Kalyani University B.A 4th Semester Education Major 4 suggestion 1ST PAPER

Kalyani University Suggestion

Kalyani University B.A 4th Semester Education Major 4 Nep Suggestions 2025

History of Indian Education in Colonial India

Kalyani University B.A 4th Semester Education Major 4 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 150 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 29 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

(সিলেবাস – ২০২৫)

Unit–1: উনিশ শতকে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা
a. 1813 সালের সনদ আইন ও এর শিক্ষাগত তাৎপর্য
b. প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক: পটভূমি ও প্রভাব
c. মেকলের মিনিট (1835) এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এর অবদান
d. উডস ডেসপ্যাচ (1854): প্রধান সুপারিশসমূহ ও শিক্ষাগত তাৎপর্য
e. ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা হান্টার কমিশন (1882): প্রধান সুপারিশ ও শিক্ষাগত গুরুত্ব

Unit–2: বাংলার নবজাগরণ ও শিক্ষার উপর এর প্রভাব
a. বাংলার নবজাগরণের ধারণা
b. বাংলার নবজাগরণের কারণসমূহ
c. বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য
d. শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়, ডিরোজিও ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান
e. শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার নবজাগরণের প্রভাব

Unit–3: লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি ও জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন
a. সিমলা সম্মেলন (1901)
b. ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (1902)
c. ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন (1904)
d. ১৯০৪ সালের ভারতীয় শিক্ষানীতির ওপর ইংরেজ সরকারের সিদ্ধান্ত
e. ভারতীয় শিক্ষায় লর্ড কার্জনের অবদান
f. জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন:
• জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
• জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রভাব
• আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়
• আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
• ভারতীয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের উপর জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের প্রভাব

Unit–4: প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা
a. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা স্যাডলার কমিশন (1917–1919): প্রধান সুপারিশ ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
b. বুনিয়াদি শিক্ষা (1937): ধারণা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
c. অ্যাবট-উড রিপোর্ট (1937): প্রধান সুপারিশ ও ভারতের শিক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রভাব
d. সার্জেন্ট রিপোর্ট (1944): যুদ্ধোত্তর শিক্ষাগত উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রধান সুপারিশ
e. ঔপনিবেশিক ভারতে শিক্ষানীতি
f. ঔপনিবেশিক ভারতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার অগ্রগতি
g. ঔপনিবেশিক ভারতে মেয়েদের ও নারী শিক্ষার অগ্রগতি

Unit–1: উনিশ শতকে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা

*****1) প্রশ্ন. ১৮১৩ সালের 'চার্টার অ্যাক্ট'-এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। (৫) Explain the significance of the 'Charter Act' of 1813. (৫)

ভূমিকা: ১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট ছিল ব্রিটিশ সংসদ কর্তৃক পাশ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন, যা ভারত শাসনের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক একচেটিয়া অধিকার হ্রাস করে এবং ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করে, এই অ্যাক্ট ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে।

চার্টার অ্যাক্ট ১৮১৩: সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ২০ বছরের জন্য ভারতের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, এই অ্যাক্টে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়। মূলত কোম্পানির বাণিজ্যিক একাধিকার (monopoly) ভেঙে দেওয়া হয় এবং ব্রিটিশ শাসনাধীনে ভারতের সংস্কৃতি ও শিক্ষার প্রতি নতুন নীতি গ্রহণ করা হয়।

১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট-এর মুখ্য বৈশিষ্ট্য:

১. কোম্পানির বাণিজ্যিক একচেটিয়া অধিকার বিলুপ্তি: এই অ্যাক্টের মাধ্যমে ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে সাধারণ বাণিজ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার বিলুপ্ত করা হয়। কেবল চীন ও চায়ের বাণিজ্যে কোম্পানির একাধিকার বজায় রাখা হয়।

২. ধর্ম প্রচারের অনুমতি: এই আইন পাশের ফলে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভারতে ধর্ম প্রচার ও সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার প্রদান করা হয়। এটি ভারতীয় সমাজে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংঘাতের সূচনা করে।

৩. শিক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ: এই অ্যাক্ট অনুসারে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বছরে ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের একটি ধারা সংযোজন করা হয়। যদিও তা সামান্য ছিল, কিন্তু এটি ছিল ব্রিটিশ সরকারের ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম সরাসরি হস্তক্ষেপ।

৪. সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি: এই অ্যাক্টের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংসদ কোম্পানির প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করে। গবর্নর-জেনারেল ও অন্যান্য আধিকারিকদের দায়বদ্ধতা বাড়ে।

১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট-এর তাৎপর্য:

১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্টের তাৎপর্য নীচে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. ভারতের বাণিজ্যিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়: এই অ্যাক্টের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যিক ক্ষমতার অবসান ঘটে। এর ফলে বেসরকারি ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা ভারতে ব্যবসা করার সুযোগ পায়। ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং ভারতীয় অর্থনীতি নতুন মাত্রায় প্রবেশ করে।

২. শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি দায়িত্বের সূচনা: চার্টার অ্যাক্টে ১ লক্ষ টাকা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত ছিল ঐতিহাসিক। এটি ব্রিটিশ সরকারের তরফে ভারতের শিক্ষার উন্নয়নে প্রথম পদক্ষেপ। পরবর্তীতে এর ভিত্তিতেই 1835 সালের ম্যাকলে মিনিটস এবং 1854 সালের উডস ডেসপ্যাচ গৃহীত হয়।

৩. ধর্ম প্রচারের প্রসার : চার্টার অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে মিশনারিদের ভারত প্রবেশাধিকার প্রদান করে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের দরজা উন্মুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুপ্রবেশ ও সামাজিক সংস্কারের সূচনা হয়। এটি ভারতীয় সমাজে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক জাগরণের পথ খুলে দেয়।

৪. ব্রিটিশ উপনিবেশিক নীতির পরিবর্তন: এই অ্যাক্ট ছিল একটি মোড় পরিবর্তনকারী আইন, যা ইঙ্গ-ভারতীয় সম্পর্ককে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে আসে। ভারত শুধুমাত্র একটি ব্যবসা ক্ষেত্র নয়, বরং একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরীক্ষাগারে পরিণত হয়।

৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব: মিশনারি ও শিক্ষার প্রসার নতুন ধরনের সমাজচিন্তা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটায়। পাশ্চাত্য শিক্ষার ছায়ায় ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে, যারা পরবর্তীকালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তি গড়ে তোলে।

পরবর্তী উন্নয়নের পথে ভিত্তি:

১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্টের দ্বারা প্রবর্তিত অনেক সিদ্ধান্ত পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ভারতে গভীর প্রভাব ফেলে। যেমন:

• ম্যাকলে মিনিটস (1835): পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
• উডস ডেসপ্যাচ (1854): শিক্ষা নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান: যারা ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে।

সমালোচনা: যদিও এই অ্যাক্ট ভারতীয় সমাজে পরিবর্তনের পথ খুলে দিয়েছিল, তবুও এটি নিছক একটি উপনিবেশিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হয়। শিক্ষার জন্য বরাদ্দ অতি অল্প ছিল এবং তা বাস্তবে কার্যকর হতে বহু বছর সময় লেগেছিল। মিশনারিদের আগমন ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্যের উপর আঘাত হানে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

উপসংহার:

১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট ছিল একটি যুগান্তকারী আইন, যার মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক একাধিকার ভেঙে সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করার অধিকার প্রদান করা হয়। একইসঙ্গে এটি ভারতীয় শিক্ষা, ধর্ম ও সমাজব্যবস্থায় ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপের সূচনা করে। যদিও এটি একটি রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত ছিল, তবে এর প্রভাব ভারতীয় সমাজের বহুবিধ স্তরে বিস্তার লাভ করে। এই আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে, শিক্ষার প্রসারে এবং সামাজিক চিন্তাধারার পরিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Unit–2: বাংলার নবজাগরণ ও শিক্ষার উপর এর প্রভাব

*****2) প্রশ্ন. সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাসংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান সম্পর্কে লেখো। অথবা, বাংলার নবজাগরণে তথা শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা কর। (১০ নম্বর)

ভূমিকা: ১৮ শতকের শেষভাগ ও ১৯ শতকের প্রথমভাগে বাংলার সমাজ ছিল গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। কুসংস্কার, অশিক্ষা, নারীর প্রতি বৈষম্য, বর্ণবিদ্বেষ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি সমাজকে গ্রাস করেছিল। ঠিক এইরকম এক সংকটকালে একজন মহাপুরুষ আবির্ভূত হন, যিনি একাধারে সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক এবং সর্বোপরি এক আধুনিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। তিনি হলেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁকে যথার্থই “ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ” বলা হয়। তাঁর সংস্কারমূলক চিন্তা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং শিক্ষা বিস্তারে অবদানের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় সমাজের নবযুগের সূচনা করেন।

সমাজসংস্কারক রূপে রামমোহন রায়ের অবদান:

১. সতীদাহ প্রথা রদে অগ্রণী ভূমিকা: রামমোহনের সমাজসংস্কারের অন্যতম প্রধান দিক ছিল সতীদাহ প্রথা রদের আন্দোলন। এই প্রথায় স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জীবন্ত দগ্ধ করে চিতায় বসিয়ে দেওয়া হতো। রামমোহন এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে ধর্মীয় শাস্ত্রের যুক্তি সহকারে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি ‘বেদ’, ‘উপনিষদ’ ও ‘ব্রাহ্মণ’ গ্রন্থ থেকে প্রমাণ দেন যে, সতীদাহ কোনো ধর্মসম্মত কাজ নয়। বহু পুস্তক রচনা ও পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি জনমত গড়ে তোলেন এবং ব্রিটিশ সরকারকে এই প্রথা রদের জন্য চাপ দেন। তাঁর প্রচেষ্টায় গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

২. বিধবা বিবাহ ও নারী শিক্ষার পক্ষে মত: রামমোহন বিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে যুক্তি দেন, যদিও তাঁর জীবদ্দশায় এই প্রথা আইনত স্বীকৃতি পায়নি। তিনি নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন এবং বলেন, “একটি দেশের উন্নতির জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীর শিক্ষাও অত্যন্ত জরুরি।” তিনি নারী শিক্ষার পক্ষে প্রচার চালান এবং পরোক্ষভাবে মেয়েদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করেন।

৩. বহুবিবাহ ও বর্ণবৈষম্যের বিরোধিতা: রামমোহন সমাজে প্রচলিত বহু বিবাহ প্রথারও বিরোধিতা করেন এবং বর্ণভেদের ভিত্তিতে বৈষম্য করার প্রবণতার কড়া সমালোচনা করেন। তিনি সকল মানুষের মধ্যে সমান অধিকার ও মর্যাদার পক্ষে ছিলেন।

৪. ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরোধিতা: রামমোহন রায় হিন্দুধর্মের নাম করে সমাজে চলা গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মতাত্ত্বিক যুক্তির সাহায্যে রুখে দাঁড়ান। তিনি বলেন, “ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, কুসংস্কার নয়।” এই মনোভাব থেকেই তিনি ‘ব্রাহ্মসমাজ’ গঠন করেন, যা পরে বাংলার ধর্মীয় সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষাসংস্কারক রূপে রামমোহন রায়ের অবদান:

১. আধুনিক শিক্ষার সূচনা: রামমোহন বিশ্বাস করতেন, দেশের উন্নতির জন্য প্রাচীন শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রয়োজন। তিনি চান, সমাজে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং মানবিক মূল্যবোধ বিস্তার লাভ করুক। এজন্যই তিনি ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়কে শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে সওয়াল করেন।

২. হিন্দু কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন: রামমোহন ১৮১৭ সালে ডেভিড হেয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে হিন্দু কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এখান থেকেই বাংলার নবজাগরণ সূচিত হয়। এছাড়া তিনি নিজে ১৮২২ সালে ‘অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল’ স্থাপন করেন যেখানে ইংরেজি ভাষা ও বিজ্ঞান বিষয় পড়ানো হতো। ১৮২৫ সালে তিনি ‘Vedanta College’ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়।

৩. নারী শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা: যদিও সরাসরি কোনো নারী বিদ্যালয় স্থাপন করেননি, তবুও নারী শিক্ষার পক্ষে যে যুক্তি ও জনমত রচনা করেন, তা পরবর্তী সময়ে বিদ্যাসাগরের কাজের ভিত্তি স্থাপন করে। তাঁর মতে, “নারীর শিক্ষাই জাতির অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।”

৪. পাঠ্যসূচি সংস্কারে মত: তাঁর দাবি ছিল, সংস্কৃত ভাষাভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে বাস্তবজীবনমুখী শিক্ষা যেমন বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হোক। এজন্য তিনি তৎকালীন শিক্ষা নীতির সমালোচনা করেন এবং নিজস্ব মত পেশ করেন।

সাংবাদিকতা ও গণমত গঠনে অবদান:

রামমোহন ছিলেন বাংলার প্রথম যুগের প্রগতিশীল সাংবাদিকদের অন্যতম। তিনি বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। যেমন—

• ‘সম্বাদ কৌমুদী’ (বাংলা),
• ‘Mirat-ul-Akhbar’ (উর্দু ও ফারসি),
• ‘Brahminical Magazine’ (ইংরেজি)।

এই পত্রিকাগুলির মাধ্যমে তিনি সমাজের কুসংস্কার, অন্যায়, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি করেন।

রাজা উপাধি লাভ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:

১৮৩০ সালে রামমোহন রায় ইংল্যান্ডে গমন করেন লর্ড বেন্টিঙ্কের সতীদাহ রদ আইনের পক্ষে মত দেওয়ার জন্য। সেখানে তিনি ব্রিটিশ সংসদে ভারতীয়দের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। ইংরেজরা তাঁর মেধা, যুক্তিবোধ ও সংস্কারমূলক মনোভাবের জন্য তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

উপসংহার:

রাজা রামমোহন রায় ছিলেন এমন একজন সমাজসংস্কারক, যিনি শুধু নিজের সময়কে নয়, ভবিষ্যতের ভারতকেও বদলে দিয়েছেন। তাঁর চিন্তা ও কাজের ফলেই ভারতীয় সমাজে এক নতুন যুগের সূচনা হয়, যাকে আমরা “বাংলার নবজাগরণ” বলি। সতীদাহ প্রথা রদ, নারী শিক্ষার পক্ষে মত, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও যুক্তিনির্ভর মানবিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তাঁর অবদান ভারতীয় ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রামমোহন ছিলেন এক অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ, যিনি সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাই আজও তিনি আমাদের চিন্তায়, শিক্ষায় এবং সংস্কৃতিতে পথপ্রদর্শক হয়ে আছেন।

Unit–3: লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি ও জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন

*****3) প্রশ্ন. লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংস্কার সংক্রান্ত সিমলা সম্মেলনের গুরুত্ব লেখ। ৫

ভূমিকা: ভারতের ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাসে লর্ড কার্জন (George Nathaniel Curzon) এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি ১৮৯৯ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর শাসনকাল শিক্ষা, প্রশাসন ও রাজনৈতিক সংস্কারের নানা উদ্যোগের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। তবে তাঁর শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে ১৯০১ সালের সিমলা সম্মেলন (Simla Education Conference) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা তৎকালীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হয়।

সিমলা সম্মেলনের প্রেক্ষাপট: উনিশ শতকের শেষভাগে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার মান নিম্নমুখী হচ্ছিল, তেমনই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ছিল ধীর। শিক্ষাঙ্গনে ব্রিটিশ প্রশাসনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে অনুপস্থিত ছিল এবং তহবিলের অভাব ও শিক্ষক স্বল্পতাও বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছিল। এমতাবস্থায় লর্ড কার্জন একটি সুশৃঙ্খল ও কার্যকরী শিক্ষানীতির প্রয়োজন অনুভব করেন এবং এই উদ্দেশ্যে ১৯০১ সালের অক্টোবরে সিমলায় একটি শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সিমলা সম্মেলনের আয়োজন ও গঠন: সিমলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ভাইসরয়ের সরকারি বাসভবনে। এই সম্মেলনে বিভিন্ন প্রদেশের শিক্ষানির্দেশকগণ, সরকারি আধিকারিক এবং শিক্ষাবিদগণ অংশ নেন। এটি ছিল একটি উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা-সংক্রান্ত সভা যেখানে ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

লর্ড কার্জন নিজে এই সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তার বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে জানান যে, ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা তার প্রশাসনিক নীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

সিমলা সম্মেলনের প্রধান সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ:

সিমলা সম্মেলনে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গৃহীত হয়। তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল:

১. শিক্ষার উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি: লর্ড কার্জনের মতে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে যদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হয়, তাহলে তাতে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকা অত্যাবশ্যক। তিনি প্রাদেশিক সরকারগুলিকে পরামর্শ দেন যেন তারা শিক্ষা বিভাগের উপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

২. শিক্ষার জন্য তহবিল বৃদ্ধি: সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, শিক্ষা খাতে সরকারকে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে হবে এবং প্রাদেশিক শিক্ষা বিভাগকে আরও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকারিতা পর্যালোচনা: লর্ড কার্জন ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকারিতা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁর মতে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শুধু পরীক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং সেগুলির গবেষণার মান অত্যন্ত নিম্ন। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

৪. প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার: সিমলা সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণের উপর জোর দেওয়া হয়। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার গুণমান বৃদ্ধির জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

৫. শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি: সম্মেলনে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কার্জনের মতে, শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা না দিলে শিক্ষার গুণগত মান কখনই উন্নত হবে না।

৬. শিক্ষা পরিদর্শন ও মূল্যায়ন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়মিত পরিদর্শন চালু করার প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং শিক্ষা পরিদর্শকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।

সিমলা সম্মেলনের গুরুত্ব:

সিমলা সম্মেলনের গুরুত্ব বহুস্তরীয় ও বহুমাত্রিক। নিচে তার কয়েকটি দিক আলোচনা করা হলো—

১. শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ: এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রথমবার ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পর্যালোচনা করে এবং উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দেয়।

২. সরকারি হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত: এই সম্মেলন শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপকে একটি স্বীকৃত নীতিতে রূপান্তর করে। পরবর্তীকালে শিক্ষা প্রশাসনের কেন্দ্রীকরণ এবং সরকারের প্রাধান্য স্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি ভিত্তি স্থাপন করে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার: এই সম্মেলনের ফলস্বরূপ পরবর্তীতে ১৯০২ সালে গঠিত হয় ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন, যা ১৯০৪ সালের ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন (Indian Universities Act, 1904) প্রণয়নের পথ সুগম করে। এটি ব্রিটিশ ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাকে আমূল রূপান্তরিত করে।

৪. শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন: শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা, পেশাগত উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়, তা ভারতীয় শিক্ষার পরবর্তী ইতিহাসে এক ইতিবাচক মোড় তৈরি করে।

৫. প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে অনুপ্রেরণা: এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকৃতি পায় এবং পরবর্তী দশকে এই খাতে সরকারের নজরদারি ও অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়।

সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি:

যদিও সিমলা সম্মেলন শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, তবুও এর কিছু দিক নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। যেমন:

• লর্ড কার্জনের শিক্ষা নীতিতে কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা ছিল প্রবল, যা ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থানীয় রীতিনীতি ও চাহিদাকে উপেক্ষা করে।
• অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, কার্জনের শিক্ষা সংস্কার ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে সরকার শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল।
• বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে একাডেমিক স্বাধীনতা ব্যাহত হয়।

উপসংহার: সার্বিকভাবে বলতে গেলে, ১৯০১ সালের সিমলা শিক্ষা সম্মেলন লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সম্মেলন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী মোড় ঘুরিয়ে দেয়। যদিও এর কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্কিত ছিল, তবুও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং সুগঠিত ছিল। পরবর্তীকালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব শিক্ষা ক্ষেত্রে নিজেদের মতাদর্শে ভিত্তি করে নতুন পথ রচনা করে—তবু সিমলা সম্মেলনের ইতিহাসগত গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।

সাজেশন পিডিএফ Copy টি কেমন দেখতে হবে দেখে নাও

Kalyani University B.A 4th Semester education major suggestion copy 2

ফোর সেমিস্টারের সমস্ত সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক কর ।