
Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 2nd Semester Education Major Suggestion 2025
(Psychological Foundation of Education)
Kalyani University B.A 2nd Semester Education Major ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
ইউনিট – ১: শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান এবং মানব জীবনের উন্নয়ন
(ক্লাস ঘণ্টা: ২০)
(ক) ধারণা, প্রকৃতি ও পরিধি; মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য।
(খ) বৃদ্ধি ও বিকাশ: মানব জীবনের বিকাশের বিভিন্ন ধাপ ও দিকসমূহ – শৈশব, বাল্যকাল ও কৈশোরকালের শারীরিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক ও ভাষাগত বিকাশ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা।
ইউনিট – ২: শিখন
(ক্লাস ঘণ্টা: ২৫)
(ক) শিখনের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য; শিখনে প্রভাবিত উপাদানসমূহ।
(খ) শিখনের তত্ত্বসমূহ: প্রাচীন অনুবর্তন, সক্রিয় অনুবর্তন, প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্ব, অন্তর্দৃষ্টিভিত্তিক শিখন তত্ত্ব।
(গ) শিখন স্থানান্তর: ধারণা, প্রকার ও স্থানান্তর প্রচারের কৌশল।
(ঘ) অনুপ্রেরণা: প্রকারভেদ, কারণ এবং শিখনে অনুপ্রেরণার ভূমিকা; মালোর প্রেরণার তত্ত্ব এবং তার শিক্ষাগত প্রভাব।
(ঙ) স্মৃতি: সংজ্ঞা, ধরন (দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি – LTM, স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি – STM), উপাদান, কৌশল এবং বিস্মরণের অর্থ ও কারণ।
ইউনিট – ৩: বুদ্ধি ও সৃজনশীলতা
(ক্লাস ঘণ্টা: ২০)
(ক) বুদ্ধি: সংজ্ঞা, তত্ত্ব ও প্রভাব – স্পিয়ারম্যান, থারস্টোন, গিলফোর্ড ও গার্ডনার; বুদ্ধি মাপার অভীক্ষণ – মৌখিক, অ-মৌখিক ও কর্মক্ষমতা ভিত্তিক।
(খ) সৃজনশীলতা: সংজ্ঞা, প্রকৃতি, কারণ এবং লালনপালন।
ইউনিট – ৪: ব্যক্তিত্ব
(ক্লাস ঘণ্টা: ১৫)
(ক) ব্যক্তিত্ব: সংজ্ঞা; বংশগতি ও পরিবেশের ভূমিকা।
(খ) ব্যক্তিত্বের ধরনতত্ত্ব – সেলডন, ক্রেচমার এবং বৈশিষ্ট্যভিত্তিক তত্ত্ব – অলপোর্ট, ক্যাটেল; মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব।
(গ) ব্যক্তিত্ব মাপার পদ্ধতি – প্রজেক্টিভ ও নন-প্রজেক্টিভ টেস্ট; তাদের মৌলিক পার্থক্য।
(ঘ) মৌলিক পার্থক্য: সংজ্ঞা, প্রকৃতি ও বংশগতির ভূমিকা।
(ঙ) পরিবেশ ও সংস্কৃতির ভূমিকা।
(চ) শিক্ষার উপর প্রভাব।
UNIT-1 শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান এবং মানব জীবনের উন্নয়ন
*****1) প্রশ্ন. কৈশোরকালের চাহিদাগুলি বর্ণনা কর। এই চাহিদাগুলি পূরণের জন্য শিক্ষার কার্যক্রম আলোচনা কর। পূর্ণমান – ১০
ভূমিকা:
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও রূপান্তরমূলক পর্যায় হলো কৈশোরকাল। এটি শৈশব ও যৌবনের মাঝামাঝি একটি সংকটময় সময়। সাধারণত ১২ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টিকে কৈশোরকাল ধরা হয়। এই সময়ে শারীরিক, মানসিক, আবেগজনিত ও সামাজিক দিক থেকে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। কৈশোর হলো আত্মপরিচয় গঠনের সময়। এ সময়ে কিশোর-কিশোরীরা নিজের পরিচয়, আদর্শ, নৈতিকতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে ভাবতে শুরু করে। এই কারণে এই সময়ের চাহিদাগুলি যথাযথভাবে চিহ্নিত ও পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নতুবা ভবিষ্যতের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এই প্রবন্ধে আমরা প্রথমে কৈশোরকালের বিভিন্ন চাহিদা বিশ্লেষণ করব এবং তারপর দেখব কীভাবে শিক্ষা এই চাহিদাগুলির সঠিক ও ইতিবাচক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করতে পারে।
কৈশোরকালের চাহিদাগুলি:
কৈশোরকালে যেহেতু নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে, তাই এই সময়ে কিছু মৌলিক চাহিদার জন্ম হয়, যেগুলিকে মোটামুটি নিচের শ্রেণিতে ভাগ করা যায়:
১. শারীরিক চাহিদা: এই সময়ে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। হরমোনের প্রভাবে তারা প্রজননক্ষম হয় এবং যৌন চেতনা জাগ্রত হয়। ফলে তারা বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। যেমন: কণ্ঠস্বর ভারী হওয়া, উচ্চতা বৃদ্ধি, মাসিক শুরু, দাড়ি-গোঁফ ওঠা, ইত্যাদি। এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, পুষ্টিকর খাদ্য ও বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে।
২. মানসিক চাহিদা: এই বয়সে মানসিক জগতে গভীর পরিবর্তন ঘটে। আত্মচেতনার বিকাশ ঘটে, যুক্তিবোধ ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়। তারা নতুন প্রশ্ন করতে শুরু করে এবং ‘আমি কে’, ‘আমি কী হতে চাই’—এমন চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তারা হতাশায় ভুগতে পারে, আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে বা ভুল পথে চলতে পারে।
৩. আবেগজনিত চাহিদা: কৈশোর হলো আবেগের বিস্ফোরণের সময়। এই বয়সে কিশোর-কিশোরীরা খুব দ্রুত রাগান্বিত বা হতাশ হয়। প্রেম, বন্ধুত্ব, একাকীত্ব, অপমান ইত্যাদি আবেগ তাদের উপর প্রভাব ফেলে। এই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তারা মাদক, সহিংসতা বা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।
৪. সামাজিক চাহিদা: এই বয়সে কিশোর-কিশোরীরা পরিবার থেকে বেশি বন্ধুবান্ধব ও বাইরের সমাজে আকৃষ্ট হয়। তারা আলাদা পরিচয় গড়ে তুলতে চায়, গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে চায়। তারা স্বাধীনতা চায়, কিন্তু দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই তাদেরকে সামাজিক দক্ষতা শেখানো জরুরি।
৫. আত্মপরিচয়ের চাহিদা: এই বয়সে একজন কিশোর বা কিশোরী নিজের পরিচয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে চায়—সে কী হতে চায়, তার জীবনদর্শন কী, সমাজে তার ভূমিকা কী। এই পরিচয় সংকট থেকে বের হতে প্রয়োজন গঠনমূলক দিকনির্দেশনা।
৬. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদা: কৈশোরকালেই একজন মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও ধর্মীয় চেতনার বীজ বপন করা যায়। এই সময়ে তারা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে। সঠিক নৈতিক শিক্ষার অভাব হলে তারা বিপথে চলে যেতে পারে।
কৈশোরকালের চাহিদা পূরণে শিক্ষার ভূমিকা:
শিক্ষা শুধুমাত্র পাঠ্যবই শেখানো নয়, বরং একজন কিশোর-কিশোরীর ব্যক্তিত্ব গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কৈশোরকালের চাহিদাগুলি পূরণে শিক্ষার কার্যক্রম কীভাবে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে, তা নিচে আলোচনা করা হলো।
১. স্বাস্থ্য ও শারীরবিদ্যা বিষয়ক শিক্ষা: বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক পরিবর্তন, পুষ্টি ও যৌনশিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি শেখানো অত্যন্ত জরুরি। এতে কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের শরীর সম্পর্কে সচেতন হবে এবং সঠিক আচরণ গড়ে তুলবে। শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া কার্যক্রম তাদের দেহ গঠনে সাহায্য করে।
২. মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা: বিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে পাঠক্রম চালু করা উচিত। একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানী বা শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ, হতাশা বা আত্মবিশ্বাসহীনতা থেকে মুক্তির পথ দেখানো যায়। শিক্ষার্থীদের নিজের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে।
৩. আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক শিক্ষা: বিদ্যালয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখানো জরুরি, যেমন ধৈর্য, সহানুভূতি, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি। নৈতিক শিক্ষা (Moral Education) এবং জীবন দক্ষতা ভিত্তিক (Life Skills) কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সংকট মোকাবিলা, নেতৃত্ব গুণ অর্জনের শিক্ষা পাবে।
৪. ব্যক্তিত্ব ও আত্মপরিচয় গঠন: শিক্ষার মাধ্যমে একজন কিশোরকে তার যোগ্যতা, দুর্বলতা, আগ্রহ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জানানো যায়। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সে নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সক্ষম হয়। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
৫. সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম: ডিবেট, নাটক, গান, আঁকা, খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও সামাজিক দক্ষতা বিকাশ পায়। এই ধরণের কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা দলবদ্ধভাবে কাজ করা শেখে ও নেতৃত্বের গুণ অর্জন করে।
৬. সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা: শিক্ষা ব্যবস্থায় সমাজসেবা ও সামাজিক ন্যায়বোধের চর্চা থাকা উচিত। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জনসচেতনতা কর্মসূচি, পরিবেশ সচেতনতা, দুঃস্থদের সহায়তা ইত্যাদির সাথে যুক্ত করলে তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে।
৭. ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা: কৈশোরে আধ্যাত্মিক চিন্তার বিকাশ শুরু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা, মূল্যবোধ ও আত্মিক শান্তি অর্জনের শিক্ষা দেওয়া গেলে কিশোররা মানবিক ও সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
শিক্ষকদের ভূমিকা:
শিক্ষকদের এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একজন শিক্ষক যেন কিশোর-কিশোরীদের প্রকৃত বন্ধু, দিশারী ও প্রেরণাদাতা হন। শিক্ষককে হতে হবে যত্নবান, সহানুভূতিশীল ও ইতিবাচক। তারা যেন শিক্ষার্থীদের চাহিদা বুঝে তাদের ব্যক্তিগত, মানসিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধানে সাহায্য করেন।
পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব: শুধু বিদ্যালয় নয়, পরিবার ও সমাজকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে। বাবা-মা যেন কিশোর সন্তানদের কথা শোনেন, বোঝেন ও তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করেন। পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা কিশোরদের মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহার:
কৈশোরকাল হলো জীবনের একটি সংকটময় কিন্তু সম্ভাবনাময় সময়। এই সময়ে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, আবেগজনিত, সামাজিক ও নৈতিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা না গেলে তারা বিপথে যেতে পারে। আর এই চাহিদাগুলি পূরণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো শিক্ষা। সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে একজন কিশোরকে সুনাগরিক ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই শিক্ষা শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে মানবিক, নৈতিক ও মানসিক বিকাশের দিকেও গুরুত্ব দেবে—এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
UNIT-2 শিখন
*****2) প্রশ্ন.স্মৃতি কাকে বলে? স্মৃতির বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে আলোচনা কর। স্মৃতি কীভাবে উন্নত করা যায়? [পূর্ণমান – ১০]
ভূমিকা:
মানব জীবনের বিকাশ ও পরিপূর্ণতার জন্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্ষমতার মধ্যে স্মৃতি এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ইত্যাদি আমাদের মস্তিষ্কে জমা হয় এবং প্রয়োজনে তা আমরা মনে করতে পারি — এই প্রক্রিয়াটিই হলো স্মৃতি। একজন মানুষ যত বেশি কার্যকরভাবে স্মৃতি ব্যবহার করতে পারে, ততটাই সে দক্ষভাবে সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও চিন্তাভাবনার কাজে অগ্রসর হতে পারে। শিক্ষাজীবনে স্মৃতির ভূমিকা অপরিসীম। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নিই স্মৃতি কী, এর উপাদানসমূহ এবং এটি কীভাবে উন্নত করা যায়।
স্মৃতি কাকে বলে?
স্মৃতি হলো মানুষের মস্তিষ্কে পূর্বে শেখা তথ্য, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সংরক্ষণ, ধারণ এবং প্রয়োজনে তা পুনরুদ্ধার করার মানসিক প্রক্রিয়া। সহজভাবে বললে, স্মৃতি এমন একটি মানসিক ক্ষমতা যার মাধ্যমে আমরা পূর্বে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো মনে রাখতে এবং সেগুলো ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারি। স্মৃতি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া — তথ্য গৃহীত হওয়া থেকে শুরু করে, তা মস্তিষ্কে সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে তা পুনরুদ্ধার করা — এই তিনটি ধাপে স্মৃতি কাজ করে। এটি শুধু শিক্ষা নয়, বরং ভাষা, আচরণ, চিন্তাধারা এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্মৃতির বিভিন্ন উপাদান:
স্মৃতি গঠনের পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কাজ করে। এই উপাদানগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং একটি সফল স্মৃতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটিরই নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। নিচে স্মৃতির প্রধান উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. গৃহীত তথ্য (Encoding): এটি স্মৃতির প্রথম ধাপ। যখন আমরা কোনো নতুন কিছু দেখি, শুনি, পড়ি বা অনুভব করি, তখন তা আমাদের মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট রূপে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরিত করাকেই বলা হয় Encoding। অর্থাৎ, বাইরের জগত থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের মস্তিষ্ক বুঝে নেয় এবং গ্রহণ করে। তথ্য যত পরিষ্কার ও অর্থবোধকভাবে গৃহীত হয়, তা স্মৃতিতে তত ভালোভাবে সংরক্ষিত হয়।
২. সংরক্ষণ (Storage): Encoding-এর মাধ্যমে গৃহীত তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে বা স্বল্পমেয়াদে হতে পারে। স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিতে একটি তথ্য কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত থাকে। দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে তথ্য মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষিত থাকতে পারে।
৩. পুনরুদ্ধার (Retrieval): সংরক্ষিত তথ্যকে প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় স্মরণ করার প্রক্রিয়াকে Retrieval বা পুনরুদ্ধার বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষার হলে আপনি যখন পড়া মনে করার চেষ্টা করেন, তখন Retrieval প্রক্রিয়া কাজ করে। এই উপাদানটি যত বেশি কার্যকর, তত দ্রুত ও নির্ভুলভাবে আমরা তথ্য মনে করতে পারি।
৪. স্বীকৃতি (Recognition): স্মৃতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো স্বীকৃতি। কখনও কখনও আমরা সরাসরি তথ্য মনে করতে পারি না, তবে কোনো ইঙ্গিত বা সহায়তা পেলে সেই তথ্য মনে পড়ে যায়। এটি স্মৃতির স্বীকৃতি প্রক্রিয়া।
৫. পুনরাবৃত্তি (Rehearsal): স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে তথ্যকে বারবার মনে করা বা অনুশীলন করাকে Rehearsal বলে। বারবার পড়া, বলা বা ব্যবহার করলে মস্তিষ্কে তথ্য গভীরভাবে স্থায়ী হয়।
স্মৃতি কত প্রকার ও কী কী?
স্মৃতি প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. সংবেদী স্মৃতি (Sensory Memory): এই স্মৃতি খুব স্বল্প সময়ের জন্য থাকে, সাধারণত এক সেকেন্ডেরও কম। এটি আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা গৃহীত তথ্য যেমন আলো, শব্দ, গন্ধ ইত্যাদি খুব দ্রুত ধারণ করে।
২. স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি (Short-Term Memory): এই স্মৃতি কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিতে আমরা একসাথে ৭±২ তথ্য ধারণ করতে পারি। যেমন, ফোন নম্বর, OTP কোড ইত্যাদি।
৩. দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি (Long-Term Memory): এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ করে — মাস, বছর এমনকি আজীবন পর্যন্ত। আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনার তথ্য, মুখাবয়ব ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে।
স্মৃতি কীভাবে উন্নত করা যায়?
স্মৃতি একটি মানসিক ক্ষমতা হলেও এটি অনুশীলন, অভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত করা যায়। নিচে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো:
১. নিয়মিত পুনরাবৃত্তি: যে বিষয়টি মনে রাখতে চান, সেটিকে বারবার পড়া, বলা বা লিখে অনুশীলন করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটি Rehearsal-এর মাধ্যমে স্মৃতির দৃঢ়তা বাড়ায়।
২. ভালো ঘুম: ঘুম আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ও নিরবিচারে ঘুম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৩. মনোযোগ বৃদ্ধি: মনোযোগ সহকারে কোনো কিছু শেখা বা পড়া হলে তা সহজেই স্মরণে থাকে। মনোযোগ ছাড়া কোনো তথ্য মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে গৃহীত হয় না।
৪. মাইন্ড ম্যাপ ও ভিজ্যুয়াল টেকনিক: তথ্য মনে রাখার জন্য চিত্র, মানচিত্র, রঙ, শব্দ ইত্যাদি ব্যবহার করলে তা মস্তিষ্কে সহজে স্থান পায়। যেমন Mnemonic ব্যবহার করে শেখা।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষত ওমেগা-৩, ভিটামিন বি, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক।
৬. ধ্যান ও মেডিটেশন: নিয়মিত ধ্যান মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্ককে সচল ও শান্ত রাখে, যা স্মৃতি উন্নয়নের জন্য সহায়ক।
৭. শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে কার্যকর রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
৮. নতুন কিছু শেখা: নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা নতুন স্কিল অর্জন করা স্মৃতির গঠন ও সংরক্ষণ ক্ষমতা উন্নত করে।
উপসংহার:
স্মৃতি মানুষের জীবনে একটি অপরিহার্য মানসিক প্রক্রিয়া। এটি না থাকলে শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক এমনকি আত্মপরিচয়ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। স্মৃতির বিভিন্ন উপাদান একে কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তাই স্মৃতিকে আরও কার্যকর ও উন্নত করার জন্য আমাদের মনোযোগ, চর্চা, বিশ্রাম এবং সঠিক জীবনধারা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের উচিত স্মৃতিশক্তিকে যত্ন সহকারে লালন ও বিকাশ করা।
UNIT: 4 ব্যক্তিত্ব
*****3) প্রশ্ন.ব্যক্তিত্বের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বটি আলোচনা কর। [পূর্ণমান – ১০/ ৫] (২০২৪)
মনঃসমীক্ষণ শব্দের অর্থ হলো নিজের অন্তরমন বা চিন্তার গহীনে প্রবেশ করে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা। অর্থাৎ নিজের অনুভূতি, চিন্তা ও মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং তা বিশ্লেষণ করা। ব্যক্তিত্বের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে চিহ্নিত ও বোঝার চেষ্টা করে।
ব্যক্তিত্বের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের অর্থ ও ধারণা:
মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব মূলত ব্যক্তিত্বের ব্যাখ্যার জন্য অন্তর্দৃষ্টি বা introspection পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। এই তত্ত্ব মতে, একজন ব্যক্তি তার নিজের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, চিন্তা, আবেগ ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা নিজেই বিশ্লেষণ করতে পারে এবং এভাবেই তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃতির ধারণা পাওয়া যায়।
এই তত্ত্বের মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া বুঝে তার আচরণ ও ব্যক্তিত্বের ব্যাখ্যা দেওয়া। এতে বাহ্যিক পর্যবেক্ষণ বা অন্য কারো মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব নির্ণয় না করে, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মনঃসমীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য:
১. আত্মপর্যবেক্ষণ: নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ।
২. আত্মজ্ঞান: আত্মজ্ঞান বৃদ্ধি পায়, মানসিক সচেতনতা আসে।
৩. ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: একেক ব্যক্তির জন্য আলাদা ও বিশেষ।
৪. স্বতঃস্ফূর্ততা: যেকোনো সময় অভ্যন্তরীণ অবস্থা বিশ্লেষণ করা যায়।
ব্যক্তিত্বের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের ইতিহাস ও বিকাশ:
মনঃসমীক্ষণ পদ্ধতির সূত্রপাত ১৯শ শতকের শেষ দিকে, বিশেষ করে উইলিয়াম ওয়ান্ডট এবং উইলিয়াম জেমসের মাধ্যমে।
উইলিয়াম ওয়ান্ডট এই পদ্ধতির মাধ্যমে মনোবৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতা শ্রেণিবদ্ধ করেন।
উইলিয়াম জেমস মনের স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেন।
আধুনিক মনোবিজ্ঞানে এটি সীমিত হলেও প্রাথমিক বিশ্লেষণে আজও গুরুত্বপূর্ণ।
মনঃসমীক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণে:
- নিজের মধ্যে অবসাদ বা আনন্দ লক্ষ্য করে মানসিক অবস্থা বোঝা যায়।
- রাগ, হতাশা, সুখ-দুঃখ পর্যবেক্ষণ করে আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- নিজের গুণাবলী ও দুর্বলতা শনাক্ত করে ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা পাওয়া যায়।
মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের মূল উপাদানসমূহ:
১. অনুভূতি ও আবেগের পর্যবেক্ষণ – আবেগপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ।
২. চিন্তাশক্তির বিশ্লেষণ – মানসিক কাঠামো বোঝা।
৩. আচরণ ও প্রতিক্রিয়ার স্ব-অনুধাবন – নিজের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ।
৪. মনে ধারণা ও মূল্যবোধের পর্যালোচনা – ব্যক্তিত্বের অংশ হিসেবে আদর্শ গড়ে তোলা।
মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের গুরুত্ব
- আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি
- আচরণ নিয়ন্ত্রণ
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
- ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক
মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা:
১. অবজেক্টিভ নয় – নিজস্ব বিশ্লেষণে ভুল হতে পারে।
২. সবার জন্য সমান কার্যকর নয় – অনুভব ভিন্ন হয়।
৩. বহিরাগত পর্যবেক্ষণ নেই – পারিপার্শ্বিক প্রভাব বিবেচনা করা হয় না।
৪. জটিল প্রক্রিয়া ধরা পড়ে না – অনেক কিছু অজান্তেই ঘটে।
মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বের আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা: আধুনিক থেরাপি, CBT, মাইন্ডফুলনেস, সেল্ফ রিফ্লেকশনে এই পদ্ধতির ব্যবহার রয়েছে। ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর।
উপসংহার: মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব আমাদের শেখায় কিভাবে নিজের অন্তরে প্রবেশ করে আত্মজ্ঞান ও ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন সম্ভব। যদিও সীমাবদ্ধ, তবুও এটি মানসিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নিজের প্রতি সচেতন হয়ে আত্মসমীক্ষার মাধ্যমে সফল জীবনযাপন সম্ভব।