অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 30 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit–1: কেন্দ্রীভূত থেকে বিকেন্দ্রীভূত ভারতে উত্তরণের ইতিহাসের উৎস এবং ইতিহাসচর্চা – উত্তর ভারতের রাজপুত, বাংলার পাল ও সেন রাজবংশ – দক্ষিণ ভারতের রাজ্যসমূহের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম ও সংস্কৃতি।
Unit–2: দিল্লি সুলতানাতের অধীনে উত্তর ভারত – ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তুর্কি আক্রমণ – ১২০৬ থেকে ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুলতানাতের একীভবন – খলজি বিপ্লব এবং খলজি শাসকদের অধীনে সর্বশক্তিমান রাষ্ট্র – তুঘলক আমলের সংস্কার ও প্রতিসংস্কার – দিল্লি সুলতানাতের পতন এবং বিজয়নগর ও বাহমানি প্রভৃতি আঞ্চলিক রাজ্যগুলির উত্থান।
Unit–3: মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থানের প্রাক্কালে দিল্লির পরিস্থিতি – তৈমুরের আক্রমণ – সৈয়দ ও লোদি বংশ – বাবরের দুঃসাহসিক অভিযান এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তার সংযোগ – হুমায়ুনের দুর্ভাগ্য – শের শাহ সূর এবং ভারতে আফগান শাসনের প্রতিষ্ঠা।
Unit–4: সুলতানি ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি – রাষ্ট্র ও রাজত্ব সম্পর্কিত ধারণা – নতুন কৃষি ব্যবস্থা, বাণিজ্যিক ও শিল্প সম্পর্ক – নগরায়ন – ভক্তি ও সুফি ভাবধারা – ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্য: বাংলা এবং বাংলার বাইরের প্রেক্ষাপটে।
Unit-1: - উত্তর ভারতের রাজপুত, বাংলা রাজ্যে পাল ও সেন
*****1) প্রশ্ন. রাজপুত রাজ্যগুলির পরাজয়ের আর্থসামাজিক কারণ ব্যাখ্যা কর। ৫
ভূমিকা: ভারতের মধ্যযুগীয় ইতিহাসে রাজপুতদের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রাজপুত রাজারা উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিভিন্ন রাজ্য স্থাপন করেন। তারা বীরত্ব, সাহস এবং সম্মানের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু দিল্লি সালতানতের মুসলিম আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হন। ফলে একে একে রাজপুত রাজ্যগুলি পরাজিত হয় এবং মুসলিম শাসকের অধীনে চলে যায়। এই পরাজয়ের পিছনে সামরিক দুর্বলতা ছাড়াও বিভিন্ন আর্থসামাজিক কারণ কার্যকর ছিল। এই প্রবন্ধে আমরা সেই কারণগুলিকেই বিশ্লেষণ করে দেখব।
১. রাজনৈতিক বিভাজন ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: রাজপুত রাজ্যগুলি কখনও একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে সংগঠিত হয়নি। প্রতিটি রাজা নিজস্ব ক্ষমতা ও গৌরব রক্ষা করতে ব্যস্ত ছিল। এক রাজা আরেক রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করত, যার ফলে বাইরের আক্রমণকারীদের প্রতিহত করার জন্য সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এই রাজনৈতিক বিভাজন তাদের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ।
২. সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা: রাজপুত রাজ্যগুলি একটি কড়াকড়িভাবে গঠিত সামন্ততান্ত্রিক সমাজের উপর নির্ভর করত। সমাজে জমিদার, সামন্ত, ঠাকুর, রাজা প্রভৃতি একাধিক স্তরের মানুষ ছিল, যাদের মধ্যে শ্রেণিভেদ এবং স্বার্থবিরোধ বিদ্যমান ছিল। এই ধরনের সমাজব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সম্মিলিত শক্তি গড়ে ওঠেনি। ফলে জনগণ রাজ্যের রক্ষায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি।
৩. কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক দুর্বলতা: রাজপুতদের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। বাণিজ্য বা শিল্প বিশেষভাবে উন্নত ছিল না। কৃষি উৎপাদনের উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে যেকোনো দুর্ভিক্ষ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় রাজ্যের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিত। অন্যদিকে, মুসলিম শাসকরা মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে দ্রুত অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পেরেছিলেন।
৪. প্রযুক্তিগত পশ্চাদপদতা ও সামরিক দুর্বলতা: রাজপুতরা যুদ্ধে মূলত ঘোড়সওয়ারি, তরবারি ও ধনুক-গুলি ব্যবহারে দক্ষ ছিলেন, কিন্তু তারা বন্দুক বা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। মুসলিম আক্রমণকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র, হাতি এবং সংগঠিত বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করত। তাদের আধুনিক কৌশল এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের তুলনায় রাজপুতরা ছিল অনেক পিছিয়ে। এই সামরিক প্রযুক্তিগত পিছিয়ে থাকা তাদের পরাজয়ের একটি বড় কারণ।
৫. নারীর মর্যাদা ও 'জহর' প্রথা: রাজপুত সমাজে নারীদের মর্যাদা সামাজিকভাবে উচ্চ হলেও, যুদ্ধের সময় পরাজয়ের আশঙ্কায় ‘জহর’ বা আত্মহননের প্রথা চালু ছিল। বহু রাজপুত রানি ও নারী এই রীতির কারণে জীবন্ত পুড়ে মরতেন। এই মানসিকতা রাজপুতদের আত্মসমর্পণ বা কূটনৈতিক বোঝাপড়ার পথ বন্ধ করে দিত। ফলে অনেক সময় তারা আত্মরক্ষা না করেই আত্মাহুতি দিতেন।
৬. শিক্ষা ও সংস্কৃতির অভাব: যেখানে মুসলিম আক্রমণকারীরা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও স্থাপত্যে সমৃদ্ধ ছিল, সেখানে রাজপুত সমাজ শিক্ষার প্রসারে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। রাজপুতদের মধ্যে যুদ্ধজয়ের গৌরবকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো। ফলে তারা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতায় পিছিয়ে ছিল।
৭. সামাজিক গোঁড়ামি ও জাতপাত ব্যবস্থা: রাজপুত সমাজ ছিল গোঁড়ামিতে পূর্ণ এবং জাতপাত ব্যবস্থায় বিভক্ত। উচ্চবর্ণের মানুষ সাধারণ মানুষকে সমাজের মূলস্রোতে আনতে চাইত না। এই কারণে নিচু জাতের মানুষদের রাজ্যের রক্ষায় কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। একদিকে মুসলিম সেনাবাহিনী জাতপাতের ঊর্ধ্বে থেকে সংহত হয়ে কাজ করছিল, অন্যদিকে রাজপুতদের ভিতর ছিল বিভাজন।
৮. ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা: রাজপুত সমাজ ছিল হিন্দু ধর্মের প্রতি কঠোরভাবে অনুগত এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল ছিল না। অন্যদিকে মুসলিম শাসকরা ধর্মীয় কৌশলগতভাবে হিন্দুদের কিছু সুবিধা দিয়ে তাদের পাশে টানার চেষ্টা করত। ফলে সমাজের কিছু অংশ মুসলিম শাসকদের সহযোগিতা করত, যা রাজপুতদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উপসংহার:
রাজপুত রাজ্যগুলির পরাজয়ের পেছনে শুধুমাত্র সামরিক বা রাজনৈতিক কারণই নয়, বরং আর্থসামাজিক কাঠামোর দুর্বলতাও গভীরভাবে যুক্ত ছিল। অভ্যন্তরীণ বিরোধ, সমাজের শ্রেণিভেদ, অর্থনৈতিক দুর্বলতা, সামরিক প্রযুক্তির অভাব এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি তাদের পরাজয়ের পথ প্রশস্ত করে। ঐক্যবদ্ধতা, আধুনিকতার গ্রহণযোগ্যতা ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া একটি জাতি বা রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না—রাজপুতদের ইতিহাস থেকে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
****2) প্রশ্ন. পাল রাজাদের অধীনে বাংলার সংস্কৃতির বিবর্তন ব্যাখ্যা কর। ১০
অথবা, পাল-সেন আমলের স্থাপত্য কীর্তির পরিচয় দাও।
ভারতের ইতিহাসে পাল ও সেন রাজবংশের সময়কালকে বাংলা তথা পূর্ব ভারতের একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে পাল রাজাদের শাসনামলে বাংলায় সংস্কৃতির এক অসাধারণ বিকাশ ঘটেছিল। পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী, এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য, ধর্মচর্চা ইত্যাদিতে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়। আবার পালদের উত্তরসূরি সেন রাজারা হিন্দুধর্মাবলম্বী হলেও সংস্কৃতি ও স্থাপত্যে নিজেদের স্বতন্ত্র অবদান রেখেছেন।
পাল যুগে বাংলার সংস্কৃতির বিবর্তন:
১.ধর্ম ও দার্শনিক চিন্তাধারা: পাল রাজারা মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং তারা বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। গোপাল, ধর্মপাল, দেবপাল প্রমুখ রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন শাখা যেমন বজ্রযান, সহজযান ও তন্ত্রচর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। সেই সময় বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মীয় সাহিত্য ও দর্শনের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বহু মঠ, বিহার ও মন্দির নির্মাণ হয়।
২.শিক্ষা ও বিদ্যা-চর্চা: পাল যুগে বাংলা শিক্ষা ও জ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। নালন্দা, বিক্রমশীলা, সোমপুর, জগদ্দল ও ওদন্তপুরী মহাবিহার বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করে। এসব প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃত, বৌদ্ধ দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসা শাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো। দেশ-বিদেশ থেকে ছাত্র ও শিক্ষক আসতেন এখানে।
৩.সাহিত্য ও ভাষার বিকাশ: পাল যুগে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে। এই সময়ে সংস্কৃত ভাষার সাহিত্য যেমন প্রসার লাভ করে, তেমনি অপভ্রংশ ও প্রাক-আধুনিক বাংলা ভাষারও বিকাশ শুরু হয়। প্রখ্যাত বৌদ্ধ দার্শনিক ও কবি ধর্মকীর্তি ও দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (অতীশ) এই সময়ে আবির্ভূত হন। অতীশ শ্রীজ্ঞান তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৪.চিত্রকলা ও ভাস্কর্য: পাল যুগের শিল্পকলায় ছিল তন্ত্র-প্রভাবিত বৌদ্ধ ভাবধারার ছাপ। ব্রোঞ্জ, পাথর ও মৃতশিল্পে তৈরি মূর্তি ও অলঙ্করণে অলৌকিকতা, সূক্ষ্মতা এবং ভক্তিভাব ফুটে উঠেছে। পাল যুগের ব্রোঞ্জ প্রতিমা আজও ভারত ও বিশ্বের নানা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
পাল-সেন আমলের স্থাপত্য কীর্তির পরিচয়:
বাংলার স্থাপত্য ঐতিহ্যে পাল ও সেন যুগ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পাল রাজারা যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে বিহার, স্তূপ ও মন্দির নির্মাণ করেছেন, সেন রাজারা হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন মন্দির নির্মাণে উৎসাহী ছিলেন।
১.সোমপুর মহাবিহার (বর্তমান নওগাঁ, বাংলাদেশ): সোমপুর মহাবিহার পাল রাজা ধর্মপালের আমলে নির্মিত হয়। এটি বাংলার সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিহার। এর কেন্দ্রীয় মন্দিরটি ২০ মিটার উঁচু এবং চারপাশে মোট ১৭৭টি কক্ষবিশিষ্ট। এই বিহারে স্তূপ, প্রতিমা, পোড়ামাটির ফলক ও অলংকরণে তৎকালীন স্থাপত্য রীতির চমৎকার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
২.বিক্রমশীলা মহাবিহার: বিক্রমশীলা বিহারটি বিখ্যাত বৌদ্ধ আচার্য ধর্মপাল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল উচ্চতর বৌদ্ধ শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র। এখানে বৃহৎ লাইব্রেরি, শ্রেণিকক্ষ, উপাসনালয়, স্নানাগার এবং আবাসন ছিল। এর গঠনশৈলিতে অলংকৃত টেরাকোটা এবং দৃষ্টিনন্দন স্তূপের ব্যবহার দেখা যায়।
৩.জগদ্দল ও ওদন্তপুরী বিহার: এই দুটি বিহার পালদের শিক্ষানুরাগ ও ধর্মচর্চার প্রতীক। এসব বিহারগুলি বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪.ভাস্কর্য ও অলঙ্করণে বিশিষ্টতা: পাল যুগের স্থাপত্যে অলঙ্করণ ও অলংকৃত ফলক, পোড়ামাটির কাজ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মূর্তিগুলিতে বিমূর্ততা, মুখাবয়বে আত্মিকতা ও ভক্তিভাব, বস্ত্রের সূক্ষ্মতা এবং আঙ্গিক অনুপাতে নিখুঁত নির্মাণশৈলী প্রতিফলিত হয়েছে।
৫.সেন যুগের স্থাপত্য কীর্তি: সেন রাজারা হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। বল্লাল সেন, লক্ষ্মণ সেন প্রমুখ রাজারা শিব, বিষ্ণু ও দেবী মন্দির নির্মাণে অগ্রণী ছিলেন। এই সময়ে তৈরি হয় বহু ছোট আকারের মন্দির, যেগুলি অধিকাংশই পাথর ও ইট নির্মিত। যদিও পাল যুগের মতো বড় পরিসরের স্থাপত্য সেন আমলে তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবে অলংকরণে সেন স্থাপত্যে শিল্পগত সৌন্দর্য ছিল।
সারসংক্ষেপ:
পাল রাজাদের শাসনামল বাংলা তথা পূর্ব ভারতের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক যুগ। ধর্মীয় সহনশীলতা, শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে এই সময়ে যে উত্থান ঘটেছিল, তা বাংলা সংস্কৃতির ভিত্তি গঠনে অপরিসীম অবদান রেখেছে। আবার পাল যুগের উত্তরাধিকার সেন রাজারা তা ধারাবাহিকভাবে রক্ষা ও রূপান্তরিত করেছেন। এক কথায়, পাল ও সেন আমল ছিল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় সাংস্কৃতিক অধ্যায়।
*****3) প্রশ্ন. বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আলাউদ্দিন খলজি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন? অথবা, আলাউদ্দিন খলজির মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর। 10
ভূমিকা: ভারতের ইতিহাসে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬–১৩১৬ খ্রি.) একজন শক্তিশালী শাসক হিসাবে পরিচিত। তিনি প্রশাসনিক দক্ষতা, সামরিক সাফল্য এবং কঠোর আইন প্রয়োগের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর শাসনকালে বাজারদর নিয়ন্ত্রণের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যা মধ্যযুগীয় ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক অভিনব পদক্ষেপ। এই মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শুধু সামরিক শক্তিকে মজবুত করতেই নয়, সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রাকেও সুশৃঙ্খল রাখতে সহায়ক ছিল।
মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পটভূমি: আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্য বিস্তারে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তার বিরাট সেনাবাহিনীকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতো। সেনাপতিদের এবং সৈনিকদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য তিনি তাদের বেতন নগদ প্রদান করতেন। কিন্তু রাজকোষ সীমিত থাকায় অতিরিক্ত বেতন বাড়ানো সম্ভব ছিল না। তাই, জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর উদ্দেশ্যে বাজারদর নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তার মূল লক্ষ্য ছিল—
• সাধারণ দ্রব্যের দাম কম রাখা
• সৈনিক ও জনগণকে সন্তুষ্ট রাখা
• অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা
মূল্যনিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য:
১. সেনাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে তাদের সামান্য মজুরিতে সন্তুষ্ট রাখা।
২. সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
৩. কালোবাজারি ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. দুর্ভিক্ষ এবং দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট প্রতিরোধ করা।
৫. জনগণের ওপর করের বোঝা কমিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করা।
আলাউদ্দিন খলজির গৃহীত প্রধান ব্যবস্থা:
১. নির্দিষ্ট দামের নীতি (Fixed Pricing Policy): আলাউদ্দিন খলজি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দেন। যেমন, চাল, গম, ডাল, চিনি, কাপড়, পশু, গোলাম ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারিত ছিল। কারো পক্ষে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
২. নিয়ন্ত্রিত বাজার প্রতিষ্ঠা (Controlled Markets): দিল্লিতে তিনটি প্রধান বাজার স্থাপন করা হয়েছিল—
• মুন্দি বা শস্য বাজার
• সিরাই আদাত বা দাস এবং পশু বাজার
• পোশাক ও কাপড়ের বাজার
এই বাজারগুলিতে নির্দিষ্ট মূল্যে দ্রব্য বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। বাজারের ওপর কঠোর নজরদারি চালানো হতো।
৩. বাজার অধিকর্তা নিয়োগ (Appointment of Market Controllers): প্রত্যেক বাজারে "শাহন" বা বাজার অধিকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল। তারা বাজারের সমস্ত কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত। বাজারের দামের নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব তাদের ছিল।
৪. দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের উপর নিষেধাজ্ঞা (Ban on Brokers and Middlemen): দালাল, মধ্যস্বত্বভোগী ও অতিরিক্ত লাভের জন্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরাসরি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে লেনদেনের ব্যবস্থা চালু করা হয়।
৫. মজুদদারি ও মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে শাস্তি (Punishment for Hoarding and Profiteering): যদি কেউ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করত বা নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে বিক্রি করত, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান ছিল। কখনও কখনও মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতো।
৬. সরবরাহ ও গুদামের ব্যবস্থা (Stock and Warehousing System): শস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি গুদাম নির্মাণ করা হয়েছিল। ফসলের খারাপ মৌসুমেও যাতে খাদ্যসংকট না হয়, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
৭. তথ্য সংগ্রহ ও গুপ্তচর নিয়োগ (Secret Intelligence System): বাজারের অবস্থা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহের জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়েছিল। তারা বাজারের ওপর গোপনে নজর রাখত এবং কোনরকম অন্যায় বা অনিয়ম হলে সরাসরি সুলতানকে রিপোর্ট করত।
দ্রব্যের মূল্য তালিকা:
তখন নির্ধারিত দ্রব্যের দামের একটি সাধারণ তালিকা ছিল। যেমন—
• গম প্রতি মণ ৭-৮ দাম
• চাল প্রতি মণ ৫-৭ দাম
• ছোলা প্রতি মণ ৫ দাম
• ভালো মানের কাপড় ২-৫ টঙ্কা
• দাস-দাসীদের দাম নির্ধারিত ছিল তাদের দক্ষতার ভিত্তিতে
• ঘোড়া, ষাঁড়, উট ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল
মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাফল্য:
আলাউদ্দিনের মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিশেষভাবে সফল হয়। এর ফলে—
• দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল ছিল।
• সাধারণ জনগণ সস্তায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারত।
• সেনাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কম ছিল, ফলে তারা সামান্য বেতনেও সন্তুষ্ট ছিল।
• সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় ছিল।
• মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়নি।
সীমাবদ্ধতা:
যদিও আলাউদ্দিন খলজির মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সফল হয়েছিল, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল—
• কঠোর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারে স্বাধীনতা ব্যাহত হয়েছিল।
• প্রশাসনিক দুর্নীতির সম্ভাবনা ছিল।
• বাজারের উপর অতিরিক্ত সরকারি হস্তক্ষেপে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল কিছু ব্যবসায়ীর মধ্যে।
• তাঁর মৃত্যুর পরে এই কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়ে।
উপসংহার:
আলাউদ্দিন খলজির মূল্যনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, শক্তিশালী প্রশাসনিক ইচ্ছাশক্তি এবং কার্যকর তদারকি দ্বারা বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদিও এই ব্যবস্থা স্থায়ী হয়নি, তথাপি তার উদ্ভাবনী নীতি ও কর্মক্ষমতা আজও ইতিহাসবিদদের প্রশংসা অর্জন করেছে। আলাউদ্দিনের এই উদ্যোগ সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তিকে সুসংহত করেছিল এবং সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও সহায়ক হয়েছিল।
Unit-3: মুঘল আরোহনের প্রাক্কালে দিল্লি — তৈমুরের আক্রমণ — সৈয়দ এবং লোদী বংশ — বাবর
*****4) প্রশ্ন. শের শাহ শুধুমাত্র একজন উদ্ভাবক ছিলেন না। তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সরকারি প্রশাসনযন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত ও দক্ষ করে তোলা।" — তুমি কি এই বক্তব্যের সাথে একমত? (১০)
উত্তর: আমি এই বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে শের শাহ শুধুমাত্র এক মহান বিজেতা বা সাম্রাজ্য-প্রতিষ্ঠানকারী ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন এক দক্ষ প্রশাসক, সুদূরদর্শী পরিকল্পক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কারক। তাঁর প্রশাসনিক নীতিমালা এবং আর্থ-সামাজিক সংস্কার ভারতীয় ইতিহাসে গভীর ছাপ ফেলেছিল।তাঁর শাসনকাল সংক্ষিপ্ত (১৫৪০-১৫৪৫ খ্রি.) হলেও, তাঁর গৃহীত প্রশাসনিক সংস্কার ও নীতিমালা ভারতীয় ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাঁর কার্যকলাপ ছিল সাময়িক নয়; বরং পরবর্তী মুঘল শাসকরাও শের শাহের স্থাপিত ভিত্তির উপর তাদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
এখন বিস্তারিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার করা যাক—
১. প্রশাসনিক দক্ষতা এবং পুনর্গঠন: শের শাহের মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুসংহত, সুব্যবস্থাপিত ও জনগণের উপযোগী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা। তিনি রাজ্যকে বিভিন্ন পরগনায় বিভক্ত করেছিলেন। প্রতিটি পরগনায় প্রশাসক (শিকদার), রাজস্ব সংগ্রহকারী (আমিন) ও ন্যায়বিচারক (মুকাদ্দম) নিয়োগ করেছিলেন। রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তোলার জন্য জমির পরিমাপ, শ্রেণিবিন্যাস ও উৎপাদন অনুসারে কর নির্ধারণ করেছিলেন। জমির মাপজোকের জন্য 'গজ-ই-শেরশাহী' নামক একটি নির্দিষ্ট মাপ প্রবর্তন করেছিলেন, যা পরবর্তী যুগেও ব্যবহৃত হয়েছিল।
তিনি রাজস্ব আদায়ের সময় কৃষকদের সুবিধা ও দুঃখের কথা মাথায় রাখতেন। করের হার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল যাতে কৃষকদের জীবিকা বিপন্ন না হয়। তিনি একক কর ব্যবস্থা চালু করে মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কমিয়ে দেন। এ থেকে স্পষ্ট যে, শের শাহের উদ্দেশ্য শুধু রাজস্ব বৃদ্ধি করা নয়, বরং রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও মানবিক করা।
২. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: শের শাহ প্রশাসনিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শাসকের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনি মুসলিম আইন (শরিয়ত) এবং হিন্দুদের জন্য পৃথক ধর্মীয় আইন প্রয়োগের নির্দেশ দেন। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিচারের সুযোগ ছিল। তিনি কড়া আদেশ দিয়েছিলেন যাতে কোনো দুর্নীতি বা পক্ষপাত বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত না করে।
শের শাহ নিজেও জনগণের অভিযোগ শুনতেন এবং দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করতেন। তাঁর আমলে বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দ্রুততা প্রশাসনিক দক্ষতার অন্যতম ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা জনগণের মধ্যে গভীর আস্থা ও আনুগত্য সৃষ্টি করে।
৩. সামরিক সংস্কার: শের শাহ সামরিক ক্ষেত্রেও অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি সেনাবাহিনীকে কেন্দ্রীভূত করেন এবং সেনাদের নিয়মিত বেতন ও রেশন প্রদান করতেন। সৈনিকদের নাম ও ঘোড়ার পরিচয়পত্র (দাগ ও হুলিয়া) রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে দুর্নীতি ও প্রতারণার সুযোগ না থাকে। এই ধরনের নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি প্রশাসনিক নিরাপত্তা ও সামরিক শক্তি সুদৃঢ় করেন।
শুধু সামরিক শক্তির উন্নতিই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না, বরং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সামরিক কাঠামো তৈরি করাই ছিল তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য।
৪. যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন: শের শাহের আরেকটি মহৎ অবদান হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। তিনি বহু সড়ক নির্মাণ করেন, যার মধ্যে দিল্লি থেকে সোনারগাঁও (বর্তমান বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ) পর্যন্ত প্রসারিত "সরক-ই-আজম"বা"গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড" অন্যতম। রাস্তার পাশে ডাকবাংলো নির্মাণ, কূপ খনন ও বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
এই উন্নত সড়ক ব্যবস্থা প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে এবং বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও জনসাধারণের চলাচল সহজ করে তোলে। এটি শুধু সামরিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করেনি, বরং প্রশাসনিক দক্ষতার অন্যতম স্তম্ভ রূপে কাজ করেছিল।
৫. মুদ্রানীতি ও অর্থনৈতিক সংস্কার: শের শাহ একটি সুসংহত মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি 'রুপি' নামে রুপার মুদ্রা এবং 'দাম' নামে তামার মুদ্রা প্রবর্তন করেন, যা ভারতীয় মুদ্রা ব্যবস্থার ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই সুদৃঢ় মুদ্রানীতির ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর হয়।
একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রশাসনিক দক্ষতার অপরিহার্য অঙ্গ। শের শাহের এই আর্থিক সংস্কার জনসাধারণের আস্থা অর্জন করে এবং প্রশাসনযন্ত্রকে আরও সুসংবদ্ধ করে তোলে।
৬. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সামাজিক ন্যায়: যদিও শের শাহ একজন মুসলিম শাসক ছিলেন, তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতিতে বিশ্বাস করতেন। হিন্দুদের ওপর কোনো বাড়তি কর আরোপ করেননি। হিন্দু এবং মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষের মধ্যে সমতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এই নীতির ফলে তাঁর শাসন ব্যবস্থায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছিল, যা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৭. শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কাজ: শের শাহ শিক্ষার প্রচারে বিশেষ মনোযোগ দেন। মাদ্রাসা ও পাঠশালার উন্নয়ন করেন। একই সঙ্গে হাসপাতাল, সরাইখানা ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করেন। এই সমস্ত জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ প্রশাসনের সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সারাংশ: শের শাহের কাজকর্ম বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, তিনি নিছক একজন উদ্ভাবক ছিলেন না, বরং এক জনমুখী, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। তাঁর উদ্ভাবনসমূহ প্রশাসনিক প্রয়োজনে উদ্বুদ্ধ হয়ে গৃহীত হয়েছিল, যা মোগল সম্রাট আকবরের প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছিল। আকবর তাঁর অনেক নীতিই শের শাহের কাছ থেকে গ্রহণ করেন।
তাঁর প্রশাসনিক কৌশল, রাজস্ব ব্যবস্থা, সামরিক সংগঠন, যোগাযোগের উন্নয়ন ও মুদ্রানীতির মেলবন্ধন আজও ইতিহাসে এক অসাধারণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। তাঁর শাসনকালের উন্নত প্রশাসনিক দক্ষতার ফলেই তাঁকে "ভারতের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা" বলেও অভিহিত করা হয়।
মূল্যায়ন: শের শাহের সাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী না হলেও, তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা ও সংস্কার কর্মসূচি ভারতের ইতিহাসে স্থায়ী প্রভাব রেখে গেছে। তিনি সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য প্রশাসনযন্ত্রকে পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।
উপসংহার:
সব দিক বিবেচনায় বলা যায়, শের শাহ শুধুমাত্র একজন উদ্ভাবক ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন এক সুদূরদর্শী শাসক, যাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারি প্রশাসনযন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা। তাঁর প্রশাসনিক সংস্কার ও নীতিগুলো আজও ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
সুতরাং, আমি নিঃসন্দেহে এই বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে একমত যে—
"শের শাহ শুধুমাত্র একজন উদ্ভাবক ছিলেন না। তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সরকারি প্রশাসনযন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত ও দক্ষ করে তোলা।"
UNIT-4 সুলতানি ভারতে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি — রাষ্ট্র ও রাজত্ব
*****4) প্রশ্ন. Discuss in brief the economic conditions of India during the Sultanate period. (১০)সুলতানি যুগে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। (১০)
ভারতের সুলতানি যুগ (১২১০-১৫২৬) ছিল এক উজ্জ্বল এবং পরিবর্তনশীল সময়কাল, যা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সুলতানি শাসকদের অধীনে ভারতীয় অর্থনীতি নতুন দিশা নিয়েছিল এবং এই সময়ে কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কর ব্যবস্থা এবং রাজস্ব সংগ্রহের কৌশলগুলো নানা দিক দিয়ে উন্নত হয়েছিল। তবে, একই সময়ে সামাজিক অস্থিরতা এবং বিদেশী আক্রমণও অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। এই আলোচনায় সুলতানি যুগে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার মূল দিকগুলো তুলে ধরা হবে।
১.কৃষি উৎপাদন এবং কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি: সুলতানি যুগে কৃষি ছিল ভারতের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। শাসকরা কৃষকদের উপর অনেক ধরনের কর আরোপ করতেন, যার মধ্যেজিজিয়াএবংখোরাজকর ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই কর প্রবর্তন কৃষকদের জন্য বেশ কষ্টকর ছিল, তবে সুলতানি শাসকরা কিছু উন্নতির চেষ্টা করেছিলেন। সুলতানি যুগে পানি সেচ ব্যবস্থার উন্নতি এবং নতুন ফসলের জাতের প্রবর্তন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল। তাছাড়া, শাসকরা কৃষকদের জন্য কিছু ভূমি সংস্কারও করেছিলেন।
২.বাণিজ্য এবং ব্যবসা: সুলতানি যুগে ভারতের বাণিজ্য ছিল বিস্তৃত এবং সমৃদ্ধ। ভারতীয় বণিকরাভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যএবংমধ্য এশিয়াএর সাথে বাণিজ্য করতেন। ভারত থেকে রেশম, তুলা, মশলা, গহনা, এবং সুগন্ধী পণ্য রপ্তানি হত। এদিকে, ভারতেও আমদানী হত তামা, সোনালী ধাতু, রৌপ্য, পাথর, এবং মৃৎশিল্প। দিল্লির সুলতানি শাসকরা বাণিজ্যের বিকাশে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেন। বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপের জন্য বিভিন্ন শহর যেমন দিল্লি, লাহোর, আগ্রা, এবং মালওয়া গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।
উদাহরণস্বরূপ, জামানাবাদএবংহমায়ুনপুরএর মতো বাণিজ্যিক শহরগুলিতে বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার স্থাপিত হয়েছিল, যেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং দ্রব্য বিক্রি হত।
৩.শিল্প এবং হস্তশিল্প: সুলতানি যুগে ভারতের শিল্প এবং হস্তশিল্প আরও বিকশিত হয়েছিল।কাঁসার শিল্প, সোনালি ও রৌপ্য সামগ্রী, তামার কাজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ধর্মীয় স্থাপত্যের নির্মাণ, এবংসুন্দর পোশাক তৈরিএই সময়কার কিছু প্রধান শিল্প। সুলতানি শাসকরা নতুন নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতেন, যেমন মসজিদ, সমাধি, এবং দুর্গ নির্মাণ।এছাড়াও, সুলতানি যুগের প্রাধান্যপূর্ণ হস্তশিল্পগুলির মধ্যেগ্লাসের কাজ, কারুশিল্প, এবংরেশম ও কাপড়ের তৈরি শিল্পবিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দিল্লি, আগ্রা, এবংলাহোরশহরগুলি ছিল এই শিল্পগুলির কেন্দ্রস্থল।
৪.কর ব্যবস্থা এবং রাজস্ব সংগ্রহ: সুলতানি শাসকরা রাজস্ব সংগ্রহে বিভিন্ন নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।ইবনে বতুতাএবংআবুল ফজলএর মতো ইতিহাসবিদরা এই রাজস্ব ব্যবস্থার উপর আলোকপাত করেছেন। সুলতানি যুগে রাজস্ব হিসেবে কৃষি আয় থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ সংগ্রহ করা হত, যা কৃষকদের উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করত। সুলতানি শাসকদের মধ্যেআইবেক, বখতিয়ার খলজি, এবংআলাউদ্দিন খিলজিতাদের রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।আইবেকরাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন, তবে তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারও ছিল, যা কৃষকদের জন্য সহায়ক ছিল।
আলাউদ্দিন খিলজিতাঁর শাসনামলে খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবংখাজনাআদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহকে আরও সুসংগঠিত করেন।
৫.সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসমতা: সুলতানি যুগে, ভারতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট ছিল। রাজস্ব আদায়ের চাপের কারণে অনেক কৃষক দীন-দরিদ্র হয়ে পড়েছিলেন। যদিও কিছু অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছিল, তবে শাসকদের উচ্চ কর সংগ্রহ পদ্ধতি এবং বিদেশী আক্রমণের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ ছিল।খাজনাএবংজিজিয়া করকৃষকদের উপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি করেছিল।
তবে সুলতানি শাসকদের মধ্যে কিছু উদার দৃষ্টি ছিল, যারা দানের মাধ্যমে দরিদ্রদের সহায়তা করতেন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন।
৬.ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং মুদ্রা: সুলতানি যুগেব্যাংকিং ব্যবস্থাকিছুটা বিকশিত হয়েছিল। বণিকরা ঋণগ্রহণ এবং তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্যহুন্ডিব্যবস্থার ব্যবহার করতেন।আলাউদ্দিন খিলজিতাঁর সময়েমুদ্রা সংস্কারকরেন, এবং বিভিন্ন ধরনের নতুন মুদ্রা চালু করেন। এর ফলে ভারতের মুদ্রাব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত হয়ে ওঠে।
৭.বিদেশী আক্রমণ এবং অর্থনীতির অবস্থা: সুলতানি যুগে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর বিদেশী আক্রমণ যেমনমঙ্গল আক্রমণএবংদখলকারী রাজবংশদের আক্রমণব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এই আক্রমণগুলির ফলে দেশের অনেক শহর ধ্বংস হয়ে যায় এবং অর্থনীতির পুনর্গঠন প্রয়োজন হয়েছিল। বিদেশী আক্রমণগুলির কারণে অর্থনীতির একাংশ ধ্বংস হলেও, সুলতানি শাসকরা তা পুনর্গঠনে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন।
উপসংহার: সুলতানি যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল একদিকে সৃজনশীল এবং অন্যদিকে বেশ চ্যালেঞ্জিং। কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প, এবং রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থায় কিছু অগ্রগতি হলেও, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিদেশী আক্রমণ এবং রাজস্ব ব্যবস্থার দুর্বলতা সাধারণ মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে, সুলতানি শাসকরা উন্নত রাজস্ব ব্যবস্থা এবং বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সুলতানি যুগের অর্থনীতি তাই একদিকে সমৃদ্ধিশালী হলেও, অন্যদিকে এটি নানা দিক থেকে সংকটময় ছিল।
অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)