Kalyani University B.A 5th Semester history major 6 Nep suggestions

Kalyani University Suggestion

Kalyani University B.A 5th Semester History Major 6 Nep Suggestions 2026

Papers-6

History of Mughal India

Kalyani University B.A 5th Semester History Major 6 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 150 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424

• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

(সিলেবাস – ২০২৫)

Unit –1 : Historiography and historians of Mughal India – Abul Fazl, Badauni, Abdul Hamid Lahori and Bernier; Writings of Sir Jadunath Sarkar and other historians from Delhi and Aligarh school(s).
বাংলা: মুঘল ভারতের ইতিহাস রচনা ও ইতিহাসবিদ – আবুল ফজল, বাদাউনি, আব্দুল হামিদ লাহোরি এবং বার্নিয়ার; স্যার যদুনাথ সরকার এবং দিল্লি ও আলিগড় বিদ্যালয়ের অন্যান্য ঐতিহাসিকদের রচনা।

Unit –2 : Making of the Mughal State from Akbar to Aurangzeb – state and religion, evolution of the administrative system; mansab and jagir; village community; class structure of the rulers and the ruled – nobles, zamindars and peasants; economy: agriculture, commerce and industry.
বাংলা: আকবর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের গঠন; রাষ্ট্র ও ধর্ম; প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিবর্তন; মনসব ও জায়গিরদারি ব্যবস্থা; শাসক ও শাসিতদের গ্রামীণ সমাজকাঠামো; অভিজাত, জমিদার এবং কৃষক; অর্থনীতি – কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্প।

Unit –3 : Cultural patterns of Mughal India – literature, art and architecture; religion of the masses; language and agriculture.
বাংলা: মুঘল ভারতের সাংস্কৃতিক ধারা – সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্য; জনসাধারণের ধর্ম; ভাষা এবং কৃষিকাজ।

Unit –4 : Decline of the Mughal State – challenge from the Marathas and the Sikhs; problems in the jagirdari system; the agrarian crisis; peasants in revolt.
বাংলা: মুঘল সাম্রাজ্যের পতন – মারাঠা ও শিখদের চ্যালেঞ্জ; জায়গিরদারি ব্যবস্থার সমস্যা; কৃষি সংকট; কৃষক বিদ্রোহ।

Unit-1: মুঘল ভারতের ইতিহাস রচনা ও ইতিহাসবিদ।

*****1) প্রশ্ন. মুঘল ভারতের ইতিহাস-রচনায় স্যার যদুনাথ সরকারের অবদান আলোচনা করো। [৫]

ভূমিকা:

ভারতের ইতিহাস-রচনার ক্ষেত্রে ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগ ও বিংশ শতকের প্রথম ভাগ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় ইউরোপীয় ইতিহাসবিদরা ভারতীয় অতীতকে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে যিনি প্রকৃত আধুনিকতার সূচনা করেছিলেন এবং মুঘল ভারতের ইতিহাসকে নতুন বৈজ্ঞানিক রূপে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি হলেন স্যার যদুনাথ সরকার। তাঁকে অনেকেই “ভারতীয় ইতিহাস-লেখনের জনক” কিংবা “ভারতের রাঙ্কে” বলে অভিহিত করেছেন। বিশেষ করে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস-চর্চায় তাঁর অবদান সর্বাধিক।

জীবনীসংক্ষেপ: স্যার যদুনাথ সরকার ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়ন করলেও পরবর্তীকালে ইতিহাসচর্চার প্রতি অনুরাগী হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে ইতিহাস গবেষণায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করেন। তাঁর অসাধারণ গবেষণা, ভাষাজ্ঞান, তথ্য-উদ্ধৃতির নির্ভুলতা এবং বিশ্লেষণধর্মী মনোভাব তাঁকে ইতিহাসবিদ হিসাবে অনন্য করে তুলেছিল।

মুঘল ভারতের ইতিহাসচর্চার প্রেক্ষাপট: স্যার যদুনাথ সরকারের পূর্বে মুঘল ভারতের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে প্রধানত ইউরোপীয় ও মুসলিম ইতিহাসবিদদের রচনা নির্ভর ছিল। এসব গ্রন্থে রাজনৈতিক কাহিনি ও রাজাদের বীরত্বকাহিনি গুরুত্ব পেলেও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অনুপস্থিত ছিল। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, দলিলপত্রের ব্যবহার ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস-রচনার প্রথা তখনও যথাযথভাবে গড়ে ওঠেনি। এই প্রেক্ষাপটে যদুনাথ সরকারের আবির্ভাব সত্যিই যুগান্তকারী। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে শুধু গল্প আকারে নয়, বরং দলিল-প্রমাণের আলোকে বিশ্লেষণ করেছিলেন।

স্যার যদুনাথ সরকারের মুঘল ইতিহাস বিষয়ক প্রধান গ্রন্থসমূহ:

1. “History of Aurangzib” (৫ খণ্ডে প্রকাশিত): আওরঙ্গজেবের রাজনৈতিক জীবন, ধর্মনীতি, সামরিক অভিযান ও প্রশাসনিক কার্যকলাপকে তিনি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এখানে শুধু শাসকের সাফল্য নয়, তার সীমাবদ্ধতা ও সাম্রাজ্যের দুর্বলতার দিকগুলিও তিনি তুলে ধরেছেন।

2. “The Fall of the Mughal Empire” (৪ খণ্ডে প্রকাশিত): মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের প্রকৃত কারণগুলো এখানে তিনি দলিল-প্রমাণের সাহায্যে তুলে ধরেছেন। আওরঙ্গজেব-পরবর্তী দুর্বলতা, আঞ্চলিক শক্তির উত্থান, অর্থনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি বিশেষ জোর দেন।

3. “Shivaji and His Times”: শিবাজির জীবন, যুদ্ধনীতি ও প্রশাসনিক প্রতিভাকে তুলে ধরার পাশাপাশি মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষকেও সুস্পষ্ট করেছেন।

4. “Mughal Administration”: মুঘল আমলের প্রশাসনিক কাঠামো, রাজস্বনীতি, সামরিক ব্যবস্থা ও আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এখানে স্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে।

5. অন্যান্য গ্রন্থ ও প্রবন্ধ: “Jadunath Sarkar’s Selections from Persion Records”, “Military History of India”, বিভিন্ন প্রবন্ধ ও সম্পাদিত দলিলসঙ্কলন, যা মুঘল ইতিহাস গবেষণায় অমূল্য।

মুঘল ভারতের ইতিহাস-চর্চায় যদুনাথ সরকারের অবদান:

১. দলিলভিত্তিক গবেষণা: যদুনাথ সরকার ছিলেন দলিলপত্রভিত্তিক গবেষণার পথিকৃৎ। তিনি ফার্সি, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষ ছিলেন। ফলে সমসাময়িক ফার্সি নথি, প্রশাসনিক দলিল, চিঠিপত্র, বিদেশি ভ্রমণকারীর বিবরণ ইত্যাদি ব্যবহার করে তিনি মুঘল ইতিহাসকে প্রমাণনির্ভর রূপ দেন।

২. নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি: ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তিনি কোনও ধর্মীয় বা জাতিগত পক্ষপাতিত্ব করেননি। মুঘল শাসকদের কৃতিত্ব যেমন স্বীকার করেছেন, তেমনি তাঁদের ব্যর্থতাও সমালোচনা করেছেন।

৩. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষণ: তাঁর গবেষণায় মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো, রাজস্বব্যবস্থা, সামরিক সংগঠন ইত্যাদির বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়। এর ফলে শুধু ব্যক্তিনির্ভর কাহিনি নয়, সাম্রাজ্যের ভিতরকার গঠনগত দিকগুলিও পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে।

৪. মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ নির্ণয়: “Fall of the Mughal Empire” গ্রন্থে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের মূল কারণ হিসেবে— আওরঙ্গজেবের ধর্মান্ধ নীতি, দীর্ঘস্থায়ী দাক্ষিণাত্য যুদ্ধ, রাজস্ব সংগ্রহের সংকট, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও আঞ্চলিক শক্তির উত্থান, ইউরোপীয় শক্তির হস্তক্ষেপ—এসব বিষয়কে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করেন।

৫. সামরিক ইতিহাসচর্চা: যদুনাথ সরকার বিশেষভাবে সামরিক ইতিহাসে অবদান রেখেছেন। তিনি যুদ্ধনীতি, সেনাবাহিনীর গঠন, অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন, যা পূর্ববর্তী ইতিহাসবিদরা প্রায় উপেক্ষা করেছিলেন।

৬. ইতিহাসচর্চার আধুনিক পদ্ধতি: তাঁর লেখনীতে দেখা যায় সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি, দলিলের উদ্ধৃতি, বিশ্লেষণধর্মী ব্যাখ্যা, এবং তথ্যনির্ভর উপস্থাপনা। ফলে ভারতীয় ইতিহাসচর্চায় এক নতুন ধারা সৃষ্টি হয়।

সমালোচনা: যদিও স্যার যদুনাথ সরকারের অবদান অপরিসীম, তবুও কিছু সমালোচনা রয়েছে— অতিরিক্ত রাজনৈতিক ইতিহাসে জোর – তিনি মূলত রাজনৈতিক ও সামরিক দিককে প্রাধান্য দিয়েছেন, সামাজিক-অর্থনৈতিক ইতিহাস comparatively কম গুরুত্ব পেয়েছে; পশ্চিমা প্রভাব – তাঁর ইতিহাসচর্চায় রাঙ্কে-প্রভাবিত ইউরোপীয় ধারা প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়; ধর্মীয় নীতি বিশ্লেষণ – অনেক ইতিহাসবিদের মতে তিনি আওরঙ্গজেবকে অতিরিক্ত কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন; সীমিত দৃষ্টিভঙ্গি – গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষিজীবী শ্রেণির জীবন, সাধারণ মানুষের সামাজিক ইতিহাসে তিনি তেমন গভীরে যাননি। তবুও, এসব সীমাবদ্ধতা তাঁর অবদানকে খাটো করতে পারে না।

মূল্যায়ন: যদুনাথ সরকারের কাজ মুঘল ভারতের ইতিহাসচর্চাকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দিয়েছে। তাঁর লেখা আজও গবেষকদের কাছে অপরিহার্য। ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে তিনি ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন যে, ভারতীয়রাও ইউরোপীয়দের মতো নিরপেক্ষ ও প্রমাণনির্ভর ইতিহাস লিখতে সক্ষম।

উপসংহার: মুঘল ভারতের ইতিহাস-রচনায় স্যার যদুনাথ সরকারের অবদান সত্যিই যুগান্তকারী। তিনি ইতিহাসকে কেবল কাহিনিমূলক গদ্য থেকে সরিয়ে এনে দলিলনির্ভর, সমালোচনামূলক ও বৈজ্ঞানিক ধারায় রূপ দিয়েছিলেন। তাঁর কলমে মুঘল ভারতের ইতিহাস হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত, বিশ্লেষণধর্মী ও সমালোচনামূলক। যদিও তাঁর ইতিহাসচর্চায় কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও ভারতীয় ইতিহাসবিদ্যার জগতে তাঁর নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। মুঘল ভারতের ইতিহাস বোঝার জন্য আজও তাঁর গ্রন্থগুলি অপরিহার্য।

Unit-2: আকবর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত সাম্রাজ্য গঠন, প্রশাসন, সমাজ ও অর্থনীতি।

*****2) প্রশ্ন. মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর। (১০/৫)

ভূমিকা: মুঘল সাম্রাজ্য ভারতের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সম্রাট ঔরঙ্গজেব (১৬৫৮–১৭০৭) ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের অষ্টম সম্রাট, যিনি তার কঠোর নীতিমালা এবং ধর্মনিষ্ঠ শাসনের জন্য পরিচিত। ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল প্রায় পঞ্চাশ বছর দীর্ঘ ছিল, এবং এই সময়ে মুঘল সাম্রাজ্য তার ভূখণ্ডে সর্বাধিক বিস্তার লাভ করেছিল। তবে তার নীতি, বিশেষ করে রাজপুত সম্প্রদায়ের প্রতি তার আচরণ, সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছিল। রাজপুতরা প্রাচীনকাল থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখত। আকবরের সময় রাজপুত নীতি ছিল অত্যন্ত সহনশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। রাজপুতরা সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। ঔরঙ্গজেবের শাসনকালেও রাজপুতদের গুরুত্ব ছিল, কিন্তু তার নীতি ছিল স্বাভাবিক থেকে অনেক কঠোর এবং পরিবর্তিত।

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি: মূল বৈশিষ্ট্য: ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মূলত তিনটি দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়।

১. ধর্মনিষ্ঠ ও কঠোর নীতি: ঔরঙ্গজেব একজন অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ মুসলিম শাসক ছিলেন। তার নীতি প্রায়শই ইসলামের কঠোর বিধান অনুসারে গঠিত ছিল। রাজপুতদের মধ্যে যারা হিন্দু ধর্মের প্রতি দৃঢ় ছিলেন, তাদের উপর নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু রাজপুত পরিবার থেকে সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সীমিত করা হয়। এছাড়াও, কিছু রাজপুত শাসককে সামরিক অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়, যা তাদের নিজের রাজ্য ও ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করত।

২. রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও শাসন জোরদার করা: ঔরঙ্গজেব রাজপুতদের উপর কেন্দ্রের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করতেন। তিনি অনেক রাজপুত নাবালকদের (যাদের ক্ষমতা সীমিত ছিল) বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযান চালিয়েছিলেন। এছাড়াও, তিনি রাজপুতদের কর আরোপে কঠোরতা দেখাতেন, যা আগের সময়কার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এই ধরনের নীতি রাজপুতদের স্বাধীনতা ও সামরিক ক্ষমতা সীমিত করেছিল।

৩. শাদী ও রাজনৈতিক মিলনের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখা: যদিও ঔরঙ্গজেব কঠোর নীতি গ্রহণ করতেন, তবুও তিনি কিছু রাজপুত পরিবারের সঙ্গে বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এটি মূলত রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য ছিল, যাতে রাজপুতদের বিদ্রোহ রোধ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, তার ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কিছু রাজপুত কন্যার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল, যা সামান্য হলেও কিছু রাজপুত পরিবারের আস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি এবং তার ফলাফল:

১. সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা: ঔরঙ্গজেবের কঠোর নীতির ফলে রাজপুতরা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। অনেক রাজপুত বিদ্রোহ গঠন করেছিলেন। যেমন, মারওয়াড়ের জোদ্ধা রাজপুতরা তাকে কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এর ফলে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শান্তি ব্যাহত হয়। বিশেষ করে, রাজপুত বিদ্রোহ এবং সামরিক অভিযানের ফলে সাম্রাজ্যের অর্থনীতি দুর্বল হয়। বড় বড় যুদ্ধের জন্য রাজস্ব এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলেছিল।

২. সামরিক শক্তি ও প্রশাসনিক চাপ: রাজপুতদের উপর কঠোর শাসনের কারণে অনেক প্রথাগত মুঘল-রাজপুত মিলন ব্যাহত হয়। পূর্বের সময়ে, রাজপুতরা সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, কিন্তু ঔরঙ্গজেবের কঠোর নীতির কারণে অনেক রাজপুত পদত্যাগ বা বিদ্রোহে লিপ্ত হয়। এর ফলে সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি হ্রাস পায়। এছাড়াও, প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ রাজপুত কর্মকর্তাদের অভাব দেখা দেয়।

৩. সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি: ঔরঙ্গজেবের নীতি হিন্দু রাজপুত সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব ফেলেছিল। কঠোর কর ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা হিন্দুদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়। এভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করে। কিছু রাজ্য, যেমন রাজস্থান, সম্পূর্ণভাবে সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ থেকে দূরে চলে যায়।

৪. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব: রাজপুত নীতি সাম্রাজ্যের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। বহু রাজ্য সরকার ও সাম্রাজ্য কেন্দ্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকেও, রাজপুত রাজাদের উপর কর আরোপ এবং সামরিক অভিযান অর্থনীতি দুর্বল করে। কৃষি ও বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে, এবং রাজস্ব সংগ্রহে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ঔরঙ্গজেবের নীতি মুঘল সাম্রাজ্যকে কতটা দুর্বল করেছিল:

১. সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিভাজন: ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মূলত কেন্দ্রীয় শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এর ফলে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ঘটায়। রাজপুত বিদ্রোহ এবং বিদ্রোহী চাহিদার ফলে সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং অঞ্চলভিত্তিক শাসকরা স্বতন্ত্রভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

২. সামরিক ও অর্থনৈতিক দুর্বলতা: রাজপুতদের সঙ্গে বিরোধের কারণে সাম্রাজ্যের স্থায়ী সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হ্রাস পায়। দীর্ঘকালীন যুদ্ধ এবং বিদ্রোহ মোকাবিলায় রাজস্ব খরচ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, রাজপুতদের বিদ্রোহ সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

৩. সামাজিক উত্তেজনা ও হুমকি: ঔরঙ্গজেবের কঠোর নীতির কারণে রাজপুতদের মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অসন্তোষ সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য হুমকি তৈরি করে। এমনকি সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহ ও বিদ্যমান শক্তি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

৪. দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মুঘল সাম্রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতার একটি প্রধান কারণ ছিল। তার মৃত্যুর পর, সাম্রাজ্য দ্রুতভাবে দুর্বল হয়ে যায় এবং স্থানীয় শক্তিশালী রাজারা কেন্দ্রের সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। রাজপুত বিদ্রোহ ও ধর্মীয় সংঘাত মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের দিকে ধাবিত করে।

উপসংহার: ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি ছিল একটি দ্বিমুখী নীতি। একদিকে, এটি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল। অন্যদিকে, এটি রাজপুত সম্প্রদায়ের অসন্তোষ, সামাজিক উত্তেজনা এবং সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিভাজন সৃষ্টি করেছিল। তার নীতির ফলে মুঘল সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, যা পরবর্তী সময়ে সাম্রাজ্যের পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ঔরঙ্গজেবের শাসন ও নীতি ভারতের ইতিহাসে একটি জটিল অধ্যায়। এটি দেখায় যে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও সামাজিক ও ধর্মীয় সমন্বয় বজায় রাখাটা কতটা জরুরি। রাজপুত নীতি এই দৃষ্টিকোণ থেকে একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।

Unit-3: মুঘল ভারতের সাংস্কৃতিক ধরণ সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্য। জনসাধারণের ধর্ম, ভাষা এবং কৃষিকাজ।

*****3) প্রশ্ন. মুঘল আমলের শিল্প ও স্থাপত্য সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। (১০)

ভূমিকা: ভারতের ইতিহাসে মুঘল যুগ (১৫২৬–১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ) এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ে শুধু রাজনৈতিক শাসন নয়, শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। বিশেষত মুঘল শাসকগণ শিল্প ও স্থাপত্যের এক অনন্য রূপ গড়ে তুলেছিলেন। পারস্য, তুর্কি, মধ্য এশীয় ও ভারতীয় শিল্পধারার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই শিল্পকলা ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। মুঘল আমলের শিল্প শুধু রাজদরবারেই সীমাবদ্ধ ছিল না; সাধারণ মানুষের জীবনধারা, পোশাক, অলংকার, চিত্রকলাতেও এর প্রভাব সুস্পষ্ট।

মুঘল যুগের শিল্পকলার সাধারণ বৈশিষ্ট্য: মুঘল যুগের শিল্প ও স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য কয়েকটি দিক থেকে বোঝা যায়—

১. পারস্য প্রভাবিত ধারা – মুঘল চিত্রকলায় পারস্যীয় শৈলী গভীরভাবে লক্ষ্য করা যায়।

২. বাস্তবধর্মীতা – চিত্রকলা ও ভাস্কর্যে প্রকৃতি, জীবজন্তু, উদ্ভিদ এবং দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব চিত্রায়ণ দেখা যায়।

৩. সংমিশ্রণবাদী রীতি – ভারতীয় ঐতিহ্য ও ইসলামী নকশার মিশ্রণে নতুন রূপ সৃষ্টি হয়।

৪. সূক্ষ্ম অলঙ্করণ – ভবনের দেয়াল, গম্বুজ, মিনার, জানালায় সূক্ষ্ম কারুকাজ।

৫. সামঞ্জস্যপূর্ণতা – ভবনের নকশা ও গড়নে অনুপম সামঞ্জস্য দেখা যায়।

মুঘল যুগের চিত্রকলা: মুঘল আমলের শিল্পকলার মধ্যে চিত্রকলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

১. বাবর ও হুমায়ুন আমল: বাবর ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক। তাঁর আত্মজীবনী বাবরনামা-তে উদ্যান, ফুল, প্রাণী ইত্যাদির বর্ণনা দেখা যায়। বাবরের শাসনকালে শিল্পকলা তেমন বিকাশ লাভ করেনি। হুমায়ুন ইরানে নির্বাসিত অবস্থায় পারস্য চিত্রকলা শেখেন এবং দুইজন পারস্য শিল্পী আবদুস সামাদ ও মীর সাইয়্যদ আলীকে ভারতে নিয়ে আসেন। এর ফলে মুঘল দরবারে পারস্যীয় চিত্রকলার ভিত্তি স্থাপিত হয়।

২. আকবরের আমল: আকবর ছিলেন শিল্পপ্রেমী শাসক। তিনি "তসবি-খানা" নামক এক বিশেষ বিভাগ স্থাপন করেছিলেন যেখানে অসংখ্য শিল্পী নিযুক্ত ছিলেন। এখানে ভারতীয়, পারস্যীয় ও ইউরোপীয় শিল্পের সংমিশ্রণ ঘটে। "আকবরনামা" ও "আম-ই-নামা" গ্রন্থের অঙ্কিত চিত্রগুলো আজও বিখ্যাত। শিল্পীরা যেমন ছিলেন: দাসবন্ত, বসাওয়ান, আবদুস সামাদ, ফারুক বেগ।

৩. জাহাঙ্গীরের আমল: জাহাঙ্গীর ছিলেন প্রকৃতি-প্রেমিক ও শিল্পরসিক। তিনি বাস্তবধর্মী চিত্রকলায় উৎসাহ দিতেন। পশুপাখি, ফুল, প্রকৃতি, রাজসভা ইত্যাদি তাঁর চিত্রকলার প্রিয় বিষয়। শিল্পী মানসুর, আবুল হাসান, বিশনদাস, গোবর্ধন এই সময়ে খ্যাতি অর্জন করেন।

৪. শাহজাহানের আমল: শাহজাহানের আমলে স্থাপত্যশিল্প সর্বোচ্চ শিখরে উঠলেও চিত্রকলা তুলনামূলকভাবে কম বিকাশ লাভ করে। তবুও দরবারি জীবন, রাজোৎসব ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেক ছবি আঁকা হয়েছিল।

৫. ঔরঙ্গজেবের আমল: ঔরঙ্গজেব শিল্পকলার প্রতি তেমন উৎসাহী ছিলেন না। ফলে মুঘল চিত্রকলার অবনতি শুরু হয়। তবুও স্থানীয় রাজপুত রাজ্যগুলোতে এই ধারার বিকাশ অব্যাহত থাকে।

মুঘল যুগের স্থাপত্য: মুঘল আমলের স্থাপত্যকলা ভারতীয় ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এতে ইসলামি স্থাপত্যের সৌন্দর্য এবং ভারতীয় কারুকাজের সমন্বয় ঘটেছিল।

১. বাবর ও হুমায়ুন আমল: বাবর কিছু উদ্যান নির্মাণ করেছিলেন, যেমন – আগ্রার আরামবাগ উদ্যান। হুমায়ুন দিল্লিতে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। হুমায়ুনের সমাধি (১৫৭১ খ্রিস্টাব্দ) মুঘল স্থাপত্যের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এটি দিল্লিতে অবস্থিত এবং এতে প্রথমবার গম্বুজ, উদ্যান, চারবাগ নকশা ব্যবহৃত হয়।

২. আকবরের আমল: আকবরের শাসনামলে স্থাপত্যশিল্পে এক নতুন ধারা সূচিত হয়। আগ্রা ফোর্ট (লালকেল্লা): বিশাল প্রাচীর, প্রাসাদ, সভাকক্ষ প্রভৃতির সমষ্টি। ফতেহপুর সিক্রি: আকবরের রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠা এই শহরে জামে মসজিদ, বুলন্দ দরওয়াজা, পঞ্চমহল প্রভৃতি অসাধারণ স্থাপত্যকীর্তি রয়েছে। এখানে ভারতীয় (হিন্দু) ও ইসলামী রীতির মিশ্রণ স্পষ্ট।

৩. জাহাঙ্গীরের আমল: জাহাঙ্গীর স্থাপত্যের তুলনায় চিত্রকলায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। তবে তাঁর সময়ে কিছু সমাধি নির্মিত হয়, যেমন – ইন্তেজার উদ্যান, ইত্তিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি (যা তাজমহলের পূর্বসূরি হিসেবে ধরা হয়)।

৪. শাহজাহানের আমল: শাহজাহান ছিলেন "স্থাপত্যের রাজা"। তাঁর আমলে মুঘল স্থাপত্য সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে। তাজমহল: আগ্রায় অবস্থিত বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয় স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে এটি নির্মাণ করেন। সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত এই সমাধি ভারতীয় স্থাপত্যকলার শীর্ষস্থানীয় নিদর্শন। দিল্লির লালকেল্লা: বিশাল আয়তনের এই দুর্গে রয়েছে ময়ূর সিংহাসন, দিওয়ান-ই-আম, দিওয়ান-ই-খাস ইত্যাদি। জামা মসজিদ: দিল্লিতে অবস্থিত ভারতের বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি।

৫. ঔরঙ্গজেবের আমল: ঔরঙ্গজেব ছিলেন রক্ষণশীল শাসক। তাঁর আমলে স্থাপত্যশিল্পে জাঁকজমক কমে গিয়েছিল। তবুও তিনি কিছু মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, যেমন – লাহোর মসজিদ, বাদশাহী মসজিদ, বিডারের মসজিদ ইত্যাদি।

মুঘল যুগের ভাস্কর্য ও অলঙ্করণ শিল্প: মুঘল আমলে স্বতন্ত্র ভাস্কর্যের বিশেষ বিকাশ না হলেও স্থাপত্যের গম্বুজ, মিনার, দরজা, জানালায় ভাস্কর্যসদৃশ অলঙ্করণ দেখা যায়। পাথর কেটে নকশা করা (জালি কাজ), রঙিন পাথরের জড়োয়া কাজ (পিয়েত্রা-দুরা), টালি বসানো, ফুল-লতা-পাতার নকশা মুঘল শিল্পে বহুল ব্যবহৃত হয়। বিশেষত শাহজাহানের তাজমহলে এই অলঙ্করণশিল্প সর্বোচ্চ সৌন্দর্যে প্রকাশিত হয়েছে।

মুঘল শিল্প ও স্থাপত্যের তাৎপর্য: ভারতের শিল্প ও স্থাপত্যকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি দিয়েছিল। পারস্য ও ভারতীয় শিল্পধারার সংমিশ্রণে নতুন এক ঐতিহ্য গড়ে তোলে। স্থানীয় শিল্পীদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী কালে রাজপুত, দাক্ষিণাত্য ও আঞ্চলিক রাজ্যগুলিতেও এর প্রভাব পড়ে। আজও পর্যটন শিল্পে মুঘল স্থাপত্য বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

উপসংহার: সব মিলিয়ে বলা যায়, মুঘল আমলের শিল্প ও স্থাপত্য ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। আকবরের সময়ে চিত্রকলার বিকাশ, জাহাঙ্গীরের বাস্তবধর্মী রীতি, শাহজাহানের স্থাপত্যের শিখর এবং তাজমহলের অনন্ত সৌন্দর্য—সবই আজ ভারতের অমূল্য ঐতিহ্য। মুঘল শিল্প ও স্থাপত্য শুধু রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীকই নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য, ঐক্য এবং সৌন্দর্যের এক জীবন্ত সাক্ষ্য।

Unit-4: মারাঠা এবং শিখদের সঙ্গে মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, জায়গিরদারি ব্যবস্থায় সংকট, কৃষি সংকট, কৃষক বিদ্রোহ।

*****4) প্রশ্ন. জায়গিরদারি সংকট বলতে কী বোঝায়? অথবা, জায়গিরদারি সংকট মুঘল সাম্রাজ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলেছিল? (৫ নম্বর, ২০২৩)

ভূমিকা: মুঘল সাম্রাজ্য ভারতের ইতিহাসে এক বিশাল ও সুদৃঢ় সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত। প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত মজবুত করতে এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুঘল সম্রাটরা একটি বিশেষ জমি-বণ্টন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যাকে বলা হয় জায়গিরদারি প্রথা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থায় নানা অসংগতি, সংকট ও সমস্যার উদ্ভব ঘটে, যা পরে মুঘল প্রশাসন ও সাম্রাজ্যের জন্য মারাত্মক পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যাকেই ইতিহাসে 'জায়গিরদারি সংকট' নামে অভিহিত করা হয়।

জায়গিরদারি প্রথা কী?
'জায়গির' শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হলো—একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা জমি, যার আয় থেকে একজন ব্যক্তি তার বেতন বা জীবিকা নির্বাহ করবেন। মুঘল সাম্রাজ্যে এই প্রথা ছিল একধরনের রাজস্ব আদায়ের ও পুরস্কার প্রদানের মাধ্যম। একজন সামরিক কর্মকর্তা বা আমলাকে তার প্রশাসনিক ও সামরিক দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে এক বা একাধিক অঞ্চল প্রদান করা হতো, যার রাজস্ব আদায়ের অধিকার তিনি পেতেন।
এই জমির উপর তাঁরা সরাসরি মালিকানা পেতেন না, বরং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার ও আয় তোলার অধিকার লাভ করতেন। এর ফলে সম্রাটের ওপর সরাসরি ব্যয় না বাড়িয়ে প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামো বজায় রাখা যেত।

জায়গিরদারি সংকট বলতে কী বোঝায়?
‘জায়গিরদারি সংকট’ বলতে বোঝানো হয় সেই সময়কে, যখন মুঘল সাম্রাজ্যে জায়গিরের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে এক বিরাট অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। নতুন নবাব, সেনানায়ক, আমির, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিযুক্ত হচ্ছিলেন, কিন্তু তাঁদের জন্য উপযুক্ত জায়গির বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এই কারণে একদিকে উচ্চপদস্থ আমলারা বেতনবঞ্চিত হচ্ছিলেন, অন্যদিকে পুরনো জায়গিরদারদের জায়গির বাতিল করতে গিয়ে বিরোধ তৈরি হচ্ছিল।
এই পরিস্থিতি ক্রমাগত চাপে ফেলে মুঘল প্রশাসনকে, যার ফলে সাম্রাজ্যের ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে।

জায়গিরদারি সংকটের কারণসমূহ:
১. প্রশাসনিক বিস্তার ও কর্মকর্তা বৃদ্ধি: সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার দক্ষিণভারত পর্যন্ত পৌঁছায়। ফলে প্রশাসনের জন্য অধিক সংখ্যক আমলা ও সেনানায়ক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত নতুন জমি বা আয়তন না থাকায় তাঁদের জন্য উপযুক্ত জায়গির বরাদ্দ করা সম্ভব হয়নি।
২. জায়গিরের সীমাবদ্ধতা: সাম্রাজ্যের আয়তন যতই বড় হোক না কেন, জায়গিরযোগ্য জমির একটি সীমা ছিল। অনেক সময় উর্বর বা আয়বর্ধক অঞ্চলের অভাব দেখা দেয়। এই সমস্যায় জায়গিরদাররা কম রাজস্বসক্ষম এলাকা পেয়ে অসন্তুষ্ট হতেন।
৩. কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ: জায়গিরদাররা প্রদেশে রাজস্ব আদায় করতেন, কিন্তু সেই অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকত সুবাদার বা গভর্নরের হাতে। এই দ্বৈত কর্তৃত্বের ফলে সংঘর্ষ তৈরি হত, প্রশাসনিক দুর্বলতা তৈরি হতো।
৪. উত্তরাধিকার ও স্থানান্তর সমস্যা: জায়গির একজীবনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে অনেক সময় পরিবার বা উত্তরসূরি সেটিকে ধরে রাখতে চাইত। এতে করে নতুন কর্মকর্তাদের জায়গির বরাদ্দে সমস্যা দেখা দিত।
৫. দুর্নীতি ও লুটপাট: জায়গিরদাররা কম সময়ের জন্য জায়গির পেতেন, ফলে অধিক লাভের আশায় তাঁরা দুর্নীতির আশ্রয় নিতেন, কৃষকদের উপর চরম শোষণ করতেন। এর ফলে কৃষি উৎপাদন ও রাজস্ব সংগ্রহে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।

জায়গিরদারি সংকটের ফলাফল ও প্রভাব মুঘল সাম্রাজ্যের উপর:
১. প্রশাসনিক অকার্যকারিতা: যখন কর্মকর্তারা জায়গির পাচ্ছিলেন না, তখন তাদের মনোবল ভেঙে পড়ছিল। ফলে প্রশাসনিক কার্যকারিতা কমে যাচ্ছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।
২. সামরিক দুর্বলতা: জায়গিরপ্রাপ্তি মুঘল সামরিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। সৈন্যদের রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন এই জায়গির থেকেই আসত। কিন্তু জায়গির সংকটে সৈন্যবাহিনী রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা হয় এবং মুঘল সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩. প্রাদেশিক বিদ্রোহ ও স্বায়ত্তশাসনের লক্ষণ: যেসব আমলা বা সুবাদার জায়গির নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, তারা স্বশাসনের পথে হাঁটতে শুরু করেন। বাংলার নবাব, হায়দ্রাবাদের নিজাম, অউধের নবাব প্রভৃতি স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করতে শুরু করেন।
৪. কৃষকদের উপর চাপ ও কৃষিক্ষেত্রে পতন: দুর্নীতিপরায়ণ জায়গিরদাররা কৃষকদের উপর চরম রাজস্ব চাপিয়ে দিতেন। কৃষকরা চাষাবাদ বন্ধ করে দিতেন বা পালিয়ে যেতেন। ফলে রাজস্ব আদায় কমে যায় এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়।
৫. সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব দুর্বল হওয়া: সম্রাটের হাতে জায়গির বণ্টনের ক্ষমতা থাকলেও বাস্তবে সেই ক্ষমতা তলানিতে এসে পৌঁছায়। এতে সম্রাটের প্রতি আনুগত্য ও নিয়ন্ত্রণ ক্রমে ক্ষীণ হয়ে পড়ে। রাজ্যগুলো নিজস্ব স্বার্থে কাজ করতে থাকে।

ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ: ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র ও ইরফান হাবিবের মতে, জায়গিরদারি সংকট ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের ভিতরে গঠনতান্ত্রিক দুর্বলতার অন্যতম প্রতীক। তাঁদের মতে, এই সংকট ছিল শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি ছিল একটি গভীর সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট, যা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জায়গিরদারি সংকট এবং আওরঙ্গজেব: সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকালেই জায়গিরদারি সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে যত বেশি মনোযোগ দেন, প্রশাসনিক ভারসাম্য রক্ষা ততটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। নতুন জায়গির বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় তিনি একদিকে পুরনো জায়গির বাতিল করতে বাধ্য হন, অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ে কঠোরতা দেখাতে থাকেন, যা আরও বিদ্রোহ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

উপসংহার: সার্বিকভাবে বিচার করলে বলা যায়, জায়গিরদারি সংকট মুঘল সাম্রাজ্যের এক গভীর ও মারাত্মক দুর্বলতার প্রতিফলন। এটি শুধু একজন দুইজন কর্মকর্তার স্থানান্তরের সমস্যা ছিল না, বরং সমগ্র প্রশাসনিক কাঠামোর উপর এক স্থায়ী চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই সংকট মুঘল সাম্রাজ্যের অর্থনীতি, প্রশাসন, সামরিক ক্ষমতা ও সামাজিক ভারসাম্যের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
এই প্রথার দুর্বলতা, দুর্নীতি, অকার্যকারিতা ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ঘণ্টাধ্বনি বাজতে শুরু করে। তাই ইতিহাসের পাতায় 'জায়গিরদারি সংকট' শুধু একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়, বরং এটি এক পূর্ণাঙ্গ সাম্রাজ্যিক সংকট হিসেবে বিবেচিত হয়।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।

Kalyani University B.A 5th Semester History Major 6 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. আপনি 150 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।

অথবা আপনি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পারেন। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)

My Phone Number- 6295668424