Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 3rd Semester History SEC Nep Suggestions 2026
Studies in Museum and Archaeology
Kalyani University B.A 3rd Semester History SEC Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. তুমি 99 টাকা পেমেন্ট কর। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবে। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক কর।
তুমি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 99 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পার। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 29 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৬)
Studies in Museum and Archaeology
Unit – 1: Origin, meaning, definition, and purpose of Museum; history of development of the museums in India; classification of Indian museums according to scope, collection, documentation, and management.
বাংলা অর্থঃ জাদুঘরের উৎপত্তি, অর্থ, সংজ্ঞা এবং উদ্দেশ্য; ভারতে জাদুঘরগুলির বিকাশের ইতিহাস; পরিধি, সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন ও ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে ভারতীয় জাদুঘরের শ্রেণিবিভাগ।
Unit – 2: Definition of archaeology and ethno-archaeology; history of Indian archaeology; horizontal and vertical methods of archaeological exploration; concepts of stratigraphy and stratification; different dating methods and techniques; important archaeological sites of India — Bhimbetka, Anegundi, Brahmagiri, Lothal, Dholavira, Kalibangan, Rakhigarhi, Adichanallur, Hallur, Hampi, Sanchi, Khajuraho, Ajanta, Udayagiri–Khandagiri and Mogalmari.
বাংলা অর্থঃ প্রত্নতত্ত্ব ও জাতি–প্রত্নতত্ত্বের সংজ্ঞা ও ইতিহাস; ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের অনুভূমিক ও উল্লম্ব অনুসন্ধান পদ্ধতি; প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ধারণা, স্তরবিন্যাস ও স্তরবিন্যাসবিদ্যা; বিভিন্ন ডেটিং পদ্ধতি ও কৌশল; ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান — ভীমবেটকা, আনেগুন্ডি, ব্রহ্মগিরি, লোথাল, ধোলাবিরা, কালিবঙ্গন, রাখিগড়ি, আদিচনাল্লুর, হাল্লুর, হাম্পি, সাঁচি, খাজুরাহো, অজন্তা, উদয়গিরি–খন্ডগিরি ও মোগলমারি।
Unit – 3: Great scholars of Indian archaeology — Alexander Cunningham, John Hubert Marshall, Mortimer Wheeler, Rakhaldas Bandyopadhyay, Daya Ram Sahni, D. R. Bhandarkar, H. D. Sankalia, B. B. Lal, M. K. Dhavalikar, R. S. Bisht, Debala Mitra, and Shereen Ratnagar.
বাংলা অর্থঃ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের বিশিষ্ট পণ্ডিতগণ — আলেকজান্ডার কানিংহাম, জন হুবার্ট মার্শাল, মর্টিমার হুইলার, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহনি, ডি. আর. ভান্ডারকর, এইচ. ডি. সাঙ্ঘালিয়া, বি. বি. লাল, এম. কে. ধাভলিকার, আর. এস. বিস্ত, দেবলা মিত্র ও শিরিণ রত্নাগর।
Unit – 1: ভারতে জাদুঘরের উৎপত্তি, সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও শ্রেণীবিভাগ।
*****1) প্রশ্ন. ভারতীয় জাদুঘরের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর। ৫/১০ অথবা, ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয় জাদুঘরের বিকাশ সম্পর্কে লেখ। ১০ (২০২১)
ভূমিকা:
মানবসভ্যতার ইতিহাসে জাদুঘরের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। জাদুঘর কেবলমাত্র প্রাচীন নিদর্শন, শিল্পকলা, প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী বা প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণাগার নয়; বরং এটি একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জীবন্ত দলিল। আধুনিক শিক্ষায় জাদুঘরের গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে, অন্যদিকে গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অতীতের নানা দিক বিশ্লেষণ করার সুযোগ পায়। ভারতীয় উপমহাদেশে জাদুঘরের সূচনা ঔপনিবেশিক আমলে হলেও, প্রাচীনকাল থেকেই নিদর্শন ও শিল্পকর্ম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের একটি ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। তবে আধুনিক অর্থে জাদুঘরের জন্ম ইউরোপীয় প্রভাবের ফল। ইংরেজ শাসকরা ভারতে শাসন কায়েম করার পর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণের জন্য জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রাচীন ভারতে সংগ্রহশালার প্রাথমিক রূপ: ভারতীয় জাদুঘরের বিকাশ বুঝতে হলে প্রথমে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়।
১. মৌর্য যুগে নিদর্শন সংরক্ষণ: অশোকের সময়ে বহু শিলালিপি, স্তম্ভলিপি ও গুহালিপি তৈরি হয়েছিল, যা ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজজীবনের দলিল। এগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা ছিল একধরনের প্রাথমিক জাদুঘর-চেতনা।
২. গুপ্ত যুগে শিল্পকলা সংরক্ষণ: গুপ্ত যুগে ভাস্কর্য, মুদ্রা, স্থাপত্য ও চিত্রকলার বিকাশ হয়। রাজপ্রাসাদ ও মঠে অনেক সময় এসব শিল্পকর্ম সংরক্ষিত হতো।
৩. মধ্যযুগে সংগ্রহের ঐতিহ্য: দিল্লি সুলতান ও মুঘল আমলে রাজপ্রাসাদে শিলালিপি, অস্ত্রশস্ত্র, অলংকার, কারুকার্যময় জিনিসপত্র সংরক্ষিত থাকতো। সম্রাট আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানের আমলে রাজদরবারে সংগ্রহশালার মতো স্থান তৈরি হয়েছিল, যেখানে বিদেশি ও দেশি শিল্পকর্ম রাখা হতো। এইসবই মূলত আধুনিক জাদুঘরের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আধুনিক ভারতে জাদুঘরের উৎপত্তি: আধুনিক অর্থে জাদুঘরের সূচনা ঘটে ঔপনিবেশিক শাসনকালে। ইউরোপে ১৭শ শতক থেকেই জাদুঘরের বিকাশ শুরু হয়েছিল। ব্রিটিশরা ভারতে প্রবেশ করার পর এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠে।
১. ইউরোপীয় কৌতূহল ও সংগ্রহপ্রবণতা: ইংরেজ শাসক, ব্যবসায়ী ও পণ্ডিতেরা ভারতের ইতিহাস, মূর্তি, শিলালিপি, প্রাণিজগত ও উদ্ভিদজগত নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। এ থেকেই আধুনিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হয়।
২. এশিয়াটিক সোসাইটি (1784): স্যার উইলিয়াম জোন্স কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভাস্কর্য ও শিলালিপি সংগ্রহ করা হয়। এশিয়াটিক সোসাইটির সংগ্রহ থেকেই আধুনিক ভারতীয় জাদুঘরের সূচনা হয়।
ভারতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা (1814): ভারতের প্রথম এবং এশিয়ার প্রাচীনতম জাদুঘর হলো ভারতীয় জাদুঘর (Indian Museum, Kolkata)।
- প্রতিষ্ঠা: 1814 খ্রিস্টাব্দে ডেনিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ-এর উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
- প্রাথমিক উদ্দেশ্য: ভারতের প্রত্নতত্ত্ব, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, ভূবিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্ব সংক্রান্ত সংগ্রহ সংরক্ষণ করা।
- স্থানান্তর: প্রথমে এশিয়াটিক সোসাইটির ভবনে জাদুঘর চালু হলেও, পরে 1878 সালে চৌরঙ্গিতে বিশাল ভবনে স্থানান্তরিত হয়।
- বর্তমান অবস্থা: ভারতীয় জাদুঘরে বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব, শিল্পকলা, নৃতত্ত্ব, ভূবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান ও অর্থনীতি সংক্রান্ত বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে অন্যান্য জাদুঘরের বিকাশ: ভারতীয় জাদুঘরের পর একে একে বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক ও বিশেষায়িত জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১. মাদ্রাজ মিউজিয়াম (1851): দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রাচীন জাদুঘর, যেখানে দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পকলা ও প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন রয়েছে।
- ২. বম্বে মিউজিয়াম (1855): বর্তমানে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ বস্তু সংগ্রহালয় নামে পরিচিত, যেখানে শিল্পকলা, হস্তশিল্প ও প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহ রাখা আছে।
- ৩. লখনউ মিউজিয়াম (1863): অবধ অঞ্চলের ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
- ৪. লাহোর মিউজিয়াম (1865): বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত, যেখানে গান্ধার শিল্পের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন রয়েছে।
- ৫. প্রিন্স অব ওয়েলস মিউজিয়াম (1905): ভারতীয় ও বিদেশি শিল্পকলার অন্যতম সংগ্রহশালা।
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে জাদুঘরের সম্প্রসারণ: 1947 সালে স্বাধীনতার পর জাদুঘরের বিকাশ নতুন মাত্রা পায়।
- জাতীয় জাদুঘর (1949, নয়া দিল্লি): এখানে সারা ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকলা, মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি সংরক্ষিত আছে।
- রাজ্যভিত্তিক জাদুঘর: পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল, শিলিগুড়ি, বিষ্ণুপুর, ত্রিপুরার আগরতলা, আসামের গুয়াহাটি ইত্যাদি।
- বিশেষায়িত জাদুঘর: রেল জাদুঘর (দিল্লি), বিজ্ঞান জাদুঘর (কলকাতা), বস্ত্র জাদুঘর (আহমেদাবাদ), জনজাতি জাদুঘর (ভোপাল) ইত্যাদি।
জাদুঘরের গুরুত্ব ও ভূমিকা:
- ১. ঐতিহাসিক গুরুত্ব: প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণ করে জাতির ঐতিহ্যকে জীবন্ত রাখে।
- ২. শিক্ষাগত গুরুত্ব: ছাত্র-গবেষকদের জন্য জাদুঘর একটি তথ্যভান্ডার।
- ৩. সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: দেশীয় ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরে।
- ৪. বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব: প্রাকৃতিক ইতিহাস, ভূবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ইত্যাদির গবেষণায় জাদুঘরের ভূমিকা অপরিসীম।
- ৫. অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পর্যটন শিল্পের বিকাশে জাদুঘর একটি বড় সহায়ক।
ভারতীয় জাদুঘরের বিকাশে সমস্যাবলি: যদিও জাদুঘরের গুরুত্ব অপরিসীম, তবুও কিছু সমস্যা বিদ্যমান—
- সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তির অভাব।
- আর্থিক সীমাবদ্ধতা।
- দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক সুবিধার অভাব।
- অনেক ক্ষেত্রে নিদর্শনের সঠিক তথ্যসংরক্ষণ হয় না।
- জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার অভাব।
উপসংহার: ভারতীয় জাদুঘর শুধু অতীতকে সংরক্ষণ করে না, ভবিষ্যতের জন্যও তা শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। ঔপনিবেশিক আমলে এর উৎপত্তি হলেও আজ এটি ভারতীয় জাতীয় ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ। জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা প্রাচীন ভারতের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হই। সেই সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞান, শিল্প ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাও প্রত্যক্ষ করি। অতএব বলা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে জাদুঘরের উৎপত্তি ঔপনিবেশিক উদ্যোগে হলেও এর বিকাশ আজ স্বাধীন ভারতের গৌরবের প্রতীক। যথাযথ যত্ন, প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে ভারতীয় জাদুঘর বিশ্বে আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করবে।
Unit – 2: প্রত্নতত্ত্বের সংজ্ঞা এবং জাতীয়-প্রত্নতত্ত্বের বিকাশ ।
*****2) প্রশ্ন. প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্বের পর্যালোচনা করো। (১০) [২০২৩]
ভূমিকা: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধান এক জটিল ও বহুমাত্রিক ক্ষেত্র। ভারতবর্ষের ইতিহাস কেবলমাত্র গ্রন্থ, কিংবদন্তি কিংবা লোককথায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর বিস্তৃত আখ্যান গঠিত হয়েছে নানা প্রমাণ, নিদর্শন ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে। ইতিহাস রচনার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো প্রমাণ বা সূত্র। ইতিহাসবিদেরা সাধারণত দুটি ধরণের সূত্রকে গুরুত্ব দেন—লিখিত সূত্র এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র। যদিও লিখিত সূত্র যেমন ধর্মগ্রন্থ, পুরাণ, সাহিত্য, বিদেশি ভ্রমণকারীর বিবরণ ইত্যাদি প্রাচীন ভারতকে জানার পথে সহায়ক হয়েছে, তবুও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের গুরুত্ব তুলনাহীন। কারণ প্রত্নতত্ত্বই আমাদের সামনে এমন সব অমূল্য প্রমাণ হাজির করেছে, যা কেবল প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার সত্যিকার রূপই উন্মোচন করেনি, বরং লিখিত ইতিহাসের নানা ফাঁক পূরণ করেছে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব—প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্বের ভূমিকা, প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলির গুরুত্ব, সীমাবদ্ধতা এবং ইতিহাস রচনায় এর সামগ্রিক প্রভাব।
প্রত্নতত্ত্বের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি: প্রত্নতত্ত্ব হলো সেই শাস্ত্র, যার মাধ্যমে ভূমি খনন, নিদর্শন আবিষ্কার, স্থাপত্যচিহ্ন, মুদ্রা, শিলালিপি, ভাস্কর্য, মৃৎপাত্র, অস্ত্র, গহনা প্রভৃতি প্রাচীন উপাদান বিশ্লেষণ করে অতীতকে পুনর্গঠন করা হয়। প্রত্নতত্ত্বকে বলা যেতে পারে—অতীত সভ্যতার "নীরব সাক্ষী"। লিখিত সূত্রে পক্ষপাত, অতিরঞ্জন, পৌরাণিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে; কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অধিকতর বাস্তব ও প্রমাণসিদ্ধ। যেমন—একটি প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ, স্থাপত্যকলা বা মুদ্রা আমাদের সেই সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার নিখুঁত চিত্র তুলে ধরে।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্ব:
১. সভ্যতার সন্ধান: প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার প্রাচীন ভারতকে জানার ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর আবিষ্কার (১৯২১–২২ সালে) আমাদের সামনে ইন্দাস ভ্যালি সভ্যতার মহিমা প্রকাশ করেছে। আগে ধারণা ছিল ভারতের ইতিহাস বৈদিক যুগ থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে জানা গেল—ভারতের ইতিহাস আরও কয়েক হাজার বছর প্রাচীন। হরপ্পা-সভার নিদর্শন যেমন—ইটের বাড়ি, স্নানাগার, দানা-ভাণ্ডার, সিলমোহর, মৃৎপাত্র, গহনা ইত্যাদি প্রমাণ করে যে প্রাচীন ভারতে নগরসভ্যতা সুসংগঠিত ছিল।
২. অর্থনৈতিক জীবনের পুনর্গঠন: প্রত্নতত্ত্ব প্রাচীন ভারতের অর্থনীতি বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রার আবিষ্কার থেকে আমরা বাণিজ্য, করব্যবস্থা, কৃষি ও কারুশিল্প সম্পর্কে জানতে পারি। উদাহরণস্বরূপ—কুষাণ ও গুপ্ত যুগের সোনার মুদ্রা সেই সময়কার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রমাণ বহন করে। এছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন—শস্যদানা, কৃষি সরঞ্জাম, সেচব্যবস্থার চিহ্ন প্রমাণ করে যে ভারতীয় কৃষিজীবন বহুলাংশে উন্নত ছিল।
৩. রাজনৈতিক ইতিহাসের পুনর্গঠন: শিলালিপি, স্তম্ভলিপি ও তাম্রলিপি আমাদের প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস গঠনে সাহায্য করেছে। অশোকের শিলালিপি থেকে আমরা তাঁর ধর্মনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে জানতে পারি। শক-সাতবাহন যুগ কিংবা গুপ্ত যুগের মুদ্রা থেকে আমরা শাসকের নাম, উপাধি, শাসনকাল নির্ধারণ করতে সক্ষম হই। এইভাবে প্রত্নতত্ত্ব লিখিত সূত্রকে স্পষ্ট করে তোলে এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে।
৪. ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিচয়: প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার প্রাচীন ভারতীয় ধর্মচর্চার ইতিহাসও উন্মোচন করেছে। স্তূপ, বিহার, মন্দির, ভাস্কর্য ইত্যাদি নিদর্শন আমাদের জানায়—বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু ধর্ম কিভাবে বিকশিত হয়েছিল। অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র কিংবা সাঁচির স্তূপ শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসই নয়, শিল্পকলা ও স্থাপত্যকলার উৎকর্ষের সাক্ষ্য বহন করে।
৫. সমাজজীবনের চিত্র: মৃৎপাত্র, গহনা, খেলনা, গৃহস্থালির সামগ্রী ইত্যাদি প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান আমাদের প্রাচীন সমাজের জীবনযাত্রা, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস ও বিনোদনের ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। উদাহরণস্বরূপ—মহেঞ্জোদারোর ব্রোঞ্জের নৃত্যরত নারীমূর্তি সে যুগের শিল্প ও সমাজসচেতনতার প্রমাণ।
৬. শিল্প ও স্থাপত্যের বিকাশ: শিল্প ও স্থাপত্য ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে প্রত্নতত্ত্ব এক অনন্য সূত্র। ইন্দাস ভ্যালির সুশৃঙ্খল নগর পরিকল্পনা, মিশ্রিত ইটের ব্যবহার, গৃহবিন্যাস—সবই উন্নত প্রকৌশল জ্ঞানের সাক্ষ্য দেয়। পরবর্তী কালে মন্দির স্থাপত্য, স্তূপ নির্মাণ, গুহাচিত্র ও ভাস্কর্য আমাদের প্রাচীন শিল্পবোধ ও নান্দনিকতার পরিচয় তুলে ধরে।
প্রত্নতত্ত্বের অবদানকে উদাহরণসহ বিশ্লেষণ:
- হরপ্পা সভ্যতা: ভারতীয় ইতিহাসের প্রাচীনতম নগরসভ্যতা সম্পর্কে আমরা শুধুমাত্র প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমেই জেনেছি।
- অশোকের শিলালিপি: তাঁর ধর্মনীতি, প্রজাপ্রীতি ও অহিংস নীতির কথা লিখিত ইতিহাসের বাইরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকেই জানা যায়।
- সাঁচি, অজন্তা, ইলোরা: ধর্মীয় জীবন, শিল্প ও সাংস্কৃতিক বিকাশের প্রতিচ্ছবি।
- মুদ্রা ও তাম্রলিপি: অর্থনীতি ও প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করেছে।
প্রত্নতত্ত্বের সীমাবদ্ধতা: যদিও প্রত্নতত্ত্ব প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধানে অপরিহার্য, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে—
- প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ব্যাখ্যা অনেক সময় অনুমাননির্ভর হয়।
- প্রতিটি নিদর্শন সম্পূর্ণ ইতিহাসের চিত্র দেয় না; আংশিক তথ্য সরবরাহ করে।
- সব অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয়নি; ফলে ভারতীয় ইতিহাসের অনেক দিক এখনো অজানা রয়ে গেছে।
- প্রত্নতত্ত্বের ফলাফলকে লিখিত সূত্রের সঙ্গে সমন্বয় না করলে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়।
সামগ্রিক মূল্যায়ন: প্রত্নতত্ত্ব প্রাচীন ভারতের ইতিহাসচর্চাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। লিখিত সূত্র যেখানে পৌরাণিক বা অতিরঞ্জিত, সেখানে প্রত্নতত্ত্ব সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করে। হরপ্পা-সভার আবিষ্কার যেমন ভারতের ইতিহাসের সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে, অশোকের শিলালিপি যেমন শাসনব্যবস্থার বাস্তব দিক উন্মোচিত করেছে, তেমনি প্রতিটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভারতের অতীতকে সত্যনিষ্ঠভাবে বোঝার পথ প্রশস্ত করেছে। অতএব বলা যায়—প্রত্নতত্ত্ব শুধু ইতিহাসের সহায়ক নয়, বরং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার অন্যতম ভিত্তি।
উপসংহার: ইতিহাস একটি জীবন্ত শাস্ত্র। অতীতকে যতই আমরা অনুসন্ধান করি, ততই নতুন নতুন তথ্য সামনে আসে। প্রত্নতত্ত্ব এই অনুসন্ধানকে গভীরতর ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কেবল প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার মহিমাই প্রকাশ করে না, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শেকড়কেও দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে। অতএব প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাই আমাদের সেই অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে ভারতের প্রাচীন সভ্যতার প্রকৃত রূপ লুকিয়ে আছে।
Unit – 3: ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের বিশিষ্ট পণ্ডিতগণ — আলেকজান্ডার কানিংহাম, জন হুবার্ট মার্শাল, মর্টিমার হুইলার, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহনি, ডি. আর. ভান্ডারকর, এইচ. ডি. সাঙ্ঘালিয়া, বি. বি. লাল, এম. কে. ধাভলিকার, আর. এস. বিস্ত, দেবলা মিত্র ও শিরিণ রত্নাগর।
*****3) প্রশ্ন. প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক হিসাবে দয়ারাম সাহানির অবদান আলোচনা কর। (৫/১০)
উত্তর: দয়ারাম সাহানি ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ও সংস্কৃতিক গবেষক, যিনি ভারতের প্রাচীন সভ্যতা, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অধ্যয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার গবেষণা শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির গভীর বোঝাপড়ার দিকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। সাহানির প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার অবদানকে মূলত কয়েকটি প্রধান দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়।
১. প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার পুনর্গঠন: দয়ারাম সাহানি প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস উদঘাটনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন, মূর্তি, মুদ্রা এবং স্থাপত্যকলা বিশ্লেষণ করে প্রাচীন ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিত্রকে পুনর্গঠন করেছেন। তার কাজের মাধ্যমে জানা যায় যে, প্রাচীন ভারতের মানুষ কেবল কৃষি ও বানিজ্যকাজেই দক্ষ ছিল না, বরং তারা শিল্প, ধর্মীয় চর্চা ও সামাজিক নিয়ম-কানুনে যথেষ্ট প্রজ্ঞাবান ছিল। সাহানির গবেষণা প্রমাণ করে যে, প্রাচীন ভারতের জনজীবন, ধর্মীয় আচার এবং সাংস্কৃতিক জীবন বহুমাত্রিক এবং জটিল ছিল।
২. প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ: দয়ারাম সাহানি সক্রিয়ভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে খনন পরিচালনা করে প্রাচীন বসতবাড়ি, মন্দির, কুঠি ও অন্যান্য নিদর্শনের সন্ধান করেছেন। তার খনন প্রক্রিয়া এবং নিদর্শন সংগ্রহ কৌশল তখনকার সময়ের তুলনায় অত্যন্ত পদ্ধতিগত ও সুসংগঠিত ছিল। সাহানির এই পদ্ধতিগত গবেষণাপদ্ধতি পরবর্তীতে অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে।
৩. মুদ্রা ও লিপি সংক্রান্ত গবেষণা: দয়ারাম সাহানি মুদ্রা এবং প্রাচীন লিপি অধ্যয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন প্রাচীন রাজ্যের মুদ্রা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রাচীন অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য উদঘাটন করেছেন। এছাড়া, প্রাচীন লিপি অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় সমাজের শৈক্ষিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি স্পষ্ট চিত্র প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন।
৪. প্রাচীন স্থাপত্য ও শিল্পকলা গবেষণা: দয়ারাম সাহানি প্রাচীন স্থাপত্য এবং শিল্পকলার ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছেন। তিনি মন্দির, কেল্লা, প্রাসাদ ও অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শনের নকশা, শৈলী ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করেছেন। তার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্য শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক বা সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি সামাজিক পরিচয়, রাজনৈতিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলনও বহন করত।
৫. প্রাচীন সমাজ ও সংস্কৃতির মূল্যায়ন: দয়ারাম সাহানি তার গবেষণায় প্রাচীন সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গঠন বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে পরিবার, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং সামাজিক নিয়মগুলি প্রাচীন ভারতীয় সমাজের কার্যক্রম ও সংস্কৃতিকে আকার দিত। সাহানি প্রমাণ করেছেন যে প্রাচীন ভারতীয় সমাজে শিক্ষার প্রচার, ধর্মীয় চর্চা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
৬. শিক্ষামূলক ও গবেষণামূলক প্রভাব: দয়ারাম সাহানির গবেষণা শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তার গবেষণার ফলাফলগুলি ছাত্র ও শিক্ষাবিদদের জন্য সহজবোধ্য ও শিক্ষামূলকভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার প্রবন্ধ, বই ও গবেষণাপত্রগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। তার গবেষণা নতুন প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রেরণা যুগিয়েছে এবং প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে অধিকতর গবেষণার পথ সুগম করেছে।
৭. গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি: দয়ারাম সাহানি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার করেছেন। তার খনন ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুধু নিদর্শন খোঁজা নয়, বরং নিদর্শনের সঠিক স্থান, সময় ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় রেখে তথ্য সংগ্রহের একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে তার গবেষণার ফলাফল আরো বিশ্বাসযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য হয়েছে।
৮. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে অবদান: দয়ারাম সাহানি শুধু নিদর্শন আবিষ্কার করাই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি সেগুলি সংরক্ষণের উপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। তার প্রচেষ্টা অনেক প্রাচীন নিদর্শন, মুদ্রা, শিল্পকলা এবং স্থাপত্য সংরক্ষিত রাখতে সাহায্য করেছে। ফলে পরবর্তী প্রজন্মও এই প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
৯. সমকালীন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের সাথে সমন্বয়: দয়ারাম সাহানি ভারতের অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদদের সাথে নিয়মিত সংযোগ স্থাপন করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন এবং ভারতের প্রাচীন নিদর্শনসমূহকে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এই সমন্বয় ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মান বাড়িয়েছে এবং দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেতে সাহায্য করেছে।
উপসংহার: সংক্ষেপে, দয়ারাম সাহানি ছিলেন একজন বহুমুখী প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক, যিনি প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা, সমাজ ও সংস্কৃতির গবেষণায় অমুল্য অবদান রেখেছেন। তার খনন, মুদ্রা ও লিপি সংক্রান্ত গবেষণা, স্থাপত্য ও শিল্পকলার বিশ্লেষণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যায়ন এবং শিক্ষামূলক প্রচেষ্টা ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়। সাহানির গবেষণার ফলাফল শুধুমাত্র ঐতিহাসিক তথ্যের সংরক্ষণই নয়, বরং এটি আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূল্য বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা দয়ারাম সাহানির গবেষণার মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের জটিল এবং সমৃদ্ধ সভ্যতার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। তার অবদান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্ব শুধুমাত্র অতীতের নিদর্শন নয়, বরং এটি আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বোঝাপড়ার ভিত্তি গঠন করে।
দয়ারাম সাহানির গবেষণা, পদ্ধতি এবং অনুসন্ধানধর্মী মনোভাব ভবিষ্যতের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের জন্য একটি প্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে। তার জীবন ও কাজ প্রমাণ করে যে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা কেবল অতীতের নিদর্শন আবিষ্কার করেন না, বরং তারা সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানব ইতিহাসের গভীর দিকগুলোকে তুলে ধরেন। এই দিক থেকে দয়ারাম সাহানি শুধু একজন গবেষকই নয়, বরং তিনি ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির একজন প্রখ্যাত সংরক্ষণকর্তা হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।