kalyani university B.A 2nd semester Political science sec suggestions 2025

Kalyani University Suggestion

Kalyani University B.A 2nd Semester Political Science SEC Nep Suggestions 2025

(Nationalism in India / ভারতের জাতীয়তাবাদ)

Kalyani University B.A 2nd Semester Political Science SEC Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

(সিলেবাস – ২০২৫)

ইউনিট – ১: ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন এবং এর প্রভাব – কৃষি, ভূমি-সম্পর্ক, শিল্প এবং প্রশাসন ব্যবস্থার উপর।

ইউনিট – ২: সংস্কার ও প্রতিরোধ –
(ক) ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ
(খ) প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন
(গ) শিক্ষা এবং ভারতে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান।

ইউনিট – ৩: জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং এর সামাজিক ভিত্তির বিস্তৃতি –
(ক) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পর্যায় – আজাদ হিন্দ ফৌজ, সংবিধান রচনা পর্ব, স্বদেশী ও র‍্যাডিক্যালস, মুসলিম লীগের গঠন
(খ) গান্ধী এবং গণসংহতি – অসহযোগ, আইন অমান্য এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন
(গ) সমাজতান্ত্রিক দল – কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী, কমিউনিস্ট।

ইউনিট – ৪: বিভাজন এবং স্বাধীনতা – ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা, দ্বি-জাতি তত্ত্ব এবং দেশভাগ নিয়ে বিরোধিতা।

Unit – 1: ঔপনিবেশিক শাসন ও তার প্রভাব

*****1) প্রশ্ন. অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো? ঔপনিবেশিক আমলে ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল বা তাৎপর্য লেখ।(৫/১০)

ভূমিকা:

ভারতবর্ষ প্রাচীনকাল থেকেই শিল্প ও কারুশিল্পের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ ছিল। বাংলার সূক্ষ্ম মসলিন, কাশ্মীরি পশমি শাল, দক্ষিণ ভারতের সিল্ক, রাজস্থানের ধাতুশিল্প, মুর্শিদাবাদের রেশম— এগুলো কেবল দেশীয় বাজারেই নয়, বরং বিশ্ববাজারেও খ্যাতি লাভ করেছিল। ইউরোপ, আরব, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া— সর্বত্র ভারতীয় পণ্যের চাহিদা ছিল বিপুল। কিন্তু ১৮শ শতাব্দীর শেষ থেকে ১৯শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প ও হস্তশিল্প ক্রমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে ইতিহাসে ‘অবশিল্পায়ন’ (Deindustrialization) বলা হয়। এটি কেবল একটি অর্থনৈতিক পরিবর্তন নয়; বরং ভারতীয় সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

অবশিল্পায়নের সংজ্ঞা: অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায়— এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো দেশ বা অঞ্চলের বিদ্যমান শিল্প, বিশেষত দেশীয় কুটির শিল্প ও হস্তশিল্প, ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বা উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে কর্মসংস্থান ও শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। ভারতের ক্ষেত্রে, ঔপনিবেশিক আমলে ইংরেজদের নীতি, বিদেশি পণ্যের আমদানি এবং শিল্পের প্রতি অবহেলা— এই সবই মিলে দেশীয় শিল্পের ক্ষয় ও অবনতি ঘটিয়েছিল।

অবশিল্পায়নের কারণ:

১. ব্রিটিশ নীতি ও শিল্পবিরোধী মনোভাব: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বাজারকে কাঁচামালের উৎস ও ব্রিটিশ প্রস্তুত পণ্যের বাজার হিসেবে গড়ে তুলেছিল।
   এর ফলে দেশীয় শিল্পকে কোনো প্রকার সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। বরং এমন করনীতি চালু হয়েছিল যা দেশীয় উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করত এবং বিদেশি পণ্যের আমদানিকে বাড়াত।

২. ব্রিটিশ মেশিন-নির্ভর শিল্পের প্রতিযোগিতা: ১৮শ শতকের শেষ দিকে ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডে যন্ত্রচালিত টেক্সটাইল কারখানা গড়ে ওঠে।
   সস্তায় ও দ্রুত উৎপাদিত ব্রিটিশ কাপড় ভারতীয় বাজার প্লাবিত করে। ফলে হাতে বোনা ভারতীয় মসলিন, সিল্ক ও কাপড়ের প্রতিযোগিতা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

৩. শুল্কনীতি ও বাণিজ্যিক বৈষম্য: ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় কুটির শিল্পপণ্যের উপর ইংল্যান্ডে উচ্চ শুল্ক আরোপ করত, যাতে ভারতীয় পণ্য ইউরোপীয় বাজারে প্রতিযোগিতা করতে না পারে।
   কিন্তু ব্রিটিশ পণ্য ভারতে প্রায় শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করত, যা দেশীয় শিল্পের ক্ষয় ত্বরান্বিত করেছিল।

৪. কাঁচামাল রপ্তানি ও শিল্পের অবনতি: ভারত থেকে তুলা, রেশম, নীল, আফিম ইত্যাদি কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হত।
   কিন্তু সেই কাঁচামাল থেকে প্রস্তুত পণ্য ফের আমদানি হয়ে আসত, ফলে দেশীয় উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সংকট দেখা দেয়।

৫. পরিবহন ও রেলপথের একমুখী ব্যবহার: ব্রিটিশরা রেলপথ নির্মাণ করেছিল মূলত কাঁচামাল বন্দরনগরে পৌঁছানোর জন্য এবং ইংল্যান্ড থেকে প্রস্তুত পণ্য আভ্যন্তরীণ বাজারে বিতরণের জন্য।
   এর ফলে গ্রামীণ শিল্পের জন্য বাজার আরও সংকুচিত হয়।

৬. যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা: ১৮শ শতকে প্লাসি যুদ্ধ (১৭৫৭), বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪) সহ ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ইংরেজদের সম্প্রসারণবাদী নীতি শিল্পোন্নয়নের পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়।

৭. কারিগরদের দারিদ্র্য ও পেশা পরিবর্তন: চাহিদা হ্রাস, বাজার হারানো এবং কম মজুরির কারণে বহু কারিগর কৃষিকাজে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

৮. প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অভাব: ভারতের ঐতিহ্যবাহী শিল্প যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে আধুনিকীকরণ পায়নি।
   ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব যন্ত্রপাতি ও উৎপাদনশক্তি বাড়ালেও ভারতে তা প্রয়োগ করা হয়নি।

অবশিল্পায়নের ফলাফল বা তাৎপর্য:

১. অর্থনৈতিক মন্দা ও দারিদ্র্য: শিল্প ধ্বংসের ফলে বিপুল সংখ্যক কারিগর ও শিল্পকর্মী বেকার হয়ে পড়েন।
   গ্রামীণ জনগণ কৃষির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। কৃষিক্ষেত্রে জনসংখ্যার চাপ বেড়ে উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং দারিদ্র্য বাড়ে।

২. গ্রামীণ অর্থনীতির সংকট: যেহেতু শিল্পের সুযোগ হারিয়ে সবাই কৃষিতে মনোনিবেশ করে, ফলে জমির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
   এতে উৎপাদন বৃদ্ধি হয়নি, বরং খাদ্যসংকট দেখা দেয়।

৩. বাণিজ্যিক কৃষির বিস্তার: ব্রিটিশরা খাদ্যশস্যের পরিবর্তে নগদ ফসল (যেমন— নীল, তুলা, আফিম, আখ) উৎপাদনে উৎসাহিত করে, যা বিদেশে রপ্তানি হত।
   এর ফলে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং দুর্ভিক্ষের প্রকোপ বাড়ে।

৪. দুর্ভিক্ষ ও জনসংখ্যার হ্রাস: শিল্প ধ্বংস ও খাদ্য উৎপাদনের অভাবে বারবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়— যেমন ১৭৭০ সালের মহাদুর্ভিক্ষ, যা বাংলার জনসংখ্যা বিপুলভাবে কমিয়ে দেয়।

৫. বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ: ভারতের বাজার সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ প্রস্তুত পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। দেশীয় উৎপাদকরা বাজার হারিয়ে নিঃস্ব হন।

৬. সাংস্কৃতিক প্রভাব: ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের সাথে যুক্ত শিল্পকলা, নকশা, বুননশৈলী ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।
   এর ফলে ভারতীয় সংস্কৃতির একটি বড় অংশ লোপ পায়।

৭. শিল্পকেন্দ্রের ধ্বংস: ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, কাশ্মীর, সুরাট, মাসুলিপট্টনম— এসব ঐতিহ্যবাহী শিল্পকেন্দ্র একে একে ধ্বংস হয়ে পড়ে।

ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে শিল্পক্ষেত্রে পরিবর্তন: যদিও দেশীয় কুটির শিল্প ধ্বংস হয়েছিল, কিন্তু ঔপনিবেশিক যুগে কিছু নতুন ধরণের শিল্পের বিকাশ ঘটে—
   • আধুনিক শিল্প: জুট মিল (কলকাতায়), তুলা কল (বোম্বে), রেলওয়ে কারখানা, কয়লা খনি, চা-বাগান ইত্যাদি।
   • তবে এসব শিল্প ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং এর লক্ষ্য ছিল ভারতের কাঁচামাল ও শ্রমশক্তি ব্যবহার করে ব্রিটিশ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা।

ইতিহাসবিদদের মতামত: অনেক ইতিহাসবিদ এই প্রক্রিয়াকে ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক "বৃহৎ বিপর্যয়" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
   • রোমেশ চন্দ্র দত্ত বলেছেন, “ভারতবর্ষ একসময় ছিল শিল্পসমৃদ্ধ দেশ, কিন্তু ব্রিটিশ শাসনে তা হয়ে উঠল কাঁচামাল সরবরাহকারী উপনিবেশ।”
   • দাদাভাই নওরোজি তাঁর ‘ড্রেইন থিওরি’-তে দেখিয়েছেন কিভাবে শিল্পের ধ্বংস ব্রিটিশদের পুঁজির প্রবাহ বাড়িয়েছিল এবং ভারতের সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছিল।

উপসংহার: অবশিল্পায়ন কেবল ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং এটি উপনিবেশবাদী শোষণের একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। ব্রিটিশ শাসনের বাণিজ্যিক নীতি, শুল্ক বৈষম্য, শিল্পবিরোধী মনোভাব ও বাজার নিয়ন্ত্রণের ফলে ভারতের সমৃদ্ধ কুটির শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ কর্মসংস্থান হ্রাস, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, দুর্ভিক্ষ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষয়— সব মিলিয়ে ভারত একটি কৃষিনির্ভর দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। তবুও ভারতীয় জনগণের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে ২০শ শতকের মাঝামাঝি স্বাধীনতা অর্জনের পর শিল্পোন্নয়নের পথে আবার এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল।

Unit – 2: সংস্কার এবং প্রতিরোধ আন্দোলন

*****2) প্রশ্ন. ভারতে সমাজসংস্কার আন্দোলনে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা কর। (১০)

ভূমিকা: উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতীয় সমাজ ছিল অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, অসাম্য এবং নানা সামাজিক অনাচারে ভরপুর। নারীর অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়; সতীপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারীশিক্ষার প্রতি উদাসীনতা এবং অজ্ঞতার অন্ধকারে ভারতীয় সমাজ বন্দি হয়ে পড়েছিল। এই সময়ে এক আলোকবর্তিকার মতো আবির্ভূত হন রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২–১৮৩৩)। তিনি আধুনিক ভারতের নবজাগরণের জনক হিসেবে পরিচিত। তাঁর জীবন ও কর্ম শুধু সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোয় আনার জন্য নয়, বরং একটি নতুন, প্রগতিশীল ও যুক্তিনির্ভর সমাজ নির্মাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

১. জীবন পরিচয়: রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলির রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রামকান্ত রায় ছিলেন বৈষ্ণব এবং মাতা তারিণী দেবী ছিলেন শাক্ত মতাবলম্বী। শৈশবে রামমোহন বাংলা, সংস্কৃত, ফারসি ও আরবি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি পাটনা ও বারাণসীতে গিয়ে ফারসি, আরবি, সংস্কৃত এবং হিন্দু-ইসলামি দর্শনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞানেও দক্ষতা লাভ করেন। বহুভাষা ও বহু সংস্কৃতির এই শিক্ষার ফলে তাঁর চিন্তাধারা হয়েছিল উদার, যুক্তিনির্ভর ও আধুনিক।

রামমোহনের জীবনপট: রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ সালের ২২ মে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি ও আরবি ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, ইতিহাস ও সমাজনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ইউরোপীয় উদারবাদী চিন্তাধারার প্রভাব এবং ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রের মানসিকতা মিলিয়ে তিনি এক নবধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলেন।

সমাজসংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: রামমোহনের সময় ভারতীয় সমাজ ছিল গভীরভাবে কুসংস্কার ও অনাচারে আচ্ছন্ন। নারীর অবস্থান ছিল অবনত, সতীদাহ প্রথা, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি প্রথা সমাজে প্রচলিত ছিল। ধর্মীয় ক্ষেত্রে গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, জড়বস্তুর পূজা, অমানবিক রীতিনীতি চলত। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ছিল একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমাজসংস্কারকের। সেই ভূমিকা পালন করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়।

রামমোহন রায়ের সমাজসংস্কারমূলক অবদান

১. সতীদাহ প্রথা বিলোপ: রামমোহনের সমাজসংস্কার আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সতীদাহ প্রথা বিলোপ।
সতীদাহ ছিল এমন একটি অমানবিক প্রথা যেখানে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে চিতায় জীবন্ত দাহ করা হতো। রামমোহন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং শাস্ত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে হিন্দু ধর্মে এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাঁর আন্দোলনের ফলস্বরূপ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে আইন করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

২. নারীশিক্ষা ও নারী-অধিকার: রামমোহন নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজের অগ্রগতি নারীর শিক্ষার উপর নির্ভর করে। তিনি বিধবা বিবাহকে সমর্থন করেন, বহুবিবাহের বিরোধিতা করেন এবং নারীর সম্পত্তির অধিকার রক্ষার দাবি জানান। তাঁর উদ্যোগে নারীশিক্ষার জন্য স্কুল স্থাপন করা হয়।

৩. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বিরোধিতা: তৎকালীন সমাজে বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ ছিল সাধারণ ঘটনা।
রামমোহন এই প্রথাগুলির কুফল তুলে ধরে সমাজকে সচেতন করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, নারীর প্রতি এই অবিচার কেবল মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং সমাজের অগ্রগতির পথে বড় বাধা।

৪. ধর্মীয় সংস্কার – ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা: ১৮২৮ সালে রামমোহন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্রাহ্মসমাজের মূল লক্ষ্য ছিল— একেশ্বরবাদ প্রচার, অন্ধবিশ্বাস ও গোঁড়ামি দূর করা, জড়পূজা ও পশুবলি রোধ করা। ব্রাহ্মসমাজ ধর্মকে যুক্তি, মানবতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। এখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ— সকলের জন্য উন্মুক্ত দরজা ছিল।

৫. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও যুক্তিবাদ: রামমোহন ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রবক্তা ছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমস্ত ধর্মের মূল শিক্ষা একই— মানবকল্যাণ। তিনি খ্রিস্টধর্মের মানবতাবাদী আদর্শ ও ইসলাম ধর্মের একেশ্বরবাদী তত্ত্বকে স্বাগত জানান। তাঁর রচনায় যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ ও সার্বজনীন নৈতিকতার সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়।

৬. শিক্ষা সংস্কার: রামমোহন পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও আধুনিক জ্ঞানের প্রচারের পক্ষে ছিলেন।
তিনি ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে জোর দেন এবং কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। তাঁর উদ্যোগে গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও দর্শন পড়ানো শুরু হয়। তিনি বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করে শিক্ষার প্রসার ঘটান। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সম্বাদ কৌমুদী ছিল বাংলার প্রথম দিকের সংবাদপত্রগুলির একটি।

৭. সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা: রামমোহন মুক্ত চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রবক্তা ছিলেন।
তিনি বাংলা, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করেন— যেমন সম্বাদ কৌমুদী, মিরাত-উল-আখবার। এই পত্রিকাগুলির মাধ্যমে তিনি সামাজিক অবিচার, কুসংস্কার, প্রশাসনিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

৮. ইংরেজি আইন সংস্কারের দাবি: রামমোহন বিশ্বাস করতেন যে প্রশাসনিক ও আইন ব্যবস্থায় সংস্কার ছাড়া সামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়।
তিনি ইংরেজ শাসকদের কাছে ইংরেজি শিক্ষা প্রসার, প্রেসের স্বাধীনতা ও বিচারব্যবস্থার উন্নতির দাবি জানান।

রামমোহনের রচনা ও সাহিত্যকর্ম: রামমোহন বহু ভাষায় রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে—
• "তুহফাত-উল-মুয়াহিদিন" (একেশ্বরবাদ সংক্রান্ত)
• "গৌতমের ন্যায়"
• "প্রার্থনা গ্রন্থ"
• "বেদান্ত সার"
• "আবার আদি ব্রাহ্মসমাজ"

রামমোহনের অবদানের তাৎপর্য

১. সামাজিক পুনর্জাগরণের সূচনা: রামমোহন ভারতীয় সমাজে আধুনিকতার বীজ বপন করেন।
তাঁর উদ্যোগে নারী-পুরুষ সমানাধিকার, মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ ও একেশ্বরবাদ প্রচলিত হয়।

২. মানবাধিকার রক্ষার অগ্রদূত: তিনি নারীর অধিকার রক্ষায় যে ভূমিকা পালন করেন, তা আধুনিক মানবাধিকারের ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৩. শিক্ষা ও যুক্তিবাদের প্রসার: তিনি শিক্ষাকে সামাজিক উন্নতির মূল হাতিয়ার হিসেবে দেখেছিলেন।
তাঁর প্রবর্তিত শিক্ষানীতি আজও প্রাসঙ্গিক।

৪. ধর্মীয় উদারতার বিকাশ: রামমোহন ভারতীয় ধর্মীয় চিন্তায় উদারতা ও সর্বজনীনতার পথ দেখিয়েছেন।
যা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে একত্রিত করেছে।

মূল্যায়ন: রাজা রামমোহন রায়কে যথার্থই আধুনিক ভারতের নবজাগরণের জনক বলা হয়। তিনি শুধু একজন সমাজসংস্কারক নন, ছিলেন একজন চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং মানবতাবাদী। তাঁর কর্মপ্রয়াসে ভারতীয় সমাজে যুক্তিবাদ, মানবাধিকার ও আধুনিক চিন্তার বীজ রোপিত হয়। সতীপ্রথা বিলোপ, নারীশিক্ষার প্রচলন, ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা, পত্রিকা প্রকাশ—সবই তাঁর প্রगतিশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।

উপসংহার: রাজা রামমোহন রায় এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় সমাজে যুক্তি, মানবতা ও প্রগতির আলো জ্বালিয়েছিলেন। তাঁর সংস্কারমূলক কাজ কেবল উনবিংশ শতাব্দীর ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং আধুনিক ভারতের ভিত্তি গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। আজকের ভারত যে আধুনিকতা, নারী অধিকার ও শিক্ষার অগ্রগতিতে এগিয়ে গেছে, তার পেছনে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান অবিস্মরণীয়। তাই তিনি চিরকাল ভারতীয় সমাজসংস্কারের ইতিহাসে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন।

Unit – 3: জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সামাজিক ভিত্তি

*****3) প্রশ্ন. ঔপনিবেশিক ভারতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রভাব আলোচনা কর। (৫)

ভূমিকা: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ, যাকে আমরা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বা সিপাহী বিদ্রোহ হিসেবে জানি, ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবিরোধী প্রতিরোধের প্রথম সংগঠিত প্রচেষ্টা হিসেবে পরিচিত। যদিও এই বিদ্রোহ প্রত্যক্ষভাবে সফল হয়নি, তবুও এর প্রভাব ভারতীয় সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই বিদ্রোহ মূলত সৈন্যদের অসন্তোষ, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আঘাত এবং স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভের কারণে উদ্ভূত হয়।

প্রধান কারণ: বিদ্রোহের পেছনের কারণগুলি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় ছিল।
ব্রিটিশদের নীতিমালা যেমন ভূমি-রাজস্ব, ব্যবসায়িক দমননীতি, এবং ধর্মীয় হস্তক্ষেপের কারণে সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিল।
সিপাহীরা, যাদের মধ্যে মূলত মেঘালয়, উড়িষ্যা ও উত্তর ভারতীয় সৈন্যগণ ছিলেন, ব্রিটিশদের প্রতি আস্থা হারিয়েছিল।
ব্রিটিশ সেনার নতুন কার্তুজ ব্যবহার সংক্রান্ত ধর্মীয় অনৈতিকতা এবং আঞ্চলিক শাসক ও জমিদারদের বিরুদ্ধে নীতি বিদ্রোহকে ত্বরান্বিত করেছিল।

সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের প্রধান প্রভাবগুলির মধ্যে প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হলো সামরিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পরিবর্তন। বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা ভারতীয় সেনা পুনর্গঠনের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পূর্বে কোম্পানির হাতে থাকা নিয়ন্ত্রণ ভারত সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হয় এবং ১৮৫৮ সালে "ইন্ডিয়া এক্ট" অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার সরাসরি ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। এটি ভারতের রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করে।
বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আঞ্চলিক শাসক এবং জমিদারদের সঙ্গে আরও শক্তিশালী সমঝোতা গড়ে তোলে। ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পেরেছিল যে, শুধুমাত্র সেনাশক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়, তাই তারা স্থানীয় শক্তি, রিয়াসত ও জমিদারদেরকে সংযুক্ত করে শাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠন করে।

অর্থনৈতিক প্রভাব: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ভারতের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা আরও কঠোরভাবে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চালায়। জমির কর সংগ্রহের নীতি আরও কঠোর হয় এবং স্থানীয় ব্যবসা ও কৃষি উৎপাদনে ব্রিটিশ কোম্পানির প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটিশরা ভারতের অর্থনীতিকে নিজেদের স্বার্থে আরও সংহত করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি প্রভাব ফেলে।
বিদ্রোহের কারণে কিছু অঞ্চলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায় এবং স্থানীয় শিল্প ও হস্তশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে, এই অভিজ্ঞতা ব্রিটিশদের বুঝতে সাহায্য করে যে, সরাসরি শোষণ ও কর সংগ্রহের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্থানীয় শক্তির সমঝোতা অপরিহার্য।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিদ্রোহ স্থানীয় সমাজে জাতি, ধর্ম ও আঞ্চলিক চেতনাকে জাগ্রত করে।
যদিও বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, তবুও এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অপ্রত্যাশিত অসন্তোষ এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে।
বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি প্রয়োগে আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতি বিবেচনায় রেখে প্রশাসনিক নীতি প্রণয়ন করা হয়।
এটি ভবিষ্যতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সূচনায় ভূমিকা রাখে।

শিক্ষাগত প্রভাব: বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠন করে। তারা বুঝতে পারে যে শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের মন ও চেতনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ইংরেজি শিক্ষার প্রসার এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা হয়।
যদিও এটি মূলত ব্রিটিশ শাসনের স্বার্থে করা হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি ভারতের বৌদ্ধিক ও সামাজিক চেতনা জাগ্রত করতে সাহায্য করে।
শিক্ষার প্রসারে বিদ্রোহের প্রভাব অপার হয়, কারণ এটি নতুন প্রজন্মকে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং সামাজিক সচেতনতা প্রদানে সাহায্য করে।

দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক চেতনায় প্রভাব: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি প্রমাণ করে যে, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংহত প্রতিরোধ সম্ভব।
যদিও বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, তবুও এটি ভবিষ্যতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন, ১৯২০–১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আদর্শ ও চেতনা মূলত এই ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ থেকে উদ্ভূত।

স্থানীয় শাসক ও জমিদারদের উপর প্রভাব: বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা স্থানীয় রাজা ও জমিদারদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করে।
বিদ্রোহে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের প্রায়শই ক্ষমতা হারাতে হয়।
অনেকে জমিদারি হারায় বা তাদের ভূমি বাজেয়াপ্ত হয়।
একই সময়ে, যারা ব্রিটিশদের সাথে সমঝোতা করে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
এটি স্থানীয় রাজনৈতিক গঠন ও ক্ষমতার ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

সাংবাদিকতা ও তথ্যপ্রচারের ক্ষেত্রে প্রভাব: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময় ও পরে সাংবাদিকতা ও তথ্য প্রচারের গুরুত্ব বেড়ে যায়।
ব্রিটিশ শাসনের দিকে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ প্রকাশ পেতে শুরু করে।
স্থানীয় সংবাদপত্র ও প্রচার মাধ্যম সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতা ও বিদ্রোহের প্রভাব বাড়ায়।
এটি ভারতের গণমাধ্যমের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপসংহার: সার্বিকভাবে বলা যায়, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সরাসরি রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশদের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এটি স্থানীয় শিল্প ও কৃষি ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এটি জাতীয় চেতনা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
শিক্ষাগতভাবে এটি আধুনিক শিক্ষার প্রসারকে ত্বরান্বিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে ওঠে।
যদিও এই বিদ্রোহ প্রত্যক্ষভাবে সফল হয়নি, তবুও এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
এটি প্রমাণ করে যে, ভারতের মানুষ কখনোই নিপীড়নের বিরুদ্ধে নীরব থাকতে চায়নি এবং শাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ প্রাচীনকাল থেকেই চলমান ছিল।
তাই ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ শুধু একটি সামরিক ঘটনা নয়, বরং এটি ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

Unit – 4: দেশভাগ ও স্বাধীনতা

*****4) প্রশ্ন. যে পরিস্থিতি ও কারণে 'দ্বি-জাতি' তত্ত্বটি ঘোষিত হয়েছিল তা যথাযথভাবে বিশ্লেষণ কর। (১০)

ভূমিকা: ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে সমাজে ভিন্নতা চিহ্নিত করা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। ব্রিটিশ ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যেখানে হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্নতার দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বার্থের সংঘাত প্রকট রূপ নিয়েছিল। এই সময়ের প্রেক্ষাপটে ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব’ (Two-Nation Theory) আবির্ভূত হয়। দ্বি-জাতি তত্ত্ব মূলত ধারণা করেছিল যে, হিন্দু ও মুসলিম ভারতীয়রা সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং সামাজিক মূল্যবোধের দিক থেকে ভিন্ন জাতি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এটি পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাজন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

১. রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা ভারতীয় সমাজকে তাদের শাসনের সুবিধার্থে বিভক্ত করতে শুরু করে।
ব্রিটিশদের ‘বিভাজিত শাসন নীতি’ (Divide and Rule Policy) হিন্দু-মুসলিম মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচয়ের ওপর জোর দিয়ে রাজনৈতিক শক্তি ধরে রাখার প্রচেষ্টা ছিল। ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল। মুসলিম লীগের নেতারা মুসলিমদের স্বার্থের স্বরূপ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে মুসলিমরা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা অনুভব করছিল। এ সময়ের মধ্যে মুসলিম লীগ এবং আলাদা ভোটব্যবস্থা (Separate Electorates) প্রবর্তন এই তত্ত্বের সূচনা করেছিল।

২. সামাজিক-ধর্মীয় প্রেক্ষাপট: মুসলিম সমাজের মধ্যে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের সাথে মেলামেশা ও সাংস্কৃতিক একীকরণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল।
মুসলিমদের মধ্যে অনেকে মনে করতেন যে, হিন্দু ও মুসলিমদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ ভিন্ন হওয়ায় একত্রিতভাবে সমাজ পরিচালনা সম্ভব নয়। এ সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা, সম্পত্তি ও আইন প্রণয়নে ধর্মভিত্তিক ভিন্নতা মুসলিমদের মধ্যে ‘সুরক্ষা ও স্বাতন্ত্র্য’ রক্ষার চেতনা জাগিয়েছিল। এই সামাজিক বিভাজন দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে থাকে।

৩. অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট: ব্রিটিশ শাসনকালে অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল।
মুসলিম ব্যবসায়ীরা হিন্দু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ফলে নিজেদের স্বার্থ ও পরিচয় রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়। গ্রামীণ মুসলিম কৃষকও হিন্দু জমিদারদের নিকট তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার হারানোর আশঙ্কা বোধ করতেন। এই অর্থনৈতিক পার্থক্য দ্বি-জাতি তত্ত্বকে শক্তিশালী করেছিল।

৪. শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট: ১৯৪০-এর দশকের পূর্বে মুসলিম সমাজের শিক্ষাগত অগ্রগতি হিন্দু সমাজের তুলনায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে ছিল।
মুসলিমদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার অভাব, ব্রিটিশ শিক্ষানীতির ধারা, এবং হিন্দু শিক্ষাব্যবস্থার প্রাধান্য তাদের স্বতন্ত্রতা ও নিরাপত্তা চেতনা বাড়িয়েছিল। মুসলিম লিগের নেতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিমদের জন্য আলাদা শিক্ষাব্যবস্থা ও সুযোগের দাবিতে ছিলেন।

৫. রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা: দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন মুসলিম লীগের নেতা মুহম্মদ আলী জিন্নাহ।
তিনি মুসলিমদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক স্বার্থ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। জিন্নাহর যুক্তি ছিল, মুসলিমরা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে স্বাধীন ভারতীয় রাজনীতিতে নিরাপদ থাকবে না। এই প্রেক্ষাপটে তিনি দ্বি-জাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন, যা পরবর্তীতে মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান আন্দোলনের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

৬. দ্বি-জাতি তত্ত্বের মূল যুক্তি:
• ধর্ম: হিন্দু ও মুসলিমদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং জীবনধারা ভিন্ন।
• সাংস্কৃতিক পার্থক্য: ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক এবং সামাজিক প্রথা ভিন্ন।
• রাজনৈতিক স্বার্থ: রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সংবিধান প্রণয়নে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে মুসলিম স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।
• অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত নিরাপত্তা: মুসলিম সম্প্রদায় তাদের অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত স্বার্থ রক্ষায় উদ্বিগ্ন।

৭. দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রভাব: দ্বি-জাতি তত্ত্ব কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজনেরও সূচনা করেছিল।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় এটি ভারত-বিভাজন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। দ্বি-জাতি তত্ত্বের কারণে হিন্দু-মুসলিম মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বয় প্রায় অচল হয়ে যায়। এর ফলে ব্যাপক জনসংখ্যা স্থানান্তর, হিংসা, এবং ধ্বংসাত্মক সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি হয়।

৮. সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া: দ্বি-জাতি তত্ত্ব সমালোচিত হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে।
অনেক পণ্ডিত ও নেতা যুক্তি দেন যে, ধর্মের ভিত্তিতে জাতি নির্ধারণ করা সমাজে বিভাজন ও সংঘাতকে বাড়িয়ে দেয়। তারা মনে করতেন, স্বাতন্ত্র্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংহতি ও সমন্বয়ের পথে কাজ করা উচিত।

উপসংহার: দ্বি-জাতি তত্ত্বের ঘোষণার পেছনে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত নানা কারণ কাজ করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের বিভাজিত নীতি, মুসলিমদের স্বার্থ-সুরক্ষা, সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব মিলিত হয়ে এটি বাস্তব রূপ নেয়। দ্বি-জাতি তত্ত্ব পরবর্তীতে ভারত-বিভাজন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল তত্ত্ব হিসেবে ইতিহাসে স্থায়ী স্থান অধিকার করে। এটি প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা কখনও কখনও একটি জাতিকে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথে ধাবিত করতে পারে।

সংক্ষেপে: দ্বি-জাতি তত্ত্বের ঘোষণা কেবল ধর্মীয় পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করেই নয়, বরং রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপটের সমন্বয়ে গঠিত। ব্রিটিশ শাসনের বিভাজিত নীতি এবং মুসলিম নেতৃত্বের উদ্বেগ এই তত্ত্বকে কার্যকর রূপ দেয়। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, দ্বি-জাতি তত্ত্ব ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে অবিস্মরণীয় প্রভাব রেখেছে।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

Kalyani University B.A 2nd Semester Political Science SEC Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 99 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।