Kalyani University BA 1st Semester History Major Long Question Answer 2024-2025

এখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো আছে

University of Kalyani Suggestion

Kalyani University BA 1st Semester History Major Long Question Answer Suggestion PDF টি পেতে.. আপনি 39 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ।

• এই সাজেশনের প্রশ্ন সংখ্যা 32 টি।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

History Major Long Question Answer 2024-2025

History Major -1

Course Code: HIST-M-T-1

ভারতের ইতিহাস: প্রাক-এতিহাসিক যুগ থেকে বৈদিক যুগ

UNIT-1

****1) প্রশ্ন. প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপি ও মুদ্রার গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপি ও মুদ্রার গুরুত্ব বিশ্লেষণ-:

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের গবেষণায় লিপি এবং মুদ্রা দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদানগুলো ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য সরবরাহ করে, যা আমাদের সেই সময়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের বিবরণ জানতে সাহায্য করে।

লিপির গুরুত্ব:

1. প্রত্নতাত্ত্বিক দলিল: লিপির মাধ্যমে আমরা প্রাচীন ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন ঘটনার তথ্য পাই। উদাহরণস্বরূপ, অশোকের শিলালিপি থেকে আমরা তার রাজত্বকাল, ধর্ম প্রচার, ও শাসন নীতির বিবরণ পাই।
2. ভাষার উন্নয়ন: লিপি প্রাচীন ভারতীয় ভাষার বিবর্তন এবং বৈচিত্র্য বোঝাতে সহায়ক। ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী লিপি থেকে আমরা প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার ব্যবহার ও প্রচলন সম্পর্কে ধারণা পাই।
3. ধর্মীয় গ্রন্থ: বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও দলিল যেমন বেদ, উপনিষদ, মহাকাব্য ইত্যাদি লিপির মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। এগুলো আমাদের ধর্মীয় এবং দার্শনিক চিন্তার বিকাশ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে।

মুদ্রার গুরুত্ব:

1. অর্থনৈতিক ইতিহাস: মুদ্রা থেকে আমরা প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক জীবনের বিবরণ পাই। মুদ্রার উপাদান, নকশা ও লেখা থেকে অর্থনৈতিক লেনদেন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
2. রাজনৈতিক ইতিহাস: মুদ্রার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের নাম, শাসনকাল ও সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গুপ্ত সাম্রাজ্যের স্বর্ণ মুদ্রা থেকে আমরা তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামরিক শক্তির তথ্য পাই।
3. সাংস্কৃতিক তথ্য: মুদ্রার নকশা ও প্রতিকৃতি থেকে প্রাচীন ভারতের শিল্প, ধর্মীয় প্রতীক ও দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যায়।

উপসংহার:

লিপি ও মুদ্রা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস গবেষণায় অপরিহার্য উপাদান। এদের মাধ্যমে আমরা প্রাচীন ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই, যা আমাদের ইতিহাসের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।

****2) প্রশ্ন. প্রাচীন ভারতের ইতিহাস কে ব্যাখ্যা করার বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী এতিহাসিকদের মধ্যে প্রচলিত বিতর্ক আলোচনা কর। ১০

উত্তর: লিপি ও মুদ্রা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস গবেষণায় অপরিহার্য উপাদান। এদের মাধ্যমে আমরা প্রাচীন ভারতের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই, যা আমাদের ইতিহাসের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।

জাতীয়তাবাদী এতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি:

জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসকে দেশের গৌরবময় অতীত হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। তাদের মতে, ভারতের অতীত ছিল উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সংস্কৃতিময়। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
1. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গৌরবগাথা তুলে ধরেন। তারা প্রাচীন ভারতের শিক্ষা, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন।
2. স্বাধীনতা ও গৌরব: প্রাচীন ভারতের ইতিহাসকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরা হয়। তারা বিশ্বাস করেন যে ভারত এক সময় শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধিশালী ছিল এবং বিদেশী আক্রমণকারীদের কারণে তার পতন ঘটে।
3. মহান ব্যক্তিত্ব: জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাচীন ভারতের মহান ব্যক্তিত্বদের (যেমন চন্দ্রগুপ্ত মউর্য, অশোক, গৌতম বুদ্ধ, চাণক্য) ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়।
4. ঐতিহাসিকতা: প্রাচীন ভারতের ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তিত্বকে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদরা বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেন। তারা প্রাচীন ভারতের সাম্রাজ্য, রাজনীতি, যুদ্ধ এবং সামাজিক কাঠামোকে একটি গৌরবময় দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেন।

বামপন্থী এতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি:

বামপন্থী ইতিহাসবিদরা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসকে শ্রেণি সংগ্রাম, শোষণ এবং সমাজের অন্তর্নিহিত বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো:
1. শ্রেণি সংগ্রাম: বামপন্থী ইতিহাসবিদরা প্রাচীন ভারতের সমাজকে শ্রেণিভিত্তিক সমাজ হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, প্রাচীন ভারতের সমাজে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের মধ্যে সংঘাত ছিল এবং এই সংঘাতের প্রভাব সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছিল।
2. অর্থনৈতিক শোষণ: বামপন্থী ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোতে শোষণমূলক ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। জমিদারি ব্যবস্থা, দাসপ্রথা এবং ভূমিহীন কৃষকদের শোষণের বিষয়গুলো তারা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন।
3. ধর্মীয় সমালোচনা: প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় প্রথা ও বিশ্বাসগুলোর সমালোচনা বামপন্থী ইতিহাসবিদরা করেন। তাদের মতে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শোষণ ও বৈষম্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবং সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের প্রতি অবিচার করেছে।
4. বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ: বামপন্থী ইতিহাসবিদরা প্রাচীন ভারতের ঘটনাগুলোকে সমাজের বাস্তব পরিস্থিতি ও দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করেন। তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনযাত্রা, সংগ্রাম এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।

বিতর্কের মূল বিষয়বস্তু:

1. ঐতিহাসিক তথ্যের ব্যাখ্যা: জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী ইতিহাসবিদরা একই ঐতিহাসিক তথ্যের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয়তাবাদীরা অশোকের শাসনামলকে ধ্রুপদী ভারতের একটি গৌরবময় সময় হিসেবে দেখেন, যেখানে বামপন্থীরা অশোকের শাসনামলে কৃষক ও শ্রমিকদের শোষণের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন।
2. সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি: প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। জাতীয়তাবাদীরা সংস্কৃতির গৌরবময় দিকগুলোকে গুরুত্ব দেন, যেখানে বামপন্থীরা সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত বৈষম্য ও শোষণের দিকগুলোকে তুলে ধরেন।
3. সমাজের কাঠামো: প্রাচীন ভারতের সামাজিক কাঠামো নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। জাতীয়তাবাদীরা সামাজিক কাঠামোকে স্থিতিশীল ও ঐতিহ্যবাহী হিসেবে দেখেন, যেখানে বামপন্থীরা এই কাঠামোকে শ্রেণিভিত্তিক ও শোষণমূলক হিসেবে দেখেন।

সমাপনী বক্তব্য:

জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী ইতিহাসবিদদের মধ্যে এই বিতর্ক প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের মূল্যায়নের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। একদিকে জাতীয়তাবাদীরা ভারতের গৌরবময় অতীতকে তুলে ধরতে চান, অন্যদিকে বামপন্থীরা সমাজের অন্তর্নিহিত বৈষম্য ও শোষণকে আলোচনার মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে চান। এই বিতর্কের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তৃত ছবি পাওয়া সম্ভব, যা আমাদের বর্তমান সমাজের সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকগুলোকে আরও গভীরভাবে বোঝাতে সাহায্য করে।

UNIT-2

****3) প্রশ্ন. তাম্রাশ্মীয় যুগের বা সংস্কৃতির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তর: তাম্রাশ্মীয় যুগ বা তাম্রাশ্ম যুগ, যা চ্যালকোলিথিক (Chalcolithic) নামেও পরিচিত, পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রস্তর যুগের এবং তাম্র যুগের সংমিশ্রণকে নির্দেশ করে। এই যুগটি নবপলীয় যুগের পর এবং প্রাথমিক লৌহ যুগের আগে অবস্থিত। তাম্রাশ্মীয় যুগকে সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অবধি ধরে নেওয়া হয়, যদিও বিভিন্ন স্থানে এই সময়সীমা বিভিন্ন হতে পারে।

তাম্রাশ্মীয় যুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

তাম্রাশ্মীয় যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাম্র ধাতুর ব্যবহার। তাম্রের পাশাপাশি, মানুষ এই সময়ে পাথর ব্যবহার করত, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তাম্রাশ্মীয় সংস্কৃতির লোকেরা প্রধানত কৃষিকাজ, পশুপালন, এবং নৃত্য ও সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাদের সমাজে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা এবং সমবায়িক জীবনযাপনের চিত্র পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত নিদর্শন ও প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার:

তাম্রাশ্মীয় যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হলো তাম্র পাত্র এবং অস্ত্র। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে পাওয়া তাম্র পাত্র, মূর্তি, এবং গহনাসমূহ এই সময়ের মানুষের উন্নত ধাতব কারিগরির প্রমাণ বহন করে। মেসোপটেমিয়া, মিশর, এবং সিন্ধু সভ্যতায় তাম্রাশ্মীয় নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়, যা এই সময়ের সভ্যতার বিস্তৃতি এবং সংযোগের প্রমাণ দেয়।

জীবনযাপন ও সংস্কৃতি:

তাম্রাশ্মীয় যুগের লোকেরা প্রধানত কৃষিজীবী ছিল এবং তারা পশুপালন করত। কৃষিকাজের জন্য তারা উন্নত সেচ ব্যবস্থা এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত। তাদের সমাজে সমবায়িক জীবনযাত্রার প্রচলন ছিল এবং তারা একত্রে কাজ করত। তাম্রাশ্মীয় যুগের লোকেরা মাটি এবং তাম্র পাত্রে খাদ্য সংরক্ষণ করত এবং সেগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করত।

ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান:

তাম্রাশ্মীয় যুগের লোকেরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা বিভিন্ন দেবতা এবং দেবীর পূজা করত এবং তাদের প্রতি নিবেদিত মন্দির নির্মাণ করত। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে পাওয়া বিভিন্ন প্রতিমা এবং পূজার সামগ্রী তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার-অনুষ্ঠানের প্রমাণ দেয়। তারা মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করত এবং মৃতদেহ সমাধিস্থ করার জন্য বিশেষ রীতিনীতি পালন করত।

তাম্রাশ্মীয় যুগের সমাপ্তি:

তাম্রাশ্মীয় যুগের সমাপ্তি ঘটে যখন মানুষ লোহা আবিষ্কার এবং ব্যবহারে পারদর্শী হয়। লোহার আবিষ্কার এবং ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রায় একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে এবং তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম আরও সহজ এবং কার্যকর করে তোলে। তাম্রাশ্মীয় যুগের সমাপ্তির পর লৌহ যুগের সূচনা ঘটে, যা মানব সভ্যতার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

উপসংহার:

তাম্রাশ্মীয় যুগ মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং এর মধ্যে ধাতব কারিগরি, কৃষিকাজ, এবং সামাজিক জীবনযাত্রার একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলি আমাদের এই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। তাম্রাশ্মীয় যুগের উত্তরাধিকার আজও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিফলিত হয় এবং এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।

****4) প্রশ্ন. প্যালিওলিথিক ও নিওলিথিক সংস্কৃতির মধ্যে তুলনা করে আলোচনা করো। ৫

প্যালিওলিথিক ও নিওলিথিক সংস্কৃতির মধ্যে তুলনা করে আলোচনা:

প্যালিওলিথিক সংস্কৃতি:

প্যালিওলিথিক যুগ বা পুরাতন পাথর যুগ মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়কাল প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল এবং শেষ হয়েছিল প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে। এই যুগে মানুষ প্রধানত শিকার ও সংগ্রহের মাধ্যমে জীবন ধারণ করত। প্যালিওলিথিক মানুষেরা পাথর, হাড় এবং কাঠের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করত। তাদের প্রধান খাদ্য ছিল বন্য পশু ও উদ্ভিদ। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে বসবাস করত এবং গুহা ও খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করত। এই যুগের মানুষেরা আগুন জ্বালানো শিখেছিল, যা তাদের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে।

নিওলিথিক সংস্কৃতি:

নিওলিথিক যুগ বা নবপাথর যুগ শুরু হয় প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে এবং শেষ হয় প্রায় ৪,৫০০ বছর পূর্বে। এই সময়কালে মানুষ কৃষি ও পশুপালন শুরু করেছিল, যা তাদের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। কৃষি শুরু হওয়ার ফলে মানুষ স্থায়ী বসতি স্থাপন করতে শুরু করে এবং গ্রাম গড়ে তোলে। তারা মাটির পাত্র, চাকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করতে শিখেছিল। নিওলিথিক যুগের মানুষেরা পাথরের পাশাপাশি কাঁদা, কাঠ ও ধাতুর তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করত। এই সময়কালে মানুষ ধানের চাষ, গমের চাষ এবং পশুপালন শুরু করেছিল।

তুলনা ও আলোচনা:

১. খাদ্য সংগ্রহ ও উৎপাদন:

প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা শিকার ও সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করত। অন্যদিকে, নিওলিথিক যুগের মানুষেরা কৃষি ও পশুপালনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করত। নিওলিথিক যুগে মানুষেরা ধান, গম, বার্লি ইত্যাদি ফসল চাষ করত এবং গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশু পালন করত।

২. বসবাসের ধরণ:

প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা গুহায় বা খোলা আকাশের নিচে বাস করত এবং তারা স্থানান্তরিত হয়ে জীবনযাপন করত। অন্যদিকে, নিওলিথিক যুগের মানুষেরা স্থায়ী বসতি স্থাপন করত এবং গ্রাম গড়ে তোলে। তারা মাটির ঘর, কাঠের ঘর এবং পাথরের তৈরি ঘরে বাস করত।

৩. সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি:

প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা পাথর, হাড় ও কাঠের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করত। তারা মূলত হাতিয়ার ও অস্ত্র তৈরি করত। নিওলিথিক যুগের মানুষেরা পাথরের পাশাপাশি মাটির পাত্র, চাকা এবং ধাতুর তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করত। তারা কৃষিকাজের জন্য নানান সরঞ্জাম তৈরি করেছিল।

৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন:

প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে বসবাস করত এবং তাদের সমাজ ছিল খুবই সরল। নিওলিথিক যুগে মানুষেরা বড় বড় গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে এবং তাদের সমাজে বিভিন্ন ধরণের পেশা ও কাজের ভাগাভাগি দেখা দেয়। এই সময়কালে ধর্ম, শিল্প ও স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে।

৫. পরিবেশ ও প্রভাব:

প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল এবং তাদের পরিবেশের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য ছিল। অন্যদিকে, নিওলিথিক যুগের মানুষেরা কৃষি ও পশুপালনের মাধ্যমে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তারা জমি চাষের জন্য বন কেটে ফেলে এবং জলাশয় তৈরি করে।

উপসংহার:

উপসংহারে, প্যালিওলিথিক ও নিওলিথিক যুগের মানুষের জীবনে মৌলিক পার্থক্য ছিল। প্যালিওলিথিক যুগের মানুষেরা ছিল শিকারি ও সংগ্রাহক, আর নিওলিথিক যুগের মানুষেরা ছিল কৃষক ও পশুপালক। এই দুটি যুগ মানব সভ্যতার বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং তাদের মধ্যে তুলনা করলে মানব ইতিহাসের পরিবর্তন ও উন্নয়নের ধারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

UNIT-3

****5) প্রশ্ন. হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা কর। ৫

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি:

হরপ্পা সভ্যতা, যা ইন্দাস ভ্যালি সভ্যতা নামেও পরিচিত, খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ থেকে ১৩০০ সালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতীয় উপমহাদেশে প্রসারিত হয়েছিল। এই প্রাচীন সভ্যতার ধর্মীয় জীবন ছিল বেশ জটিল এবং উন্নত। হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা করা হল:

১. প্রকৃতি পূজা

হরপ্পা সভ্যতার মানুষ প্রকৃতির উপাসক ছিলেন। তারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যেমন সূর্য, চাঁদ, জল এবং বৃক্ষের পূজা করতেন। তাদের ধর্মীয় জীবনে প্রকৃতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তারা প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে দেবতা হিসেবে পূজা করতেন।

২. মাতৃদেবী পূজা

হরপ্পা সভ্যতার মানুষরা মাতৃদেবী পূজায় বিশ্বাসী ছিলেন। তারা মাতৃদেবীকে উর্বরতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করতেন। বিভিন্ন মাতৃদেবীর মূর্তি ও প্রতিমা তাদের ধর্মীয় জীবনে পাওয়া গেছে। এই মূর্তিগুলি উর্বরতার দেবী হিসেবে পূজিত হত এবং গৃহের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হত।

৩. পশুপতি শিবের উপাসনা:

পশুপতি শিব ছিল হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম প্রধান দেবতা। একটি সিলমোহরে পশুপতি শিবের চিত্র পাওয়া গেছে, যেখানে তাকে তিনমুখী দেবতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার চারপাশে বিভিন্ন পশু যেমন গরু, বাঘ, গন্ডার, হাতি প্রভৃতি ছিল, যা তাকে পশুদের রক্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। এই চিত্রটি প্রমাণ করে যে, হরপ্পা সভ্যতার মানুষরা শিবের উপাসনা করত।

৪. যজ্ঞ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রচলন:

হরপ্পা সভ্যতায় যজ্ঞ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল। বিভিন্ন স্থানে যজ্ঞের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে, তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করত। যজ্ঞগুলিতে আগুন জ্বালানো হত এবং বিভিন্ন ধরণের বলি দেওয়া হত। এই অনুষ্ঠানগুলি মূলত দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য পালন করা হত।

৫. মৃৎপাত্র ও প্রতিমার ব্যবহার:

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবনে মৃৎপাত্র ও প্রতিমার ব্যবহার ছিল ব্যাপক। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মৃৎপাত্র ব্যবহার করা হত এবং বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা তৈরী করে পূজা করা হত। এই মৃৎপাত্রগুলি মূলত ধর্মীয় উপকরণ সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হত।

৬. মৃত্যুর পরের জীবন বিশ্বাস:

হরপ্পা সভ্যতার মানুষরা মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করত। তাদের কবরস্থানে বিভিন্ন মূর্তি, মৃৎপাত্র, অলঙ্কার প্রভৃতি পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে, তারা পরজীবনে বিশ্বাস করত। মৃতদেহের সাথে বিভিন্ন সামগ্রী কবর দেওয়া হত, যা প্রমাণ করে যে, তারা মনে করত মৃতব্যক্তির আত্মা পরজীবনে এই সামগ্রীগুলি ব্যবহার করবে।

৭. ধর্মীয় স্থাপত্য:

হরপ্পা সভ্যতায় বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে বৃহদাকার স্তম্ভ, পাথরের মূর্তি, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ভবন পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা শহরে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে, তারা ধর্মীয় স্থাপত্য নির্মাণে দক্ষ ছিল।

৮. জলাভিষেক ও পবিত্রতা:

হরপ্পা সভ্যতায় জলাভিষেক বা জল দিয়ে শুদ্ধিকরণ প্রথার প্রচলন ছিল। তারা মনে করত যে, জল দিয়ে শুদ্ধিকরণ করা হলে দেবতাদের সন্তুষ্ট করা যায়। মহেঞ্জোদারো শহরে একটি বৃহদাকার স্নানাগার পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে, তারা ধর্মীয় শুদ্ধিকরণে বিশ্বাস করত।

উপসংহার:

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন ছিল প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথাগুলি প্রাকৃতিক শক্তি, মাতৃদেবী, পশুপতি শিব, যজ্ঞ, মৃত্যুর পরের জীবন, ধর্মীয় স্থাপত্য এবং জলাভিষেকের উপর ভিত্তি করে ছিল। এই সভ্যতার ধর্মীয় জীবন প্রাচীনকালের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথাগুলি সম্পর্কে গভীর ধারণা প্রদান করে।

****6) প্রশ্ন. হরপ্পা সভ্যতার নাগরিক বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।১০/৫

হরপ্পা সভ্যতার নাগরিক বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা:

হরপ্পা সভ্যতা, যা সিন্ধু সভ্যতা নামেও পরিচিত, প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও বিস্তৃত সভ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি আনুমানিক ২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বর্তমান পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। এই সভ্যতার নগর স্থাপত্য, সামাজিক গঠন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রামাণিক দলিলসমূহ আজও আমাদের মুগ্ধ করে। হরপ্পা সভ্যতার নাগরিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে বিশদে আলোচনা করা যাক।

নগর পরিকল্পনা:

হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর সুসজ্জিত নগর পরিকল্পনা। শহরগুলি সাধারণত উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম অক্ষে সাজানো ছিল। রাস্তা ও গলির নির্দিষ্ট বিন্যাস ছিল যা পরস্পর লম্বভাবে কাটা থাকত। এতে শহরগুলি গ্রিড প্যাটার্নে তৈরি হতো, যা আধুনিক নগর পরিকল্পনার সঙ্গে মিলে যায়। প্রধান সড়কগুলির প্রস্থ ছিল প্রায় ১০ মিটার এবং গলিগুলি ছিল ১ থেকে ৩ মিটার প্রশস্ত।

উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা:

হরপ্পা সভ্যতার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে যুক্ত ছিল নিষ্কাশন ব্যবস্থা, যা শহরের প্রধান নিকাশি নালার সঙ্গে সংযুক্ত থাকত। এই নিকাশি নালাগুলি মাটির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হত এবং বিশেষভাবে নির্মিত ঢাকনা দিয়ে আবৃত থাকত। এমনকি কিছু বাড়িতে ব্যক্তিগত কূপ ও শৌচাগারের ব্যবস্থাও ছিল, যা এ সময়ের জন্য অসাধারণ।

স্থাপত্য ও গৃহ নির্মাণ:

হরপ্পা সভ্যতার স্থাপত্য শৈলীও অত্যন্ত উন্নত ছিল। বাড়িগুলি সাধারণত ইট দিয়ে নির্মিত হত এবং এক বা দুই তলা বিশিষ্ট হত। প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একটি বড় উঠান, একাধিক কক্ষ, রান্নাঘর, শৌচাগার ও কূপের ব্যবস্থা ছিল। দেয়ালগুলি সাধারণত প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার পুরু হত, যা ঘরগুলিকে শীতল রাখতে সাহায্য করত। এছাড়াও, বাড়িগুলির দরজা ও জানালার অবস্থান এমনভাবে স্থাপন করা হত যাতে বায়ু চলাচল ও আলো প্রবেশ সহজ হয়।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো:

হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক কাঠামো ছিল সুসংগঠিত। সমাজটি ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক, তবে বাণিজ্য ও শিল্পকর্মেরও ব্যাপক প্রচলন ছিল। হরপ্পার নাগরিকরা প্রধানত গম, যব, সরষে ও তুলা চাষ করত। এছাড়াও, পশুপালনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। হরপ্পার কারিগররা ধাতু, মাটি ও পাথর দিয়ে নানা ধরনের সরঞ্জাম, অলঙ্কার ও মূর্তি তৈরি করত। এইসব পণ্য তারা মেসোপটেমিয়া, পারস্য ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য করত।

লিপি ও ভাষা:

হরপ্পা সভ্যতার নাগরিকরা এক ধরণের লিপি ব্যবহার করত, যা এখনও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। এই লিপি সাধারণত সিল, পাত্র ও অন্যান্য পাথর বা মাটির বস্তুতে খোদাই করা থাকত। লিপিটি মূলত চিত্রলিপির আকারে ছিল, যা বিভিন্ন প্রতীকের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করত। যদিও এই লিপি এখনও পাঠোদ্ধার হয়নি, তবুও এটি প্রমাণ করে যে হরপ্পার নাগরিকরা লিখিত ভাষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় দক্ষ ছিল।

ধর্ম ও সংস্কৃতি:

হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে ধারণা পাই। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানগুলি প্রধানত প্রকৃতি ও উর্বরতার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। বিভিন্ন মূর্তি ও সিলের মাধ্যমে আমরা দেব-দেবীর পূজার প্রমাণ পাই। পশুপতি শিবের মূর্তি, দেবী মাতৃকা, ও নানা প্রকার প্রতীক থেকে আমরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিচয় পাই। এছাড়াও, তারা বিভিন্ন উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করত, যা তাদের সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখতে সাহায্য করত।

নৃতাত্ত্বিক ও জীবনযাত্রা:

হরপ্পার নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও নিয়মিত। তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলত। প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি কূপ ও শৌচাগার, যা তাদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে সাহায্য করত। এছাড়াও, তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও অলঙ্কার পরিধানেও বিশেষ যত্নের পরিচয় পাওয়া যায়। তারা তুলা ও পশমের কাপড় তৈরি ও ব্যবহার করত এবং বিভিন্ন ধাতু ও পাথরের অলঙ্কার তৈরি করত।

বাণিজ্য ও যোগাযোগ:

হরপ্পা সভ্যতার নাগরিকরা বাণিজ্য ও যোগাযোগে অত্যন্ত দক্ষ ছিল। তারা মেসোপটেমিয়া, পারস্য ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য করত। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে আমরা তাদের বাণিজ্য পথ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রমাণ পাই। বিভিন্ন ধাতু, পাথর, মাটি ও অন্যান্য সামগ্রীর বিনিময় ও ব্যবহারের মাধ্যমে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করত।

পতন ও উত্তরাধিকার:

হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পরিবেশগত পরিবর্তন, ও বৈদেশিক আক্রমণের কারণে এই সভ্যতা ধীরে ধীরে পতিত হয়। তবে এর উত্তরাধিকার এখনও আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। হরপ্পার নগর পরিকল্পনা, স্থাপত্য শৈলী, ও সামাজিক কাঠামো আমাদের আধুনিক সমাজের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার:

হরপ্পা সভ্যতার নাগরিক বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের প্রাচীন সভ্যতার উন্নত মানের পরিচয় দেয়। তাদের নগর পরিকল্পনা, উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্থাপত্য শৈলী, সামাজিক কাঠামো, ধর্মীয় বিশ্বাস, ও বাণিজ্যিক দক্ষতা প্রাচীন বিশ্বের উন্নতমানের সভ্যতার পরিচয় দেয়। এই সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির মূল্যবান সম্পদ, যা আমাদের প্রাচীন সমাজের উন্নয়নের পথে দিশা দেখায়।

UNIT-4

****7) প্রশ্ন. বৈদিক যুগের সভা ও সমিতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর। ৫

বৈদিক যুগের সভা ও সমিতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি:

বৈদিক যুগের সভা ও সমিতি প্রাচীন ভারতীয় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল। এই সময়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই সভা ও সমিতি। বৈদিক যুগের (প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সভা ও সমিতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হলো:

১. গণতান্ত্রিক কাঠামো:

বৈদিক যুগের সভা ও সমিতি গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হত। এতে সদস্যদের সমান অধিকার ও মতামতের গুরুত্ব ছিল। রাজা বা প্রধান নেতার কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তগুলি পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য সভা ও সমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হত।

২. প্রকারভেদ:

বৈদিক যুগে দুটি প্রধান ধরনের সভা ও সমিতি ছিল: ‘সভার’ এবং ‘সমিতি’।
সভা: এটি ছিল প্রাচীন ভারতের রাজকীয় পরামর্শদাতা সভা। সভা সাধারণত রাজকীয় ও অভিজাত শ্রেণীর লোকদের দ্বারা পরিচালিত হত। এখানে রাজা ও তার মন্ত্রীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন।
সমিতি: এটি ছিল সাধারণ জনগণের সভা। সমিতিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা অংশগ্রহণ করতে পারত। এখানে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হত এবং জনগণের মতামত ও দাবিগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হত।

৩. কার্যাবলি:

সভা ও সমিতির কার্যাবলির মধ্যে অন্যতম ছিল রাজা নির্বাচন, যুদ্ধ ও শান্তি আলোচনা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা।
রাজা নির্বাচন: বৈদিক যুগে রাজার নির্বাচন ও অভিষেকের সময় সভা ও সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রাজার যোগ্যতা ও দক্ষতা পর্যালোচনা করে তাকে নির্বাচিত করা হত।
যুদ্ধ ও শান্তি আলোচনা: যুদ্ধের সময় কিভাবে শত্রুর মোকাবিলা করা হবে, কিভাবে সৈন্যদের সংগঠিত করা হবে, এবং শান্তি স্থাপনের জন্য কিভাবে আলোচনা হবে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত।
• ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান: বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, যজ্ঞ ও পূজা পরিচালনার জন্য সভা ও সমিতির সদস্যরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
• সমাজের সমস্যা সমাধান: সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ভূমি বিতর্ক, অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা এবং সমাধানের চেষ্টা করা হত।

৪. সদস্য সংখ্যা ও যোগ্যতা:

সভা ও সমিতির সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না, তবে সাধারণত অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা সভার সদস্য হতেন এবং সাধারণ জনগণ সমিতির সদস্য হতে পারত। সদস্যদের নির্বাচন কিভাবে করা হত সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, তবে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সদস্য নির্বাচন করা হত বলে মনে করা হয়।

৫. নারীদের ভূমিকা:

বৈদিক যুগে নারীদের সভা ও সমিতিতে অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারতেন, তবে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকা ছিল কম।

৬. ধর্মীয় প্রভাব:

বৈদিক সভা ও সমিতিতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। যজ্ঞ, পূজা ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হত এবং এই কার্যক্রমগুলির মাধ্যমে দেবতাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হত। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধর্মীয় নেতাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

৭. সামাজিক বিচার:

বৈদিক সভা ও সমিতি সামাজিক বিচার ব্যবস্থারও কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখানে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, যেমন ভূমি বিতর্ক, পারিবারিক ঝগড়া, এবং অন্যান্য আইনগত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হত এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত।

উপসংহার:

বৈদিক যুগের সভা ও সমিতি প্রাচীন ভারতীয় সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত ও দাবি-দাওয়াকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করত এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হত। যদিও নারীদের ভূমিকা সীমিত ছিল, তথাপি এই সভা ও সমিতি প্রাচীন ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

****8) প্রশ্ন. টীকা লেখ ষোড়শ মহাজনপদ। ৫

ষোড়শ মহাজনপদ বলতে বোঝানো হয় প্রাচীন ভারতের ষোলোটি বড় ও সমৃদ্ধ জনপদ বা রাজ্যকে। মহাজনপদগুলি প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রায় ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহাজনপদগুলির বিকাশ ঘটে, যা বৈদিক যুগের পরে এবং বৌদ্ধ যুগের পূর্ববর্তী সময়। এই সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশে একাধিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছিল।

মহাজনপদগুলির নাম ও অবস্থান:

ষোড়শ মহাজনপদগুলি ছিল কৌশল, মগধ, বৎস, চেদি, বঙ্গে, মল্ল, কুরু, পাঞ্চাল, মৎস্য, শূরসেন, অশ্মক, অবন্তি, গান্ধার, কাশ্মীর, বিজি এবং কঙ্ক। এই মহাজনপদগুলি বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল।

• কৌশল: এটি বর্তমান উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
• মগধ: বর্তমান বিহার রাজ্যের গয়া, পাটনা ও এর আশেপাশের এলাকায় ছিল।
• বৎস: বর্তমান উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
• চেদি: বর্তমান মধ্য প্রদেশের অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
• বঙ্গে: বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিস্তৃত ছিল।
• মল্ল: বর্তমান উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত ছিল।
• কুরু: বর্তমান দিল্লি, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কিছু অংশে বিস্তৃত ছিল।
• পাঞ্চাল: বর্তমান উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
• মৎস্য: বর্তমান রাজস্থান রাজ্যের অঞ্চলসমূহে বিস্তৃত ছিল।
• শূরসেন: বর্তমান মথুরা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত ছিল।
• অশ্মক: বর্তমান মহারাষ্ট্রের গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
• অবন্তি: বর্তমান মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিস্তৃত ছিল।
• গান্ধার: বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ার ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত ছিল।
• কাশ্মীর: বর্তমান জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
• বিজি: বর্তমান বিহার রাজ্যের অঞ্চলসমূহে বিস্তৃত ছিল।
• কঙ্ক: বর্তমান উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থিত ছিল।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা:

প্রতিটি মহাজনপদে স্বতন্ত্র শাসন ব্যবস্থা ছিল। কৌশল, মগধ ও অবন্তি ছিল শক্তিশালী রাজ্য। এই মহাজনপদগুলি কেবল তাদের সামরিক শক্তির জন্য নয়, বরং তাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্যও বিখ্যাত ছিল। মহাজনপদগুলির শাসকরা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য একে অপরের সাথে যুদ্ধ করত।

অর্থনৈতিক অবস্থা:

ষোড়শ মহাজনপদগুলির অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক ছিল। এছাড়া বাণিজ্য ও হস্তশিল্পও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। মহাজনপদগুলির মধ্য দিয়ে বাণিজ্য পথগুলি চলত, যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ছিল। বিভিন্ন মহাজনপদে মুদ্রা ব্যবহার করা হত, যা বাণিজ্য ও অর্থনীতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

সাংস্কৃতিক অবদান:

ষোড়শ মহাজনপদগুলি ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই সময়কালে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান ঘটে, যা ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বিভিন্ন মহাজনপদে শিক্ষার প্রসার ঘটে এবং তক্ষশীলা, নালন্দা ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।

উপসংহার:

ষোড়শ মহাজনপদগুলি ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই সময়ষোড়শ মহাজনপদগুলি প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এরা ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে অসাধারণ অবদান রেখেছে। বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মূলে এই মহাজনপদগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। মহাজনপদগুলির ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমাদের পরিচিতি ও গর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।কালে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থান ঘটে, যা ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বিভিন্ন মহাজনপদে শিক্ষার প্রসার ঘটে এবং তক্ষশীলা, নালন্দা ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।

Kalyani University BA 1st Semester History Major Long Question Answer Suggestion PDF টি পেতে.. আপনি 39 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment