
নির্দেশাত্মক নীতির অর্থ ও পরিচয়: নীতিগুলো সাধারণত দুটি ধরনের হতে পারে বিবেচনামূলক (নির্দেশক নয়, কেবল গাইডলাইনস হিসেবে) এবং নির্দেশাত্মক (নির্দেশমূলক) নীতি। নির্দেশাত্মক নীতি বলতে এমন নীতিসমূহকে বোঝানো হয়, যা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়, যে কী কাজ করতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে। অর্থাৎ, এই নীতিগুলো কেবল দিকনির্দেশনা না দিয়ে কার্যকরী ও বাধ্যতামূলক রূপ ধারণ করে। সরকারি নীতিমালায় নির্দেশাত্মক নীতি হলো সেই নীতিসমূহ যা প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। এগুলো কার্যক্রমের নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে, যাতে সকল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাজ করতে পারে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্দেশাত্মক নীতির গুরুত্ব:
১. পরিষ্কার ও সুসংগঠিত নির্দেশনা প্রদান: নির্দেশাত্মক নীতিগুলো প্রশাসনকে পরিষ্কার ও সুসংগঠিত নির্দেশনা দেয়। এটি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও কর্মকর্তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেয় কোন কাজটি কীভাবে সম্পাদন করতে হবে। এর ফলে কাজের ক্ষেত্রে জটিলতা কমে এবং সময়সাপেক্ষতা কমে।
২. দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ: নির্দেশমূলক নীতি প্রশাসকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দেয়। ফলে প্রতিটি কর্মকর্তার ভূমিকা ও কর্তব্য পরিষ্কার হয়ে যায়, যা কাজের দক্ষতা ও সঠিকতা বৃদ্ধি করে।
৩. নীতি বাস্তবায়নে একরূপতা ও সমতা: রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতি গুলো যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য নির্দেশমূলক নীতি অপরিহার্য। এগুলো সব কর্মকর্তার জন্য একরূপ নির্দেশনা প্রদান করে, ফলে একই ধরনের পরিস্থিতিতে সমান রকমের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ হয়। এর মাধ্যমে অন্যায় বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ কমে।
৪. দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ: যখন প্রশাসনে স্পষ্ট নির্দেশনা ও নিয়ম-কানুন থাকে, তখন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অন্যায় আচরণের পরিমাণ কমে। কারণ প্রতিটি কর্মপ্রণালী কঠোর নিয়মে বাঁধা থাকে এবং কাজের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হয়।
৫. নীতিমালা বাস্তবায়নে সুশাসনের নিশ্চিতকরণ: সরকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নির্দেশাত্মক নীতির ভূমিকা অপরিসীম। কারণ সুশাসনের মূল ভিত্তি হলো নীতিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়া। নির্দেশমূলক নীতির কারণে প্রশাসন নিয়মবদ্ধ ও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণে দিকনির্দেশনা: রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। নির্দেশাত্মক নীতিগুলো এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়, যার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ ও ফলপ্রসূ হয়।
৭. জনসেবা নিশ্চিতকরণ: সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবা করা। নির্দেশাত্মক নীতিগুলো নিশ্চিত করে যে সরকারি সেবা নির্ধারিত মান অনুযায়ী, সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে।
৮. আইননের সাথে সামঞ্জস্য: রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রশাসনিক নীতিসমূহ কখনোই দেশের আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী হতে পারে না। নির্দেশাত্মক নীতিগুলোকে আইনানুগ করে গঠন করা হয়, যাতে প্রশাসনের কাজ আইনের পরিধির মধ্যে থেকে সম্পাদিত হয়।
নির্দেশাত্মক নীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য:
বাধ্যতামূলক: নির্দেশমূলক নীতি প্রশাসনের জন্য বাধ্যতামূলক নির্দেশনা বহন করে। এগুলো অমান্য করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
বিশেষায়িত ও স্পষ্ট: নীতির ভাষা ও নির্দেশনা স্পষ্টভাবে লেখা থাকে, যাতে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ না থাকে।
বাস্তবসম্মত ও প্রাসঙ্গিক: নীতি বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও কার্যকর হতে হয়।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সংশোধনের সুযোগ: এগুলো সময়ে সময়ে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনযোগ্য হয়।
সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য প্রযোজ্য: রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনিক পর্যায়ে সমানভাবে প্রযোজ্য হয়।
রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্দেশাত্মক নীতির ব্যবহার:
১. অর্থনৈতিক নীতি: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেমন বাজেট তৈরী, রাজস্ব সংগ্রহ, ব্যয় নির্ধারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনায় নির্দেশাত্মক নীতি কার্যকর হয়। এগুলো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয় অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
২. বিভাগীয় প্রশাসন: বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বিভাগে কাজের ধরণ, সময়সীমা ও দায়িত্ব নির্ধারণে নির্দেশমূলক নীতিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে প্রতিটি অফিসার ও কর্মচারীর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট হয়।
৩. সামাজিক নীতি: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, নারী ও শিশু উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে নির্দেশাত্মক নীতির প্রয়োজন পড়ে, যাতে জনসাধারণের কল্যাণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
৪. আইনি ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা, অপরাধ দমন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণে নির্দেশমূলক নীতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আদালত ও প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা দেয়।
৫. বহিঃসম্পর্ক ও কূটনীতি: দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনায় কূটনৈতিক নীতিমালা নির্ধারণে নির্দেশাত্মক নীতিগুলো নির্ভরযোগ্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
নির্দেশাত্মক নীতির উদাহরণ:
সরকার যখন কর ব্যবস্থা নির্ধারণ করে, তখন কর আদায়ের নিয়মাবলী স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে দেয়। জনস্বাস্থ্য সেবায় নির্দিষ্ট প্রোটোকল ও গাইডলাইন নির্ধারণ। সরকারি চাকরিতে কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের বিস্তারিত বিধান। পরিবেশ সংরক্ষণে নির্ধারিত আইন ও নীতিমালা। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষক নিয়োগের নিয়মাবলী।
উপসংহার: রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্দেশাত্মক বা নির্দেশমূলক নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। এ নীতিগুলো সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কর্মপরিকল্পনায় স্পষ্ট ও কার্যকর দিকনির্দেশনা দেয়। প্রশাসনের দায়িত্ব নির্ধারণ করে, কাজের দক্ষতা বাড়ায়, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ করে এবং দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে। তাই যে কোনো রাষ্ট্রের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্দেশাত্মক নীতি অত্যাবশ্যক। নির্দেশাত্মক নীতি রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি কাঠামো ও নিয়মাবলী প্রদান করে যা প্রশাসনকে সংগঠিত, গতিশীল ও দক্ষ করে তোলে। এজন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবশ্যই এই নীতিগুলো সঠিকভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এই নীতির যথাযথ প্রয়োগ দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সামগ্রিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।
Unit – 3: ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি – নির্বাচন, ক্ষমতা ও পদমর্যাদা। প্রধানমন্ত্রী – ক্ষমতা ও পদমর্যাদা; মন্ত্রিপরিষদ; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক।
*****3) প্রশ্ন.পার্লামেন্টের নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা লেখ। (৫ নম্বর)
ভূমিকা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। ভারতে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা অনুসৃত হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি হলো সাংবিধানিক প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলো কার্যনির্বাহী প্রধান। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন। পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী শুধু সরকারপ্রধানই নন, বরং তিনি সরকারের মুখপাত্র, সংসদের নেতা, রাজনৈতিক নেতা ও জনগণের প্রতিনিধি—এই সব ভূমিকাই একসাথে পালন করেন।
১. সংসদে নেতৃত্ব প্রদান: প্রধানমন্ত্রী সংসদের কার্যপ্রণালিতে মূল নেতৃত্ব প্রদান করেন। সংসদের উভয় কক্ষ—লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরকারপক্ষের কার্যকলাপ সমন্বয়, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া, বিল উপস্থাপন ও বিতর্কে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সংসদের উভয় কক্ষে সরকারের নীতি, পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করেন এবং সংসদীয় কার্যকলাপকে যথাযথভাবে পরিচালনা করেন।
২. নীতিনির্ধারণ ও আইন প্রণয়নে প্রভাব: প্রধানমন্ত্রী সংসদে এমন একটি অবস্থানে থাকেন, যেখান থেকে তিনি জাতীয় নীতির দিকনির্দেশনা দেন। তিনি মন্ত্রিসভা ও সংসদের সদস্যদের মতামত নিয়ে আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ, সংসদে পেশকৃত অধিকাংশ বিল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গৃহীত হয় এবং তার উপর ভিত্তি করেই সরকার পরিচালিত হয়।
৩. সংসদে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা: প্রধানমন্ত্রী সংসদে সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সংসদে যখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক বা প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থান পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করেন। কোনো বিতর্কিত বিষয়ে সংসদকে শান্ত রাখার কাজও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
৪. বিশ্বাসভোট ও আস্থাভোটে নেতৃত্ব: প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। যদি সংসদে আস্থাভোট বা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলের সদস্যদের সমর্থন নিশ্চিত করেন। আস্থাভোটে জয়লাভ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক কৌশলের প্রতিফলন।
৫. প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ: প্রধানমন্ত্রী সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে সংসদ সদস্যরা সরকারের বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদের কাছে সরকারের কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দেন। এতে সংসদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৬. দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা: সংসদে দলের সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তিনি সংসদীয় দলে একতা ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দলীয় হুইপ জারি করা, দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটে সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার মতো দায়িত্বও প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়।
৭. সংসদের অধিবেশন আহ্বান ও মুলতবি বিষয়ে পরামর্শ প্রদান: যদিও রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান ও মুলতবি করেন, তবে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শ গ্রহণ করেন। সংসদের কার্যদিবস নির্ধারণ, আলোচনার সূচি প্রস্তুত এবং আলোচনার গুরুত্ব ঠিক করার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন।
৮. সংসদে বাজেট ও আর্থিক বিষয় উপস্থাপন: প্রধানমন্ত্রী সাধারণত অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন, তবে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপগুলির রাজনৈতিক দিক নির্দেশনার জন্য তিনিই মূলত দায়ী থাকেন। বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা হলে প্রধানমন্ত্রী অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য ও বক্তব্য দেন যা সরকারের আর্থিক দর্শনের প্রতিফলন।
৯. সাংবিধানিক দায়িত্ব ও রাজনৈতিক নীতি প্রতিফলন: প্রধানমন্ত্রী সংসদে সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুসরণ করে চলেন এবং গণতন্ত্রের মূল আত্মা রক্ষা করেন। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদের নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তি হিসেবে সংসদের প্রতিটি সিদ্ধান্তে তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
১০. বিরোধীদল ও সমালোচনার প্রতি সহনশীলতা: গণতন্ত্রে বিরোধীদলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিরোধীদলের বক্তব্য শোনেন, তাদের সমালোচনার জবাব দেন এবং অনেক সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করে নীতি সংশোধন করেন। একজন প্রকৃত সংসদীয় নেতার অন্যতম গুণ হলো সহনশীলতা ও রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ — এই দুটি দিক প্রধানমন্ত্রী সংসদে তুলে ধরেন।
১১. জরুরি পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা: যখন কোনো জাতীয় সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বা রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে সংসদকে অবহিত করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি সংসদের অনুমোদন নিয়ে জরুরি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সংসদে ঐকমত্য গঠনের জন্য প্রয়াস চালান।
১২. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্র নীতিতে সংসদের অবহিতকরণ: যখন কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি, বিদেশ সফর বা কূটনৈতিক কার্যকলাপ হয়, তখন সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে তা ব্যাখ্যা করেন। এর মাধ্যমে সংসদের সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন এবং প্রয়োজনে মতামত প্রদান করেন।
১৩. সংসদীয় গণতন্ত্রের মানদণ্ড রক্ষা: প্রধানমন্ত্রী সংসদের নেতা হিসেবে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিগুলিকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংসদে অবাধ বিতর্ক, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধীদলের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। সংসদে শালীনতা ও গঠনমূলক পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অপরিসীম।
উপসংহার: সার্বিকভাবে বলতে গেলে, সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বহুমাত্রিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক হিসেবে সংসদীয় কার্যক্রমকে সুচারুভাবে পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে সংসদে আইন প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণ, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর, বাজেট পেশ ইত্যাদি প্রতিটি পর্যায়ে কার্যকারিতা ও গতিশীলতা আসে। তাই বলা যায়, সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড স্বরূপ।
Unit – 4: ভারতের আইনসভা: রাজ্যসভা ও লোকসভা – গঠন ও কার্যাবলি; স্পিকার। বিচার বিভাগ: সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট – গঠন ও কার্যাবলি।
*****4) প্রশ্ন. লোকসভার অধ্যক্ষ বা স্পিকারের ক্ষমতাও কার্যাবলী সংক্ষেপে আলোচনা কর। [5/10]
লোকসভার অধ্যক্ষ বা স্পিকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলী: ভারতের সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, যার নিম্নকক্ষ হলো লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা। লোকসভায় একজন অধ্যক্ষ বা স্পিকার থাকেন, যিনি সংসদের কার্যনির্বাহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভারতের সংবিধানের ৯৩ এবং ৯৪ অনুচ্ছেদে লোকসভার অধ্যক্ষের নিয়োগ, দায়িত্ব এবং ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। লোকসভার অধ্যক্ষ সংসদের শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতার দায়িত্ব পালন করেন এবং গণতান্ত্রিক বিধিবিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করেন।
লোকসভার অধ্যক্ষের নিয়োগ ও মেয়াদ: লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সাংসদদের মধ্য থেকে অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। তিনি সাধারণত সেই রাজনৈতিক দলের সদস্য হন, যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে। অধ্যক্ষের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও, নতুন লোকসভা গঠিত হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকেন। তিনি ইচ্ছা করলে পদত্যাগ করতে পারেন বা অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করা যেতে পারে।
লোকসভার অধ্যক্ষের ক্ষমতা ও কার্যাবলী: লোকসভার অধ্যক্ষ ক্ষমতা এবং দায়িত্ব বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে আলোচিত হতে পারে:
১. সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা: অধ্যক্ষ সংসদের অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। সংসদের আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করা, সংসদ সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং আলোচনার জন্য বিভিন্ন বিষয় নির্বাচন করা তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে পড়ে।
২. শৃঙ্খলা রক্ষা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ: অধ্যক্ষ সংসদের ভেতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখেন এবং কোনো সদস্য অসংযত আচরণ করলে তাকে সতর্ক করেন বা প্রয়োজনে সংসদ থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। যদি কোনো সদস্য নিয়ম লঙ্ঘন করেন, তবে অধ্যক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
৩. ভোটদান সংক্রান্ত ক্ষমতা: লোকসভার অধ্যক্ষ সাধারণত ভোট প্রদান করেন না। তবে যদি ভোটের সময় সমান সমর্থন ও বিরোধিতা দেখা যায়, তখন অধ্যক্ষের ‘কাস্টিং ভোট’ দেওয়ার ক্ষমতা থাকে, যা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে।
৪. অর্থবিল সংক্রান্ত ক্ষমতা: অর্থবিল সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যক্ষের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কোনো বিল অর্থবিল কি না। অর্থবিল হলে তা রাজ্যসভার অনুমোদন ছাড়াই পাশ হতে পারে।
৫. কমিটি গঠন ও সভাপতিত্ব: অধ্যক্ষ সংসদের বিভিন্ন কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তিনি বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেন। তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, এস্টিমেট কমিটি ও পিটিশন কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোর সদস্য মনোনীত করেন।
৬. অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ: লোকসভায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এলে তিনি আলোচনার অনুমতি দেন এবং ভোটাভুটি পরিচালনা করেন। অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
৭. অযোগ্যতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত: দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় কোনো সাংসদের সদস্যপদ থাকবে কি না, তা নির্ধারণের ক্ষমতা অধ্যক্ষের হাতে থাকে। দলের হুইপ অমান্য করে ভোট দিলে বা দলের বিরুদ্ধে কাজ করলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
৮. রাষ্ট্রপতির বার্তা ও সংসদের আহ্বান: অধ্যক্ষ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্তাগুলো সংসদে উপস্থাপন করেন এবং লোকসভার অধিবেশন আহ্বান ও মুলতবি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন।
৯. গোপন বৈঠক আহ্বান: প্রয়োজনে অধ্যক্ষ সংসদের গোপন বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। এই বৈঠকের তথ্য বাইরে প্রকাশ করা নিষেধ।
১০. সদস্যদের বক্তব্য পরিচালনা: সংসদ সদস্যদের বক্তব্য প্রদানের সময় নির্ধারণ করেন অধ্যক্ষ। কোনো সদস্য নির্ধারিত সময় অতিক্রম করলে তিনি বক্তব্য সংক্ষেপ করতে বা বন্ধ করতে বলতে পারেন।
উপসংহার: লোকসভার অধ্যক্ষ ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। তিনি নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন এবং সংসদের শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করে।