
Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 2nd Semester History Minor Nep Suggestions 2025
History of India from the Earliest Times to the Early Medieval Period
Kalyani University B.A 2nd Semester History Minor Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit–1:
প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাহিত্যের উৎস; পুরাতন প্রস্তর যুগ থেকে নব প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির বিবর্তন ও ইতিহাস।
সিন্ধু সভ্যতার স্থান, উৎস ও বিবর্তন; বৈশিষ্ট্য, বিস্তার এবং আকার।
আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কিত বিতর্ক, বৈদিক সাহিত্য, বৈদিক যুগের রাজনৈতিক সংগঠন, অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক জীবনধারা।
ষোড়শ মহাজনপদের রাজনৈতিক প্রকৃতি, মগধের উত্থান এবং জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব।
Unit–2:
মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক প্রশাসন ব্যবস্থা।
অশোকের ‘ধম্ম’ নীতি, কলিঙ্গ যুদ্ধ, মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন।
কুষাণ, কনিষ্ক, সাতবাহন, সাতকর্ণী এবং সঙ্গম যুগ ও তার সাহিত্য।
রাজনৈতিক ইতিহাস ও চিন্তাধারা, বৈষ্ণব ধর্ম ও শৈববাদের বিকাশ।
Unit–3:
গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান—প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত, দাক্ষিণাত্যের নীতি, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ও স্কন্দগুপ্ত।
‘স্বর্ণযুগ’ বিষয়ক বিতর্ক—গুপ্ত যুগের সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন এবং ভারতের রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের সূচনা।
গিল্ড ও ভারতীয় সামন্ততন্ত্র নিয়ে বিতর্ক।
হর্ষবর্ধনকে প্রাচীন ভারতের ‘শেষ মহান সম্রাট’ হিসেবে মূল্যায়ন।
Unit–4:
কেন্দ্রীভূত ভারত থেকে বিকেন্দ্রীকরণের দিকে অগ্রগতি।
ত্রিপক্ষীয় সংগ্রামের কারণ ও পর্ব।
উত্তর ভারত: প্রতিহার ও রাজপুত রাজ্য।
ধর্মপাল, দেবপাল, বল্লাল সেন এবং দক্ষিণ বাংলার লক্ষ্মণ সেন।
পল্লব রাজ্য: মহেন্দ্রবর্মণ (প্রথম ও দ্বিতীয়), নরসিংহবর্মণ (প্রথম ও দ্বিতীয়), ধ্রুব ও তৃতীয় গোবিন্দ।
চালুক্য রাজবংশ: প্রথম ও দ্বিতীয় পুলকেশী, বিক্রমাদিত্য।
চোল রাজবংশ: প্রথম ও দ্বিতীয় রাজেন্দ্র চোল, রাজরাজ চোল।
চোলদের স্থানীয় প্রশাসন, চোল ও চালুক্যদের সামুদ্রিক বাণিজ্য ও স্থাপত্যশৈলী।
Unit-1: প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাহিত্যের উৎস
*****1) প্রশ্ন. পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আলোচনা কর। (৫/১০ নম্বর, ২০২৩)
ভূমিকা:
ভারতীয় ইতিহাসে বৈদিক যুগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই যুগকে প্রধানত দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়—প্রারম্ভিক (Rigvedic) এবং পরবর্তী (Later Vedic) বৈদিক যুগ। পরবর্তী বৈদিক যুগ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে ৬০০ অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সময়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিবর্তনও এই সময়ে ঘটে, যেখানে ছোট গোষ্ঠী বা গানা থেকে রাজ্য গঠনের দিকে অগ্রসর হয় বৈদিক সমাজ। এ সময়েই রাষ্ট্র, রাজা ও প্রশাসনিক কাঠামোর একটি স্পষ্ট চিত্র আমরা পাই। এই প্রবন্ধে আমরা পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিশদ আলোচনা করবো।
শুরুতে রাজা নির্বাচিত হতেন, তবে পরবর্তী সময়ে রাজ্য উত্তরাধিকারসূত্রে রাজতন্ত্রের সূচনা হয়।
রাজার দায়িত্ব ছিল—শাসনকার্য পরিচালনা করা, জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করা, যুদ্ধকালীন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া, আইন ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, ধর্মীয় আচারে অংশগ্রহণ করা।
রাজাকে ‘জনস্য গোপা’ অর্থাৎ প্রজার রক্ষক বলা হয়েছে।
রাজা বিভিন্ন ধরনের কর আদায় করতেন যেমন ‘বলি’, ‘ভাগ’, ‘কর’ ইত্যাদি। তিনি সেনাবাহিনী গঠন করতেন এবং প্রয়োজনে যুদ্ধ করতেন।
২. রাজ্য গঠন ও বিস্তার: এই সময়ে ছোট ছোট গোত্রভিত্তিক সমাজগুলি রাজ্যে পরিণত হতে থাকে। গানা বা জনপদ থেকে বৃহৎ ও সুসংগঠিত রাজ্যের সৃষ্টি হয়।
কুরু, পাঞ্চাল, কোশল, বিদেহ, মগধ প্রভৃতি বড় জনপদের সৃষ্টি হয়। এই রাজ্যগুলোতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুসংগঠিত হতে থাকে।
রাজ্য সম্প্রসারণের জন্য যুদ্ধ ও বিজয় ছিল স্বাভাবিক। যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে রাজা তাঁর রাজ্য বিস্তৃত করতেন।
এই সময় রাজাদের মধ্যে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
৩. প্রশাসনিক সংগঠন ও রাজপরিষদ: রাজা এককভাবে সব কাজ করতেন না। তাকে সাহায্য করার জন্য একটি রাজপরিষদ ছিল।
এই রাজপরিষদে প্রধান প্রধান সদস্য ছিলেন—পুরোহিত, সেনাপতি, যাজকগণ, ভান্ডাগারিক (কোষাধ্যক্ষ), দূত বা আমাত্য।
এই পরিষদ রাজার গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পরিষদ ছিল, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন রাজাই।
৪. সভা ও সমিতির ভূমিকা: প্রারম্ভিক বৈদিক যুগে সভা ও সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে পরবর্তী বৈদিক যুগে এদের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পায়।
সভা ছিল বয়োজ্যেষ্ঠ ও অভিজাতদের একটি সভা, যারা বিচারকার্য পরিচালনা করত ও প্রশাসনে পরামর্শ দিত।
সমিতি ছিল সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন, যারা রাজা নির্বাচন ও প্রশাসনে মতামত দিত।
কিন্তু পরবর্তীতে রাজশক্তি কেন্দ্রীভূত হওয়ায় এদের গুরুত্ব হ্রাস পায়।
৫. রাজ্য প্রশাসনে ধর্মের প্রভাব: পরবর্তী বৈদিক যুগে ধর্ম ও রাজনীতি পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। রাজাকে ধর্মের রক্ষক হিসেবে গণ্য করা হতো।
যজ্ঞ, অশ্বমেধ, রাজসূয়, বজপেয় যজ্ঞের মাধ্যমে রাজা নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতেন।
পুরোহিত শ্রেণি রাজাকে ধর্মীয়ভাবে বৈধতা দিত এবং রাজার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকত।
৬. সেনাবাহিনী ও সামরিক ব্যবস্থা: রাজ্যের প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণের জন্য শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
সেনাবাহিনী ছিল—হস্তি, অশ্ব, রথ ও পদাতিক বিভাগে বিভক্ত।
রাজার অধীন সেনাপতি যুদ্ধ পরিচালনা করতেন এবং যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে রাজ্য ও সম্পদের বিস্তার ঘটত।
৭. আইন ও বিচার ব্যবস্থা: এই যুগে আইন ছিল ধর্মশাস্ত্র ও সমাজের রীতিনীতিভিত্তিক।
বিচারক হিসেবে রাজা অথবা তাঁর প্রতিনিধি কাজ করতেন।
আইনভঙ্গের শাস্তি ছিল জরিমানা, বহিষ্কার বা দাসত্ব।
বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের কারণে শাস্তির মাত্রা ভিন্ন ছিল।
৮. অর্থনৈতিক দিক ও রাজস্ব ব্যবস্থা: রাজনীতি ও অর্থনীতি ছিল একে অপরের পরিপূরক।
রাজা রাজস্ব আদায় করতেন কৃষিপণ্য, পশুপালন, ব্যবসা ও যুদ্ধজয় থেকে।
রাজস্ব ব্যয় হতো সেনা, রাজপরিবার ও ধর্মীয় কাজে।
৯. রাজ্য ও জনগণের সম্পর্ক: রাজার সঙ্গে প্রজার সম্পর্ক ছিল পিতৃতান্ত্রিক। রাজা কর্তৃত্ব বজায় রাখলেও কিছু ক্ষেত্রে জনগণের মতামতের মূল্য দিতেন।
তবে বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের কারণে প্রজাদের অধিকার সীমিত ছিল।
নারীর রাজনৈতিক ভূমিকা: প্রারম্ভিক যুগে নারীর কিছু অধিকার থাকলেও পরবর্তী বৈদিক যুগে তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কমে যায়। সভা ও সমিতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ধর্ম ও রাজনীতির সংযুক্তি: রাজা নিজেকে দেবতাদের প্রতিনিধি মনে করতেন এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার বানাতেন।
রাজতন্ত্রের সংকট ও পরিবর্তনের আভাস: এই যুগের শেষ দিকে গণরাজ্যের (গণসংঘ) সূচনা হয়, যেমন—বৈশালী, কপিলবাস্তু। যা পরবর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
উপসংহার: পরবর্তী বৈদিক যুগের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমরা রাজশক্তির বিকাশ, প্রশাসনিক কাঠামো, সভা-সমিতি, ধর্মের ভূমিকা ও সামরিক কাঠামোর সমন্বিত রূপ দেখতে পাই।
এই যুগে কেন্দ্রীয় রাজশক্তি যেমন জোরদার হয়, তেমনই ভবিষ্যৎ রাজ্য ও সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
এই রাজনৈতিক উন্নয়নের ধারাই পরবর্তী মহাজনপদ, নন্দ, মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে।
Unit-2: মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান
*****2) প্রশ্ন. ভারতের ইতিহাসে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্ব নিরূপণ কর। অথবা, সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্ব ও কার্যাবলী আলোচনা কর। (৫/১০ নম্বর)
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্থান ও প্রেক্ষাপট : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধের শেষ নন্দ রাজা ধনানন্দের সময় জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম একটি সাধারণ পরিবারে হলেও তিনি অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
ইতিহাস অনুযায়ী, চাণক্য বা কৌটিল্য নামে খ্যাত এক ব্রাহ্মণ পণ্ডিত তাকে খুঁজে বার করেন এবং তাকে রাজনীতি ও যুদ্ধবিদ্যায় শিক্ষা দেন। চাণক্যের পরামর্শ ও সহায়তায় চন্দ্রগুপ্ত প্রথমে ধনানন্দকে পরাজিত করে মগধ দখল করেন এবং পরে একে একে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন রাজ্য দখল করে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্বসমূহ :
১. মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব হলো একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গঠন। তিনি প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও বিভক্ত রাজ্যগুলোকে একত্রিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেন।
তার সাম্রাজ্য আফগানিস্তান, পাঞ্জাব, গুজরাট, বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বিশাল এলাকা একক প্রশাসনের অধীনে এনে তিনি ভারতবর্ষে প্রথম রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।
২. ধনানন্দকে পরাজিত করা : নন্দ বংশের শেষ রাজা ধনানন্দ অত্যন্ত প্রজাক্লান্ত ও স্বৈরাচারী ছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত চাণক্যের সহায়তায় ধনানন্দকে পরাজিত করে মগধের সিংহাসন অধিকার করেন।
এটি ছিল তার প্রথম বড় কৃতিত্ব। মগধ ছিল সে সময় ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ রাজ্য এবং এখানকার ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে চন্দ্রগুপ্ত তার সাম্রাজ্য বিস্তারের ভিত্তি প্রস্তুত করেন।
৩. আলেকজান্ডারের উত্তরাধিকারীদের পরাজয় : আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সেনাপতিদের মধ্যে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। চন্দ্রগুপ্ত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রিক শাসক সেলিউকাস নিকেটরকে পরাজিত করেন।
এই বিজয়ের ফলে তিনি আফগানিস্তান ও বালুচিস্তানের অংশ তার সাম্রাজ্যে সংযুক্ত করেন। এই যুদ্ধের পর চন্দ্রগুপ্ত ও সেলিউকাসের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে ভারত-গ্রিক সম্পর্কেরও সূচনা হয়।
৪. কূটনৈতিক দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : সেলিউকাসের সঙ্গে চুক্তি করে চন্দ্রগুপ্ত শুধু যুদ্ধজয়ীই হননি, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন।
সেলিউকাস তার কন্যাকে চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ দেন এবং তার প্রতিনিধি হিসেবে মেগাস্থেনিসকে পাঠান, যিনি পাটলিপুত্রে অবস্থান করেন ও "ইন্ডিকা" নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি রচনা করেন। এই ঘটনা চন্দ্রগুপ্তের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রচনার প্রমাণস্বরূপ।
৫. দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করে প্রতিটি প্রদেশে রাজ্যপাল নিযুক্ত করেন।
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত কর আদায়, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ, ন্যায়বিচার এবং জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনার জন্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেন। তার রাজত্বকালে রাজধানী পাটলিপুত্র একটি সুসংগঠিত ও সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত হয়।
৬. শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন : চন্দ্রগুপ্তের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব হলো একটি বিশাল ও সুসজ্জিত সেনাবাহিনী গঠন। তার সেনাবাহিনীতে প্রায় ৬ লাখ পদাতিক, ৩০ হাজার অশ্বারোহী, ৯ হাজার রথ এবং ৮ হাজার হস্তী ছিল বলে মেগাস্থেনিস উল্লেখ করেছেন।
এই বিশাল বাহিনী তার সাম্রাজ্য রক্ষা ও সম্প্রসারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
৭. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার : চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। চাণক্যের রচিত 'অর্থশাস্ত্র'-এ এই বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
কর ব্যবস্থা, কৃষি জমির পরিমাপ, জলসেচ ব্যবস্থা, মুদ্রানীতি এবং ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের উপর স্থাপন করেন। চন্দ্রগুপ্ত গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন।
৮. আইন-শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থা : তার শাসনকালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুদৃঢ় ছিল। অপরাধ দমন ও বিচার বিভাগের কার্যকারিতা ছিল উল্লেখযোগ্য।
প্রজাদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। চাণক্যের নির্দেশনায় আইন, শাস্তি এবং নীতির মাধ্যমে সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হতো।
৯. জৈনধর্ম গ্রহণ ও সন্ন্যাসজীবন : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার জীবনের শেষ পর্বে পার্থিব ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে জৈনধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি জৈন ধর্মগুরু ভদ্রবাহুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং দক্ষিণ ভারতের শ্রবণ বেলগোলায় গমন করে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন।
সেখানেই তিনি অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন বলে মনে করা হয়। তার এই জীবনচরিত তার আত্মিক উন্নয়ন ও ধর্মীয় চেতনার পরিচায়ক।
উপসংহার : চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ছিলেন এমন এক পুরুষ, যিনি নিজ প্রতিভা, সাহসিকতা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছিলেন। তার শাসনামলে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী হয় এবং অর্থনৈতিক স্থিতি আসে।
সাম্রাজ্য বিস্তারে তার দক্ষতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রচনায় দূরদর্শিতা, এবং ধর্মীয় চেতনার মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধি—সব মিলিয়ে তিনি একজন পরিপূর্ণ রাষ্ট্রনায়ক ও ইতিহাসের মহান পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত। তাই ভারতের ইতিহাসে তার অবদান অনন্য ও অমূল্য।
Unit 3: গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান
*****3) প্রশ্ন.গুপ্ত যুগকে শিল্প ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে 'সুবর্ণ যুগ' বলা হয় কেন? অথবা, গুপ্ত যুগকে 'সুবর্ণ যুগ' বলা কতটা যুক্তিসংগত? অথবা, তুমি কি গুপ্ত যুগকে 'স্বর্ণযুগ' বলে মনে করো? যদি করো, তবে কেন? অথবা, গুপ্ত যুগকে কেন প্রাচীন ভারতের 'সুবর্ণ যুগ' বলা হয়? (৫/১০ নম্বর)
✦ ১. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা: গুপ্ত সম্রাটগণ একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত কেন্দ্রীয় প্রশাসন কায়েম করেছিলেন।
বিশেষত সমুদ্রগুপ্ত ও চন্দ্রগুপ্ত দ্বিতীয়-এর সময় ভারতীয় উপমহাদেশে এক বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসনের কারণে শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম, স্থাপত্য প্রভৃতির উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়। এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সৃজনশীলতা বিকাশ লাভ করে।
✦ ২. শিল্পকলার অভূতপূর্ব বিকাশ: গুপ্ত যুগের শিল্পকলাকে ভারতীয় চিত্রকলার একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে ধরা হয়।
এই সময়ে অজন্তার গুহাচিত্রে বৌদ্ধ ধর্মের জীবনচিত্র ও জাতক কাহিনি, মথুরা ও সারণাথে বুদ্ধ ও বৈষ্ণব মূর্তিকলা, গন্ধার শিল্প প্রভাব, সমুদ্রগুপ্তের সোনার মুদ্রা প্রভৃতি নিদর্শন এক অনন্য শিল্পচর্চার সাক্ষ্য বহন করে।
✦ ৩. স্থাপত্যকলার অনন্য নিদর্শন: এই সময়ে নির্মিত নালন্দা ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিটারগাঁও ও দেউগড়ের মন্দির, উদয়গিরি ও এলোরার গুহা মন্দির ইত্যাদি স্থাপত্য নিদর্শন ধর্মীয় চেতনা ও নান্দনিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমন্বয় ঘটায়।
✦ ৪. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও বৈচিত্র্য: হিন্দুধর্ম ছিল প্রধান, তবে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের প্রতিও ছিল সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রয়াগপ্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তের বহুধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধ এবং নানা ধর্মের শিল্পরচনার সমন্বয় শিল্প ও স্থাপত্যে বহুমাত্রিকতা এনেছে।
✦ ৫. সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ: কালিদাস, বিষ্ণুশর্মা ও ভরতের মতো সাহিত্যিকরা এই যুগে সংস্কৃত ভাষায় নাটক, মহাকাব্য ও শাস্ত্র রচনা করেন,
যার মাধ্যমে শিল্প ও সাহিত্য এক অপরকে পরিপূরক করে তোলে।
✦ ৬. বিজ্ঞান ও গণিতচর্চা: আর্যভট্ট শূন্যের ধারণা, পৃথিবীর গোলাকৃতি ও গ্রহণের ব্যাখ্যা দেন;
শুশ্রুত ও চরক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভাবনীয় অবদান রাখেন, যা প্রযুক্তি ও প্রকৌশলেও প্রভাব ফেলেছে।
✦ ৭. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পে বিস্তার এবং সোনার মুদ্রা প্রচলনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ় হয়;
এই উন্নতি শিল্প ও স্থাপত্যে রাজা ও অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করে।
✦ ৮. গুপ্ত যুগের প্রভাব ও উত্তরাধিকার: পাল, চোলা ও চন্দেলা শাসকদের শিল্পে গুপ্ত যুগের ধারার প্রভাব ছিল স্পষ্ট;
যেমন খাজুরাহো মন্দির ও দ্রাবিড় মন্দির স্থাপত্য এই ধারার উত্তরসূরি।
✦ ৯. ইতিহাসবিদদের মতামত: ভি.এ. স্মিথ বলেন, “The Gupta period was the classical age of Indian culture”,
রোমিলা থাপার বলেন, “It was a period of cultural synthesis and expansion”,
রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “In arts and literature, the Gupta period witnessed unparalleled heights of excellence”।
✦ উপসংহার: উপরে বর্ণিত নানা কারণে গুপ্ত যুগকে নিঃসন্দেহে ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে একটি ‘সুবর্ণ যুগ’ বা স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে।
এই যুগে কেবল শিল্প ও স্থাপত্যের নয়, বরং সামগ্রিকভাবে ধর্ম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক অদ্বিতীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। এ কারণে ইতিহাসের পরিভাষায় গুপ্ত যুগকে 'সোনালি যুগ' বা 'সুবর্ণ যুগ' বলা একান্তই যুক্তিসঙ্গত।
Unit4: কেন্দ্রীভূত ভারত থেকে বিকেন্দ্রীকরণের দিকে অগ্রগতি
*****4) প্রশ্ন. রাজপুত রাজ্যগুলির পরাজয়ের আর্থসামাজিক কারণ ব্যাখ্যা কর। (৫ নম্বর)
১. রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও একতা অভাব: রাজপুত রাজ্যগুলির মধ্যে ছিল না কোনো রকম ঐক্য। প্রত্যেকটি রাজ্য নিজেকে স্বাধীন ও সর্বোচ্চ শক্তিশালী মনে করত। তাদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও হিংসা ছিল চরমে।
মুসলিম আক্রমণকারীরা একের পর এক রাজ্য দখল করলেও, অন্য রাজ্যগুলি তাতে সাহায্য না করে বরং সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করত। এর ফলে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি এবং একের পর এক রাজ্য সহজেই পরাজিত হয়।
২. পুরনো সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা: রাজপুত সমাজ ছিল একটি রক্ষণশীল সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। সমাজে জাতিভেদ, ছোঁয়াছুঁয়ির কুসংস্কার, নারীর অবমাননা ও নিচু জাতির প্রতি অবজ্ঞা ছিল প্রকট।
এই সমাজব্যবস্থা সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মূল স্রোত থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। ফলে জনসাধারণ রাজ্য রক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।
৩. আর্থিক দুর্বলতা ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতি: রাজপুত রাজ্যগুলির অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। বাণিজ্য, শিল্প ও নগরায়নের ক্ষেত্রে তারা খুব পিছিয়ে ছিল। রাজ্যগুলোতে বড় কোনো শিল্পকেন্দ্র বা বাণিজ্যিক হাব গড়ে ওঠেনি।
রাজস্ব আদায়েও ছিল দুর্বলতা। এই আর্থিক দুর্বলতার ফলে সৈন্যদের বেতন দেওয়া, অস্ত্র সরবরাহ করা এবং দুর্গ রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
৪. সামরিক দৃষ্টিভঙ্গির পশ্চাদপদতা: রাজপুতরা যুদ্ধ করতেন প্রথাগত পদ্ধতিতে। তাদের যুদ্ধশৈলী ছিল সম্মুখযুদ্ধ ও বীরগাথাভিত্তিক। তারা গৌরবের জন্য যুদ্ধ করতেন, কৌশলগত জয়ের কথা ভাবতেন না।
অন্যদিকে মুসলিম আক্রমণকারীরা ব্যবহার করতেন উন্নত অস্ত্র, দ্রুত অশ্বারোহী বাহিনী এবং কৌশলগত পরিকল্পনা। এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে রাজপুতরা পরাজিত হন।
৫. নারীর অবস্থান ও জহর প্রথা: রাজপুত নারীদের সমাজে মর্যাদা থাকলেও, তারা ছিলেন গৃহবন্দি। জহর প্রথার মাধ্যমে সম্মান রক্ষার্থে তারা আত্মহত্যা করতেন, যা এক অর্থে রাজ্য হারানোর আতঙ্ককেই প্রতিফলিত করে।
নারীদের সামাজিক উৎপাদনশীলতায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। নারীশক্তির এই বঞ্চনা সমাজকে দুর্বল করেছিল।
৬. শিক্ষার সীমাবদ্ধতা ও সংস্কৃতির রক্ষণশীলতা: রাজপুত সমাজে শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল উচ্চবর্ণ এবং ধনী শ্রেণির মধ্যে। সাধারণ মানুষ শিক্ষার সুযোগ পেত না। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গণিতের মতো বিষয় থেকে সমাজ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিল।
এর ফলে তারা উন্নত সামরিক কৌশল ও প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি।
৭. ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংস্কারবিরোধিতা: রাজপুত সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল প্রবল। ব্রাহ্মণ্যবাদ ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজে পরিবর্তন ও প্রগতির কোনো স্পৃহা দেখা যায়নি।
মুসলিম শাসকরা যেখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সংস্কার নিয়ে আগ্রহী ছিলেন, রাজপুত সমাজ সেখানে পিছিয়ে ছিল।
৮. প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দুর্নীতি: রাজপুত রাজ্যগুলিতে প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল ছিল। রাজস্ব আদায়, বিচার ব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ছিল অদক্ষতা ও অব্যবস্থা। দুর্নীতিগ্রস্ত জমিদার ও সামন্তদের দৌরাত্ম্য ছিল চরমে।
ফলে জনগণের মধ্যে প্রশাসনের ওপর আস্থা ছিল না।
৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও খরা সমস্যা: মধ্যযুগে রাজস্থান ও আশপাশের অঞ্চলগুলি প্রায়শই খরা ও অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হতো। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি করত এবং রাজ্য অর্থনীতিকে দুর্বল করত।
দীর্ঘমেয়াদী খরা ও দুর্ভিক্ষ রাজ্যগুলোকে আরও দুর্বল করে দেয়।
১০. মুসলিম শাসকদের কূটনীতি ও বুদ্ধিমত্তা: মুসলিম আক্রমণকারীরা শুধু বলপ্রয়োগ করেননি, বরং কূটনৈতিকভাবে বিভিন্ন রাজপুত শাসকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে তাদের দুর্বল করেছেন।
অনেক সময় এক রাজাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অপরকে আক্রমণ করতেন। এই বিভাজন নীতির কারণে রাজপুতরা একত্রিত হতে পারেননি।
১১. প্রযুক্তিগত ও অস্ত্র উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা: মুসলিম সেনাবাহিনীর কাছে ছিল উন্নত মানের কামান, তীর-ধনুক, বারুদ, বলগা ও ঘোড়সওয়ার বাহিনী।
অপরদিকে, রাজপুতরা তখনও প্রাচীন কৌশল ও অস্ত্রের ওপর নির্ভর করতেন। এই প্রযুক্তিগত পার্থক্য যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ফারাক তৈরি করেছিল।
১২. জনগণের বিমুখতা: রাজপুত রাজ্যগুলির সামাজিক ব্যবস্থা সাধারণ মানুষকে নিপীড়িত করত। নিম্নবর্ণ, দরিদ্র কৃষক, শ্রমজীবী মানুষরা শাসকদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল।
ফলে তারা বিদেশি শাসকদের আগমনে তেমন প্রতিরোধ করেনি বা অনেক সময় সমর্থনও করেছে।
১৩. শিক্ষিত শ্রেণির অনুপস্থিতি ও মেধাপাচার: রাজপুত রাজ্যগুলোতে শিক্ষার অভাবে যোগ্য প্রশাসক, দক্ষ সেনাপতি, প্রযুক্তিবিদ বা রাজ্যপাল সৃষ্টি হয়নি।
এই কারণে অভ্যন্তরীণ প্রশাসন দুর্বল ছিল এবং সামরিক পরামর্শ ও পরিকল্পনাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
উপসংহার: রাজপুত রাজ্যগুলির পরাজয় কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণের ফল নয়। এর পেছনে ছিল বহু আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দুর্বলতা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক কৌশলে পশ্চাদপদতা, আর্থিক দুর্বলতা, শিক্ষার অভাব এবং জনগণের বিমুখতা — সবকিছু মিলিয়ে রাজপুতদের পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আজকের সমাজে ঐক্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণ করা সম্ভব।