Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 5th Semester Political Major 6 Nep Suggestions 2026
Papers-6
Western Political Thought: (Ancient and Medieval)
Kalyani University B.A 5th Semester Political Science Major Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. তুমি 150 টাকা পেমেন্ট কর। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবে। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক কর।
তুমি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পার। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 28 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
Western Political Thought: (Ancient and Medieval)
(সিলেবাস – ২০২৫)
সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।
Unit-1: পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তা।
*****1) প্রশ্ন. গ্রিসে রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভবের কারণগুলি সংক্ষেপে বিবৃত কর। [৫/১০]
ভূমিকা:
মানব সভ্যতার ইতিহাসে গ্রিস (Greece) বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী। প্রাচীন গ্রিস শুধু সাহিত্য, দর্শন ও কলাবিদ্যার জন্যই খ্যাত নয়, বরং রাষ্ট্রবিজ্ঞান তথা রাজনৈতিক দর্শনেরও অন্যতম প্রধান উৎসস্থল। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অনেক ভিত্তি গড়ে ওঠে প্রাচীন গ্রিসের চিন্তাবিদদের হাত ধরে। সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ দার্শনিকরা রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়ে যেভাবে ভাবনাচিন্তা করেছেন, তা আজও আধুনিক রাজনৈতিক বিজ্ঞানের ভিত্তি হয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে—কেন এবং কীভাবে গ্রিসে রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব ঘটল? এর পেছনে একাধিক সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক কারণ কাজ করেছে।
রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভবের প্রধান কারণসমূহ:
১. ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: গ্রিস ছিল পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা ও সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত একটি দেশ। এই ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে গ্রিসে এককেন্দ্রিক বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে ওঠেনি; বরং ছোট ছোট নগররাষ্ট্র বা সিটি-স্টেট (Polis) তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি নগররাষ্ট্রের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এই রাজনৈতিক বৈচিত্র্য মানুষকে শাসনব্যবস্থার ভিন্নতা সম্পর্কে ভাবতে শিখিয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রচিন্তার স্বাভাবিক উন্মেষ ঘটে।
২. নগররাষ্ট্র (Polis)-এর বিকাশ: গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলি যেমন—এথেন্স, স্পার্টা, করিন্থ, থিবস ইত্যাদি ছিল স্বাধীন এবং আত্মনির্ভরশীল। প্রতিটি রাষ্ট্রে ভিন্ন ধরনের শাসনব্যবস্থা চালু ছিল—কোথাও গণতন্ত্র, কোথাও অভিজাততন্ত্র, কোথাও রাজতন্ত্র। এই ভিন্নতার ফলে মানুষ প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়েছিল এবং শাসনের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা শুরু করেছিল। রাষ্ট্রকে কীভাবে সংগঠিত করা যায়, শাসক কেমন হওয়া উচিত, নাগরিকদের অধিকার কী—এসব প্রশ্নই রাষ্ট্রচিন্তার জন্ম দেয়।
৩. গণতন্ত্রের বিকাশ: বিশেষত এথেন্স নগররাষ্ট্রে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। জনগণ আইন প্রণয়ন, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থায় সরাসরি অংশগ্রহণ করত। নাগরিকদের সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ তাদের মধ্যে চিন্তাশীল মনন গড়ে তোলে। তারা রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক, তর্ক ও মতবিনিময়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, যা রাজনৈতিক দর্শনের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৪. অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও বাণিজ্যের প্রসার: গ্রিসের ভূগোল ছিল সমুদ্রনির্ভর। এর ফলে গ্রিকরা বাণিজ্য ও নৌপরিবহণে দক্ষ হয়ে ওঠে। বিদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, নতুন নতুন চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সাথে তারা পরিচিত হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মানুষকে অবসরের সুযোগ দেয়, যা দর্শন ও রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশে সহায়ক হয়।
৫. দাসপ্রথার প্রচলন: গ্রিসে শ্রমমূলক কাজের বড় অংশ দাসদের দ্বারা সম্পন্ন হতো। ফলে নাগরিক শ্রেণি অবসর সময় পেত এবং তারা চিন্তা, বিতর্ক, দর্শনচর্চা ও রাজনৈতিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করত। যদি দাসপ্রথা না থাকত, তাহলে হয়তো নাগরিকরা বেঁচে থাকার লড়াইয়েই ব্যস্ত থাকত, আর রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ঘটত না।
৬. সাংস্কৃতিক জাগরণ ও দর্শনচর্চা: গ্রিসকে বলা হয় পাশ্চাত্য দর্শনের জন্মস্থান। এখানে সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ দার্শনিকরা রাষ্ট্র ও নৈতিকতা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করেছেন। নিচে উদাহরণ:
• সক্রেটিস প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির মাধ্যমে ন্যায়, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।
• প্লেটো তাঁর ‘The Republic’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছেন।
• এরিস্টটল রাষ্ট্রকে একটি প্রাকৃতিক সংগঠন হিসেবে দেখেছেন এবং সংবিধান, শাসনব্যবস্থা, নাগরিকের ভূমিকা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করেছেন।
৭. ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি: গ্রিসে মানুষ ধীরে ধীরে পৌরাণিক বিশ্বাস ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তি ও বাস্তবতার উপর নির্ভর করতে শুরু করে। এর ফলে রাজনৈতিক সমস্যাগুলিকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে যুক্তিনির্ভরভাবে দেখা সম্ভব হয়।
৮. যুদ্ধ ও সামরিক সংঘর্ষ: গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলির মধ্যে প্রায়শই যুদ্ধ-বিগ্রহ হত। যেমন—এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধ। এসব যুদ্ধ শাসনব্যবস্থা ও নেতৃত্ব নিয়ে নতুন প্রশ্ন তোলে। ফলে রাষ্ট্রচিন্তা আরও বিকশিত হয়।
৯. সাহিত্য, নাটক ও ইতিহাসচর্চা: হোমার, হেরোডোটাস, থুসিডিডিস প্রমুখ সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদরা সমাজ-রাষ্ট্র সম্পর্কিত বাস্তব বিশ্লেষণ করেন। নাট্যকারদের রচনাতেও ন্যায়, রাজনীতি, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের গতানুগতিক ভাবনা বদলে দেয়।
১০. নাগরিকত্বের ধারণা: গ্রিসে নাগরিকত্ব ছিল অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। নাগরিক রাষ্ট্রের অধিকার ও দায়িত্বের অংশীদার—এই ধারণা রাজনৈতিক চিন্তাকে সুসংহত করেছে।
সমালোচনামূলক আলোচনা: নগররাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তবে দাসপ্রথা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য ছিল। তাই রাষ্ট্রচিন্তার জন্ম হয়েছিল জটিল সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায়।
উপসংহার: ভৌগোলিক অবস্থা, নগররাষ্ট্রের গঠন, বাণিজ্যের প্রসার, দার্শনিকদের চিন্তাধারা, যুদ্ধ, সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং গণতন্ত্র—সব মিলেই গ্রিসে রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব ঘটায়। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল শিকড় এখানেই নিহিত।
Unit – 2: প্লেটোর দর্শন ও রাজনীতি।
*****2) প্রশ্ন. প্লেটোর সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ সম্পর্কিত ধারণা ব্যাখ্যা কর। [৫/১০]
ভূমিকা: প্লেটো (Plato) প্রাচীন গ্রিসের একজন মহান দার্শনিক, যিনি তার দর্শন ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার মাধ্যমে পশ্চিমা দার্শনিক চিন্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছেন। প্লেটোর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে 'সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ' বা 'Totalitarianism' সম্পর্কিত ধারণা। যদিও আধুনিক সময়ে 'সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ' শব্দটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, প্লেটোর ক্ষেত্রে এটি মূলত একটি আদর্শিক রাষ্ট্রের কাঠামো এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। তিনি তার প্রখ্যাত রচনায়, বিশেষত ‘রিপাব্লিক’ (The Republic)-এ এই ধারণাটি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।
প্লেটোর সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ মূলত একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো যেখানে রাষ্ট্র সমাজের সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ করে এবং নাগরিকদের জীবন নির্দিষ্ট নিয়ম ও নৈতিক আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তার মতে, একটি আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনটি প্রধান স্তরের বিভাজন প্রয়োজন। প্রথম স্তরটি হলো শাসকগণ বা রাজনীতিবিদরা, যারা মূখ্যভাবে জ্ঞানী ও নৈতিকভাবে উৎকৃষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দ্বিতীয় স্তর হলো যোদ্ধা বা রক্ষকরা, যারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইন রক্ষা নিশ্চিত করে। তৃতীয় স্তর হলো চাষী, কারিগর ও সাধারণ নাগরিকরা, যারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
প্লেটোর ধারণায়, এই শ্রেণীবিন্যাস রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করে। রাজকর্তারা, যাদেরকে তিনি 'দার্শনিক-শাসক' (Philosopher-Kings) হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাদের উচ্চ জ্ঞান ও নৈতিক মানের কারণে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা উচিত। এটি রাষ্ট্রকে একটি সর্বনিয়ন্ত্রিত কাঠামো প্রদান করে, যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা আবেগ রাষ্ট্রের মঙ্গলের চেয়ে প্রাধান্য পায় না।
১. দার্শনিক শাসক ও সর্বনিয়ন্ত্রণের যুক্তি: প্লেটোর মতে, সাধারণ মানুষ তাদের আবেগ, আগ্রহ বা ব্যক্তিগত লোভের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই তারা কখনও কখনও ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এজন্য রাষ্ট্রের শাসন দার্শনিক শাসকদের হাতে দেওয়া উচিত, যারা জ্ঞান ও নৈতিকতার মাধ্যমে দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। এই দার্শনিক শাসকগণ মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন শিক্ষা, ধর্ম, সামাজিক আচরণ ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া মূলত সমাজকে 'ন্যায়পরায়ণ' ও 'শৃঙ্খলাবদ্ধ' রাখার উদ্দেশ্য বহন করে।
প্লেটোর মতে, দার্শনিক শাসকগণ কেবল আইন প্রণয়নেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না; তারা নাগরিকদের মানসিক ও নৈতিক উন্নয়নেও মনোযোগ দেবেন। এজন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। শিশুদের শিক্ষার মাধ্যমে তারা শাসকগণের নৈতিক আদর্শ এবং রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এটি একটি প্রকারের মানসিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, যা আধুনিক যুগে 'সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ' এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
২. শ্রেণীভিত্তিক সমাজ ও নিয়ন্ত্রণ: প্লেটোর রাষ্ট্রে নাগরিকরা তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। এই শ্রেণীবিন্যাস কেবল সামাজিক সমতা রক্ষার জন্য নয়, বরং প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতা ও দক্ষতার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। প্রতিটি শ্রেণির কাজের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকার ফলে রাষ্ট্রে অকার্যকর বা অপ্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহার কমে।
● শাসকগণ: নৈতিক ও বৌদ্ধিক মান সম্পন্ন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
● রক্ষকগণ: সাহসী ও দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আইন রক্ষা নিশ্চিত করে।
● শ্রেণীসাধারণ: কৃষক, কারিগর ও ব্যবসায়ী, যারা রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এভাবে প্রতিটি শ্রেণির কর্ম সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন ও কাজের উপর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে। এটি প্লেটোর সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৩. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বনাম রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ: প্লেটোর সর্বনিয়ন্ত্রণবাদে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি মনে করতেন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যদি সীমাহীনভাবে থাকে, তবে তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও ন্যায়পরায়ণতা বিঘ্নিত করতে পারে। এজন্য তিনি নাগরিকদের জীবন, শিক্ষা, পেশা, এমনকি ব্যক্তিগত আচরণ পর্যন্ত রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের অধীনে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও এটি কিছু মানুষের দৃষ্টিতে কঠোর মনে হতে পারে, প্লেটো বিশ্বাস করতেন যে এর মাধ্যমে সমাজের সর্বোচ্চ মঙ্গল নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্লেটোর মতে, মানব জীবনের আসল লক্ষ্য হলো ন্যায়পরায়ণতা অর্জন। তাই ব্যক্তি যদি স্বাধীনভাবে তার স্বার্থ অনুসরণ করে, তবে রাষ্ট্রের ন্যায় ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়। সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ এই সমস্যার সমাধান হিসেবে উদ্ভাবিত হয়েছে।
৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব: প্লেটো রাষ্ট্রের শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেছেন। শিশুদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশের জন্য রাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম এবং প্রোগ্রাম নির্ধারণ করতে হবে। এটি নাগরিকদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা, সততা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি করে।
এছাড়াও, শিল্প ও সংস্কৃতি, যেমন নাটক, সঙ্গীত ও সাহিত্য, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাগরিকরা আবেগ ও মানসিকতার মধ্যে সঠিক দিকনির্দেশনা পান। এটি আধুনিক দিক থেকে বলা যায় একটি মানসিক ও সাংস্কৃতিক সর্বনিয়ন্ত্রণের অংশ।
৫. সমালোচনা ও আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা: যদিও প্লেটোর সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ মূলত একটি আদর্শিক রাষ্ট্রের জন্য প্রস্তাবিত, আধুনিক সমাজে এটি সমালোচনার বিষয়। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা এবং নাগরিক জীবনের প্রতি রাষ্ট্রের বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ আজকের গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে, আধুনিক সময়েও কিছু দিক থেকে এই ধারণার প্রাসঙ্গিকতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণ এবং শিক্ষানীতি সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্লেটোর ধারণা আমাদের শেখায় যে, একটি সমাজের স্থিতিশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং উন্নয়নের জন্য নিয়মিত কাঠামো ও নীতি প্রয়োজন। যদিও এটি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণে পরিণত হলে গণতন্ত্রের স্বতন্ত্র ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে, তবে আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সমাজের জন্য একটি দিকনির্দেশনা সরবরাহ করে।
উপসংহার: প্লেটোর সর্বনিয়ন্ত্রণবাদ মূলত একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন, যা রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ন্যায়, স্থিতিশীলতা এবং সর্বোচ্চ মঙ্গল নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। দার্শনিক শাসক, শ্রেণীভিত্তিক সমাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ— সব মিলিয়ে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের রূপায়ণ সম্ভব। যদিও আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কঠোর এবং কিছুটা সীমাবদ্ধ মনে হতে পারে, প্লেটোর দর্শন আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামো, ন্যায়পরায়ণতা এবং মানুষের নৈতিক বিকাশের গুরুত্ব বোঝায়।
Unit – 3: অ্যারিস্টোটল।
*****3) প্রশ্ন. অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্ব সমালোচনাসহ মূল্যায়ন করো। [১০ নম্বর ]
ভূমিকা: প্রাচীন গ্রিসের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের মধ্যে অ্যারিস্টটল অন্যতম। তিনি ছিলেন প্লেটোর শিষ্য এবং আলেকজান্ডারের শিক্ষক। রাজনীতি, নৈতিকতা, যুক্তিবিদ্যা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা—প্রায় প্রতিটি জ্ঞানক্ষেত্রেই তাঁর অবদান অমূল্য। বিশেষত রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাজনৈতিক চিন্তাধারায় তাঁর প্রভাব গভীর। এজন্য তাঁকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। অ্যারিস্টটল তাঁর অমর গ্রন্থ "Politics"-এ রাষ্ট্র, সমাজ, নাগরিকত্ব, সংবিধান, সরকারপ্রণালী ইত্যাদি বিষয়ে সুসংগঠিত আলোচনা করেছেন। প্লেটোর কল্পনাপ্রবণ রাষ্ট্রতত্ত্বের বিপরীতে অ্যারিস্টটল বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক তত্ত্ব গড়ে তোলেন। ফলে তাঁর রাষ্ট্রতত্ত্ব বাস্তববাদী, বৈজ্ঞানিক এবং আধুনিক চিন্তার ভিত্তি। এই আলোচনায় আমরা প্রথমে অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করব, তারপর তাঁর তত্ত্বের সমালোচনা করব এবং সবশেষে এর সামগ্রিক মূল্যায়ন উপস্থাপন করব।
অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল দিকসমূহ:
১. রাষ্ট্র একটি প্রাকৃতিক প্রতিষ্ঠান: অ্যারিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র মানুষের প্রাকৃতিক চাহিদার ফলস্বরূপ গড়ে ওঠা একটি প্রাকৃতিক প্রতিষ্ঠান। মানুষ স্বভাবতই সামাজিক প্রাণী (zoon politikon)। একা মানুষের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন সম্ভব নয়। তাই পরিবার, গ্রাম এবং শেষে রাষ্ট্র—এই ধাপে ধাপে মানুষের সামাজিক সংগঠন বিকশিত হয়েছে। পরিবার যেখানে জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটায়, গ্রাম সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র, আর রাষ্ট্র মানুষের নৈতিক ও পূর্ণাঙ্গ জীবনের জন্য অপরিহার্য।
২. রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য: অ্যারিস্টটল বলেছেন, রাষ্ট্রের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো ‘সুন্দর জীবন’ (Good Life) নিশ্চিত করা। শুধু বেঁচে থাকা বা অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং নাগরিকদের নৈতিক উৎকর্ষ সাধনই রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য। তাঁর মতে, রাষ্ট্র একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান।
৩. নাগরিকত্ব: অ্যারিস্টটল প্রথম দার্শনিক যিনি নাগরিকত্ব নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেন। তাঁর মতে, নাগরিক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রের বিচার ও শাসন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেন। অর্থাৎ কেবলমাত্র বাসিন্দা হওয়াই নাগরিকত্ব নয়; রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করাই নাগরিকত্বের মূল ভিত্তি।
৪. দাসপ্রথা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি: অ্যারিস্টটল দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, কিছু মানুষ জন্মগতভাবে দাসত্বের যোগ্য। তারা শারীরিক পরিশ্রমের জন্য উপযুক্ত, আর শাসন করার যোগ্যতা নেই। তাই তাদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা প্রাকৃতিক এবং যুক্তিসঙ্গত। যদিও আজকের মানবাধিকারের আলোকে এটি সমালোচিত, কিন্তু তাঁর সময়ে এটি একটি স্বীকৃত ধারণা ছিল।
৫. সরকারপ্রণালীর শ্রেণীবিভাগ: অ্যারিস্টটল বিভিন্ন রাষ্ট্রব্যবস্থার তুলনা করে সরকারপ্রণালীগুলিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিলেন—শ্রেষ্ঠ রূপ এবং বিকৃত রূপ।
• শ্রেষ্ঠ রূপ:
১. রাজতন্ত্র (Monarchy) – একজন মানুষের কল্যাণকামী শাসন।
২. অভিজাততন্ত্র (Aristocracy) – কিছু যোগ্য ব্যক্তির কল্যাণমুখী শাসন।
৩. রাষ্ট্রতন্ত্র/Polity – সংখ্যাগরিষ্ঠের মিশ্র শাসন।
• বিকৃত রূপ:
১. স্বৈরতন্ত্র (Tyranny) – একজন মানুষের স্বার্থপর শাসন।
২. ধনিকতন্ত্র (Oligarchy) – ধনীদের স্বার্থপর শাসন।
৩. গণতন্ত্র (Democracy) – দরিদ্র সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থপর শাসন।
তবে তিনি গণতন্ত্রের পরিবর্তে মিশ্র শাসনব্যবস্থা বা Polity-কে শ্রেষ্ঠতর মনে করতেন।
৬. সর্বোত্তম রাষ্ট্রব্যবস্থা: অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন যে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে স্থিতিশীল সমাজ তৈরি করতে পারে। তাই তিনি এমন রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন যেখানে মধ্যবিত্তরা শাসন ও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই কারণে তাঁর প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তববাদী এবং সমন্বিত।
৭. আইন ও সংবিধান: অ্যারিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র টিকে থাকে আইন ও সংবিধানের মাধ্যমে। আইন শুধু শাসকের ইচ্ছা নয়; এটি ন্যায়বোধ ও নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে হবে। সংবিধানকে তিনি রাষ্ট্রের প্রাণ বলে অভিহিত করেন।
৮. অর্থনীতি ও সম্পত্তি: অ্যারিস্টটল ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তবে তিনি সম্পদের সঞ্চয় ও অতি-লাভের বিপক্ষে ছিলেন। অর্থনীতিকে তিনি নৈতিক সীমার মধ্যে রাখার পরামর্শ দেন।
অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্বের সমালোচনা:
১. দাসপ্রথার স্বীকৃতি: অ্যারিস্টটল দাসপ্রথাকে প্রাকৃতিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আধুনিক মানবাধিকারের যুগে এটি অমানবিক, অযৌক্তিক এবং নিষ্ঠুর। এ কারণে তাঁর রাষ্ট্রতত্ত্ব মানবিক সমতার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২. নারী সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি: অ্যারিস্টটল নারীদের পুরুষের অধীনস্ত হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি মনে করতেন নারীরা যুক্তিবাদে দুর্বল এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের যোগ্য নয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক ও নারীবাদী চিন্তাধারায় এটি অগ্রহণযোগ্য।
৩. গণতন্ত্রের বিরোধিতা: অ্যারিস্টটল গণতন্ত্রকে বিকৃত শাসনব্যবস্থা বলেছিলেন। তিনি গণতন্ত্রের পরিবর্তে Polity-র পক্ষে ছিলেন। কিন্তু আধুনিক যুগে গণতন্ত্রকেই সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা হিসেবে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সীমিত।
৪. ছোট রাষ্ট্রের পক্ষপাত: অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্র ছোট হলে শাসনব্যবস্থা কার্যকর হয়। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে বৃহৎ ও জটিল রাষ্ট্রেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সফলভাবে চলছে। তাই তাঁর ধারণা বাস্তবের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না।
৫. মধ্যবিত্ত শ্রেণির অতিরিক্ত গুরুত্ব: অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে ধনী ও দরিদ্র উভয় শ্রেণির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মধ্যবিত্তের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্র কাঠামো বাস্তবসম্মত নয়।
৬. রাষ্ট্রকে অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান: অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রকে মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু আধুনিক যুগে রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার, ধর্ম, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইত্যাদির ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তাঁর রাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি একমাত্রিক।
অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল্যায়ন:
১. অ্যারিস্টটল প্রথম বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রতত্ত্ব গড়ে তোলেন।
২. তিনি আইন, সংবিধান, সরকারপ্রণালী, নাগরিকত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেন।
৩. তাঁর মিশ্র শাসনব্যবস্থার ধারণা আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করেছে।
৪. মধ্যবিত্ত শ্রেণির গুরুত্বের ওপর তাঁর জোর সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
৫. রাষ্ট্রকে নৈতিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দিয়ে তিনি রাজনীতিকে কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং নৈতিক উৎকর্ষের মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
সীমাবদ্ধতা:
১. দাসপ্রথা ও নারী-বিদ্বেষী মনোভাব আধুনিক মানবিক মূল্যবোধের বিপরীত।
২. গণতন্ত্রকে বিকৃত রূপ বলা তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে।
৩. ছোট রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ভাবনা আধুনিক বৃহৎ রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রযোজ্য নয়।
উপসংহার: অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্ব প্রাচীন যুগের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্মিত হলেও তার প্রভাব যুগ যুগ ধরে অটুট রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রকে প্রাকৃতিক ও নৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, নাগরিকত্বের ধারণা স্পষ্ট করেছেন এবং সরকারপ্রণালীর বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগ উপস্থাপন করেছেন। যদিও তাঁর কিছু মতবাদ আজকের দৃষ্টিতে সমালোচিত, তবুও রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিদ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে তাঁর। অতএব বলা যায়, অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রতত্ত্ব আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তার ভিত্তিপ্রস্তর। সমালোচনা সত্ত্বেও এটি রাজনৈতিক দর্শনের ইতিহাসে এক অমর অবদান।
Unit –4: মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তা।
*****4) প্রশ্ন. মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ কর, বিশেষ করে রাষ্ট্র-গীর্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপর গুরুত্বসহ। [১০]
উত্তর: মধ্যযুগে ইউরোপের রাজনৈতিক ও দার্শনিক ভাবনার ধরন প্রধানত ধর্ম এবং সামাজিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রায় ছয়শো বছরের মধ্যযুগে (৫ম শতক থেকে ১৫ম শতক পর্যন্ত) রাষ্ট্রচিন্তা বিকাশের ক্ষেত্রে চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এই সময়ে রাষ্ট্র এবং গীর্জা (Church) বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে আলাদা না করে প্রায়শই একত্রে দেখা হতো। রাষ্ট্র ও গীর্জার সম্পর্ক এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রীয় সমস্যা ছিল।
১. ধর্মীয় প্রভাব এবং রাজনীতির মিলন: মধ্যযুগে রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্মের প্রভাব ছিল অতি প্রবল। রাজা বা সম্রাটদের ক্ষমতা প্রায়শই “দেবতা প্রদত্ত” বা “দেবদূত” হিসেবে বিবেচিত হতো। এই ধারার প্রভাব রাজনৈতিক দর্শনের মূল কাঠামোতে প্রতিফলিত হয়েছে। অগাস্টিন (St. Augustine) যেমন তার বিখ্যাত কাজ “De Civitate Dei”-এ দেখিয়েছেন, যেখানে তিনি ধর্মীয় রাষ্ট্র এবং আধ্যাত্মিক সমাজের মাঝে পার্থক্য বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে, আধ্যাত্মিক নগর বা “City of God” চিরন্তন, অথচ পৃথিবীকালীন রাজ্য ক্ষণস্থায়ী। এই ভাবনা মধ্যযুগের রাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্মকে কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছে। রাজা বা শাসকরা ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া তাদের শক্তি বৈধতা দিতে পারত না।
২. রাজ্য এবং গীর্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে রাজ্য এবং গীর্জার মধ্যে একটি স্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান ছিল। রাজা চাইতেন রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রভিত্তিকভাবে স্থাপন করতে, যেখানে রাজ্যের আইন সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, গীর্জা চাইতো আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের উপরে প্রভাব রাখতে। এই দ্বন্দ্বের উদাহরণ হিসেবে হেনরি চতুর্থ এবং পোপ গ্রেগরি সপ্তমের মধ্যে সংঘটিত “Investiture Controversy” উল্লেখযোগ্য। এই বিতর্কে পোপ দাবি করেছিলেন যে ধর্মীয় নিয়োগ শুধুমাত্র গীর্জার অধীনে হতে পারে, আর সম্রাটের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। রাজ্য–গীর্জা দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক দর্শনের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।
৩. শাসকের কর্তৃত্ব এবং আইন: মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তায় শাসকের ক্ষমতা প্রায়শই দেবতার অনুমোদিত বলে মনে করা হতো। তবে শাসকের কর্তৃত্ব বিভিন্নভাবে সীমিত ছিল। গীর্জা আইন, যেমন Canon Law, রাজ্যের আইনকে প্রভাবিত করত। শাসকের দায়িত্ব ছিল ন্যায়বিচার রক্ষা করা, সামাজিক স্থিতি বজায় রাখা এবং ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করা। আইন ও ধর্ম ছিল রাজনৈতিক কাঠামোর মূল ভিত্তি।
৪. সামাজিক হায়ারার্কি এবং ফিউডাল প্রভাব: মধ্যযুগীয় সমাজ ছিল কঠোর শ্রেণীভিত্তিক। রাজা, নোবেল, নাইট এবং সাধারণ প্রজা—এই সামাজিক কাঠামো রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিন্যাস নির্ধারণ করত। ফিউডাল সিস্টেম রাজনৈতিক ক্ষমতা উপরের থেকে নিচের স্তরে পৌঁছে দিত। গীর্জার স্থান ছিল শীর্ষে, এবং ধর্মীয় নেতারা নৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব দিতেন। এই শ্রেণীধারাই রাষ্ট্র–গীর্জার দ্বন্দ্বকে আরও স্পষ্ট করেছে।
৫. রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণা: মধ্যযুগে সার্বভৌমত্বের ধারণা আধুনিক রাষ্ট্রের থেকে ভিন্ন ছিল। রাজা নিজেকে সার্বভৌম মনে করলেও, গীর্জার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা তাকে সীমাবদ্ধ রাখত। রাজ্য–গীর্জার দ্বন্দ্ব আসলে এই সার্বভৌমত্বের লড়াই। ধর্মীয় কর্তৃত্বের কারণে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সবসময়ই নিয়ন্ত্রিত ছিল।
৬. রাজনৈতিক চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক অবদান: অগাস্টিন, থোমাস আকুইনাস প্রমুখ দার্শনিক মধ্যযুগের রাজনীতি–ধর্ম সম্পর্ক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। অগাস্টিনের City of God এবং আকুইনাসের Summa Theologica গ্রন্থে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সম্পর্ক, সীমা এবং ভারসাম্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাদের রচনা মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক চিন্তার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
৭. রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যে যুদ্ধ এবং কূটনীতি: মধ্যযুগে যুদ্ধ এবং কূটনীতি ছিল রাজনৈতিক শক্তির মূল উপাদান। রাজা ও সামন্তপ্রভুরা সামরিক শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতেন। রাষ্ট্র–গীর্জা দ্বন্দ্ব প্রায়শই কূটনীতি, জোট, সমঝোতা ইত্যাদির মাধ্যমে সমাধান করা হতো। ধর্মীয় নীতি এবং রাজনৈতিক কৌশল একে অপরকে প্রভাবিত করত।