kalyani University B.A 5th Semester Bengali Major 6 suggestions

Kalyani University Suggestion

Kalyani University B.A 5th Semester Bengali Major 6 Nep Suggestions 2026

Papers-6

Bengali Major 501 Nep Suggestions

উপন্যাসের রূপভেদ ও বাংলা উপন্যাস

Kalyani University B.A 5th Semester Benglai Major 6 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 150 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

(সিলেবাস – ২০২৫)

উপন্যাসের রূপভেদ ও বাংলা উপন্যাস

ক. উপন্যাসের রূপভেদ: উপন্যাসের উপকরণ, ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, রাজনৈতিক উপন্যাস, আঞ্চলিক উপন্যাস, মনস্তাত্ত্বিক ও চেতনাপ্রবাহ-রীতির উপন্যাস।

খ. রাজসিংহ — বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

গ. পথের পাঁচালী — বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

ঘ. জাগরী — সতীনাথ ভাদুড়ী

ক. উপন্যাসের রূপভেদ

*****1) প্রশ্ন.রাজনৈতিক উপন্যাসের সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ লেখ। একটি সার্থক বাংলা রাজনৈতিক উপন্যাস সম্পর্কে আলোচনা কর। [২+৩+৫]

▲ রাজনৈতিক উপন্যাস - সংজ্ঞা:

যে উপন্যাসে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিল আবর্ত, রাজনৈতিক পরিবর্তন, সামাজিক অস্থিরতা, শাসনব্যবস্থার দ্বন্দ্ব, মতাদর্শিক সংঘর্ষ এবং জাতীয় জীবনের নানা সংকট কাহিনির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, তাকে রাজনৈতিক উপন্যাস বলা হয়। অর্থাৎ, রাজনৈতিক ঘটনা ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন উপন্যাসে নির্দিষ্ট সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্রব্যবস্থার চরিত্র, সংকট ও রূপান্তর তুলে ধরা হয়, তখন তা রাজনৈতিক উপন্যাসের আকার ধারণ করে। এই ধরনের উপন্যাসে রাজনীতি শুধু কাহিনির উপাদান নয়, বরং চরিত্রগুলির জীবনযাত্রা ও মানসিকতার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রকাশ পায়।

▲ রাজনৈতিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য

১. সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনার সরাসরি প্রতিফলন: রাজনৈতিক উপন্যাস সাধারণত সমকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক উত্তেজনারই প্রতিচ্ছবি। আন্দোলন, বিপ্লব, রাষ্ট্রিক সংকট, দমন–পীড়ন কিংবা সামাজিক অসন্তোষ—এসবই উপন্যাসের কেন্দ্রে থাকে।

২. সামাজিক-রাজনৈতিক সংকটের চিত্রায়ণ: একটি সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অস্থিরতা, অসাম্য, শোষণ, দুর্নীতি এবং সংঘাত রাজনৈতিক উপন্যাসে অত্যন্ত বাস্তবরূপে ফুটে ওঠে। এতে সমাজজীবনের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা স্পষ্ট হয়।

৩. মতাদর্শগত সংঘর্ষ: চরমপন্থী, নরমপন্থী, উদারবাদী, বিপ্লবী, সমাজতান্ত্রিক বা জাতীয়তাবাদী—এমন বিভিন্ন মতাদর্শের সংঘর্ষ রাজনৈতিক উপন্যাসের প্রাণ। নতুন রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, ব্যর্থতা এবং আদর্শবাদের দ্বন্দ্ব এতে উঠে আসে।

৪. সমসাময়িক আবেগ ও উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ: লেখক অনেক সময় নিজের তীব্র আবেগ, রাজনৈতিক মনোভাব বা মতাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গিকে উপন্যাসে সরাসরি প্রকাশ করেন। এর ফলে উপন্যাসে আবেগপ্রবণতা ও ভাবালুতা দৃশ্যমান হয় যা পাঠককে দ্রুত আকৃষ্ট করে।

৫. ভাষার উচ্ছ্বাস ও জনপ্রিয়তার সম্ভাবনা: রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আবেগের জোয়ারে লেখার ভাষা অনেক সময় প্রবল হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক উপন্যাস দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে, কারণ এতে মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন থাকে।

৬. সামাজিক বিপর্যয়ের যুগে রাজনৈতিক উপন্যাসের শক্তি বৃদ্ধি: যে সময় সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং রাষ্ট্রিক টানাপোড়েন বাড়ে, সে সময় রাজনৈতিক উপন্যাস আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ তখন মানুষের মনোযোগ রাজনীতির দিকে বেশি কেন্দ্রীভূত থাকে।

◆ বাংলা রাজনৈতিক উপন্যাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ: বাংলা সাহিত্য রাজনৈতিক উপন্যাসে সমৃদ্ধ। উল্লেখযোগ্য কিছু উপন্যাস হলো—

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর — ঘরে-বাইরে, চার অধ্যায়
  • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় — পথের দাবী
  • সতীনাথ ভাদুড়ী — জাগরী, টোড়াই রচিত মানস
  • সুবোধচন্দ্র ঘোষ — তিলাঞ্জলি
  • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় — মহুমুখর
  • গোপাল হালদার — একদা

এসব উপন্যাসে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিবর্তন, আন্দোলন, ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্ব ও জাতীয় চেতনার বিকাশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

◆ একটি সার্থক বাংলা রাজনৈতিক উপন্যাস: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরে-বাইরে’:

১. রচনার পটভূমি: ঘরে-বাইরে (১৯১৬) উপন্যাসটি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন (১৯০৫–১৯১১) ও স্বদেশী আন্দোলনের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত। আন্দোলনের ফলে সমাজে নরমপন্থী ও চরমপন্থী এই দুই রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠে। হিন্দু-মুসলমানের মাঝে মতপার্থক্য ও বিদ্বেষ বেড়ে যায়; সমাজে দেখা দেয় দাঙ্গা, বিভক্তি ও চরম উত্তেজনা। এই রাজনৈতিক আবহেই রবীন্দ্রনাথ তিনটি প্রধান চরিত্র—নিখিলেশ, বিমলা, সন্দীপ—কে কেন্দ্র করে নির্মাণ করেছেন এক অনন্য শিল্পকাহিনি।

২. তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তব প্রতিফলন: স্বদেশী আন্দোলনের ফলে ট্রেন-বিস্ফোরণ প্রচেষ্টা, বোমা প্রস্তুতির ঘটনা, ইংরেজ সরকারি অত্যাচার, দেশীয় দ্রব্য ব্যবহার ও বিদেশী দ্রব্য বর্জনের ডাক—এসব সমাজকে এক তীব্র বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদদের দেশাত্মবোধক গান মানুষের মনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়—
“মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথা তুলে নে রে ভাই।”
এরই সঙ্গে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা আরও ঘনীভূত হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই অন্ধকার সময়টিই ঘরে-বাইরে’র কাহিনি-প্রেক্ষাপট।

৩. সন্দীপ চরিত্র : চরমপন্থার প্রতীক: সন্দীপ উপন্যাসের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র। সে দেশপ্রেমকে আড়াল করে ব্যক্তিস্বার্থসিদ্ধির পথে চলে। বক্তৃতা, আবেগ, উত্তেজনা এবং হিংসার মাধ্যমে যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করে। সে বিমলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য তাকে ব্যবহার করতেও দ্বিধা করে না। রবীন্দ্রনাথ সন্দীপকে ব্যবহার করেছেন চরমপন্থী রাজনীতির বিপজ্জনক প্রবণতা তুলে ধরতে।

৪. নিখিলেশ : মানবতাবাদী ও নরমপন্থার প্রতীক: নিখিলেশ যুক্তিবাদী, সহনশীল ও মানবতাবাদী চরিত্র। সে রাজনৈতিক হিংসার বিরুদ্ধে। তার মতে, দেশপ্রেম মানে অন্ধ আবেগ নয়, বরং নীতি, সত্য ও মানব কল্যাণের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতি। সে বিমলাকে শিক্ষিত করে স্বাধীন চেতনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। তার এই ‘ঘর-বাইর’ দর্শন মানবতাবাদী চিন্তার এক অনন্য নিদর্শন।

৫. ‘ঘর-বাইর’ তত্ত্ব: এই তত্ত্ব উপন্যাসটির দার্শনিক গভীরতা বৃদ্ধি করে। “ঘর” মানে নিরাপত্তা, প্রেম, বন্ধন ও আবদ্ধতা—অন্যদিকে “বাইর” মানে স্বাধীনতা, দায়িত্ব, জাগরণ ও চেতনা। বিমলার ‘ঘর’ থেকে ‘বাইর’মুখী হওয়া হলো তার আত্মসচেতনতার যাত্রা—যেখানে সে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সব দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়।

৬. মানবতাবাদ, প্রেম ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব: উপন্যাসে প্রেম, নৈতিকতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সংঘর্ষ অত্যন্ত নিপুণভাবে চিত্রিত হয়েছে। বিমলা সন্দীপের রাজনৈতিক উত্তেজনায় আবিষ্ট হলেও শেষপর্যন্ত সত্য উপলব্ধি করে; বুঝতে পারে সন্দীপের লোভ ও স্বার্থপরতা দেশপ্রেম নয়। নিখিলেশের মানবতাবাদ ও নৈতিক উচ্চতা শেষ পর্যন্ত পাঠকের সহানুভূতি অর্জন করে।

◆ উপসংহার: ঘরে-বাইরে কেবল একটি রাজনৈতিক উপন্যাস নয়; এটি মানবতাবাদ, প্রেম, নৈতিকতা, নারী-চেতনা, সামাজিক দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক সংকটের এক অনন্য দলিল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাস একদিকে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করে, অন্যদিকে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও নৈতিক প্রশ্নকে সামনে আনে। রাজনৈতিক উপন্যাসের সকল বৈশিষ্ট্য এতে বিদ্যমান—

  • ✔ সমকালীন রাজনীতির প্রতিফলন
  • ✔ মতাদর্শিক সংঘর্ষ
  • ✔ মানবিক মূল্যবোধের টানাপোড়েন
  • ✔ সমাজ-রাজনীতির সংকটের বিশ্লেষণ

সুতরাং ঘরে-বাইরে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সার্থক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

খ. রাজসিংহ — বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

*****2) প্রশ্ন. দরিয়া বিবির চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর। ৫/১০

উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘রাজসিংহ’-এর অন্যতম অসাধারণ নারীচরিত্র হলো দরিয়া বিবি। লেখকের সৃষ্ট চরিত্রজগতের মধ্যে দরিয়া বিবি এক অদ্ভুত মিশ্রণের প্রতীক—ভালবাসা, ত্যাগ, বেদনা, বুদ্ধি, শিল্প প্রতিভা, সাহস এবং এক গভীর নিয়তির বন্ধনে আবদ্ধ নারীর প্রতিচ্ছবি। দরিয়া বিবির চরিত্র শুধু উপন্যাসের গতিপথে নয়, পাঠকের মনেও এক গভীর রেখাপাত করে। তার জীবন সংগ্রাম, প্রেমের আকাঙ্ক্ষা, আত্মমর্যাদা এবং মবারকের প্রতি অন্ধ ভালবাসা তাকে বঙ্কিমসাহিত্যের অন্যতম হৃদয়বিদারক চরিত্রে পরিণত করেছে।

নিচে দরিয়া বিবির চরিত্রকে কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হলো—

১. দরিয়া বিবির পরিচয় ও পারিবারিক পটভূমি: দরিয়া বিবির প্রকৃত নাম হয়তো দরীর উন্‌নিসা, তবে সকলে তাকে "দরিয়া বিবি" বলেই চিনত। বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। আপনজন বলতে একজন জ্যেষ্ঠা ভগিনী, একটি বুড়ি ফুফু বা খালা—যাদের বাড়িতেও কোনো পুরুষমানুষের উপস্থিতি ছিল না। কিশোরী বয়সের দরিয়া মাত্র সতেরো বছরের তরুণী; খর্বাকৃতি হলেও সে ছিল অপার সৌন্দর্যের আধার—যেন এক ফুটন্ত ফুল। সর্বদাই সে ছিল হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল। তার এই সরলতা, সৌন্দর্য এবং কোমলতা চরিত্রটিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে।

২. মবারকের প্রতি অন্ধ প্রেম ও ত্যাগ: দরিয়া বিবির চরিত্রের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হলো মবারকের প্রতি তার অন্ধ-নিবেদিত প্রেম। মবারক ছিল তার স্বামী, কিন্তু সে কখনোই দরিয়াকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেনি। তবুও দরিয়া মবারককে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসত। প্রেমের পরিবর্তে কিছু না পেলেও তার নিরন্তর ভালোবাসা কমেনি, বরং মবারকের প্রতি তার আকর্ষণ, ভক্তি ও আবেগ দিন দিন বেড়েছে।

দরিয়া একদিন দিল্লির চাঁদনি চকে মবারকের সামনে উপস্থিত হলে মবারক অবাক হয়ে জানতে চায়—সে কেন এসেছে? উত্তরে দরিয়া সহজভাবে জানায়—

“তুমি কখনো নিষেধ করোনি, তাই আমি সব জায়গাতেই আসতে পারি।”

এখানে দরিয়ার সরলতা এবং স্বামীর প্রতি শৈশবসুলভ বিশ্বাস স্পষ্ট।

কিন্তু মবারক যখন দরিয়াকে অস্বীকার করে এবং তাকে নিজের স্ত্রী বলেই মানতে চায় না, তখনও দরিয়া টাকার লোভে নিজেকে অপমানিত হতে দেয়নি। মবারক টাকার প্রয়োজন আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে দরিয়া কানে আঙুল দিয়ে বলেছিল—

“তোবা! তোমার টাকা আমার হারাম। আমরা আতর-সুরমা করিতে জানি।”

এতে বোঝা যায়—

দরিয়া টাকার নয়, সে মবারকের ভালোবাসার কাঙাল।

৩. আশাহত প্রেম ও ব্যর্থতার বেদনাময় স্বর: দরিয়া জ্যোতিষীর মাধ্যমে মবারকের ভাগ্য গণনার কথা শুনতে চেয়েছিল। তার কৌতূহল ছিল—জ্যোতিষীর মাধ্যমে হয়তো সে জানতে পারবে, মবারক একদিন তাকে গ্রহণ করবে কিনা। কিন্তু মবারক যখন নিজের হাতে রেখা দেখে ভাগ্য গণনার চেষ্টা করে, দরিয়া তখনই বলে—

“না, গণনার প্রয়োজন নেই—আমি সব জেনে গেছি।”

এখানে তার অব্যক্ত বেদনা, প্রেমের ব্যর্থতার আভাস এবং নিয়তির প্রতি মেনে নেওয়া মনোভাব স্পষ্ট।

৪. জ্যোতিষীর দৃষ্টিতে দরিয়া: ‘উচ্চতর সত্তা’: জ্যোতিষীর কথায় দরিয়া যেন কোনো সাধারণ মানুষ নয়; বরং মবারকের নিয়তির সঙ্গে জড়িত এক বিশেষ সত্তা। জ্যোতিষী যখন তার বক্তব্যে দরিয়ার অস্তিত্বকে “উচ্চতর” বলে স্বীকার করেন, তখন লেখক দরিয়া চরিত্রকে রহস্যময় ও নিয়তি-নির্ধারিত রূপে উন্মোচন করেন।

জ্যোতিষীর ভাষায়—

“দরিয়া পাগলী নয়, মনুষ্যও বুঝি নয়—সে মবারকের নিয়তির মতো এক সত্তা।”

শেষ পর্যন্ত মবারক সত্যিই দরিয়ার হাতে মৃত্যুবরণ করে, যা এই কথার গভীরতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

৫. বুদ্ধিমতী, চতুর ও কূটনৈতিক দরিয়া: দরিয়া ছিল শুধু প্রেমিকা নয়, একজন দক্ষ গোয়েন্দা-শিল্পীও। তার কাজ ছিল—মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কন্যা জেবউন্নিসাকে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সরবরাহ করা। ফলে রঙমহল ও অন্তঃপুরে তার যাতায়াত ছিল অবাধ।

রঙমহলের প্রহরীরা মাঝে মাঝে বাধা দিলে দরিয়া তার বুদ্ধির প্রয়োগ করত। যেমন, তাতারী প্রহরিণীকে সে ওড়নার ভিতর থেকে সরাব বের করে এক ঢোকে পান করিয়ে নিজের পক্ষে এনেছিল। এতে বোঝা যায়—দরিয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিতে জানে, এবং কাজ হাসিল করার কৌশলেও সে পটু।

৬. সংগীত প্রতিভা: দরিয়া এক অতুলনীয় শিল্পী: দরিয়া ছিল এক অসাধারণ সংগীতজ্ঞ—কণ্ঠসঙ্গীতে, সারেঙ্গ ও বীণ বাজনায় সে ছিল অতুলনীয়। তার গান শুনেই মবারক একদিন তাকে বিবাহ করেছিল।

জেবউন্নিসার মুখে শুনি—

“শাহজাদী অনেক গায়ক-গায়িকার গান শুনিয়াছিলেন; কিন্তু এমন গান কখনো শুনেন নাই।”

দরিয়ার সংগীতপ্রতিভা শুধু তার চরিত্রকে শিল্পী হিসেবে আলাদা পরিচয় দেয়নি, বরং উপন্যাসে তার প্রভাবশালী উপস্থিতি আরও দৃঢ় করেছে।

৭. মবারককে ফেরত পাওয়ার জন্য কৌশল: দরিয়া জানত, জেবউন্নিসা মবারকের উপর বিশেষ অনুগ্রহ রাখে। তাই কৌশলে সে জেবউন্নিসাকে জানায়—জ্যোতিষী বলেছেন, শাহজাদী বিবাহ করলে মবারকের ভাগ্য উন্মোচিত হবে। তার উদ্দেশ্য ছিল—জেবউন্নিসা যেন মবারকের ওপর বিরূপ হয়। এই কৌশলের মধ্য দিয়ে দরিয়ার গভীর দাগ কাটে—সে মবারকের ভালোবাসার জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শেষ চেষ্টা করেছে।

৮. মবারকের জীবনরক্ষা: দরিয়ার সাহস ও ত্যাগ: মবারকের অজ্ঞাতে দরিয়া বাদশাহি সওয়ারের ছদ্মবেশে রণক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েছিল। মবারককে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেও আহত হয়। মৃত্যুর মুখ থেকে মবারককে উদ্ধার করতে দরিয়া যে বীরোচিত ভূমিকা নেয়, তা অভূতপূর্ব—

“দুই হাতে কাঠ ধর—আমি টানিয়া তুলিতেছি।”

সে শুধু মবারককে উদ্ধারই করেনি—তার চিকিৎসা, দোলার ব্যবস্থা, সবই করেছে এক অসামান্য ত্যাগ ও ভালোবাসা দিয়ে।

বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়—

“দরিয়ার চিকিৎসাতেই মবারক আরোগ্য লাভ করিল।”

৯. প্রেমে পরিহাস, তবু অটল নিবেদন: দরিয়ার প্রেম বদলায়নি। জেবউন্নিসা ফুল দিয়ে কুকুর তৈরি করলে দরিয়া বলে—

“ঠিক মন্সবদার মবারক খাঁ সাহেবের মত হইয়াছে।”

আর যখন জেবউন্নিসা জানতে চায় সে কুকুরটি নিতে চায় কিনা, দরিয়া বলে—

“আমি মানুষটা নেব।”

এই এক বাক্যে দরিয়ার আকুল আকাঙ্ক্ষা, তীব্র প্রেম এবং নিবেদিত মনোভাবের প্রকাশ ঘটে।

১০. দরিয়া: প্রেমে উন্মাদ, নিয়তির অনুগত নারী: দরিয়ার চরিত্রের চূড়ান্ত রূপটি পাওয়া যায় উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে। যখন সে জানতে পারে মবারকের মৃত্যু হবে, সে যেন নিজেকেও হারিয়ে ফেলে। সে বিশ্বাস করে—মবারকই তার নিয়তি।

কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস—

মবারকের প্রাণরক্ষাকারী দরিয়াই পরবর্তীতে উন্মাদ হয়ে নিজের হাতে বন্দুকের গুলিতে মবারককে হত্যা করে।

এরপর দরিয়াকে আর কেউ দেখেনি—সে যেন নিয়তির অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায়।

উপসংহার: দরিয়া বিবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এক অমর সৃষ্টির নাম। সে একদিকে অনাবিল সৌন্দর্যের প্রতীক, অন্যদিকে তীব্র প্রেম ও ত্যাগের প্রতিমূর্তি। সে বুদ্ধিমতী, সংগীতজ্ঞ, সাহসী এবং একই সঙ্গে প্রবল প্রেমবোধ দ্বারা চালিত এক অসহায় নারী। তার প্রেমে আত্মসমর্পণ, ত্যাগে অতুলনীয়তা, সংগ্রামে দৃঢ়তা এবং পরিণতিতে হৃদয়বিদারক উন্মাদনা তাকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্মরণীয় নারীচরিত্রে পরিণত করেছে।

দরিয়া বিবি যেন মানব-জীবনের প্রেম-দুঃখ-ত্যাগ-নিয়তির মিলনস্থল—

যেখানে প্রেম সমাপ্ত হয় না সুখে, বরং শেষ হয় হৃদয় ভাঙার অনিবার্য পরিণতিতে।

গ. পথের পাঁচালী — বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

*****3) প্রশ্ন. 'পথের পাঁচালী' উপন্যাস অবলম্বনে সর্বজয়া চরিত্রটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২৩)

উত্তর: শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য ধন। এই উপন্যাসে গ্রামের জীবন, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক কাঠামো এবং পরিবারের দৈনন্দিন সংগ্রাম অত্যন্ত জীবন্তভাবে ফুটে ওঠেছে। এই জীবন্ত প্রতিচ্ছবিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সর্বজয়া। সর্বজয়া হরিহর রায়ের স্ত্রী এবং অপু ও দুর্গার জননী হিসেবে উপন্যাসে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার চরিত্র শুধু একটি গৃহবধূ বা জননীর দায়িত্বের সীমাবদ্ধতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সামাজিক, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকে গ্রামীণ নারীর চিত্রকে তুলে ধরেছে।

সর্বজয়া চরিত্রের দ্বিবিধ পরিচয়: উপন্যাসের শুরুতেই কিছুটা অস্পষ্ট হলেও গল্পের অগ্রগতি অনুযায়ী তার মানসিকতা ও চরিত্রের গভীরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি কেবল একজন স্ত্রী নয়, একজন মা, একজন মানবিক মানুষ এবং গ্রামীণ সমাজের একটি প্রতিনিধিত্বশীল নারী। এই দ্বৈত পরিচয় চরিত্রটিকে আরও বাস্তবসম্মত ও সমৃদ্ধ করেছে। স্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব ও মাতৃত্বের স্নেহময়তা, দু’টি দিক মিলেমিশে তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ চরিত্রে পরিণত করেছে।

স্ত্রী হিসেবে দায়িত্বশীলতা: হরিহর রায় একজন উদাসীন, দরিদ্র এবং ভবঘুরে স্বভাবের মানুষ। তার ব্যক্তিত্বের কারণে সংসারের মূল দায়িত্ব সর্বজয়ার কাঁধে পড়েছে। উপন্যাসে দেখা যায়, মাসের পর মাসে তিনি তার সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব সামলেছেন এবং সংসারের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। স্বামীর অনুপস্থিতি বা অমনোযোগী মনোভাব কখনোই তাকে হতাশ করেনি; বরং তিনি সংসার পরিচালনায় নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।

সহনশীলতার নিদর্শন: সর্বজয়া স্বামী ও পরিবারের প্রতি তার সহানুভূতিশীল মনোভাবের মাধ্যমে সহনশীলতার অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন। স্বামীর অসঙ্গতি ও সামাজিক বা আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি কখনো অভিযোগ করেননি। তিনি সবসময় হরিহরের কল্যাণ এবং পরিবারের মঙ্গল কামনা করেছেন। নিশ্চিন্দিপুর থেকে কাশী পর্যন্ত তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সংসার পরিচালনার ধৈর্য এবং সহনশীলতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

কন্যা-মাতৃত্বের স্নেহময়তা: সর্বজয়া জননী হিসেবে অত্যন্ত স্নেহময়ী। অপু ও দুর্গার প্রতি তার যত্ন, দায়িত্ববোধ এবং স্বপ্নের সীমাহীনতা উপন্যাসে প্রকাশিত হয়েছে। মাতৃত্বের ক্ষেত্রে তার মনোভাব প্রকৃতপক্ষে উদাহরণস্বরূপ। তিনি সন্তানের সুখ ও উন্নতি সব সময় নিজের চাওয়ার উপরে স্থান দেন। বাস্তবতার সঙ্গে তার স্বপ্নের সমন্বয় এবং সন্তানের মঙ্গল কামনার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সমাজে একটি আদর্শ জননীর প্রতীক হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।

দুঃখ ও প্রতিকূলতার মোকাবিলা: উপন্যাসে সর্বজয়ার জীবন সবসময় সুখের ছিল না। দুর্গার অকালমৃত্যু এবং হরিহর রায়ের অসুস্থতা ও মৃত্যুর পর তার জীবনে গভীর শূন্যতা এবং মানসিক আঘাত তৈরি হয়েছে। তবুও সর্বজয়া তার অকৃত্রিম ভালোবাসা, ধৈর্য এবং মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে এই কঠিন সময় পার করেছেন। এই পরিস্থিতিতে তার মানসিক দৃঢ়তা এবং সাহস তাকে পাঠকের কাছে একটি শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে প্রমাণিত করেছে।

অন্তর্দৃষ্টিমূলক মনোভাব: উপন্যাসে সর্বজয়া তার অন্তরের বেদনা ও অপরিণত বয়সের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করার প্রচেষ্টা করেন। এই অন্তর্দৃষ্টিমূলক মনোভাব তার সংবেদনশীল ও মানবিক চরিত্রের পরিচায়ক। তিনি কেবল বাইরে থেকে দৃঢ় এবং সহনশীল নন, অন্তরে তিনি নিজের ভুল ও জীবনের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেন এবং তা মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন। এই বৈশিষ্ট্য তাকে সাধারণ চরিত্র থেকে আলাদা ও গভীর করেছে।

চরিত্র ও সমাজের প্রতিফলন: সর্বজয়ার চরিত্রে গ্রামের অশিক্ষিত নারীর সকল ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি কখনো কখনো মুখর, সংকীর্ণ এবং স্বার্থপর হলেও অন্যায়ের প্রতি কখনো অকারণ বিদ্বেষ প্রদর্শন করেননি। বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকুরণকেও তিনি কখনো কষ্ট দিয়েছেন, তবে তা লেখকের বাস্তবধর্মী উপস্থাপনার অংশ। গ্রামীণ সমাজের নারীর সীমাবদ্ধতা, দায়িত্ববোধ এবং সহনশীলতা সর্বজয়ার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।

মাতৃত্বের মহিমা: সর্বজয়ার আসল বৈশিষ্ট্য তার মাতৃত্বের মহিমায় নিহিত। সন্তানদের প্রতি তার নিঃস্বার্থ স্নেহ, দায়িত্ববোধ এবং ত্যাগ উপন্যাসে বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। অপু ও দুর্গার প্রতি তার দায়িত্ববোধ কেবল ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি পাঠককে শিক্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

সামাজিক ও সাহিত্যিক গুরুত্ব: সর্বজয়া কেবল একজন স্ত্রী বা জননী নয়; তিনি গ্রামের নারীর সংগ্রামী মানসিকতার প্রতীক। তার জীবনের ত্যাগ, সহনশীলতা ও মানবিকতা গ্রামীণ সমাজের নারীর দৈনন্দিন জীবনচিত্রকে বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তোলে। লেখক শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লক্ষ্য ছিল সমাজের সাধারণ নারীর জীবনের জটিলতা, সীমাবদ্ধতা এবং সহনশীলতা পাঠকের সামনে তুলে ধরা। সর্বজয়ার চরিত্র এই লক্ষ্যকে নিখুঁতভাবে পূরণ করেছে।

সংক্ষেপে সর্বজয়ার গুরুত্ব:

  • স্ত্রী হিসেবে: দায়িত্ব ও সহনশীলতার আদর্শ।
  • জননী হিসেবে: স্নেহময়ী, ত্যাগময় এবং সন্তানদের সুখ ও উন্নতির প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল।
  • সমাজে: মানবিক, নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী।

সর্বশেষে বলা যায়: সর্বজয়া চরিত্র পাঠককে নারী চরিত্রের জটিলতা, সংবেদনশীলতা এবং মানবিক দিকগুলো উপলব্ধি করাতে সাহায্য করে। তিনি কেবল একটি পরিবার নয়, গ্রামীণ সমাজের নারীর সংগ্রামী চেতনার প্রতীক। তার চরিত্রের মাধ্যমে লেখক শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক অনন্য মানবিক চিত্র উপস্থাপন করেছেন, যা আজও সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক। সর্বজয়া আমাদের শেখায় কিভাবে একজন নারী সংসার, সন্তান এবং সমাজের জন্য নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন, সেই সাথে মানসিক শক্তি, সহনশীলতা এবং মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে জীবনের প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে পারেন।

উপসংহার: ‘পথের পাঁচালী’-তে সর্বজয়া চরিত্র কেবল একটি সাহিত্যিক সৃষ্টিই নয়, এটি সমাজের বাস্তব প্রতিফলন। এই চরিত্রের মাধ্যমে পাঠক নারী চরিত্রের জটিলতা, ধৈর্যশীলতা এবং সহনশীলতার গভীরতা অনুধাবন করতে পারেন। সর্বজয়ার জীবন ও ব্যক্তিত্ব একটি আদর্শ নারী চরিত্রের নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা সামাজিক, নৈতিক এবং মানবিক দিক থেকে চিরকাল পাঠকের মনে থাকবে।

ঘ. জাগরী — সতীনাথ ভাদুড়ী

*****4) প্রশ্ন. 'জাগরী' উপন্যাসে প্রতিফলিত কারা জীবনের প্রকৃতি বর্ণনা করো। উপন্যাসটিকে কারা উপন্যাস বলা যায় কী? তোমার অভিমত দাও। ৫/১০

উত্তর: ‘জাগরী’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারা সাহিত্যকর্ম, যা কেবল বন্দিদের জীবন নয়, বরং কারাভ্যন্তরের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানবিক বাস্তবতাকেও প্রতিফলিত করে। এই উপন্যাসে কেবল অপরাধীদের কাহিনী নয়, বরং রাজনৈতিক ও নৈতিক কারণে কারার জীবনে থাকা ব্যক্তিদের জীবনচিত্রও বিশদভাবে ফুটে উঠেছে।

১. কারাভ্যন্তরের রহস্যময় জীবন: লৌহকপাটের অন্তরাল বা জেলজীবনের পরিবেশ সাধারণ মানুষের কাছে অজানা। এই জীবনকে কেন্দ্র করে লেখা ‘জাগরী’ উপন্যাসে দেখা যায়, কারাভ্যন্তরে যে জীবন চলে তা অত্যন্ত রহস্যময়। এখানে থাকা মানুষদের জীবন সাধারণ সমাজের নিয়ম-নীতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। চোর, ডাকাত, খুনি প্রভৃতি অপরাধীর সঙ্গে রাজনৈতিক বন্দী ও দেশপ্রেমিকও একসাথে বাস করে। এভাবে উপন্যাস পাঠককে কারাভ্যন্তরের জীবনযাত্রা, তার জটিলতা এবং মানবিক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়।

২. বন্দী ও আদর্শবান মানুষের সহাবস্থান: ‘জাগরী’ উপন্যাসে দেখা যায় যে, জেল কেবল অপরাধীদের জন্য নয়, এখানে আদর্শবান মানুষরাও আছেন, যারা রাজনৈতিক বা নৈতিক কারণে শাস্তি ভোগ করছেন। ইতিহাসে দেখা যায়, পরাধীন ভারতে বহু দেশপ্রেমিককে দীর্ঘ সময় কারাভ্যন্তরে থাকতে হয়েছে। উপন্যাসে এই বাস্তবতা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পাঠককে ঐ সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করে।

৩. জেল প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থা: উপন্যাসে জেল প্রশাসনের নিয়ম-কানুন, শৃঙ্খলা এবং কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। পাশাপাশি বন্দীদের মধ্যে থাকা আন্তঃসম্পর্ক, তাদের আচরণ এবং জেলভিত্তিক সামাজিক কাঠামোও সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। এই উপাদানগুলি পাঠকের কাছে কারাভ্যন্তরের পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন করে, যা কোনো সাধারণ গল্পে দেখা যায় না।

৪. কারা সাহিত্য ও অভিজ্ঞতা: কারা সাহিত্য হলো সেই সাহিত্য যা কারাভ্যন্তরের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও জীবনকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। মনগড়া গল্প বা কল্পিত কাহিনীকে কারা সাহিত্য বলা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, চারুচন্দ্র চক্রবর্তীর ‘জরাসন্ধ’ ছদ্মনামের উপন্যাসও কারাভ্যন্তরের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। ‘জাগরী’ উপন্যাসের ক্ষেত্রেও লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এটিকে কারা সাহিত্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

৫. লেখকের অভিজ্ঞতা ও প্রেক্ষাপট: ‘জাগরী’-এর লেখক নিজেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি নিজে জেলের মধ্যে এই উপন্যাস লিখেছেন। তাই উপন্যাসের প্রতিটি দৃশ্য, চরিত্র এবং ঘটনা লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। এটি শুধু সাহিত্য নয়, বরং ইতিহাস ও বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত একটি নথি।

৬. প্রধান চরিত্র ও কাহিনী: উপন্যাসে চারটি প্রধান চরিত্র—বিলু, ফাঁসিসেলের বাবা, মা আওরাং কিতা এবং নীলু—এর মাধ্যমে গল্প এগিয়ে চলে। চরিত্রগুলোর চিন্তাভাবনা, উদ্বেগ এবং স্মৃতিচারণা কাহিনীর গভীরতা বাড়ায়। ফাঁসির পূর্ববর্তী রাতের উদ্বেগ, আত্মসমীক্ষা এবং তার জীবনের প্রতিফলন পাঠককে চরিত্রগুলোর সঙ্গে মানসিকভাবে সংযুক্ত করে।

৭. জেলের বাস্তব চিত্রায়ন: লেখক তৎকালীন পূর্ণিয়া সেন্ট্রাল জেলের পরিবেশ, নিয়ম-কানুন, বন্দীদের সম্পর্ক এবং কর্মপরিকল্পনাকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন। জেলের জীবন, বন্দীদের অভ্যাস, কর্তৃপক্ষের আচরণ এবং প্রতিটি ঘটনার প্রভাব পাঠকের কাছে স্বচ্ছভাবে ফুটে ওঠে। এটি উপন্যাসকে বাস্তবসম্মত ও প্রামাণ্য করে তোলে।

৮. মানবিকতা ও অনুভূতি: জেলজীবনের কঠোর বাস্তবতার মধ্যেও ‘জাগরী’ উপন্যাসে মানবিক অনুভূতি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিলুর দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত একটি দৃশ্যে দেখা যায়—“অতি পরিচিত বিড়ালটি ধীরে ধীরে আমার দিকে আসিতেছে…”। এছাড়া মা আওরাং কিতার কথাতেও জেলের বিচিত্র ব্যবস্থার মানবিকতা ফুটে ওঠে। এই মানবিক দিকটি পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলে।

৯. চরিত্রের মনস্তত্ত্ব: উপন্যাসে চরিত্রগুলোর অন্তর্দৃষ্টি, মানসিক অবস্থা এবং মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বন্দীরা নিজের দুঃখ, আশা, আকাঙ্ক্ষা ও মানসিক চাপের সঙ্গে লড়াই করে, যা পাঠকের কাছে সম্পূর্ণ জীবন্ত মনে হয়। এই মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপন্যাসকে কেবল গল্প নয়, বরং একটি গভীর মানবিক অভিজ্ঞতায় পরিণত করে।

১০. কারাজীবনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক বন্দীদের স্থিতি, শ্রেণিবিন্যাস এবং বিশেষ সেল ব্যবহারের বিষয়গুলো উপন্যাসে বাস্তবসম্মতভাবে দেখানো হয়েছে। বিপজ্জনক, সাধারণ এবং রাজনৈতিক অপরাধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকায় পাঠক সহজেই বুঝতে পারে যে, জেল কেবল শাস্তি নয়, বরং একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।

১১. সাহিত্যিক মর্যাদা: ‘জাগরী’ শুধুমাত্র কারাভ্যন্তরের কাহিনী নয়; এটি মানুষের অন্তর্গত অনুভূতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা এবং মানব মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধার এক অসাধারণ সাহিত্যকর্ম। লেখক চরিত্র, পরিবেশ এবং মানবিক আবেগের মিলন ঘটিয়েছেন, যা বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।

উপসংহার: সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘জাগরী’ একটি সফল কারা উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। উপন্যাসের চরিত্র, বাস্তব পরিবেশ, মানবিক অনুভূতি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাঠককে জেলের জীবন ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে পরিচিত করায়। তাই এটি কেবল সাহিত্যকর্ম নয়, বরং মানবতা, ন্যায় এবং রাজনৈতিক সচেতনতার এক চমৎকার দৃষ্টান্ত।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।