Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 5th Semester History Major 7 Nep Suggestions 2026
Papers-7
The Rise of Modern Europe: Before and After the French Revolution
Kalyani University B.A 5th Semester History Major 7 Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. তুমি 150 টাকা পেমেন্ট কর। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবে। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক কর।
তুমি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পার। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit – 1: Society, polity and economy of eighteenth century Europe; the philosophers steering ideological changes – Montesquieu, Voltaire, Rousseau and Diderot; the idea of Revolution.
বাংলা: আঠারো শতকের ইউরোপের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি; আদর্শিক পরিবর্তনের নেতৃত্বদানকারী দার্শনিকরা – মন্টেস্কু, ভলতেয়ার, রুশো ও ডিদেরোট; বিপ্লবের ধারণা।
Unit – 2: Socio-economic background of the French Revolution (1789); impact of the American War of Independence (1776) on France; major events of the Revolution.
বাংলা: ফরাসি বিপ্লবের আর্থ-সামাজিক পটভূমি (১৭৮৯); ফ্রান্সের উপর আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধের (১৭৭৬) প্রভাব; বিপ্লবের প্রধান ঘটনাবলী।
Unit – 3: Historiography of the French Revolution; interpreting the class character – role of the aristocracy, bourgeois, peasants and workers; Reign of Terror and rise and fall of the Jacobin Republic; the Thermidorian Reaction and the Directory.
বাংলা: ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস রচনা; অভিজাত, বুর্জোয়া, কৃষক ও শ্রমিকদের শ্রেণীচরিত্রের ব্যাখ্যা; জ্যাকবিন প্রজাতন্ত্র ও সন্ত্রাসের রাজত্বের উত্থান ও পতন; থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া ও ডিরেক্টরি শাসন।
Unit – 4: The Napoleonic Era; Confederation of the Rhine and reconstruction of Germany; the Continental System and its effects; the Peninsular War and its significance; failure of Napoleon's Russian Campaign; revival of Prussia and the War of Liberation; fall of Napoleon and rise of Metternich.
বাংলা: নেপোলিয়নের যুগ; রাইন নদীর সংঘবদ্ধতা এবং জার্মানির পুনর্গঠন; মহাদেশীয় ব্যবস্থা এবং এর প্রভাব; উপদ্বীপ যুদ্ধ এবং এর তাৎপর্য; নেপোলিয়নের রাশিয়ান অভিযানের ব্যর্থতা; প্রুশিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং মুক্তিযুদ্ধ; নেপোলিয়নের পতন এবং মেটারনিকের উত্থান।
Unit-1: আঠারো শতকের ইউরোপের সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি, দার্শনিকরা ও বিপ্লবের ধারণা।
*****1) প্রশ্ন. অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্টেস্কিয়ুর ভূমিকা আলোচনা কর। [৫/১০]
ভূমিকা:
অষ্টাদশ শতক ইউরোপীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। এই সময়কে “এনলাইটেনমেন্ট” বা “আলোকায়নের যুগ” বলা হয়। যুক্তি, বিজ্ঞান, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার ধারণা তখন সমাজজীবনে প্রবলভাবে আলোড়ন তুলেছিল। পুরনো সামন্ততান্ত্রিক প্রথা, চার্চের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব, রাজাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং অর্থনৈতিক অসাম্যের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিল। এরই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় দার্শনিকরা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখান। এদের মধ্যে ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কিয়ু (Montesquieu) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর চিন্তাধারা শুধু ফরাসি বিপ্লবকেই প্রভাবিত করেনি, বরং পরবর্তী কালে ইউরোপের রাজনৈতিক কাঠামো ও আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই প্রবন্ধে আমরা অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনা করব এবং সেই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্টেস্কিয়ুর ভূমিকা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করব।
অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের সামাজিক অবস্থা
১. সামন্তব্যবস্থার অবশিষ্ট প্রভাব: যদিও অনেক দেশেই শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল, কিন্তু ইউরোপের গ্রামীণ সমাজে এখনও সামন্তব্যবস্থার শিকড় গভীর ছিল। কৃষকরা প্রভুদের অধীনে শ্রম দিত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণি অধিকাংশ সম্পদের মালিক ছিল।
২. চার্চের প্রভাব: চার্চ সমাজে ব্যাপক কর্তৃত্ব বিস্তার করেছিল। শিক্ষা, নৈতিকতা ও সংস্কৃতি প্রায় সবক্ষেত্রেই চার্চের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে অষ্টাদশ শতকে চার্চ-বিরোধী সমালোচনা তীব্র হতে থাকে।
৩. বুদ্ধিজীবী শ্রেণির উত্থান: “ফিলোসফ” নামে পরিচিত দার্শনিকগণ যুক্তি ও বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নতুন সামাজিক দর্শন গড়ে তুলছিলেন। তাঁরা স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সহনশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে সওয়াল করেন।
রাজনৈতিক অবস্থা
১. স্বৈরতন্ত্রের প্রভাব: ফ্রান্সে লুই চতুর্দশ এবং লুই পঞ্চদশের মতো রাজাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চলছিল। জনগণের কোন রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। “রাজা সর্বশক্তিমান”— এই ধারণা রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
২. রাজনৈতিক অসন্তোষ: করের বোঝা মূলত সাধারণ জনগণকে বহন করতে হত। অভিজাত ও পুরোহিত শ্রেণি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করমুক্ত ছিল। ফলে জনমনে বিরক্তি ও ক্ষোভ জন্ম নেয়।
৩. স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা: ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনগণ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি জানাতে শুরু করে।
অর্থনৈতিক অবস্থা
১. বাণিজ্যের প্রসার: শিল্প ও বাণিজ্যের বিস্তারের ফলে নতুন অর্থনৈতিক শ্রেণির উত্থান ঘটে, যাদেরকে বলা হয় বুর্জোয়া শ্রেণি। তারা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলেও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল।
২. শিল্প বিপ্লবের পূর্বলক্ষণ: ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হচ্ছিল, যা ইউরোপের অর্থনীতিকে এক নতুন দিকনির্দেশ দেয়।
৩. অসাম্য: ধনী-গরিব বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে। কৃষক ও শ্রমজীবীরা দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করলেও অভিজাত শ্রেণি বিলাসী জীবনে মগ্ন ছিল।
মন্টেস্কিয়ুর জীবন ও চিন্তাধারা
মন্টেস্কিয়ুর জন্ম ১৬৮৯ সালে ফ্রান্সের বোর্দো শহরে। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল Charles-Louis de Secondat, Baron de Montesquieu। তিনি একজন অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও সমাজের অসাম্য তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে—
১. “Persian Letters” (১৭২১): এখানে তিনি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে ফরাসি সমাজ ও রাজনীতির দুর্নীতি প্রকাশ করেন।
২. “The Spirit of the Laws” (১৭৪৮): এই গ্রন্থেই তিনি রাজনৈতিক দর্শনের মূল তত্ত্ব প্রকাশ করেন, যা তাঁকে বিশ্ববিখ্যাত করে তোলে।
মন্টেস্কিয়ুর রাজনৈতিক দর্শন
১. ক্ষমতার বিভাজন তত্ত্ব (Theory of Separation of Powers): মন্টেস্কিয়ু মনে করতেন, রাষ্ট্রে যদি সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, তবে তা নিপীড়ন ও স্বৈরতন্ত্র ডেকে আনে। তাই তিনি ক্ষমতাকে তিন ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব দেন—
• আইন প্রণয়ন ক্ষমতা (Legislative)
• কার্যনির্বাহী ক্ষমতা (Executive)
• বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা (Judiciary)
এই তিনটি ক্ষমতা যদি আলাদা প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকে, তবে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি এই তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
২. আইনের শাসন: মন্টেস্কিয়ু বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল আইনের শাসন। রাজা বা শাসক আইনের ঊর্ধ্বে নয়; সকলকেই আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
৩. স্বাধীনতার ধারণা: তিনি স্বাধীনতাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন—“যেখানে আইন অনুমতি দেয় সেখানে মানুষ যা করতে চায় তাই করতে পারে।”
৪. গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের প্রশংসা: তিনি গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রকে মানুষের স্বাধীনতার জন্য উত্তম রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করেন।
সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্টেস্কিয়ুর ভূমিকা
• মন্টেস্কিয়ুর লেখা চার্চ ও রাজকীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে সাহস জোগায়।
• সমাজে যুক্তি ও সমতার ধারণা বিস্তার লাভ করে।
• বুর্জোয়া শ্রেণি তাঁর চিন্তাধারা থেকে অনুপ্রাণিত হয়।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্টেস্কিয়ুর ভূমিকা
• ফরাসি বিপ্লবের আদর্শিক ভিত্তি গঠনে মন্টেস্কিয়ুর তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• আমেরিকার সংবিধান প্রণয়নে তাঁর ক্ষমতার বিভাজন তত্ত্ব সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল।
• আধুনিক ইউরোপীয় গণতন্ত্র গঠনের পেছনেও তাঁর চিন্তাধারা ছিল মূলভিত্তি।
অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্টেস্কিয়ুর ভূমিকা
• স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতার দাবির মধ্য দিয়ে তিনি অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন।
• বুর্জোয়া শ্রেণির রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের সংগ্রামে তাঁর চিন্তা শক্তি যোগায়।
মন্টেস্কিয়ুর প্রভাব
১. ফরাসি বিপ্লব: স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মূলমন্ত্র তাঁর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত।
২. আমেরিকান সংবিধান: ক্ষমতার বিভাজন ও চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেসের ধারণা সরাসরি তাঁর তত্ত্ব থেকে গৃহীত।
৩. আধুনিক গণতন্ত্র: ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর চিন্তাধারা গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তি।
সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি
• তিনি অভিজাত শ্রেণির বিশেষ সুবিধাকে পুরোপুরি বাতিল করতে চাননি।
• অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল সীমিত।
• যদিও তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
উপসংহার: অষ্টাদশ শতকের ইউরোপ ছিল অস্থিরতা, বৈষম্য ও স্বৈরতন্ত্রের সময়। মন্টেস্কিয়ুর রাজনৈতিক দর্শন জনগণকে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পথে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর ক্ষমতার বিভাজন তত্ত্ব আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি।
সুতরাং বলা যায়—অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মন্টেস্কিয়ুর ভূমিকা যুগান্তকারী।
Unit-2: ফরাসি বিপ্লবের পটভূমি, আমেরিকান বিপ্লবের প্রভাব ও প্রধান ঘটনাবলী।
*****2) প্রশ্ন. ফরাসি বিপ্লবে নারীরা কী ভূমিকা নিয়েছিল? [৫ (২০২১)]
ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯–১৭৯৯) ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। এটি শুধু রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পতন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এই বিপ্লবে নারীরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। নারীদের ভূমিকা কেবল সহানুভূতিশীল বা সমর্থক হিসেবে সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি ছিলেন।
১. বিপ্লবের প্রেক্ষাপট এবং নারীর অবস্থা: ১৮শ শতকের শেষ ভাগে ফ্রান্সে সমাজতন্ত্র ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। ফ্রান্সের সমাজ মূলত তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল—প্রথম স্তর ছিল ক্লেরিজি, দ্বিতীয় ছিল নোবিলিটি এবং তৃতীয় স্তর সাধারণ জনগণ। নারীদের সামাজিক মর্যাদা মূলত পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কারণে সীমিত ছিল। অধিকাংশ নারী প্রাকৃতিকভাবে পরিবারের দায়িত্ব পালন, গৃহকর্ম এবং সমাজের শিষ্টাচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তবে, অর্থনৈতিক সমস্যা, খাদ্য সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নারীরাও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার বাইরে এসে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হন।
২. নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা এবং আন্দোলন: ফরাসি বিপ্লবে নারীরা প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তারা রাজনীতির প্রতি সচেতন হন এবং সাধারণ জনগণের অধিকার ও সমতার দাবিতে এগিয়ে আসেন। বিশেষ করে প্যারিসের বাজার মহিলা আন্দোলন বা “Women’s March on Versailles” (১৭৮৯) উল্লেখযোগ্য। এ আন্দোলনে হাজার হাজার নারী ভিসাইলে আক্রমণ করে, রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে এবং রাণী ম্যারি অ্যান্টোয়ানেটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা খাদ্য সংকট, উচ্চমূল্য ও ন্যায্য বন্টনের দাবিতে সরাসরি রাজনীতির অংশ হন। নারীরা বিপ্লবী স্লোগান তৈরি ও প্রচার, সভা আয়োজন এবং বিক্ষোভ পরিচালনায় সক্রিয় ছিলেন। তারা রাজনৈতিক ক্লাব ও সভায় অংশগ্রহণ করে নতুন আইনি সংস্কার, ভোটাধিকার এবং নারী শিক্ষার প্রসারে দাবি জানাতেন।
৩. নারীর সাংস্কৃতিক ও চিন্তাশীল ভূমিকা: ফরাসি বিপ্লবে নারী শুধু আন্দোলনকারী হিসেবেই নয়, চিন্তাশীল ও লেখিকা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। উদাহরণস্বরূপ, অলাম্প দে গুজ (Olympe de Gouges) লিখেছিলেন “Declaration of the Rights of Woman and of the Female Citizen” (১৭৯১), যা নারী অধিকার ও সমতার প্রতি আহ্বান জানায়। তিনি নারীর ভোটাধিকার, শিক্ষা এবং আইনগত সমতার জন্য সক্রিয়ভাবে লড়েছেন। তার লেখার মাধ্যমে বিপ্লবী সমাজে নারীর অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
৪. নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবদান: নারীরা বিপ্লবের সময় বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা খাদ্য সংগ্রহ, বিক্ষোভ এবং কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজের মাধ্যমে বিপ্লবী কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়েছেন। খাদ্য আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়ে এবং বাজারে সামগ্রী সংগ্রহের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়ান। সামাজিক ক্ষেত্রে, নারীরা শিশু ও অসহায় মানুষের দেখভাল, শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে স্থায়ী পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়া, বিপ্লবী পত্রিকা ও সাহিত্য প্রকাশনার মাধ্যমে নারীরা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন।
৫. নারীর বিপ্লবী সংগঠন ও ক্লাব: ফরাসি বিপ্লবের সময় নারী বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্লাব ও সংস্থা তৈরি করেছিলেন। যেমন: Société des Républicaines Révolutionnaires – এখানে নারী রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতেন এবং সমাজে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতেন। Fraternal Revolutionary Societies – এই সংগঠন নারীর শিক্ষা, শ্রম ও রাজনৈতিক অধিকার প্রসারের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এই ক্লাবগুলো নারীদের একটি সক্রিয় রাজনৈতিক পরিচয় দেয় এবং তাদের আওয়ামী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়।
৬. নারীর সীমাবদ্ধতা এবং প্রতিবন্ধকতা: যদিও নারীরা বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাদের অংশগ্রহণ সবসময় সমানভাবে স্বীকৃত হয়নি। নারীদের রাজনৈতিক অধিকার ও ভোটাধিকার মূলত সীমিত ছিল। বিপ্লবের পরেও নারী সমতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, এবং অনেক নারীকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, অলাম্প দে গুজকে ১৭৯৩ সালে ফরাসি রেভল্যুশনারি ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এটি দেখায় যে, বিপ্লবে নারীর অংশগ্রহণ স্বীকৃত হলেও তা এখনও পুরুষ প্রাধান্যশীল সমাজের সীমার মধ্যে সীমিত ছিল।
৭. নারীর লিগ্যাসি ও প্রভাব: ফরাসি বিপ্লবে নারীর সক্রিয় ভূমিকা ভবিষ্যতের নারী আন্দোলনের জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করেছিল। নারীদের ঐ আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক অবদান প্রমাণ করে যে তারা কেবল ঘরের সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের আন্দোলন, ক্লাব এবং লেখনী পরবর্তীতে ইউরোপ এবং বিশ্বের নারীর অধিকার আন্দোলনের জন্য প্রেরণা হয়ে ওঠে। নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক দায়িত্ব এবং সাংস্কৃতিক চিন্তাশীলতা মিলিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। ফরাসি বিপ্লবে নারীর কর্মকাণ্ড ও নেতৃত্ব ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, নারী শিক্ষার প্রসার এবং সমাজে নারী ক্ষমতায়নের পথ তৈরি করেছে।
উপসংহার: ফরাসি বিপ্লবে নারীরা শুধু সহানুভূতিশীল সমর্থক ছিলেন না; তারা বিপ্লবের চেতনা, কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক দিকের সক্রিয় অংশীদার ছিলেন। রাজপ্রাসাদে প্রতিবাদ, রাজনৈতিক ক্লাবের নেতৃত্ব, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং নারী অধিকার প্রচারের মাধ্যমে তারা ফরাসি বিপ্লবকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছেন। যদিও বিপ্লবের পর নারীদের অধিকার সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃত হয়নি, তবুও এই সময়ের নারীদের সংগ্রাম, নেতৃত্ব ও উদ্যোগ ভবিষ্যতের নারী আন্দোলনের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। ফরাসি বিপ্লবের নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, সমাজের প্রতিটি স্তরে সমতা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নারীও সমানভাবে সক্ষম এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এইভাবে, ফরাসি বিপ্লবে নারীদের অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
Unit-3: ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসরচনা, শ্রেণীভিত্তিক বিশ্লেষণ ও জ্যাকবিন শাসনের উত্থান-পতন।
*****3) প্রশ্ন. ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা কর। অথবা, ফ্রান্সে ‘অভিজাত বিদ্রোহ’-এর গুরুত্ব আলোচনা কর। (৫) (২০২৩)
ভূমিকা: ১৭শ শতকের ফ্রান্সে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ক্রমবর্ধমান অস্থির। লুই চতুর্দশের শাসনকালে রাজ্য বিপুল ঋণে ডুবে ছিল। অভিজাত শ্রেণি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছিল। এই সময়ে 'অভিজাত বিদ্রোহ' বা Fronde des Nobles ফ্রান্সের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মূলত অভিজাতদের এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়। এই বিদ্রোহের পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নানা কারণ কাজ করেছিল।
অভিজাত বিদ্রোহের কারণ:
১. রাজনৈতিক কারণে: লুই চতুর্দশের শাসনব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত। রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা মন্ত্রিসভার হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় অভিজাতরা নিজেদের প্রভাব হারাতে শুরু করে। অভিজাতরা, যারা প্রথাগতভাবে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিল, তারা মনে করেছিল যে রাজা তাদের স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা সীমিত করছে। কেন্দ্রীভূত রাজনীতি এবং রাজকীয় নীতি তাঁদেরকে রাজপরিবারের নীতি অনুযায়ী চলতে বাধ্য করছিল, যা তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
২. অর্থনৈতিক কারণে: ফ্রান্স তখন একটি গুরুতর আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিল। লুই চতুর্দশের দীর্ঘকালীন যুদ্ধ, বিশেষ করে ত্রিশ বছরের যুদ্ধ, এবং রাজকীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে অতিরিক্ত ব্যয় দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলেছিল। রাজকীয় কর সংগ্রহ ব্যবস্থার ফলে অভিজাতরা কর দিতে বাধ্য হচ্ছিল, যা তাদের আর্থিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছিল। অর্থনৈতিক চাপ এবং করের বোঝা বিদ্রোহের প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৩. সামাজিক কারণে: ফ্রান্সের সমাজে তখন একটি কঠোর শ্রেণিবিন্যাস বিদ্যমান। অভিজাতরা তাদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় এবং রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু রাজা এবং কেন্দ্রীভূত প্রশাসন তাদের প্রথাগত সামাজিক অবস্থান ও প্রভাব হ্রাস করছিল। সাধারণ জনগণ এবং নিম্ন শ্রেণির মানুষের প্রতি কর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিজাতরা তাদের ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং রাজ্যের নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিদ্রোহের পথে অগ্রসর হয়।
৪. রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং কোর্টের প্রতিক্রিয়া: লুই চতুর্দশের রাজপ্রাসাদ, বিশেষত ভারসাই, অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করার একটি কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। অভিজাতরা রাজকীয় নীতি এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্রমাগত অসম্মান ও অবমূল্যায়ন অনুভব করছিল। ফলে অভিজাতদের মধ্যে রাজনৈতিক অসন্তোষ এবং বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি হয়।
৫. রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাত: অনেক অভিজাত নীতি এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য বিদ্রোহে অংশ নেয়। তাঁরা রাজনৈতিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নিজস্ব প্রভাব এবং সম্পদ রক্ষা করতে চাইছিল। এই ব্যক্তিগত স্বার্থের লড়াই অভিজাত বিদ্রোহকে ত্বরান্বিত করেছিল।
অভিজাত বিদ্রোহের ঘটনা:
অভিজাত বিদ্রোহ মূলত দুই পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায় ছিল ১৬৪৮ থেকে ১৬৫৩ পর্যন্ত। এই সময়ে অভিজাতরা রাজা এবং কোর্টের নীতি বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। অনেক শহরে অভিজাতরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কিছু সময়ের জন্য রাজা নিজের ক্ষমতা সীমিত অনুভব করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, অভিজাতরা নিজেরা বিতর্ক ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়। এই কারণে বিদ্রোহ পুরোপুরি সফল হয়নি, কিন্তু এটি ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে থাকে।
অভিজাত বিদ্রোহের গুরুত্ব:
১. রাজনৈতিক গুরুত্ব: অভিজাত বিদ্রোহ ফ্রান্সে কেন্দ্রীভূত রাজনীতির উপর অভিজাতদের প্রতিক্রিয়ার প্রতীক। এটি দেখিয়েছে যে উচ্চপদস্থ অভিজাতরা রাজপরিবারের নীতি এবং কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। যদিও বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে সফল হয়নি, এটি ভবিষ্যতের রাজনীতি এবং রাজকীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে।
২. সামাজিক গুরুত্ব: বিদ্রোহ সাধারণ জনগণকে রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত করিয়েছে এবং সমাজে ক্ষমতার বিতরণ ও অসাম্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। অভিজাত বিদ্রোহ ফ্রান্সের সামাজিক কাঠামোতে অসন্তোষের প্রকাশ এবং ক্ষমতার বৈষম্যের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়।
৩. অর্থনৈতিক গুরুত্ব: অভিজাত বিদ্রোহের মাধ্যমে দেখা যায় যে, দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং করের বোঝা অভিজাতদের মধ্যে প্রতিরোধের উদ্রেক করতে পারে। এটি রাজা এবং প্রশাসনকে আর্থিক নীতি পুনর্বিবেচনার দিকে প্ররোচিত করেছিল। অর্থনৈতিক চাপের কারণে বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়া প্রমাণ করে যে অর্থনীতি ও রাজনীতি অবিচ্ছেদ্যভাবে সংযুক্ত।
৪. রাজকীয় নীতি ও প্রশাসনে প্রভাব: বিদ্রোহের ফলে লুই চতুর্দশ বুঝতে পারেন যে শুধুমাত্র কেন্দ্রীভূত শাসন ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট নয়। রাজা এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন যে অভিজাতদের প্রভাব এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে রাজকীয় নীতিতে প্রভাব ফেলে।
৫. ঐতিহাসিক ও শিক্ষাগত গুরুত্ব: অভিজাত বিদ্রোহ ফ্রান্সের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এটি দেখায় কিভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণ মিলিত হয়ে একটি বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের সম্পর্ক বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
অর্থনৈতিক সংকট এবং অভিজাত বিদ্রোহ:
অর্থনৈতিক সংকট ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহের পেছনের মূল চালিকা শক্তি ছিল। দীর্ঘকালীন যুদ্ধ, রাজকীয় ব্যয় বৃদ্ধি এবং করের বোঝা দেশের আর্থিক অবস্থা তলানিতে পৌঁছায়। অভিজাতরা নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে এবং রাজ্যের নীতির ওপর প্রভাব রাখতে বিদ্রোহে অংশ নেয়। অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে সামাজিক অসাম্য মিলিত হয়ে বিদ্রোহকে আরও তীব্র করে। এটি প্রমাণ করে যে অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী এবং এক অপরের প্রভাবশালী।
উপসংহার:
ফ্রান্সে অভিজাত বিদ্রোহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি শুধুমাত্র অভিজাতদের ক্ষমতা এবং প্রভাব রক্ষার লড়াই নয়, বরং ফ্রান্সের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি সংকটপূর্ণ পর্যায়ের প্রতিফলন। অভিজাত বিদ্রোহের মাধ্যমে দেখা যায় যে কেন্দ্রীভূত রাজনীতি, আর্থিক চাপ এবং সামাজিক বৈষম্য মিলিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে। যদিও বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হয়নি, তবুও এটি ফ্রান্সের রাজনীতি ও সমাজে একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে আছে। এই বিদ্রোহের মাধ্যমে ফ্রান্সের রাজা ও প্রশাসন বুঝতে পারে যে, অভিজাতদের প্রভাব এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাই অভিজাত বিদ্রোহ শুধু একটি রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটি ফ্রান্সের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
Unit-4: নেপোলিয়নের যুগ, ইউরোপীয় যুদ্ধ, রাশিয়ান অভিযানের ব্যর্থতা ও মেটারনিকের উত্থান।
*****4) প্রশ্ন. উপদ্বীপের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। (৫) (২০২২)
উত্তর: উপদ্বীপের যুদ্ধ (The Peninsular War) হলো ১৮০৭ থেকে ১৮১৪ সালের মধ্যে স্পেন ও পর্তুগালসহ বিভিন্ন উপদ্বীপীয় অঞ্চলে সংঘটিত একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। এটি মূলত নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন ফরাসি সাম্রাজ্য এবং স্পেন, পর্তুগাল ও ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়। যুদ্ধটি শুধু একটি সামরিক সংঘাত ছিল না, বরং এর পেছনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কারণও কাজ করেছিল। এই যুদ্ধে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তিত হয় এবং এটি নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে গুরুত্ব রাখে।
উপদ্বীপের যুদ্ধের কারণ:
উপদ্বীপের যুদ্ধের মূল কারণগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় – রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক।
১. নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা:
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮০৪ সালে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউরোপজুড়ে তার প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলেন। সে ইউরোপীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। পর্তুগাল ও স্পেনকে ফরাসি প্রভাবের আওতায় আনার লক্ষ্য ছিল নেপোলিয়নের মূল উদ্দেশ্য। নেপোলিয়ন পর্তুগালকে নেপোলিয়নের ব্লকেডের আওতায় আনার চেষ্টা করেছিল, যাতে ব্রিটেনের সঙ্গে কোন বাণিজ্য না হয়।
২. পর্তুগাল ও স্পেনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্বলতা:
স্পেন ও পর্তুগাল তখন রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার ছিল। স্পেনে সরকার এবং রাজা জনগণের ওপর নির্ভরতা হারাচ্ছিল। রাজা চার্লস চতুর্থের দুর্বল নেতৃত্ব এবং পর্তুগালে রাজা জোয়াউ জুএঁয়ের নীতি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। এই দুর্বলতাকে নেপোলিয়ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন।
৩. অর্থনৈতিক কারণ:
ব্রিটেনকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য নেপোলিয়ন ‘কন্টিনেন্টাল ব্লকেড’ চালু করেছিল। এতে মূল লক্ষ্য ছিল ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতে ব্রিটিশ পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করা। পর্তুগাল এই ব্লকেডের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছিল, তাই নেপোলিয়ন পর্তুগাল দমন করতে চেয়েছিলেন। অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে ফরাসি সাম্রাজ্য পর্তুগালে আক্রমণ চালায়।
৪. জাতীয়তাবাদ এবং স্থানীয় প্রতিরোধ:
স্পেনীয় জনগণ ফরাসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে। নেপোলিয়নের ভাই জোসেফ বোনাপার্টকে স্পেনের সিংহাসনে বসানোর প্রচেষ্টা স্পেনীয় জাতীয়তাবাদকে উদ্দীপিত করে। স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন বেসামরিক ও সামরিক বাহিনী মিলিত হয়ে ফরাসি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে gerilla (গেরিলা) যুদ্ধ শুরু করে।
উপদ্বীপের যুদ্ধের প্রধান ঘটনা ও অগ্রগতি:
উপদ্বীপের যুদ্ধ শুরু হয় ১৮০৭ সালে। প্রথম দিকে ফরাসি বাহিনী পর্তুগাল আক্রমণ করে এবং রাজা জোয়াউ জুএঁকে হটিয়ে ব্রিটিশদের পিছু হঠানোর চেষ্টা চালায়। স্পেনে ১৮০৮ সালে মাদ্রিদে ফরাসি সামরিক বাহিনী প্রবেশ করে এবং জনসাধারণের উপর দমনমূলক হস্তক্ষেপ চালায়। তবে স্পেনীয় জনগণের প্রতিরোধের ফলে ফরাসি সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয়। গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে স্পেনীয় জনগণ ফরাসি বাহিনীর চলাচল কঠিন করে তোলে। ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী ১৮০৮ সালে স্পেনে প্রবেশ করে এবং স্পেনীয় প্রতিরোধীদের সাথে মিলিত হয়ে ফরাসিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। বিখ্যাত লিডারদের মধ্যে আর্থার ওয়েলস্লি (ডিউক অফ ওয়েলিংটন) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ যেমন বুয়েনোস এয়ারেসের যুদ্ধ, সালমানকা, বিজায়া, এবং ভিটোরিয়ার যুদ্ধ ফরাসি সেনাদের পরাজিত করে।
উপদ্বীপের যুদ্ধের ফলাফল:
১. ফরাসি সাম্রাজ্য দুর্বল হয়েছে:
যুদ্ধের কারণে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফরাসি বাহিনী বড় পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইউরোপীয় রাজ্যগুলোতে তার প্রভাব কমে যায়।
২. স্পেনীয় জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হয়েছে:
উপদ্বীপের যুদ্ধ স্পেনীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ এবং স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করে। স্থানীয় জনগণ গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ফরাসিদের বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করে। এটি পরবর্তী সময়ে স্পেনীয় সমাজে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আনে।
৩. ব্রিটিশ সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে:
ব্রিটেনের জন্য উপদ্বীপের যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় ছিল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী স্পেন ও পর্তুগালে ফরাসি প্রভাব কমাতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে ব্রিটেন ইউরোপে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।
৪. ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন:
উপদ্বীপের যুদ্ধের পর ইউরোপের মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। ফরাসি সাম্রাজ্য তাদের প্রচলিত রাজ্য ও প্রভাবশালী অঞ্চল হারায়। স্পেন ও পর্তুগালের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. গেরিলা যুদ্ধের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়:
উপদ্বীপের যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গেরিলা যুদ্ধের কার্যকারিতা। এটি দেখিয়েছে যে ছোট, সংগঠিত স্থানীয় বাহিনীও বড় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
৬. আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব:
যুদ্ধের ফলে স্পেন ও পর্তুগালের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বহু নগর ধ্বংস হয় এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে ওঠে। তবে দীর্ঘমেয়াদে, যুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব হয়।
উপসংহার:
উপদ্বীপের যুদ্ধ শুধু নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি সামরিক সংঘাত নয়, এটি একটি জাতীয় প্রতিরোধ এবং স্বাধীনতার আন্দোলনের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। যুদ্ধের মূল কারণ ছিল নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার, অর্থনৈতিক স্বার্থ, এবং পর্তুগাল ও স্পেনের রাজনৈতিক দুর্বলতা। তবে স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধ, গেরিলা যুদ্ধ এবং ব্রিটিশ সামরিক হস্তক্ষেপ ফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করে। ফলস্বরূপ, স্পেন ও পর্তুগালের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, ফরাসি সাম্রাজ্য দুর্বল হয় এবং ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন আসে। উপদ্বীপের যুদ্ধ ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দেখিয়েছে যে, সামরিক শক্তির তুলনায় স্থানীয় প্রতিরোধ, জাতীয়তাবাদ এবং কূটনৈতিক সহযোগিতা অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এই যুদ্ধের প্রভাব স্পেনীয় জাতীয়তাবাদকে দৃঢ় করে এবং ইউরোপীয় ইতিহাসে নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করে।