Kalyani University Suggestion
Kalyani University B.A 5th Semester Political Science Minor Nep Suggestions 2026
Development Process and Social Movement in Contemporary India
Kalyani University B.A 5th Semester Political Science Minor Nep ছোট প্রশ্ন, বড়ো প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন PDF টি পেতে.. তুমি 150 টাকা পেমেন্ট কর। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবে। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক কর।
তুমি চাইলে সরাসরি PhonePe-এর মাধ্যমে 150 টাকা পেমেন্ট করে সাজেশন সংগ্রহ করতে পার। PhonePe নম্বর: 6295668424 (পেমেন্টের পর স্ক্রিনশট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে PDF COPY পাঠিয়ে দেব।)
My Phone Number- 6295668424
• এই সাজেশনের বড়ো প্রশ্ন সংখ্যা 29 টি।
ছোট প্রশ্ন প্রশ্নের উত্তর সহ কমপ্লিট সাজেশন পাবেন।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট
অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
Development Process and Social Movement in Contemporary India
(সিলেবাস – ২০২৫)
Unit–1: Development Process in India since Independence: State and Planning – Liberalization and Reforms
বাংলা: স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে উন্নয়ন প্রক্রিয়া: রাষ্ট্র এবং পরিকল্পনা, উদারীকরণ ও সংস্কার।
Unit–2: Industrial Development Strategy and its Impact on the Social Structure: Mixed Economy, Privatization, the Impact on Organized and Unorganized Labour – Emergence of the New Indian Middle Class
বাংলা: শিল্প উন্নয়ন কৌশল এবং সামাজিক কাঠামোর উপর এর প্রভাব: মিশ্র অর্থনীতি, বেসরকারিকরণ, সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকদের উপর প্রভাব, নতুন ভারতীয় মধ্যবিত্তের উদ্ভব।
Unit–3: Agrarian Development Strategy and its Impact on the Social Structure: Land Reforms, Green Revolution, Agrarian Crisis since the 1990s and its Impact on Farmers
বাংলা: কৃষি উন্নয়ন কৌশল এবং সামাজিক কাঠামোর উপর এর প্রভাব: ভূমি সংস্কার, সবুজ বিপ্লব, ১৯৯০-এর দশক থেকে কৃষি সংকট এবং কৃষকদের উপর এর প্রভাব।
Unit–4: Social Movements in India: Tribal, Peasant, Dalit and Women's Movements – Maoist Challenge, Civil Rights Movements in India
বাংলা: ভারতে সামাজিক আন্দোলন: উপজাতি, কৃষক, দলিত ও মহিলাদের আন্দোলন, মাওবাদী চ্যালেঞ্জ, ভারতে নাগরিক অধিকার আন্দোলন।
সম্পূর্ণ সাজেশন টি ইউটিউবে দেখানো হয়েছে তুমি দেখে আসতে পারো।
Unit – 1: স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে উন্নয়ন প্রক্রিয়া: রাষ্ট্র এবং পরিকল্পনা, উদারীকরণ ও সংস্কার।
*****1) প্রশ্ন. ভারতীয় অর্থনীতির উপর উদারীকরণের প্রভাবসমূহ পর্যালোচনা কর। ১০ অথবা, ভারতীয় অর্থনীতিতে উদারীকরণের প্রভাবের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। ৫
ভূমিকা:
১৯৯১ সালে ভারতীয় অর্থনীতি অভিজ্ঞতার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে। অর্থনৈতিক সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির ফলে সরকার বাধ্য হয়েছিল অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের। তখন প্রণীত অর্থনৈতিক সংস্কার এবং উদারীকরণ নীতি ভারতের অর্থনীতিতে এক বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের সূচনা করে। উদারীকরণ বা “লিবারালাইজেশন” মূলত অর্থনীতির বাজারকেন্দ্রিকীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগের উন্মুক্তকরণ, সরকারী নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এবং বাণিজ্য স্বাধীনতার সম্প্রসারণকে নির্দেশ করে।
উদারীকরণের প্রেক্ষাপট:
১৯৯০-এর দশকে ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ জটিলতার মধ্যে প্রবেশ করেছিল। মুদ্রাস্ফীতি, কর সংক্রান্ত সমস্যা, সরকারি খরচের বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে দেশকে গুরুতর আর্থিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়। এর প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে উদারীকরণের প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। প্রধান লক্ষ্য ছিল:
1. সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এবং বাজারকে স্বাধীনতা প্রদান।
2. বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা।
3. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি।
4. আর্থিক সংস্থার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
উদারীকরণের মূল নীতি:
• বাণিজ্য খোলার নীতি: আমদানি-রপ্তানি শুল্ক হ্রাস, সীমিত কোটার প্রথা বাতিল।
• বিনিয়োগ প্রণোদনা: বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) এবং বহুজাতিক সংস্থার আগমন।
• সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস: সরকারি শিল্প ও উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ কমানো, সরকারি খাতে প্রাইভেটাইজেশন।
• মুদ্রা ও আর্থিক নীতি: মুদ্রার মান স্থিতিশীলকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে উন্নয়ন।
• মূল্যনিয়ন্ত্রণে ছাড়: পণ্যের উৎপাদন ও মূল্যায়নে বাজার কেন্দ্রিক নীতি।
উদারীকরণের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ
১. অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও জিডিপির উন্নয়ন: উদারীকরণের প্রয়োগের ফলে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। বাজারকেন্দ্রিক নীতি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের আগমনের মাধ্যমে শিল্প ও সেবা খাতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং দেশ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে আত্মনির্ভর হতে শুরু করে।
২. বৈদেশিক বিনিয়োগের বৃদ্ধি: FDI নীতির সহজীকরণের ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করে। তথ্য প্রযুক্তি, উৎপাদন, ও সেবা খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ভারতের বিশ্বমানের সাফল্য।
৩. বাণিজ্য সম্প্রসারণ: উদারীকরণের ফলে ভারত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। রপ্তানি পণ্য ও প্রযুক্তি খাতে বাজার বৃদ্ধি পায়। বিদেশি পণ্য, প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ার আগমনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শিল্পের মান উন্নত হয়।
৪. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবন: বাজারের স্বাধীনতা এবং বিদেশি বিনিয়োগের আগমনের ফলে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় সংস্থাগুলি নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করে উৎপাদন ও সেবা খাতে মান বৃদ্ধি করে।
৫. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: উদারীকরণ নতুন শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে, যার ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। বিশেষত আইটি, ব্যাংকিং ও বাণিজ্য খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদারীকরণের নেতিবাচক প্রভাবসমূহ
১. আয় বৈষম্য বৃদ্ধি: উদারীকরণের ফলে অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও আয় বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরাঞ্চল এবং গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য প্রকট হয়েছে। উচ্চ প্রযুক্তি ও সেবা খাত শহরে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় গ্রামের মানুষ বেশি সুবিধা পাননি।
২. ক্ষুদ্র ও স্থানীয় শিল্পের চাপে থাকা: বাজারমুখী নীতি এবং বহুজাতিক সংস্থার আগমনের ফলে ক্ষুদ্র ও স্থানীয় শিল্প প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় উৎপাদকরা বৈদেশিক সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না।
৩. সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধি: উদারীকরণের ফলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বৈষম্য এবং বেকারত্বের সমস্যা প্রকট হয়েছে। প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা না থাকা মানুষদের জন্য কাজের সুযোগ সীমিত।
৪. কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব: কৃষিক্ষেত্রেও উদারীকরণের প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ওঠানামা এবং কৃষিপণ্য রপ্তানির চাপ গ্রামীণ কৃষকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
উদারীকরণের সামগ্রিক বিশ্লেষণ: উদারীকরণের ফলে ভারতীয় অর্থনীতি অর্থনৈতিক মুক্তি, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। তবে এর সঙ্গে আয় বৈষম্য, স্থানীয় শিল্পের চাপ এবং সামাজিক সমস্যা বেড়েছে। অর্থনীতিতে সমন্বয় প্রয়োজন। সরকার এবং নীতি-নির্ধারকরা উদারীকরণের সুফল বজায় রেখে নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন: সামাজিক নিরাপত্তা নীতি, কৃষি পুনর্বিন্যাস, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন।
উপসংহার: উদারীকরণ ভারতের অর্থনীতিকে বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক করেছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভারত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বিত হয়েছে। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব যেমন আয় বৈষম্য ও সামাজিক সমস্যা অবহেলা করা যায় না। সমন্বিত নীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে উদারীকরণের সুফল সর্বাধিক নিশ্চিত করা সম্ভব।
Unit – 2: শিল্প উন্নয়ন কৌশল এবং সামাজিক কাঠামোর উপর এর প্রভাব: মিশ্র অর্থনীতি, বেসরকারিকরণ, সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকদের উপর প্রভাব, নতুন ভারতীয় মধ্যবিত্তের উদ্ভব।
*****2) প্রশ্ন. ভারতে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। (৫)
ভারতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে। আধুনিকায়নের ধারা, শিল্পায়ন, বাণিজ্য বৃদ্ধি, শিক্ষার প্রসার এবং কর্মসংস্থানের পরিবর্তন এই শ্রেণীর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নতুন মধ্যবিত্ত সমাজে একটি স্বতন্ত্র পরিচয়, জীবনধারা এবং মূল্যবোধের উদ্ভব ঘটিয়েছে, যা ভারতীয় সমাজের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক গঠনকে নতুন দিক দিয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৈশিষ্ট্যগুলো বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করব।
১. শিক্ষাগত উন্নতি ও প্রফেশনাল সক্ষমতা: নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষার প্রতি তাদের গুরুত্ব এবং উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ। এই শ্রেণীর মানুষরা সাধারণত মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় ভালো ফলাফল প্রদর্শন করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তারা শিক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং পেশাদারী যোগ্যতা অর্জন করে। শিক্ষা তাদের সামাজিক অবস্থান বৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, প্রশাসন, ব্যবসা ও আইন ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তারা চাকরির সুযোগ বাড়ায় এবং আধুনিক সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। নতুন মধ্যবিত্তের সন্তানরা সাধারণত শিকলবদ্ধ ও পেশাদারী শিক্ষায় মনোযোগী হয়।
২. নগরায়ণ ও শহুরে জীবনধারা: নতুন মধ্যবিত্তের মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো নগরায়িত জীবনধারা। তারা সাধারণত শহরে বসবাস করে এবং শহুরে সুবিধা যেমন উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন এবং শপিং মল ইত্যাদি ব্যবহার করে। শহুরে জীবনধারা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। তারা আধুনিক আবাসন, যানবাহন, প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট সুবিধা এবং ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেবা গ্রহণ করে। এছাড়া, শহুরে জীবনধারার মাধ্যমে তারা সামাজিকীকরণের সুযোগ পায়, যেখানে নতুন মিডিয়া, ক্লাব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।
৩. ভোক্তা ও ব্যয়প্রবণ আচরণ: নতুন মধ্যবিত্তের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো ভোক্তা প্রবণতা এবং ব্যয়প্রবণ আচরণ। তারা সাধারণত উন্নতমানের পণ্য ও সেবা কিনতে আগ্রহী হয়। বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, গাড়ি, উচ্চমানের খাদ্যদ্রব্য এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রমে তারা বড় পরিমাণে ব্যয় করে। এই শ্রেণীর মানুষরা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চায় এবং সমাজে নিজের অবস্থান প্রমাণ করতে ভোক্তা-চেতনায় সক্রিয় থাকে। পাশাপাশি, তারা কিস্তিতে কেনাকাটা, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকে।
৪. পেশাগত স্থিতিশীলতা ও চাকরি: নতুন মধ্যবিত্ত সাধারণত স্থিতিশীল চাকরিতে নিযুক্ত থাকে। সরকারি চাকরি, কর্পোরেট চাকরি, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষাক্ষেত্রে তারা কর্মসংস্থান লাভ করে। চাকরি তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করে এবং আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে। পেশাগত স্থিতিশীলতার কারণে তারা পরিবারের জীবনযাত্রা উন্নত করতে সক্ষম হয়। এছাড়া, পেশাগত ক্ষেত্রের উন্নতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তাদের সন্তানদের শিক্ষায় এবং সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
৫. সামাজিক মূল্যবোধ ও পরিবারিক সংহতি: নতুন মধ্যবিত্তের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক মূল্যবোধ এবং পরিবারিক সংহতি। তারা পরিবারকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কেন্দ্র হিসেবে দেখে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে তারা গুরুত্ব দেয় এবং সন্তানদের শিক্ষার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়। এই শ্রেণীর মানুষরা সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব, বিবাহ এবং অন্যান্য পারিবারিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকে। তারা সামাজিক নৈতিকতা এবং পরিবারিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে সচেষ্ট। এছাড়াও, নতুন মধ্যবিত্ত সমাজে সন্তানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করে, যা পুরোনো কৌশলের সাথে তুলনীয়ভাবে আরও সহনশীল এবং সংলাপমুখী হয়।
৬. রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও সচেতনতা: নতুন মধ্যবিত্ত সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়। তারা ভোটাধিকারের গুরুত্ব বোঝে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এই শ্রেণীর মানুষরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে সচেতন ভূমিকা রাখে। নতুন মধ্যবিত্তের মধ্যে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের উপর ধারণা তৈরির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তারা দেশের উন্নয়ন, নীতি নির্ধারণ এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করতে চায়।
৭. আধুনিক মানসিকতা ও জীবনধারা: নতুন মধ্যবিত্তের মানুষরা সাধারণত আধুনিক জীবনধারার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারা বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং উদ্ভাবনী ধারণাকে মান্য করে। আধুনিক জীবনধারার সঙ্গে তারা সাংস্কৃতিক, বিনোদনমূলক এবং আন্তর্জাতিক ধারা অনুসরণ করে। সিনেমা, বই, খেলার মাঠ, জিম এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কার্যক্রমে তারা সক্রিয় থাকে। এছাড়া, তারা জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে নতুন পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহী থাকে।
৮. অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ও সঞ্চয়: নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং সঞ্চয়ের প্রতি মনোভাব। তারা সাধারণত আয় এবং ব্যয়কে সমন্বয় করে পরিবারিক ও ব্যক্তিগত আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। তারা বীমা, ব্যাংক হিসাব, পেনশন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয় করে এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকে। এই ধরনের অর্থনৈতিক সচেতনতা তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৯. সংস্কৃতি ও সামাজিক সচেতনতা: নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষরা সাধারণত সংস্কৃতি, শিল্প ও সাহিত্যপ্রিয়। তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, নাটক, সাহিত্যচর্চা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। এই শ্রেণীর মানুষরা সামাজিক ন্যায়, পরিবেশ সচেতনতা, নারী ক্ষমতায়ন এবং সমতার প্রতি গুরুত্ব দেয়। তারা সমাজের উন্নয়নে এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
১০. আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যোগাযোগ: নতুন মধ্যবিত্তের মানুষরা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণে আগ্রহী। তারা বিদেশী ভাষা, বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকে। তাদের যোগাযোগের মাধ্যম আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন কনফারেন্স এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে সম্প্রসারিত হয়। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা নতুন সুযোগ এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
উপসংহার: ভারতে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী আধুনিক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষাগত উন্নতি, নগরায়ণ, পেশাগত স্থিতিশীলতা, সামাজিক মূল্যবোধ, আধুনিক জীবনধারা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা এই শ্রেণীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই শ্রেণীর উদ্ভব ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোতে একটি নতুন দিক এনেছে। তারা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে, সমাজের উন্নয়ন এবং প্রগতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Unit – 3: কৃষি উন্নয়ন কৌশল এবং সামাজিক কাঠামোর উপর এর প্রভাব: ভূমি সংস্কার, সবুজ বিপ্লব, ১৯৯০-এর দশক থেকে কৃষি সংকট এবং কৃষকদের উপর এর প্রভাব।
*****3) প্রশ্ন. সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল কারণগুলি কী ছিল? ৫
ভূমিকা: সাঁওতাল বিদ্রোহ, যা ১৮৫৫ থেকে ১৮৫৬ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, ভারতের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত বাঙালীর ও সাঁওতাল জনজাতির মধ্যে জমিদারি, কর, এবং সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ আন্দোলন ছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহকে ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম স্বনির্ভর আদিবাসী আন্দোলনের উদাহরণ বলা যেতে পারে, যা ইংরেজদের শোষণমূলক নীতি, স্থানীয় জমিদারদের অত্যাচার, এবং ব্যবসায়ীদের কর ও জমির দখলের বিরুদ্ধে জন্ম নেয়। এই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট, কারণ ও প্রভাব বোঝার মাধ্যমে আমরা প্রায়শই ১৯শ শতকের ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতির বাস্তব চিত্রটি দেখতে পারি।
সাঁওতালদের জমি থেকে জোরপূর্বক ভূমি কর আদায় করা হতো এবং তাঁরা প্রায়শই ঋণগ্রস্ত হতেন। তদুপরি, ব্রিটিশ পদ্ধতিতে চাষের উৎপাদনের নির্দিষ্ট অংশ জমিদার ও রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে দিতে বাধ্য করা হতো। এর ফলে সাঁওতালরা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হারাতে শুরু করে। এই অর্থনৈতিক অত্যাচার বিদ্রোহের মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
সাঁওতালরা ঋণগ্রস্ত হলে তাদের জমি ও সম্পদ কেড়ে নেওয়া হতো। এই ধরণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল এবং তাদেরকে বিদ্রোহের দিকে ঠেলে দেয়।
ব্রিটিশরা সাঁওতালদের জীবনধারার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল এবং তাদের স্বাধীনতা ও ঐতিহ্য লঙ্ঘন করছিল। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দমন এই বিদ্রোহের এক বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বনভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সাঁওতালদের বিচ্ছিন্ন করা তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। এই হস্তক্ষেপ বিদ্রোহের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যখন তাদের জমি দখল বা কর বোঝা বেড়ে যেত, তখন তারা প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাইলেও কোনো সমাধান পেত না। এই ধরনের প্রশাসনিক অন্যায় ও অবিচার বিদ্রোহকে আরও তীব্র করেছিল।
নেতৃত্ব ও সমন্বয় না থাকলে এই ধরনের বড় আন্দোলন সম্ভব হতো না। সাঁওতালরা তাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্যই নয়, তাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার জন্যও এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।
উপসংহার: সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল কারণগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক শোষণ, জমি ও বনভূমি অধিকার হরণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক হস্তক্ষেপ, স্থানীয় জমিদার ও ব্যবসায়ীদের শোষণ, প্রশাসনিক অবিচার এবং রাজনৈতিক দমন অন্যতম। এই বিদ্রোহ শুধু এক সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক ক্ষোভের প্রতিফলন নয়, এটি সমগ্র ভারতীয় ইতিহাসে আদিবাসী প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
সাঁওতাল বিদ্রোহ আমাদের শেখায় যে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই সব সময় প্রয়োজনীয়। এটি ভারতের আধুনিক ইতিহাসে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। এই বিদ্রোহের মাধ্যমে বোঝা যায় যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক শোষণ একত্রিত হলে যে কোনো সম্প্রদায় প্রতিরোধে উত্তেজিত হতে পারে।
সুতরাং, সাঁওতাল বিদ্রোহ শুধু একটি ইতিহাস নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক মর্যাদার জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ।
Unit – 4: ভারতে সামাজিক আন্দোলন: উপজাতি, কৃষক, দলিত ও মহিলাদের আন্দোলন, মাওবাদী চ্যালেঞ্জ, ভারতে নাগরিক অধিকার আন্দোলন।
*****4) প্রশ্ন. ভারতে দলিত আন্দোলনের কারণসমূহ উল্লেখ কর। (৫ নম্বর)
ভূমিকা: ভারতের সমাজব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বর্ণপ্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই বর্ণপ্রথা সমাজকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছিল—ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। শূদ্র এবং তথাকথিত "অস্পৃশ্য" বা দলিত সম্প্রদায়কে সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে রাখা হয়েছিল। তাদের উপর অসংখ্য সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলস্বরূপ, দলিতরা দীর্ঘকাল ধরে অবহেলিত ও শোষিত থেকে গিয়েছিল। এই অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ভারতে দলিত আন্দোলনের জন্ম হয়। দলিত আন্দোলন কেবল সামাজিক মুক্তির আন্দোলন নয়, বরং এটি রাজনৈতিক অধিকার, শিক্ষার সুযোগ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক মর্যাদা অর্জনের সংগ্রাম। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক অসাম্য দূর করা এবং দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
দলিত আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: ভারতে দলিত আন্দোলনের সূত্রপাতকে বুঝতে হলে প্রথমেই বর্ণপ্রথার প্রভাব বিশ্লেষণ করতে হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দলিত সম্প্রদায়কে মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তারা গ্রামে আলাদা বসবাস করত, বিশুদ্ধ কূপ থেকে জল নিতে পারত না, এবং শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। শিল্প-কারখানায় কিংবা জমিতে কাজ করেও তারা ন্যায্য মজুরি পেত না। এমনকি তাদের ছোঁয়াকেও অপবিত্র বলে গণ্য করা হতো। এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে বিভিন্ন চিন্তাবিদ, সমাজসংস্কারক ও রাজনৈতিক নেতারা আন্দোলনের আহ্বান জানান। রাজা রামমোহন রায়, জ্যোতিরাও ফুলে, ভীমরাও রামজি আম্বেদকর প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা দলিত আন্দোলনের ভিত্তি শক্তিশালী করেন।
ভারতে দলিত আন্দোলনের কারণসমূহ:
- বর্ণভিত্তিক বৈষম্য: ভারতের সমাজে দলিতরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তাদেরকে "অস্পৃশ্য" বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তারা একই কূপ থেকে জল তুলতে পারত না, একই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারত না, এমনকি উচ্চবর্ণের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশাও করতে পারত না। এই বৈষম্যমূলক প্রথার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই দলিত আন্দোলনের সূচনা ঘটে।
- সামাজিক শোষণ ও অবমাননা: দলিতদের উপর নিত্যদিনের জীবনে নানান ধরণের শোষণ ও অবমাননা চাপিয়ে দেওয়া হতো। তারা কেবলমাত্র নোংরা বা হীন কাজ করার সুযোগ পেত—যেমন নর্দমা পরিষ্কার, মৃত পশুর চামড়া টানা, ভৃত্যকাজ ইত্যাদি। এভাবে তাদের সামাজিক অবস্থান সবসময় নিচে রাখা হতো। এই অমানবিক পরিস্থিতি দলিতদের মধ্যে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
- অর্থনৈতিক বঞ্চনা: ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোতেও দলিতরা বঞ্চিত ছিল। জমির মালিকানার অধিকার তাদের ছিল না। তারা সাধারণত জমিদারদের প্রজা বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করত। তাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হতো না। শিল্পক্ষেত্রেও তারা প্রান্তিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতির সুযোগ থেকে দলিতরা বঞ্চিত হয়। এই দারিদ্র্য ও শোষণ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।
- শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চনা: দলিতরা দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। প্রাচীনকালে তাদের জন্য শিক্ষাগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। ফলে সমাজে তারা জ্ঞান ও চেতনায় পিছিয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনকালে ও বিভিন্ন সমাজসংস্কারক আন্দোলনের ফলে শিক্ষার কিছু সুযোগ তৈরি হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। এই বঞ্চনাই তাদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার জন্ম দেয়।
- রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চনা: স্বাধীনতার আগে দলিতরা রাজনৈতিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। ভোটাধিকার, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ তাদের ছিল না। রাজনৈতিক ক্ষমতা সবসময় উচ্চবর্ণের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। ভীমরাও আম্বেদকর এই সমস্যাটি তুলে ধরে দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি করেছিলেন। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই দলিত আন্দোলনের অন্যতম মূল কারণ।
- ধর্মীয় অসাম্য: দলিতরা হিন্দুধর্মের আচার-অনুষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারত না। ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়ন তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। অনেক সময় উচ্চবর্ণের পুরোহিতরা তাদের সামাজিক কর্মকাণ্ডকে ধর্মীয় অজুহাত দেখিয়ে সীমাবদ্ধ করত। এই ধর্মীয় অসাম্য দলিত আন্দোলনের জ্বালানী হিসেবে কাজ করেছে।
- সমাজসংস্কারক ও চিন্তাবিদদের প্রভাব: রাজা রামমোহন রায়, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জ্যোতিরাও ফুলে, শ্রীনারায়ণ গুরু, পেরিয়ার ই. ভি. রামস্বামী, ভীমরাও আম্বেদকর প্রমুখ সমাজসংস্কারকরা দলিত আন্দোলনের পথপ্রদর্শক ছিলেন। তারা সমতার জন্য আন্দোলন করে দলিত জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হতে উৎসাহিত করেন। বিশেষত আম্বেদকর দলিত আন্দোলনের প্রধান স্থপতি হিসেবে স্মরণীয়।
- ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব: ব্রিটিশরা ভারতে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটায়। এর ফলে দলিতরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করে। পাশাপাশি ব্রিটিশরা প্রশাসনে দলিতদের কিছু সুযোগ তৈরি করেছিল। এই পরিবর্তনও আন্দোলনের জন্য ভূমিকা রাখে।
- জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দলিত সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলে। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জাতীয় আন্দোলনে দলিতদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, তবে আম্বেদকর ও অন্য নেতারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দলিতদের রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের আন্দোলন গড়ে তোলেন।
- আত্মসম্মান ও মর্যাদার দাবি: সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আত্মসম্মান রক্ষা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দলিতদের যে অপমান, অবহেলা ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে, তার প্রতিবাদে তারা আন্দোলনে অংশ নেয়। নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার আকাঙ্ক্ষাই দলিত আন্দোলনের প্রাণশক্তি হয়ে ওঠে।
দলিত আন্দোলনের ফলাফল:
দলিত আন্দোলনের কারণে ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে।
- সংবিধানে দলিতদের জন্য সংরক্ষণ নীতি চালু হয়।
- শিক্ষাক্ষেত্রে ও সরকারি চাকরিতে কোটা নির্ধারণ করা হয়।
- অস্পৃশ্যতা বিলোপ আইন কার্যকর হয়।
- সমাজে ধীরে ধীরে সমতা প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।
- দলিত নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার: ভারতে দলিত আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বৈষম্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অবহেলিত ও শোষিত মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরই এই আন্দোলনকে জন্ম দিয়েছে। ভীমরাও আম্বেদকরসহ বহু সমাজসংস্কারক এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সংবিধানের মাধ্যমে দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। যদিও আজও অনেক ক্ষেত্রে দলিত সমাজ বৈষম্যের শিকার হয়, তবে দলিত আন্দোলন ভারতীয় গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।