Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 3rd Semester Bengali Minor Nep Suggestions 2026
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
Kalyani University B.A 3rd Semester Bengali Minor Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. তুমি 99 টাকা পেমেন্ট কর। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবে। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক কর।
তুমি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পার। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
(ক) গদ্য, প্রবন্ধ ও কাব্য কবিতা:
গদ্য প্রবন্ধ:
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কাব্য ও কবিতা:
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ।
(খ) সাময়িক পত্র ও নাটক:
সাময়িক পত্র:
দিগ্দর্শন, সমাচার দর্পণ, সংবাদ প্রভাকর, বঙ্গদর্শন, সবুজপত্র, কল্লোল।
নাটক:
মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।
(গ) উপন্যাস ও ছোটগল্প:
উপন্যাস:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছোটগল্প:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, পরশুরাম।
(ক) গদ্য, প্রবন্ধ ও কাব্য কবিতা:
*****1) প্রশ্ন. বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান আলোচনা কর। ৫/১০
ভূমিকা:
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ছিল না, বরং বাংলা গদ্যের বিকাশে এটি একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের প্রশাসনিক কাজকর্মে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান অপরিসীম। এই কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভিত্তি রচিত হয়, যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার পটভূমি: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮০০ সালে, লর্ড ওয়েলেসলির আমলে। ব্রিটিশ শাসকরা তাদের প্রশাসনিক কাজে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে তারা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। এই কলেজের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ফারসি সহ বিভিন্ন ভাষার শিক্ষা দেওয়া হতো এখানে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে এই কলেজের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান:
১. বাংলা গদ্যের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি রচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে বাংলা গদ্য সাহিত্যের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ছিল না। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি রচিত হয়। কলেজের অধীনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার জন্য একটি নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়, যা বাংলা গদ্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অন্যতম প্রধান অবদান হলো বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখ পণ্ডিতরা বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।
৩. বাংলা গদ্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়ন: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়ন ঘটে। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের ভাষাকে সহজ, সরল, ও প্রাঞ্জল করার চেষ্টা করেন। তারা বাংলা গদ্যে সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করেন এবং সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় গদ্য রচনা করেন। এই প্রচেষ্টা বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. বাংলা গদ্যের বিভিন্ন শাখার সূচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের বিভিন্ন শাখার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, গল্প, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি বিভিন্ন শাখার সূচনা করেন। এই বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের পরিধি বিস্তৃত হয় এবং বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়।
৫. বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের উত্থান: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের উত্থান ঘটে। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের প্রথম লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ পণ্ডিতরা বাংলা গদ্যের প্রথম লেখক হিসেবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান লাভ করেন। তাদের রচনাবলি বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভিত্তি রচনা করে।
৬. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্য সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সমাজের কুপ্রথা, অন্ধবিশ্বাস, ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। রাজা রামমোহন রায়ের লেখনী এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং সমাজ সংস্কারের পথ প্রশস্ত করেন।
৭. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ ঘটে। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম, ও অন্যান্য ধর্মের দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ করেন। তারা বাংলা গদ্যে ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রদান করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে ইতিহাস ও ভূগোল চর্চা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে ইতিহাস ও ভূগোল চর্চার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে ভারতের ইতিহাস, ভূগোল, ও সংস্কৃতি সম্পর্কে লেখালেখি করেন। তারা বাংলা গদ্যে ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের পরিধি বিস্তৃত করে।
৯. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে বিজ্ঞান চর্চার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তারা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রচেষ্টা বাংলা গদ্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সাহিত্য সমালোচনার সূচনা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যে সাহিত্য সমালোচনার সূচনা হয়। এই কলেজের শিক্ষকরা বাংলা গদ্যে সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। তারা বাংলা গদ্যের মাধ্যমে সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করেন, যা বাংলা গদ্য সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে একটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে। এই কলেজের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি রচিত হয়, বাংলা গদ্যের প্রথম পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়, বাংলা গদ্যের ভাষা ও শৈলীর উন্নয়ন ঘটে, বাংলা গদ্যের বিভিন্ন শাখার সূচনা হয়, বাংলা গদ্যের প্রথম লেখকদের উত্থান ঘটে, বাংলা গদ্য সাহিত্য সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বাংলা গদ্য সাহিত্যে ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তার প্রকাশ ঘটে, বাংলা গদ্য সাহিত্যে ইতিহাস, ভূগোল, ও বিজ্ঞান চর্চার সূচনা হয়, এবং বাংলা গদ্য সাহিত্যে সাহিত্য সমালোচনার সূচনা হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের এই অবদানের জন্য বাংলা গদ্য সাহিত্য আজ সমৃদ্ধ ও বিকশিত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান চিরস্মরণীয়।
(খ) সাময়িক পত্র ও নাটক:
*****2) প্রশ্ন. বাংলা সাহিত্যে বঙ্গদর্শন পত্রিকার ভূমিকা সংক্ষেপে লেখ। ৫/১০
ভূমিকা: উনিশ শতকের বাংলা সমাজ ও সাহিত্য জাগরণের ইতিহাসে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার নাম বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক প্রবন্ধ সাহিত্য ও সাময়িক পত্রধারার সূচনা এবং বিকাশে এই পত্রিকার অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। ১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত এই পত্রিকা শুধু একটি সাহিত্যপত্র ছিল না; এটি ছিল সমাজজাগরণ ও চিন্তাধারার এক গুরুত্বপূর্ণ বাহন।
বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রকাশ ও সূচনা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন ম্যাজিস্ট্রেট পদে কর্মরত ছিলেন, তখন তিনি অনুভব করেন যে বাংলায় একটি এমন সাহিত্যপত্র প্রয়োজন, যা কেবল সাহিত্য প্রকাশ করবে না, সমাজ ও জাতির মননশীলতাকে উদ্দীপিত করবে। এই চিন্তা থেকেই ১৮৭২ সালে 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়। প্রথমে এটি মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হতো।
বঙ্কিমচন্দ্র এই পত্রিকার মাধ্যমে সমাজ ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রেই নতুন ধারার সূচনা করেন। তিনি তাঁর সম্পাদকীয় দক্ষতা এবং সাহিত্যিক প্রতিভা দিয়ে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাকে স্বকীয়তা এবং মর্যাদা প্রদান করেন।
বাংলা সাহিত্যে বঙ্গদর্শন পত্রিকার বিশেষ ভূমিকা:
১. আধুনিক বাংলা গদ্যের উন্নয়ন: বঙ্গদর্শন পত্রিকার অন্যতম অবদান হলো বাংলা গদ্যের সরল, প্রাঞ্জল ও সাহিত্যিক রূপায়ণ। এর আগে বাংলা গদ্য ছিল ক্লিষ্ট ও সংস্কৃতঘেঁষা। বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং এবং তাঁর অনুসারীরা বঙ্গদর্শনে যে ধরনের প্রবন্ধ লিখতেন, তা ভাষায় সহজবোধ্য এবং বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল। এভাবে আধুনিক বাংলা গদ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।
২. বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য গড়ে তোলা: বঙ্গদর্শন পত্রিকার মাধ্যমে বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য ধারা সুসংহত হয়। সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে যে প্রবন্ধসমূহ এখানে প্রকাশিত হতো, তা বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের ধারা গড়ে তোলে। এর আগে এ ধরনের প্রবন্ধ প্রকাশের তেমন সুযোগ ছিল না।
৩. জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ: বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত অনেক প্রবন্ধে জাতির ঐক্য, স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা ও শিক্ষা প্রসঙ্গে লেখালেখি করা হতো। বঙ্কিমচন্দ্রের নিজস্ব চিন্তাধারা ও ভাষণে জাতীয়তাবাদী চেতনার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। বিশেষ করে ‘বন্দেমাতরম্’ গান প্রথম বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয় বলে ধারণা করা হয়। এই গান পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণাদায়ী স্লোগানে পরিণত হয়।
৪. সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা: বঙ্গদর্শন পত্রিকার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্র সমাজের কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে কলম ধরেন। নারী শিক্ষা, বিধবা বিবাহ, সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন। এর ফলে সমাজে নতুন ভাবধারার সূচনা হয়।
৫. নতুন লেখক ও চিন্তাবিদদের উত্থান: বঙ্গদর্শন পত্রিকার মাধ্যমে অনেক নতুন লেখক ও চিন্তাবিদ সাহিত্যক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পান। এই পত্রিকার মাধ্যমেই নবীন ও প্রবীণ লেখকদের মধ্যে একটি যোগসূত্র গড়ে ওঠে, যা বাংলা সাহিত্যের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
৬. ধর্ম ও সমাজ চিন্তার সমন্বয়: বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ধর্মীয় ভাবনা ও সমাজ সংস্কারের মধ্যে ভারসাম্য রেখে আলোচনা করা হতো। বঙ্কিমচন্দ্র নিজে ছিলেন হিন্দু ধর্মের সংস্কারবাদী চিন্তাবিদ। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করে মানবকল্যাণমুখী ধর্মের পক্ষে মত প্রকাশ করতেন। এই ধারা বাংলা সাহিত্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
৭. বঙ্গদর্শনের ভাষাশৈলী: এই পত্রিকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর ভাষারীতি। সহজ, সুন্দর, সরল ও বুদ্ধিদীপ্ত ভাষায় লেখা হতো। এর আগে বাংলা প্রবন্ধ মূলত সংস্কৃতঘেঁষা এবং দার্শনিক ভাষায় লেখা হতো। বঙ্গদর্শনের লেখাগুলো সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় প্রকাশিত হতো।
৮. সাংবাদিকতার ধারায় নতুন রীতি প্রবর্তন: বঙ্গদর্শন বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসেও উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে। সংবাদপত্রের চেয়ে সাহিত্যপত্রের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় এই পত্রিকার মাধ্যমে। সাহিত্য ও সমাজচিন্তা মিলিয়ে যে ধারার সাংবাদিকতা বঙ্গদর্শন চালু করেছিল, তা পরবর্তীকালে আরও অনেক পত্রিকায় অনুসরণ করা হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বঙ্গদর্শন: বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক এবং প্রধান লেখক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর প্রবন্ধগুলিতে জাতীয়, সামাজিক এবং ধর্মীয় চিন্তার গভীরতা লক্ষ করা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র ‘কৃষ্ণচরিত্র’, ‘ধর্মতত্ত্ব’, ‘বিজ্ঞানতত্ত্ব’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতেন এবং সেগুলি বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হতো।
সমকালীন প্রভাব: বঙ্গদর্শনের প্রভাব সমকালীন বাঙালি সমাজে ব্যাপক ছিল। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের মধ্যে এই পত্রিকা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিকসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ এর মাধ্যমে নতুন চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেন।
পরবর্তীকালের প্রভাব ও উত্তরাধিকার: বঙ্গদর্শনের প্রভাব শুধু তার সমকালেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমোত্তর প্রবন্ধকারগণ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যিকরা বঙ্গদর্শনের প্রভাব অনুভব করেন। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য ও সাময়িক পত্রধারার যে ভিত্তি বঙ্গদর্শন স্থাপন করেছিল, তার উপর দাঁড়িয়েই বাংলা সাহিত্য আজকের অবস্থানে এসেছে।
উপসংহার: সর্বোপরি বলা যায়, বঙ্গদর্শন পত্রিকা বাংলা সাহিত্য ও সমাজজীবনে এক নবজাগরণের সূচনা করেছিল। সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম—সবক্ষেত্রেই এর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের প্রবর্তক, জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্দীপক এবং সমাজ সংস্কারের অগ্রদূত হিসেবে বঙ্গদর্শনের নাম বাংলা ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
(গ) উপন্যাস ও ছোটগল্প:
*****3) প্রশ্ন. বাংলা ছোটগল্পে রাজশেখর বসুর (পরশুরাম) কৃতিত্ব বিচার কর। ৫/১০
ভূমিকা: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে রাজশেখর বসু, যিনি পরশুরাম নামে অধিক পরিচিত, এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন। তিনি মূলত একজন রসস্রষ্টা লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর রচনায় হাস্যরস, ব্যঙ্গ, সমাজচেতনা এবং মানবজীবনের নানা দিক ফুটে উঠেছে। বাংলা ছোটগল্পের জগতে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর গল্পগুলি শুধু মজাদার নয়, বরং গভীর জীবনবোধ এবং সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় পরিপূর্ণ। এই আলোচনায় আমরা বাংলা ছোটগল্পে রাজশেখর বসুর কৃতিত্ব বিচার করব।
১. রসস্রষ্টা হিসেবে পরশুরাম: পরশুরামের গল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো হাস্যরস। তিনি তাঁর গল্পে এমনভাবে রস সৃষ্টি করেছেন যে পাঠক গল্প পড়তে পড়তে হাসি থামাতে পারেন না। তবে তাঁর হাস্যরস শুধু মজা দেওয়ার জন্য নয়, এর মাধ্যমে তিনি সমাজের নানা কুসংস্কার, অসঙ্গতি এবং মানুষের স্বভাবের ত্রুটিগুলোকে তুলে ধরেন। যেমন, তাঁর বিখ্যাত গল্প "ব্রাহ্মণের মেয়ে" বা "গদাই এর বুদ্ধি" গল্পগুলিতে তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতিকে ব্যঙ্গের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
২. সমাজচেতনা: পরশুরামের গল্পগুলি শুধু হাস্যরসে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলিতে গভীর সমাজচেতনা লক্ষ্য করা যায়। তিনি তাঁর গল্পের মাধ্যমে সমাজের নানা সমস্যা, যেমন কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, শ্রেণীবৈষম্য, নারী-পুরুষের সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর গল্পে সমাজের নিচুতলার মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবাই স্থান পেয়েছে। তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতিকে ব্যঙ্গের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা পাঠককে শুধু হাসায় না, বরং চিন্তার খোরাকও জোগায়।
৩. চরিত্র সৃষ্টিতে দক্ষতা: পরশুরামের গল্পের চরিত্রগুলি খুব জীবন্ত এবং বাস্তবসম্মত। তিনি তাঁর গল্পে এমন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, যা পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে। যেমন, তাঁর গল্পে "গদাই" চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। গদাই এর বুদ্ধি এবং চালাকি পাঠকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। তাঁর চরিত্রগুলি শুধু মজাদার নয়, বরং তাদের মাধ্যমে তিনি সমাজের নানা সমস্যা এবং মানুষের স্বভাবের ত্রুটিগুলোকে তুলে ধরেন।
৪. ভাষা ও শৈলী: পরশুরামের ভাষা খুব সহজ, সরল এবং প্রাঞ্জল। তিনি এমনভাবে গল্প বলেছেন যে, তা সব বয়সের পাঠকের কাছে সহজবোধ্য। তাঁর গল্পে ব্যবহৃত ভাষা এবং শৈলী খুবই আকর্ষণীয়। তিনি কথ্য ভাষাকে সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন, যা তাঁর গল্পকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। তাঁর গল্পের ভাষা শুধু মজাদার নয়, বরং তা গভীর অর্থবহও বটে।
৫. ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপ: পরশুরামের গল্পের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপ। তিনি তাঁর গল্পে সমাজের নানা অসঙ্গতি, মানুষের স্বভাবের ত্রুটি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ব্যঙ্গের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর ব্যঙ্গ শুধু হাস্যরস সৃষ্টি করে না, বরং তা পাঠককে সমাজের নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে। যেমন, তাঁর গল্প "ব্রাহ্মণের মেয়ে" তে তিনি ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কারকে ব্যঙ্গের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
৬. মানবজীবনের নানা দিক: পরশুরামের গল্পে মানবজীবনের নানা দিক ফুটে উঠেছে। তিনি তাঁর গল্পে মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, প্রেম-ভালোবাসা, লোভ-লালসা ইত্যাদি নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর গল্পগুলি শুধু মজাদার নয়, বরং তা গভীর জীবনবোধে পরিপূর্ণ। তিনি মানুষের জীবনের নানা সমস্যা এবং সংগ্রামকে খুব সুন্দরভাবে তাঁর গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন।
৭. সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব: পরশুরামের গল্পগুলি বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। তাঁর গল্পগুলি শুধু তাঁর সময়ে নয়, বরং আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর গল্পের চরিত্রগুলি, যেমন গদাই, আজও বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয়। তাঁর গল্পগুলি শুধু হাস্যরসে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা গভীর জীবনবোধ এবং সমাজচেতনায় পরিপূর্ণ।
উপসংহার: বাংলা ছোটগল্পে রাজশেখর বসু বা পরশুরামের কৃতিত্ব অপরিসীম। তিনি তাঁর গল্পে হাস্যরস, ব্যঙ্গ, সমাজচেতনা এবং মানবজীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর গল্পগুলি শুধু মজাদার নয়, বরং তা গভীর জীবনবোধে পরিপূর্ণ। তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন এবং তাঁর গল্পগুলি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বাংলা ছোটগল্পের জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। এই আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, পরশুরাম শুধু একজন রসস্রষ্টা লেখক নন, বরং তিনি একজন গভীর জীবনবোধ এবং সমাজচেতনাসম্পন্ন লেখক। তাঁর গল্পগুলি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে এবং আজও তা পাঠকদের মনে গভীর রেখাপাত করে।