Kalyani University B.A 4th Semester Educations Major 5 Nep suggestions

Kalyani University Suggestion

Kalyani University B.A 4th Semester Education Major 5 Nep Suggestions 2025

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education)

Kalyani University B.A 4th Semester Education Major 5 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 150 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 29 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

(সিলেবাস – ২০২৫)

ইউনিট I: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education)
ক. ধারণা, প্রকৃতি এবং প্রয়োজন (Concept, Nature and Need)
খ. ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ (Historical Perspective)
• বিশেষ শিক্ষা: শুধুমাত্র ধারণা (Special Education: Concept Only)
• সমন্বিত শিক্ষা: শুধুমাত্র ধারণা (Integrated Education: Concept Only)
• মূলধারার শিক্ষা: শুধুমাত্র ধারণা (Mainstreaming Education: Concept Only)
• অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতিমালা (Principles of Inclusive Education)
• বিশেষ শিক্ষা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য (Differences between Special Education and Inclusive Education)
গ. সরকারি নীতিমালা (শুধুমাত্র প্রধান বিধান) (Government Policies – Major Provisions Only)
• PWD Act, 1995
• প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় নীতিমালা, ২০০৬ (National Policy for Persons with Disabilities, 2006)
• প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিল (RPWD Bill), ২০১৬ (The Rights of Persons with Disabilities Bill, 2016)
ঘ. RCINI, NIMH, NIVH – শুধুমাত্র কার্যাবলী (Functions Only)

ইউনিট II: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন (Competencies Development for Inclusive Education)
ক. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বাধা (Barriers of Inclusive Education)
খ. গুণাবলীর বিকাশ (Development of Qualities)
• মনোভাব: ধারণা, প্রয়োজন, শিক্ষকের ভূমিকা (Attitude: Concept, Needs, Role of Teacher)
• ইতিবাচক আচরণ: ধারণা, প্রয়োজন, শিক্ষকের ভূমিকা (Positive Behavior: Concept, Needs, Role of Teacher)
• অন্তর্ভুক্তির জন্য সামাজিক দক্ষতা: ধারণা, প্রয়োজন, শিক্ষকের ভূমিকা (Social Skills for Inclusion: Concept, Needs, Role of Teacher)
গ. অন্তর্ভুক্তিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (Measures Needed for Putting Inclusion into Practice)

ইউনিট III: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা এবং এর অনুশীলন (Inclusive Education and Its Practices)
ক. বিভেদমূলক নির্দেশনা: অর্থ, প্রকৃতি, প্রয়োজন (Differentiated Instruction: Meaning, Nature, Needs)
• সহপাঠী কর্তৃক শিখন (Peer Tutoring)
• সহযোগিতামূলক শিক্ষা (Co-operative Learning)
• সহযোগী শিক্ষা (Collaborative Learning)
খ. বিদ্যালয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্দেশনামূলক কৌশল: অর্থ, প্রকৃতি, প্রয়োজন (Inclusive Instructional Strategies at School Level: Meaning, Nature, Needs)
• সংশোধনমূলক শিক্ষাদান (Remedial Teaching)
• দলগত শিক্ষাদান (Team Teaching)
• বন্ধুদের বৃত্ত (Circles of Friends)

ইউনিট IV: অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় পরিবেশ (Inclusive School Environment)
ক. একটি আদর্শ অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা (Infrastructural Facilities for an Ideal Inclusive School)
খ. অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকা (Teachers’ Role in Inclusive Classroom)
গ. শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্তি (Inclusiveness in Classroom)
ঘ. অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণীকক্ষে প্রযুক্তির ভূমিকা: সহায়ক উপকরণ ও যন্ত্রপাতি (Role of Technology in Inclusive Classroom – Aids and Appliances)
ঙ. প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় শিক্ষকদের সম্মুখীন সমস্যা (Problems Faced by Teachers in Making a Truly Inclusive School)

Unit-1: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education)

*****1) প্রশ্ন. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাগুলি উল্লেখ কর। (৫+৫)

ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের শিক্ষাক্ষেত্রে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা’ (Inclusive Education) একটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। সমাজের সকল শ্রেণির, ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার বিভিন্নতার অধিকারী ব্যক্তিদের শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এটি এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর শ্রেণির শিশুদের পাশাপাশি সাধারণ শিশুদেরও একই শ্রেণিকক্ষে সমান মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে সমতা, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থা সকলের জন্য খোলা এবং কেউ বাদ পড়ে না এমন নীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি:
১. সকলের জন্য উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এটি সমাজের প্রতিটি শিশুর জন্য উন্মুক্ত। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ, শারীরিক বা মানসিক সক্ষমতা নির্বিশেষে সকলের জন্য এক ছাতার নিচে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।
২. বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান: শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈচিত্র্যকে বাধা নয়, বরং শক্তি ও সম্পদ হিসেবে দেখা হয়। বিভিন্ন ক্ষমতা, পটভূমি ও সংস্কৃতির শিক্ষার্থীরা একত্রে পড়াশোনা করে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হয়।
৩. সামাজিকীকরণ এবং সহাবস্থান: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শিশুদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলে। একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলেমিশে পড়াশোনা করলে, উভয়ের মধ্যেই সহযোগিতার মানসিকতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৪. প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শুধু একধরনের পাঠদান পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, ভাষাগত বা অন্যান্য বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। যেমনঃ ব্রেইল, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, সহায়ক প্রযুক্তি ইত্যাদি।
৫. শিক্ষকের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষককেও বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব বুঝে শিক্ষাদান করেন এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করেন।
৬. সহযোগিতামূলক শিক্ষা পরিবেশ: এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। স্কুল প্রশাসনও বিশেষ নীতিমালা গ্রহণ করে থাকে যাতে শিক্ষার পরিবেশ সবার জন্য আরামদায়ক ও গ্রহণযোগ্য হয়।
৭. নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ পরিবেশ দেয় যেখানে তারা ভয় বা লজ্জা ছাড়াই নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও এখানে বৈষম্যের শিকার হয় না।
৮. প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য শ্রবণযন্ত্র, হুইলচেয়ার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, বিশেষ পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
৯. নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা: এই শিক্ষায় মানবতা, নৈতিকতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি এবং সাম্যবাদের শিক্ষা প্রদান করা হয়। শিশুরা শিখে যে, সবার জীবন মূল্যবান এবং কাউকে ছোট করা উচিত নয়।
১০. আইনগত এবং নীতিগত সমর্থন: অনেক দেশের সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। যেমন ভারতের ‘শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯’ (RTE Act), যা সকল শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাগুলি:
১. সামাজিক সাম্যের লক্ষ্যে: সমাজে সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সমতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজন অপরিহার্য। যদি শিশুরা ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে বড় হয়ে তারা ভেদাভেদ না করে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলতে শিখবে।
২. শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করতে: জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা সকলের জন্য একটি মৌলিক অধিকার।’ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সেই অধিকার বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কেউ বাদ পড়লে, সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
৩. বৈচিত্র্যময় সমাজে সহাবস্থান রক্ষার জন্য: বর্তমান বিশ্বের সমাজ বহুবিধ বৈচিত্র্যে ভরপুর। এমন সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে হলে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই বৈচিত্র্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা শিখতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সেই পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক।
৪. প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রেণির ক্ষমতায়নের জন্য: প্রতিবন্ধী শিশুরা অনেক সময় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় শুধু শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা তাদের শিক্ষা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত করে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করে।
৫. বৈষম্য ও সামাজিক অন্যায় দূরীকরণে: শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক সময় লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি বা শ্রেণি ভিত্তিক বৈষম্য দেখা যায়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা এসব বৈষম্য দূর করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
৬. জাতীয় উন্নয়ন ও মানব সম্পদ বৃদ্ধির জন্য: শিক্ষিত নাগরিক সমাজের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক শিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
৭. আন্তর্জাতিক চুক্তি ও লক্ষ্য পূরণের জন্য: জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs) অনুযায়ী, সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই।
৮. নৈতিক শিক্ষার বিস্তারের জন্য: ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুরা অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে তারা সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং মানবিক গুণাবলী অর্জন করবে, যা একটি সভ্য সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৯. শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ: পুরাতন পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছিল, তাদের শিক্ষা গ্রহণ ছিল কষ্টকর। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা যুক্ত হওয়ায় শিক্ষা আরও মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে।
১০. সবার জন্য শিখন-শেখানোর সুযোগ সৃষ্টি: শুধু পাঠ্যবই বা পরীক্ষার জন্য নয়, বাস্তব জীবনের শিক্ষা এবং দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রেও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজন। এখানে সবাই একে অপরের থেকে শিখতে পারে, একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে।

উপসংহার:
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শুধু একটি শিক্ষানীতি নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন ও মানবিক দায়িত্ব। সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে এই ধারণাকে বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। একজন শিশুও যাতে শিক্ষা থেকে বাদ না পড়ে এবং তার সম্পূর্ণ মানবিক বিকাশ ঘটতে পারে, তা নিশ্চিত করাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মূল লক্ষ্য। আমাদের উচিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, অভিভাবক এবং সরকার সবাই মিলে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাকে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসা।

Unit-2: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন

*****2) প্রশ্ন. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করো। (৫ নম্বর)

ভূমিকা:
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা (Inclusive Education) হল এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কোনো পার্থক্য না দেখিয়ে সবাইকে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতিবন্ধী, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু কিংবা অন্যান্য বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো এবং ইউনিসেফ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্বকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতেও ২০০৯ সালের ‘শিক্ষার অধিকার আইন’-এ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য:
• সকল শিক্ষার্থীকে একক প্ল্যাটফর্মে শিক্ষিত করা।
• বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি।
• সমাজে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠা।
• বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মূলধারায় নিয়ে আসা।
• বৈষম্যমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সুবিধা:
১. সমতা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে সমতা নিশ্চিত করে। এতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শারীরিক বৈষম্য হ্রাস পায় এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে।
২. মানবিকতা ও সহানুভূতি বিকাশ: প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে পড়াশোনা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিকতা, সহানুভূতি এবং সহনশীলতা গড়ে ওঠে। এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন: এই ব্যবস্থায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন না থেকে সমাজের মূলধারায় যুক্ত হয়। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত হয়।
৪. বৈচিত্র্যকে মর্যাদা দেওয়া: বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শারীরিক বৈচিত্র্যের মধ্যেও কিভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায়, তা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শেখানো হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীকালে বহুসাংস্কৃতিক সমাজে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
৫. সামগ্রিক শিক্ষা উন্নয়ন: এই শিক্ষায় শিক্ষকরা বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কৌশল গ্রহণ করেন যাতে সব ধরনের শিক্ষার্থীর চাহিদা পূরণ হয়। ফলে শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার মান উন্নত হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ আরও উদার হয়।
৬. অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা স্কুল স্থাপনের চেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় একটি সাধারণ স্কুলেই সকলের জন্য ব্যবস্থা করা অধিক অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
৭. পেশাগত জীবনে সহায়ক: এই শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই ভিন্নধর্মী পরিবেশে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলে, যা ভবিষ্যতের কর্মজীবনে উপকারে আসে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অসুবিধা:
১. বিশেষায়িত শিক্ষকের অভাব: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় দক্ষ, প্রশিক্ষিত এবং সহানুভূতিশীল শিক্ষকের প্রয়োজন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এমন শিক্ষক পাওয়া কঠিন হয়। ফলে শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২. পরিকাঠামোর সীমাবদ্ধতা: সকল বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উপযোগী শ্রেণিকক্ষ, র্যাম্প, বিশেষ ল্যাব ইত্যাদি না থাকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় সমস্যা দেখা দেয়।
৩. সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার গতি ও পদ্ধতিতে ব্যবধান তৈরি হতে পারে। এতে কখনও কখনও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে বা পিছিয়ে পড়ে।
৪. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ: সব সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমানভাবে চলতে না পারলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা হতাশা বা মানসিক চাপে ভুগতে পারে। ফলে তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ব্যয়: যদিও এটি মোট ব্যয় কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবুও নতুন অবকাঠামো তৈরি, শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য অতিরিক্ত খরচ হয়।
৬. সমাজের মানসিকতা: বিভিন্ন দেশে বা সমাজে এখনো প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজমান। এই মানসিকতা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে বাধা দেয়।
৭. ব্যবস্থাপনা জটিলতা: সব শিক্ষার্থীর আলাদা আলাদা চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

সমাধান বা উত্তরণের উপায়:
১. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হন।
২. বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন: সব বিদ্যালয়ে হুইলচেয়ার র্যাম্প, শ্রবণযন্ত্র, ব্রেইল বই ইত্যাদি সুবিধা রাখতে হবে।
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা প্রসারে সহযোগিতা পাওয়া যায়।
৪. সরকারি সহায়তা: সরকারি অনুদান ও নীতিমালা দ্বারা বিদ্যালয়গুলিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
৫. বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ: বিদ্যালয়ে কাউন্সেলর, থেরাপিস্ট এবং বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে।

উপসংহার:
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা একটি উন্নত ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। যদিও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে, তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও সচেতনতার মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো সমাজের উন্নতির পথ খুলে দেয়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলাই আমাদের কর্তব্য।

Unit-3: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা এবং এর অনুশীলন

******3) প্রশ্ন. সংশোধনমূলক শিক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। সংশোধনমূলক শিক্ষণে শিক্ষকের ভূমিকা উল্লেখ কর। (৫+৫)

ভূমিকা:
শিক্ষা হলো ব্যক্তির সার্বিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু সব শিক্ষার্থী একই গতিতে এবং দক্ষতায় শিখতে পারে না। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে পাঠ্যবিষয়ে পিছিয়ে পড়ে। কারও পাঠদুর্বলতা, আচরণগত সমস্যা বা মনোযোগের ঘাটতি থাকতে পারে। এই ধরনের সমস্যার সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের মূল ধারার শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে সংশোধনমূলক শিক্ষণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংশোধনমূলক শিক্ষণ একটি বিশেষ ধরণের শিক্ষাপদ্ধতি, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভুল, দুর্বলতা এবং অপূর্ণতা চিহ্নিত করে সেগুলি সংশোধন করার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা হয়।

সংশোধনমূলক শিক্ষণ কী?
সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Remedial Teaching) এমন একটি শিক্ষাপদ্ধতি যা শিক্ষার্থীর পাঠ্যবিষয় সম্পর্কিত দুর্বলতা এবং সমস্যা নির্ধারণ করে সেগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি মূল শিক্ষার একটি সহায়ক বা পরিপূরক ধারা। এই শিক্ষায় সাধারণ পাঠক্রমের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দুর্বলতা, মানসিক সমস্যা কিংবা আচরণগত সীমাবদ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়ে শিখন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়।

সংশোধনমূলক শিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য:
১. শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিত করা।
২. তার মানসিক ও সামাজিক দিক থেকে উন্নতি ঘটানো।
৩. ভুল ধারণা বা পূর্বে শেখা ভুল তথ্য সংশোধন করা।
৪. শেখার প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা।
৫. মূল ধারার শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে পুনঃস্থাপন করা।

সংশোধনমূলক শিক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি:
১. ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রদান: সংশোধনমূলক শিক্ষায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর সমস্যা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। কারও অঙ্কে দুর্বলতা, কারও ভাষা শিক্ষা সমস্যা — প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
২. ধৈর্য এবং সহানুভূতির মনোভাব: এই শিক্ষায় শিক্ষকের কাছে ধৈর্য এবং সহানুভূতি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থী ভুল করবে, পিছিয়ে পড়বে — এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে তাকে ধাপে ধাপে সাহায্য করতে হয়।
৩. বিশেষ উপকরণ ও পদ্ধতি ব্যবহার: সংশোধনমূলক শিক্ষায় চার্ট, ছবি, খেলাধুলা, গল্প বলা, শ্রবণ ও দৃশ্য সহায়ক উপকরণ ইত্যাদি বিশেষ উপায় ব্যবহৃত হয় যাতে শিক্ষার্থী সহজে শিখতে পারে।
৪. মূল শিক্ষা থেকে আলাদা ব্যবস্থা: সাধারণ পাঠক্রমের পাশাপাশি বা তার বাইরে এই শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত ক্লাস বা বিশেষ প্রশিক্ষণ সেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা হয়।
৫. দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং মূল্যায়ন: সংশোধনমূলক শিক্ষার শুরুতেই শিক্ষার্থীর দুর্বলতা এবং ভুলগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করা হয় এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর মূল্যায়ন করা হয়।
৬. প্রেষণা এবং উৎসাহ প্রদান: শিক্ষার্থীকে মোটিভেট করা, তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা সংশোধনমূলক শিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৭. পর্যবেক্ষণ এবং পুনরাবৃত্তি: শিক্ষকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে পূর্বে শেখা বিষয় পুনরাবৃত্তি করানো হয়। শিক্ষার্থীর প্রগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই লক্ষ্য।
৮. যোগাযোগমূলক পদ্ধতির ব্যবহার: শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক মধ্যে খোলামেলা আলোচনা এবং সমস্যা ভাগাভাগির মাধ্যমে শেখার পরিবেশ তৈরি হয়।
৯. সহযোগিতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া: শুধু শিক্ষক নয়, পিতা-মাতা এবং সহপাঠীদের মধ্যেও সহযোগিতা থাকতে হয় যাতে সংশোধনমূলক শিক্ষার সাফল্য নিশ্চিত হয়।
১০. সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য: সংশোধনমূলক শিক্ষণ শুধু পাঠ্যবিষয়ক দুর্বলতা নয়, শিক্ষার্থীর মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।

সংশোধনমূলক শিক্ষণে শিক্ষকের ভূমিকা:
১. শিক্ষার্থীর সমস্যা নির্ধারণ: শিক্ষক প্রথমেই শিক্ষার্থীর সমস্যা ও দুর্বলতাগুলি নির্ণয় করেন। এজন্য বিশেষ মূল্যায়ন পদ্ধতি যেমন টেস্ট, পর্যবেক্ষণ ও আলাপচারিতা ব্যবহার করা হয়।
২. ইনডিভিজুয়াল লার্নিং প্ল্যান (ILP) তৈরি: প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করতে হয় যাতে তার বিশেষ সমস্যাগুলি সমাধান করা যায়। এটি শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
৩. সহানুভূতিশীল মনোভাব ও ধৈর্য ধারণ: সংশোধনমূলক শিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য শিক্ষককে অত্যন্ত ধৈর্যশীল হতে হয়।
৪. প্রেষণা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা: শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সাহস জোগান এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেন। সফলতা অর্জনের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে উৎসাহ প্রদান করেন।
৫. নতুন এবং সৃজনশীল পদ্ধতি প্রয়োগ: শিক্ষার্থী যেন একঘেয়ে না হয়, তাই শিক্ষককে নতুন নতুন শিক্ষণপদ্ধতি, গেম, অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ প্রয়োগ করতে হয়।
৬. মূল্যায়ন এবং পুনঃমূল্যায়ন: শিক্ষক শিক্ষার্থীর অগ্রগতি নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করেন। যদি প্রয়োজন হয়, শিক্ষণপদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে নতুন কৌশল গ্রহণ করেন।
৭. পিতা-মাতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা: সংশোধনমূলক শিক্ষায় পিতা-মাতার সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য শিক্ষক অভিভাবকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং শিক্ষার্থীর উন্নয়ন সম্পর্কে অবহিত করেন।
৮. ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি: শিক্ষক এমন একটি শিক্ষণ পরিবেশ তৈরি করেন যেখানে শিক্ষার্থী ভয় বা সংকোচ ছাড়াই শেখার সুযোগ পায়।
৯. আচরণগত পরিবর্তন ঘটানো: যদি শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যা থাকে, শিক্ষক ধাপে ধাপে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
১০. সহযোগিতার মনোভাব ও দলগত কাজ: সংশোধনমূলক শিক্ষণ অনেক সময় দলগত কার্যক্রমের মাধ্যমে আরও ফলপ্রসূ হয়। শিক্ষক সেই পরিবেশ তৈরি করেন।

উপসংহার:
সংশোধনমূলক শিক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলদায়ক শিক্ষাপদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক দিককে তুলে ধরে। সংশোধনমূলক শিক্ষণে শিক্ষকের ভূমিকা শুধু জ্ঞানদান নয়, বরং শিক্ষার্থীর জীবনগঠনের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সমাজে শিক্ষার প্রসারে এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে সংশোধনমূলক শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই শিক্ষার কার্যক্রম চালু থাকা উচিত।

Unit-4: অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় পরিবেশ

******4) প্রশ্ন. অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর। অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের ভূমিকা আলোচনা কর। 10

ভূমিকা:
বর্তমান সময়ে শিক্ষা শুধু নির্দিষ্ট ধরণের শিক্ষার্থীর জন্য নয়, বরং সব ধরণের শিক্ষার্থীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং এই অধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য সমাজে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়’ বা ‘Inclusive School’ ধারণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় যেখানে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক যেকোনো প্রেক্ষাপটের শিক্ষার্থীরা একত্রে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এখন আমরা প্রথমে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করব এবং পরে অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের ভূমিকা ব্যাখ্যা করব।

অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি:
১. সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিতকরণ: অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী, যেই পরিবেশ বা প্রতিবন্ধকতা নিয়েই আসুক না কেন, সমান শিক্ষা লাভের অধিকার পায়। এখানে কোনো ধরণের বৈষম্য রাখা হয় না।
২. বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা: প্রতিটি শিক্ষার্থী ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা, সাংস্কৃতিক পটভূমি ও ভাষা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ে এই বৈচিত্র্যকে সম্মান করা হয় এবং প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৩. উপযুক্ত অবকাঠামো ও সহায়ক উপকরণ: অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ে হুইলচেয়ার চলাচল উপযোগী র্যাম্প, শ্রবণযন্ত্র, ব্রেইল পদ্ধতির বই ইত্যাদি সুবিধা থাকে যাতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত না হয়।
৪. লচিত্তশীল পাঠক্রম (Flexible Curriculum): সব শিক্ষার্থীর জন্য একই রকম পাঠক্রম কার্যকর না-ও হতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ে পাঠক্রম এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার নিজস্ব গতিতে শিখতে পারে।
৫. সহযোগিতামূলক শিখন পদ্ধতি (Collaborative Learning): এখানে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে কাজ করে, একে অপরকে সহায়তা করে। এতে শুধু পাঠ্যবিষয় শেখা হয় না, বরং সামাজিকীকরণও ঘটে।
৬. নির্বিচার মূল্যায়ন পদ্ধতি (Unbiased Assessment): শিক্ষার্থীদের মেধা ও দক্ষতা যাচাই করার সময় তাদের প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতিও রাখা হয়।
৭. অভিভাবক ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ: শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবক ও স্থানীয় সম্প্রদায়কেও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৮. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি: অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয়ে নিয়োজিত শিক্ষকরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন যাতে তারা বিভিন্ন ধরণের শিক্ষার্থীর সাথে কাজ করতে সক্ষম হন।
৯. সহানুভূতিশীল ও সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি: এমন একটি আবহ গড়ে তোলা হয় যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজেকে নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য মনে করে।
১০. নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়ন: বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত তদারকি ও মূল্যায়ন করা হয়।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষকের ভূমিকা:
১. শিক্ষার বৈচিত্র্যময় পদ্ধতি গ্রহণ: একজন অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষক এমনভাবে পাঠদান করেন যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার সামর্থ্য অনুযায়ী শিখতে পারে। কেউ অডিও-ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে ভাল শিখে, কেউ আবার হাতে-কলমে কাজ করে শিখতে ভালবাসে। শিক্ষককে সেই অনুযায়ী পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয়।
২. সহানুভূতি ও ধৈর্য প্রদর্শন: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করতে গেলে অনেক সময় ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। শিক্ষককে ধৈর্য ও সহানুভূতির মাধ্যমে তাঁদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
৩. পাঠক্রম অভিযোজন: শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যসূচিকে সহজ করে, বা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে শিক্ষকের কাজ। যেমন, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীর জন্য ব্রেইল বই ব্যবহার, শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ইশারা ভাষা বা লিখিত বোর্ড ব্যবহার।
৪. প্রেরণা জোগানো ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিতে এমন শিক্ষার্থী থাকতে পারে যাদের আত্মবিশ্বাস কম। শিক্ষককে তাঁদের মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে।
৫. ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনা: সকল শিক্ষার্থী যেন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার জন্য শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীর জন্য বসার স্থান নির্ধারণ, শ্রবণযন্ত্র ব্যবহারকারীর জন্য শিক্ষকের অবস্থান ঠিক রাখা ইত্যাদি।
৬. সহকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সহযোগিতা: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য কখনও কখনও বিশেষজ্ঞদের সাহায্য দরকার হয়। শিক্ষককে সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
৭. অভিভাবক ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা: শিক্ষার্থীর উন্নয়নের জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা জরুরি। শিক্ষককে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি জানাতে হয় এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়।
৮. সহপাঠীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মানসিকতা। শিক্ষককে এমনভাবে ক্লাস পরিচালনা করতে হবে যাতে সকল শিক্ষার্থী একে অপরকে সম্মান করে এবং সহযোগিতা করে।
৯. নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ শেখানো: অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এখানে মানবিক মূল্যবোধ, সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের শিক্ষা প্রদানও জরুরি। এই কাজটি একজন শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
১০. অব্যাহত পেশাগত উন্নয়ন: শিক্ষককে নিয়মিতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশ নিতে হবে যাতে নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিত থাকতে পারেন।

উপসংহার: অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আদর্শ সমাজ গঠনের স্তম্ভ। এখানে প্রত্যেক শিশুকে সমান গুরুত্ব দিয়ে তার অধিকার, ক্ষমতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষকগণ মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের আন্তরিকতা, দক্ষতা ও মানবিক মানসিকতার মাধ্যমেই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে।
অতএব, অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, বরং সমগ্র সমাজে সমতা, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

ফোর সেমিস্টারের সমস্ত সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক কর ।